প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া নিয়ম না মেনে নারায়ণগঞ্জ নগরীর প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে আবারও বসেছেন হকাররা। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে চারটা থেকে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক মোড় থেকে দুই নম্বর রেলগেট পর্যন্ত দুই পাশেই দোকান সাজিয়ে তারা বসে পড়েন। ফলে নগরীর প্রধান সড়কে আবারও যানজট সৃষ্টিসহ পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। যদিও রাত সাড়ে ৭টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ এসে হকারদের ফুটপাত থেকে উঠিয়ে দেয়।
বুধবার (১৬ জানুয়ারি) পুলিশ সুপার মঈনুল হক জানিয়েছিলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে কোনও হকার বসতে পারবে না। তবে সিরাজউদ্দৌলা সড়ক, সলিমুল্লাহ সড়ক, চেম্বার রোড ও খানপুর হাসপাতালের সামনের সড়কে বিকাল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হকাররা কেনাবেচা করতে পারবেন।
নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারবুধবার দুপুরে সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তের বিষয়টি হকার সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের ডেকে জানানো হলে তারা সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়েছিল।
কিন্তু প্রথম দিনেই হকারদের এই বেপরোয়া আচরণে নগরবাসী প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ফুটপাতের হকাররা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে বলে মনে করছেন নগরবাসী। তারা অবিলম্বে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক ও খানপুর হাসপাতাল সড়কে কোন হকার বসেননি। শুধু নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে অল্প কয়েক জন হকার দেখা গেছে।
বঙ্গবন্ধু সড়কে বসা হকারদের দাবি প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া সড়কগুলোতে মানুষের চলাচল খুব কম। সেখানে কোনও কাস্টমার যায় না। এছাড়া গত ২৬ দিন ধরে তারা রাস্তায় বসতে না পারার কারণে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। যে কারণে বাধ্য হয়েই ফুটপাতে পণ্য নিয়ে বসছেন।
নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারএ প্রসঙ্গে সদর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা আব্দুর রাজ্জাক জানান, হকার যাতে বঙ্গবন্ধু সড়কে বসতে না পারে সেজন্য পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিকালে যেসব হকার বঙ্গবন্ধু সড়কে বসেছে, তাদের রাত ৭টার দিকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বল্প সংখ্যক পুলিশ দিয়ে এত হকার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তাই পুলিশ তাদের উচ্ছেদ করার পর আবারও সড়কে তারা বসে পড়ে।’
নারায়ণগঞ্জ হকার সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, হকাররা বিচ্ছিন্নভাবে বঙ্গবন্ধু সড়কে বসেছিল। কারণ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে জায়গুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, সেখানে মাত্র ২৫ শতাংশ হকার বসার জায়গা রয়েছে। বাকি ৭৫ শতাংশ হকারের বসার জায়গা নিয়ে এখনও সমস্যা রয়েই গেছে।
নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারবাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বাং বলেন, বৃহস্পতিবার বিকালে হকাররা আইন অমান্য করে ফুটপাতে বসেছিল। পরে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তাদের উঠিয়ে দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, সিটি করপোরেশন চাইলে আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেব। আমি যেহেতু তদন্ত কমিটিতে আছি, সেহেতু এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, সিটি করপোরেশন যেভাবে চাইবে, আমরা সেই ব্যবস্থাই নেব। আগামীকাল শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে যাতে নির্দিষ্ট সড়ক ছাড়া অন্যত্র হকাররা বসতে না পারে, সেজন্য নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।
সুত্র: বাংলাট্রিবিউন
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন