চট্টগ্রাম কলেজিয়েট হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান ইসফার কিশোর বয়সের ‘হিরোইজমের’ কারণে খুন হয়েছেন- বলছে পুলিশ।
এ ঘটনায় সদ্য কৈশোর পার হওয়া পাঁচ যুবককে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসে এ মন্তব্য করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর জামালখান এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হয় সরকারি কলেজিয়েট হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনান।
এতে জড়িত অভিযোগে ঘটনার একদিন পর বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
এরা হলেন- নগরীর হাজেরা তজু কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মঈন খান, সাব্বির খান, মুনতাছির মোস্তফা, ইসলামিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করা আব্দুল্লাল আল সাঈদ ও এবছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী হলি ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষার্থী এখলাস উদ্দিন আরমান।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মোস্তাইন হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার দিন দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পর অপর পক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন হয় আদনান।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা কিশোর ও সদ্য কৈশোর পার করা। গ্রেপ্তার মঈনের ছুরিকাঘাতে খুন হয় স্কুল ছাত্র আদনান।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জেনেছি, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে মহসিন কলেজের মাঠে খেলা নিয়ে আদনানের সাথে কিছু কিশোরের বিরোধ হয়।
এর জের ধরে মঙ্গলবার দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা রউফ বলেন, কিশোর বয়সের ‘হিরোইজম’ থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আদনান হত্যার ঘটনায় এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের আসামি করে বৃহস্পতিবার নিহতের বাবা আদনান আখতারুল আজম বাদী হয়ে একটি মামলাও করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি থানার এসআই ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার পর থেকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহসহ নানা দিক বিশ্লেষণের পর পুলিশ অভিযান শুরু করে।
তিনি জানান, ভোরে ফটিকছড়ি উপজেলার সমিতির হাট এলাকার একটি বাড়ি থেকে মঈন, সাব্বির, আরমান ও সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় মঈনের ব্যাগ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা ছুরিও উদ্ধার করা হয়।
তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নগরীর বহদ্দারহাট এলাকা থেকে মুনতাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান এসআই ইমদাদ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা পুলিশকে জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে আদনান ও তার কয়েকজন বন্ধু জামালখান এলাকায় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই ছাত্রকে ধাওয়া করে।
ধাওয়া খাওয়া দুই ছাত্র পালিয়ে গিয়ে ‘বড় ভাইদের’ (গ্রেপ্তারদের) জানায়। ওই সময় তারা এসে পাল্টা ধাওয়া দিয়ে আদনানকে ধরে মারধর করে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওইদিন আদনানকে ধরে সাব্বির তাকে পিস্তল টেকিয়ে হুমকি দেয়। আর আরমান, সাঈদ তাকে লাটি দিয়ে মারধর করতে থাকলে সে একটি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যায়।
এসময় মুনতাসির আদনানকে টেনে তোলার সময় তার পড়নে থাকা টি-শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং মঈন তাকে ছুরিকাঘাত করে।
ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে আদনান দৌঁড়ে খাস্তগীর স্কুলের দিকে পালিয়ে গেলে মঈন তখনও তাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে সে রাস্তায় পড়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন