৫২’র ভাষা শহীদদের স্মরণে নড়াইলের পাড়া মহল্লায় নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী শহীদ মিনার। মাতৃভাষা রক্ষায় যারা জীবন দিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাতেই শিশু কিশোরদের এই আয়োজন। কোথাও কোথাও ইট দিয়ে আবার কোথাও কোথাও কলাগাছ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এসব শহীদ মিনার। রাত ১২টা ১ মিনিটে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন এসব শিশুরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নড়াইল শহরের মহিষখোলা, আলাদাতপুর, ভওয়াখালী, কুড়িগ্রাম, ভাদুলীডাঙ্গা, মাছিমদিয়া, বরাশুলা, বাহিরডাঙ্গা, শহর সংলগ্ন কমলাপুর, শিখালী, সিমাখালী, মুলিয়া, বাশভিটা, সীতারামপুর, তুলারামপুরসহ জেলার তিনটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার।
পৌরসভার মহিষখোলার ইমন ও তানভীর জানায়, তাদের মহল্লায় কোনো শহীদ মিনার না থাকায় ইট দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করেছে। রাত ১২টা ১ মিনিটের সময় শিশুসহ বিভিন্ন বয়সীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, ডাল, ডিম সংগ্রহ করেছে। তা দিয়ে রাতে খিচুরি রান্না করে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
পৌরসভার ভওয়াখালী এলাকার শিশির, ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী রোজিনা ও ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী আরকিনা খানম জানায়, তারা ইট দিয়ে একটি শহীদ মিনার তৈরি করেছে। গত ৫/৬ বছর ধরে ইট দিয়ে তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। সাউন্ডবক্স ভাড়া করে এনে দেশাত্মবোধক গান শোনার পাশাপাশি পিকনিকের আয়োজন করা হয়। এ ধারা অব্যাহত রাখতে চায় তারা।
শহর সংলগ্ন কমলপুর এলাকার জয় সরকার জানান, তাদের গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একাধিক শহীদ মিনার তৈরি হয়েছে। শিশু কিশোরদের আয়োজনে ব্যতিক্রম এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। এভাবে প্রতিটি গ্রামে ভাষা শহীদদের স্মরণ করা হচ্ছে।
লোহাগড়া উপজেলার ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামের শিক্ষক শাহীনুর রহমান জানান, ভাষা শহীদদের স্মরণে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা আয়োজন থাকলেও গ্রামের শিশুরা তাদের আবেগ মিশিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করেছে। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এমন আয়োজনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে ভাষার প্রতি আলাদা একটা আবেগ কাজ করবে।
গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক কর্মী আসাদ রহমান বলেন, বিভিন্ন এলাকায় খোজ নিয়ে ধারণা করা যায় জেলায় অন্তত ৫ হাজার অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মধ্য দিয়ে শহীদদের স্মরণ করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে ভাষা শহীদদের স্মরণ করবেন।
প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ভাষা শহীদদের স্মরণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষসহ পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ভাষা দিবসের তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ুক এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন