চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ বিভিন্ন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ। নিজেদের কয়েকজন কর্মীকে আটক ও আবাসিক হলে তল্লাশির প্রতিবাদে প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে ডাকা অবরোধের অংশ হিসেবে তারা ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সাংবাদিকের গাড়িসহ মোট ১৬টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস, জিমনেশিয়াম, প্রক্টর অফিস, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অফিস, নাট্যকলা বিভাগের ছয়টি রুম, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের তিনটি রুমসহ মোট ১২টি রুমে ভাঙচুর চালায় তারা।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই তাণ্ডব।
ছাত্রলীগের এই অংশটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসাবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আমানত ও শাহজালাল হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
এ সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি এলজি, বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। অভিযানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭-৮ জন নেতাকর্মীকেও আটক করা হয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে বটতলী স্টেশনে শাটল ট্রেনের হুইস পাইপ কেটে ফেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে প্রক্টরের অপসারণের দাবিবে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের অংশ হিসেবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে জিরো পয়েন্টে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করে ছাত্রলীগ।
এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ও লাঠির্চাজ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন দফতরের সামনে ৯টি শিক্ষক বাস, তিনটি মাইক্রোবাস, পুলিশ ফাঁড়ির একটি পুলিশভ্যান ভাঙচুর করে তারা। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস, জিমনেশিয়াম, প্রক্টর অফিস, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অফিস, নাট্যকলা বিভাগের ছয়টি রুম, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের তিনটি রুমসহ মোট ১২টি রুম ভাঙচুর করে ছাত্রলীগের এ অংশটি।
পরে বিকাল ৩টার দিকে চবি প্রক্টরের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায় এবং বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভি ও প্রক্টরের গাড়ি ভাঙচুর করে নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের অন্ধকারে ভিসির নির্দেশে ও প্রক্টরের উপস্থিতিতে চার চারবার ঘুমন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, লুটপাট ও নির্যাতন করে পুলিশ। এই হামলার প্রতিবাদে ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ করছিলাম। সেখানেও আমাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। সেই সাথে প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি। প্রক্টর পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চালবে।
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, তারা দাবি করছে তাদের কর্মীদের ওপর পুলিশ হামলা করেছে এবং তাদের কর্মীদের আটক করা হয়েছে। হল তল্লাশির সময় যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখাতে পারেনি, তাদেরকে আটক করা হয়েছে এবং কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়নি। বিনা কারণে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করছে এবং সাংবাদিকদের গাড়িসহ মোট ১৬টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
এছাড়াও তারা কলা অনুষদের ডিনের অফিসসহ মোট ১২ রুম ভাঙচুর করে বলে জানান তিনি।
ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মসিউদ্দোল্লাহ রেজা বলেন, প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইটে তালা দিয়ে অবরোধ করে। তালা খুলে দেওয়ার জন্য বলা হলেও তারা খুলেনি। যার কারণে আমরা চার রাউন্ড টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করি এবং তাদের সরিয়ে দিয়ে তালা ভেঙে ফেলা হয়। এসময় একজনকে আটক করা হয়। এর আগে রাতে (মঙ্গলবার) হলে তল্লাশি করে আটজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাদেরকে যাচাই-বাছাই করে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন