বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় এক গৃহবধূকে বর্বর নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয় লোকজন ওই গৃহবধূকে তার বাবার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
নির্যাতিত গৃহবধূর নাম রুনা বেগম। ওই গৃহবধূকে তার স্বামী ও তিন সতীন মিলে মারধর ও জানালার কাঁচ ভেঙে শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
রোববার রাতে মারধরের ঘটনার পর রুনা বেগমকে সোমবার আবারও মারধর ও জানালার জানালার গ্লাস ভেঙে শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে বাড়ি থেকে বর করে দেওয়ার পর বাবা বাড়ি ফিরে গেলে তাকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রুনার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়কের জলিল ব্যাপারীর ছেলে মনির ব্যাপারী (৫০) আগে তিনটি বিয়ে করলেও ব্যাপারটি গোপন রেখে ২০১৪ সালে আমতলী উপজেলার চিলা গ্রামের দাউদুর রহমান আকনের একমাত্র মেয়ে রুনা বেগমকে বিয়ে করে। গত বছর জুনে ব্যবসায় করবে বলে মনির রুনাকে তার বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে বলে।
রুনা তার বাবাকে এ বিষয়ে জানালে মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে জায়গা-জমি বন্ধক রেখে এক লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর মনির গত বছর ঈদুল ফিতরের দিন তার পূর্বের তিন স্ত্রীকে ঘরে তোলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে প্রথম স্ত্রীর ঘরের তিন সন্তানও তাদের বাড়িতে ওঠেন।
তারা রুনার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর থেকেই তার উপর অমানুষিক অত্যাচার শুরু করে। মনিরের প্রথম স্ত্রী মিলি ও তার সন্তান রুপক,রাজু ও মৌ আক্তার কথায় কথায় তার গায়ে হাত তুলতেন। এ ছাড়া মনিরের দ্বিতীয় স্ত্রী শাফিয়া ও তৃতীয় স্ত্রী সাবানাও তাকে অত্যাচার করতেন।
রুনার ভাই জানান, গত রোববার অত্যাচার সইতে না পেরে রুনা তার স্বামীর কাছে বাবার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে মনির তাকে মারধর করে ঘরে বন্দী করে রাখে। পরদিন এ নিয়ে পুনরায় কথা কাটাকাটি হলে মনিরের তিন স্ত্রী ও সন্তান মিলে রুনাকে মারধর করে। এমনকি তারা জানালার গ্লাস ভেঙে তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় রুনা রাস্তায় পড়ে থাকলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়ি নিয়ে আস। পরে সেখান থেকে তাকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কমিউনিটি মেডিকেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে রুনা বেগমের দু’পা, দুহাত, পিঠ ও ঘাড়ের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার হারুন-অর-রশিদ আমাদের সময়কে জানান, রুনা বেগমের ডান হাতের বাহুতে, ডান হাতে কনুইর নিচে, বাম হাতের বাহুতে , বাম পায়ের হাটুতে, ডান পায়ের হাটুতে গভীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে রুনা জানান, রোববার তনি তার বাবার দেওয়া টাকার কথা বললে তার স্বামী তাকে মারধর করেন। পরেরদিন আবারও তিনি তারা টাকা ফেরত চাইলে মনির ও তার বাকি স্ত্রী এবং তিন সন্তানসহ মারধর করে ঘরে বন্দি করে রাখেন।
রুনা বলেন,‘আমাকে ঘরে বন্দি করে রাখার কিছুক্ষণ পর তারা আবার এসে আমাকে মারধর করে। এ সময় আমার প্রথম সতীনের ছেলে রুপক জানালার গ্লাস ভেঙ্গে আমাকে আঘাত করে। পরে আমার স্বামীও আমাকে আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করেন।’ পরে বাসা থেকে বের করে দিলে তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তিনি নিজের বাড়ি ফিরে যান বলেও জানান রুনা।
আহত রুনার মা মরিয়ম বলেন,‘মোর ছেরিরে য্যায় মারছে মুই হেগো বিচার চাই। ছেমড়িডারে মাইর্যা। হালান লাগছেলে। আল্লায় রহম করছে দেইক্ক্যা বাইচ্যে আইসে।’
স্বামী মনির ব্যাপারী মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘সাংসারিক ঝগড়া ঝাঁটিতে একটু ঘটনা ঘটেছে, আবার ঠিক হয়ে যাবে। আগের তিন স্ত্রীর কথা গোপন রেখে রুনাকে বিয়ে করলেন কেন এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেয়নি।’
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহিদ উল্যাহ বলেন, ঘটনাটির ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন