নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আখতারা বেগম।
আখতারা বেগমের লাশ সনাক্ত হওয়ায় তা আগেই দেশে আসে। এরপর রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর সংলগ্ন গোরহাঙ্গা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এরই মধ্যে নেপালে নজরুল ইসলামের লাশ সনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মরদেহ নিতে এসেছেন দুই মেয়ে- নাজনীন আখতার কাঁকন ও নারগিস আখতার কনক।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নজরুল ইসলামের ছোট মেয়ে কনক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় আব্বু-আম্মু দু’জন মারা যান। গত মঙ্গলবার আম্মুর মরদেহ ঢাকা থেকে নিয়ে রাজশাহীতে দাফন করেছি। আজ আবার এসেছি আব্বুর মরদেহ নিতে।’
কথা বলার সময়ই বারবার চোখের পানি সরাচ্ছিলেন কনক। চাপাকান্না ছাপিয়ে জানান, বাবার পাশেই আরেকটি কবর খুঁড়ে ঢাকা এসেছি। মাকে নিয়ে গিয়ে তার পাশে দাফন করব।
উত্তরার উইমেন্স মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের কেমন লাগছে, পৃথিবীর কাউকে বলে বোঝানো যাবে না। এই কষ্ট সহ্য করা সম্ভব নয়। মা-বাবাই ছিল আমার জীবনের সবকিছু ছিল। তাদের ছাড়া প্রতিটি মুহূর্ত কেমনে কাটবে, সেটি ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসে।’
মা-বাবার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমি সারাক্ষণ আব্বুর সঙ্গে থাকতাম। ছোট হওয়ায় তিনি আমাকে খুব আদর করতেন। বড় আপুর চেয়েও বেশি। হঠাৎ এভাবে তিনি চলে যাবেন, কল্পনাও করতে পারিনি।’
কনক বলেন, ‘নেপালে যাওয়ার দিন সকালে আম্মু আমাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিলেন। মিরপুরে বড় আপুদের বাসা থেকে বিমানবন্দরে এসেও আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। সারাক্ষণ তারা আমাদের সতর্ক হতে বললেন, ঠিকমত খাবার খেতে বললেন। এখন তারা নেই, এভাবে আর কেউ আমার খোঁজ নিবে না।’
এ সময় নজরুল ইসলামের বড় মেয়ে নাজনীন আখতার কাঁকন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এক সঙ্গে বাবা-মাকে হারালাম। এ কষ্টের কথা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।’
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আখতারা বেগম মারা যান।
গত সোমবার আখতারা বেগমের লাশ সনাক্ত করা হয়। তবে তখনও নজরুল ইসলামের লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
নজরুল ইসলাম ৭ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) রাজশাহী ব্রাঞ্চের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন।
আর তার স্ত্রী আখতারা বেগম রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের প্রাক্তণ শিক্ষক। বড় মেয়ে কাঁকনের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে কনক ঢাকার উত্তরার উইমেন্স মেডিকেল কলেজে পড়ছেন। তারা দু’জনেই ঢাকায় থাকেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন