এমএস মুন্সি ওভারসিজ (রিক্রুটিং এজেন্সি) প্রতিষ্ঠানের মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সী হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ ছিলেন মো. নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু। তাকে গ্রেফতারের পর তার অন্যান্য সহযোগীদের ধরতে বাড্ডার সাতারকুল রোডের প্রজাপতি গার্ডেন এলাকায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের দাবি, এ সময় নুরুর সহযোগীরা হামলা চালালে বন্দুকযুদ্ধে নুরু নিহত হন।
রোববার ভোরে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে শনিবার দুপুর ১টার দিকে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার মাছ বাজার এলাকায় কয়েকজন সন্ত্রাসী পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বাদশা (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে।
ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার সহায়তায় হাতিরঝিল থেকে নুরুল ইসলাম নুরুকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার করে ডিবি (উত্তর) বিভাগ।
তারপরই জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় এই নুরু দুর্ধর্ষ কিলার হিসেবে পরিচিত। সে গত নভেম্বরে ব্যবসায়ী সিদ্দিক হত্যার প্রধান আসামি। গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি শাহজাহান সাজু পরিবর্তন ডটকমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেফতারের পর নুরুকে ডিবি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নুরুর অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার করতে তাকে নিয়েই সাতারকুলের প্রজাপতি গার্ডেন এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ নুরুর ৪/৫জন সহযোগীকে দেখতে পায়। তখন পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে নুরুকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করে। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টাগুলি চালায়।
সূত্র দাবি করে, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে সন্ত্রাসী নুরু আহত হলে বাকি সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। আহত নুরুকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। অভিযানের সময় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন, তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিদ্দিক হত্যার পর ঘটনাস্থলের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ থেকে যাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাথায় ক্যাপ পরা ব্যক্তিটিই হলেন কিলার নুরু। তাকে ডিবিসহ অন্যান্য সংস্থা এতদিন খুঁজছিল।
বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্য ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী পরিবর্তন ডটকমকে জানান, সিদ্দিক ও বাদশা হত্যা ছাড়াও এখন পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় নুরুর বিরুদ্ধে ১০টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি একজন পেশাদার খুনি ছিলেন।
আর্থিক বিরোধেই বাদশাকে খুন করে নুরু
অর্থ লেনদেন নিয়ে বিরোধের জের ধরেই শনিবার মেরুল বাড্ডার মাছ বাজার এলাকায় বাদশাকে (৩০) গুলি করে হত্যা করেন নুরু। বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এ তথ্য জানান তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিহত বাদশা মৌচাকে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী শিউলী আক্তার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তারা এক সময় টঙ্গীর গাজিপুরায় থাকতেন। বাদশা সেখানে একটি মাদক মামলায় জেল খাটেন।
পরে মেরুল বাড্ডার আনন্দ নগরে একটি টিনশেড বাসায় ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সন্ত্রাসী নুরু আর বাদশা বন্ধু ছিলেন। তাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনও ছিল। বাদশাকে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় মাদক ব্যবসা করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন নুরু। এসব বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডা হওয়ায় শনিবার বাদশাকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন নুরু।
সিদ্দিক হত্যার তিন আসামিই বন্দুকযুদ্ধে নিহত
শুধু নুরুল ইসলাম নুরু নয়, এমএস মুন্সি ওভারসিজের মালিক সিদ্দিক হত্যার আরও দুই আসামি এর আগে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। গত ৮ ডিসেম্বর ভোরে বাড্ডার আফতাবনগর এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামি সাদ্দাম হোসেন (২৫) ও আলামিন ওরফে পিচ্চি আলামিন (৩২) নিহত হন।
গত ১৪ নভেম্বর রাতে বনানীর ৪ নম্বর রোডের ব্লক-বি’র ১১৩ নম্বর ভবনের এমএস মুন্সি ওভারসিজ (জনশক্তি রপ্তানী) অফিসে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সিদ্দিক হোসেন মুন্সীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তা মির্জা পারভেজ, মোখলেসুর রহমান ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন