দুর্নীতিতে বাংলাদেশ দুই ধাপ উন্নত হলেও প্রতি বছরের মতো পকিস্তানের চেয়ে খারাপ অবস্থানে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে স্কোর ২৮। আর পাকিস্তানের স্কোর ৩২। উচ্চক্রম অনুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান ১১৭তম। অর্থাৎ উচ্চক্রম অনুসারে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ ২৬ ধাপ পিছিয়ে।
বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন চিত্র দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে উচ্চক্রম অনুসারে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫তম। আর পাকিস্তানের ছিল ১১৬ তম। ২০১৫ সালে উচ্চক্রম অনুসারে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৯তম। আর পাকিস্তানের ছিল ১১৭ তম। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবেই দুর্নীতিতে পাকিস্তানের চেয়ে চরম খারাপ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে পর্যালোচনা করে আরো দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। ২০১৭ সালের সিপিআই অনুযায়ী স্কোর ৬৭ এবং উচ্চক্রম অনুসারে অবস্থান ২৬। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ভারত। তাদের স্কোর ৪০ এবং অবস্থান ৮১। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এরপর শ্রীলংকা ৩৮ স্কোর পেয়ে ৯১ তম অবস্থানে রয়েছে। ৩৩ স্কোর পেয়ে ১১২ তম অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ এবং ৩২ স্কোর পেয়ে ১১৭ তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
অন্যদিকে, ৩১ স্কোর পেয়ে ১২২তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। এরপর ২৮ স্কোর পেয়ে ১৪৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পর ১৫ স্কোর পেয়ে সূচকের নিম্নক্রম অনুযায়ী চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ নিম্নক্রম অনুসারে দক্ষিন এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে বাংলাদেশ।
এদিকে, দুর্নীতিতে বাংলাদেশ দুই ধাপ উন্নত হলেও দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টার টিআইবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হাফিজুর রহমান, উপনির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি পরিচালক মো. রফিকুল হাসান প্রমুখ।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতিতে আমরা সামান্য উন্নতি করেছি। তবে কিছুটা উন্নত হলেও সন্তষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ২০১৭ সালের স্কোর ২৮ হওয়ায় দুর্নীতির ব্যাপকতা এখনো উদ্বেগজনক বলে প্রতীয়মান হয়।
এর আগে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক ২০১৮ এ প্রকাশিত দুর্নীতির ধারণা সূচক তুলে ধরেন টিআইবি পরিচালক।
সেখানে ২০১৭ অনুযায়ী সূচকের ০-১০০ এর স্কেলে বাংলাদেশে স্কোর ২৮।
তালিকায় নিম্নক্রম অনুযায়ী ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭তম। আগের চেয়ে দুই ধাপ উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। এ বছর ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩ তম।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫তম। ২০১৫ সালে অবস্থান ছিল ১৩তম। ২০১৪ সালে ছিল ১৪তম, ২০১৩ সালে ছিল ১৬তম এবং ২০১২ সালে ছিল ১৩তম স্থানে ছিল।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুর্নীতিতে সর্বোচ্চ ভালো স্কোর ও অবস্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। আর সর্বনিম্ন স্কোর অর্থাৎ দুর্নীতিতে সবচেয়ে খাপার অবস্থানে রয়েছে সোমালিয়া।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন স্কোর অর্থাৎ দুর্নীতিতে সবচেয়ে খাপার অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।
দুর্নীতিতে শীর্ষ ১০টি দেশ ও তাদের স্কোর : সোমালিয়া (৯), দক্ষিণ সুদান (১২), সিরিয়া (১৪), আফগানিস্তান (১৫), ইয়েমেন (১৬), সুদান (১৬), লিবিয়া (১৭), গিনিবিসাউ (১৭), নর্থ কোরিয়া (১৭), ইকুডরিয়াল (১৭)।
কম দুর্নীতিগ্রস্ত শীর্ষ দেশ ও তাদের স্কোর : নিউজিল্যান্ড (৮৯), ডেনমার্ক (৮৮), ইংল্যান্ড (৮৫), নরওয়ে (৮৫), সুইজারল্যান্ড (৮৫), সিঙ্গাপুর (৮৪), সুইডেন (৮৪), কানাডা (৮২), লুক্সেমবার্গ (৮২), নেদারল্যান্ড (৮২), ইউকে (৮২), জামার্নি (৮১)।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের রুল অব ল’ ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক সার্ভিস ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বার্টলসমেন্ট ফাউন্ডেশন ট্রান্সফরমেনশন ইনডেক্স, ইনফরমেশন হ্যান্ডেলিং সার্ভিসেস গ্লোবাল ইনসাইড কান্ট্রি রিস্ক রেটিং, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট এবং ভেরাইটিজ অব ডেমোক্রেসি প্রজেক্ট—এদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই দুর্নীতির ধারণা সূচক তৈরি করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন