কুড়িগ্রামের রাজারহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর বিভিন্ন স্থানে বেড়েই চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ফলে বর্ষা মৌসুমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও শতশত ঘরবাড়ি হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পরার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের পাড়ামৌলা ও কালির মেলা মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে পাউবো নির্মিত একাধিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোল ঘেষে গভীর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন শতশত ট্রাক্টর বালু চলে যাচ্ছে উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে।
পাড়ামৌলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন যাবত বালু বিক্রি করায় বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের শতশত বাড়িঘর ও বণ্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরবে বলে আমরা আশংকা করছি।
ডাংরারহাট বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার, লাভলু মিয়া, আব্দুল খালেকসহ অনেকে জানান, বাজারের ভিতর দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা অনবরত বালু বহনকারী ট্রাক্টরের বিকট শব্দে এলাকায় শব্দ দূষণ ও ধুলোবালিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে।
এলাকাবাসী আরো জানান, ডাংরারহাটে রাস্তা সংলগ্ন দু’ধারে ১টি আলিম মাদ্রাসা, হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা ও নুরানী মাদ্রাসা থাকায় ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কোমলমতি শিশুদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে। এছাড়া পাঠদানেও বিঘ্ন ঘটছে।
এদিকে উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে ধরলা নদীর কালুয়ার চর গ্রামে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের সন্নিকটে তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ৫০/৬০ ফুট গভীর করে প্রায় একমাস যাবৎ একই স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দাখিল করেছেন।
কালুয়ার চরের বাসিন্দা আবুল হোসেন অভিযোগ করেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নির্মাণাধীন বাঁধের পাশ থেকে ব্যাপক এলাকা জুড়ে গভীর থেকে অনবরত বালু উত্তোলন করায় এর দুইধারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
একই গ্রামের ইউসুফ আলী ও ফাতেমা জিন্নাহ জানান, ইতিমধ্যে তাদের ২৪ শতক ভুট্টা ক্ষেতের বেশির ভাগ জমি ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া তাদের নামে সেটেলমেন্ট ও সিএস,আরএস রেকর্ড ভূক্ত জমির উপর আবদুর রাজ্জাক ও তার লোকজন জোর জবরদস্তি করে তিনটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় তার ৭০শতক জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাহেব আলী জানান, এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বর্ষা মৌসুমে ওই বাঁধসহ গ্রামের বহু মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়তে পারে।
বালু ব্যবসায়ী আবদুর রাজ্জাক বলেন, চরে জমির মালিক নাজেম মিয়ার কাছ থেকে কন্ট্রাক্টে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে ।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাশেদুল হক প্রধান জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারকে লিখেছি এবং ইউএনওকে চিঠির অনুলিপি দিয়েছি, এটা বেআইনি; এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন