বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পথে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনে বক্তৃতাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘আজ এ মাটিতে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করছি গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখেছি ২০০৮ সালে যেখানে ভারত, চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দা; সেখানে বাংলাদেশ অন্যতম এগিয়ে যাওয়া দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মধ্যেই সংকটে পড়তে হয়। বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষ, ছাত্র, যুবক, রাজনৈতিক কর্মী আন্দোলন করেছেন বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। যার ফলে বাংলা আজ আন্তর্জাতিক ভাষা এবং জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে।’
ভারতের সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পাঁচ দশক ধরে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, আজকের বাংলাদেশের অগণিত মানুষের ত্যাগ, আন্দোলন, তীতিক্ষা এবং আত্ম বসর্জনের মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীতে খুব বেশি দেশে এর নজির নেই। ভাষার জন্য,সংস্কৃতির জন্য প্রাণ ত্যাগের নজির। ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন এমন ইতিহাস খুব বেশি দেশে পাওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশ তা করেছে। একটা স্বাধীন জাতিসত্তার প্রতিষ্ঠা,তার মূল উৎপত্তি হয়েছে ভাষা- সংস্কৃতি, তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, তার জীবন চর্চা,তার সামগ্রিক, মানবিক পরিপ্রেক্ষিক,তারই উপর ভিত্তি করে একটি জাতি সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের মানুষ।’
প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন ঘোষনা করেছিলেন-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। গ্রেফতারের আগেও বলেছিলেন যতক্ষণ একজন আগ্রাসনকারী এ দেশে থাকবে ততক্ষণ যুদ্ধ চলবে। এই মুক্তির সংগ্রামে অসহ্য নির্যাতন, লাঞ্ছনা, মৃত্যুবরণ করে বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রার্থিত স্বাধীনতা পেলেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা পাওয়ার পর পরই আরেকটি বড় আঘাত আসল। ভারতবর্ষে যেমন আমরা স্বাধীনতা লাভের কয়েকমাসের মধ্যে মহাত্মা গান্ধীকে হারালাম। তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়ার তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে একদল ঘাতকের নৃশংস আক্রমণে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলেন। একটা নতুন দেশ সবে স্বাধীনতা পেয়েছে অসংখ্য সমস্যা,দেশ গড়ার সমস্যা,এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সমস্যা,দারিদ্র দূর করার সমস্যা,বেকারত্ব দূর করার সমস্যা। এ সব সমস্যার মধ্যে একটা জাতির জন্মলগ্নে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হল। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও এর নজির নেই।’
উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের হত্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের হত্যার পেছনে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কাজ করেছে আমি জানি না। ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিতদের কাছে নিবেদন করব, ব্রহ্ম দেশে (মিয়ানমার) অংসান সু চির পিতা জেনারেল অংসান ব্রাশ ফায়ারে নিহত হলেন। ১৯৬০ সালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী নিহত হলেন। ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী নিহত হলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলেন। ৩ নভেম্বর যারা মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তারা নিহত হলেন জেলখানার ভেতরে। পাকিস্তানে জিয়াউল হক নিহত হলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেয়া হলো। এই যে বিপুলসংখ্যক রাজনৈতিক হত্যা এর কারণ কী।এ অঞ্চলের মানুষকে জানতে হবে।’
প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘ব্রহ্মদেশে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসন চলেছে। এখন অবশ্য গণতন্ত্র আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই সামরিক শাসন আসে।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কোন সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৈন্যরা ব্যারাক থেকে বের হয়ে আসে?’
মুখার্জি বলেন, ‘এ বিপুল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের কারণ কী, এর পেছনে কোন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে তা আমাদের জানতে হবে।’
এক্ষেত্রে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত¡বিদ ও ইতিহাসবিদদের গবেষণায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন