দেশি-বিদেশি এনজিওদের সহায়তায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাকিস্তানের মুসলিম চরমপন্থি-জঙ্গি ও সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার (আইএসআই) সদস্যরা কাজ করছে। তারা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। এদের সঙ্গে আছেন যুদ্ধাপরাধী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জামায়াত অনুসারীরাও। তারা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত না যাওয়া ও রেজিস্ট্রেশন না করার বিষয়ে ইন্ধন যোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন ভণ্ডুল করতে অঘটন ঘটনানোর ছক করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন গত মঙ্গলবার এসব প্রসঙ্গে মানবকণ্ঠকে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছি। যা আপনি জেনেছেন ঠিকই জেনেছেন। বিদেশি এনজিওগুলো সম্পর্কে এনজিও ব্যুরোর তথ্য চেয়েছি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিদেশি এনজিওর হয়ে ১ হাজার থেকে ১২শ’ লোক কাজ করে। তা কে কে কোথা থেকে এসেছেন, কোন ভিসায় যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানানো হয়েছে। সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার নামে আইএমওর হয়ে ক্যাম্পগুলোতে বিদেশি এনজিও কাজ করছে। কোনো প্রকারের অনুমোদন ছাড়া ভ্রমণ ভিসায় (টি ভিসায়) এসে এনজিওকর্মীরা কাজ করছেন। যদিও এর আগে পাকিস্তানভিত্তিক চরম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত ৪টি দেশীয় এনজিওকে নিষিদ্ধ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই চক্রটি এখন বিদেশি এনজিওদের ওপর ভর করছে। বিশেষ করে ইসলামিক রিলিফ (পাকিস্তান), মারকাজুল ইসলাম ও মোহাস (এমওএএস) স্থানীয়দের নিয়োগ দিয়েছে। যাদের সঙ্গে উগ্র জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্যাসেট শোনাচ্ছেন।
সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, বিদেশি একটি এনজিওর সঙ্গে কাজ করছেন টেকনাফের শ্যামপুর বাহের চরা ইউনিয়নের শহীদ উল্ল্যাহ। তার সঙ্গে জামায়াত ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি কানেকশন আছে। এই শহীদুল্লাহ জঙ্গি কানেকশনে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ ছাড়া মাল্টার কিছু লোক আছে, ইতালীয় নাগরিক মি. লিওটা, গাওয়ামী, পাকিস্তানি নাগরিক ম্যাক্স মোহাম্মদ। এরা একটি আন্তর্জাতিক এনজিওর (আইএনজি) বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে কাজ করছেন। তারা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডিভিশন সৃষ্টির কাজ করছেন। এজন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে থেকে ৬ জন মাঝিকে (সরদার) নিয়োগ করেছেন।
তারা ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন না করতে উৎসাহিত করছেন। আর রেজিস্ট্রেশন না করলে তাদের মিয়ানমারে ফিরতে হবে না। সেখানে গিয়ে বিপদে পড়তে হবে না। আর প্রত্যর্পণ করতে চাইলে তাদের অনশন করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে না গেলে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত পাঠাতে পারবে না। এ দেশের সরকারই তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করবে। এমন সব প্রচারণা চালানো হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। এ কারণে মাঝে মধ্যে রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়ছে।এর পাশাপাশি পাহাড়চড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যানসহ সেখানকার সরকার দলীয় আলোচিত এমপি বদির ঘনিষ্ঠ লোকজনও (যাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচারের অভিযোগ রয়েছে) রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন। তারাও রোহিঙ্গাদের থেকে যাওয়ার ব্যাপারে পীড়াপীড়ি করছেন। একজন নাগরিকের যা লাগে সবই তারা করে দেবেন, পাসপোর্ট করে দেবেন। তাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা প্রদানের মন ভোলানো প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে ক্যাম্পে ক্যাম্পে ঘুরে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর লোকজনও সে দেশের একটি এনজিওর হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আরবি হরফে লেখা সাইনবোর্ডধারী পাকিস্তানি এনওজিওর মাধ্যমে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন শুধু ক্যাম্পে যাচ্ছে। এই ক্যাম্পগুলোতে ২৫-৩০টি মসজিদ আছে। এসব মসজিদে নামাজের পর নিয়মিত আরবিতে বয়ান হচ্ছে। তা ছাড়া সভাও হচ্ছে। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা এতে আরবিতে বক্তব্য রাখছেন। অথচ এদের কাজ করার অনুমোদন নেই। তারা ভ্রমণ ভিসায় এসেই কাজে লেগে গেছেন।পাকিস্তানি বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যরা অপতৎরতা চালিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতা করাসহ দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। যাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এমন আশঙ্কা করছে বলে সূত্রটি দাবি করছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা আসছে, এখনো রাখাইনে দমন-পীড়ন চলার খবর মিলছে তাদের কাছে।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন