ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার থেকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. একেএম আবদুর রব।
গত মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ৪টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুস্তম আলী (৪৫) নামের ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের শবদর আলীর ছেলে।
রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. মহসীন বলেন,‘যে রোগীর মৃত্যু হয়েছে তার চিকিৎসা হয়েছিল পেটের ব্যথার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার সমস্যা ছিল বুকে। হাসপাতালে ভর্তির সময় পেট ব্যথার কথা বলে তাকে ভর্তি করা হয়। যদি ওইসময় স্ট্রোক বা বুকের ব্যথার কথা চিকিৎসককে বললে সঠিক চিকিৎসা হত।’
রুস্তমের ভাতিজা সোবহান আলী (৩২) জানান, তার চাচা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে ঘটনার দিন দুপুর দেড়টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকের অধীনে তার চিকিৎসা চলছিল। বিকেলে ডা. শাহল রহমান খানের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী রোগীর শরীরে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়। এর সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার দিয়ে তার চাচা মারা যান। ভুল চিকিৎসার জন্যই তার মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় রুস্তম আলীর জানাযা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জান যায়, রুস্তম একজন দরিদ্র কৃষক। ঘরের ভিটে ছাড়া তার কোন জমি নেই। অন্যের জমিতে চাষাবাদ ও মাছ ধরার বাইড় বিক্রি করে স্ত্রী ও তিন সন্তানদের নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার মৃত্যুতে বর্তমানে এ পরিবারটির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গৌরীপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুকতাদির খান তুষার জানান, নিহত রুস্তম আলীর পরিবারে কোনো সচেতন লোক ও আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। তদন্ত হলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহল রহমান খান জানান, ‘উল্লেখিত রোগীটি যে সময় ভর্তি হয়েছিল তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ছিলেন জেসমিন আক্তার। আমি ডিউটিতে আসার পর রোগীর প্রেশার হঠাৎ বেড়ে যায়। এ সময় তাকে ঘুমের (ডিসোফেন) ইনজেকশন পুশ করার পর তার মৃত্যু হয়। ওই রোগীকে গৌরীপুর হাসপাতালে ভর্তির পর তাৎক্ষনিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিসিইউতে রেফার করা উচিত ছিল।’
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার আহাম্মেদ জানান, নিহত রোগীর পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ না করায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন