দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। এই স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে যেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমিগ্রেশন পুলিশের সদস্যরা। অবৈধ লেনদেনে লিপ্ত হয়ে তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা চরম হুমকিতে ফেলছেন। পরিবর্তন ডটকমের সরজমিনে অনুসন্ধানে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে আর ভারত থেকে বাংলাদেশে এই স্থলবন্দর দিয়ে ৬-৭ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। এরমধ্যে ভারতগামী প্রতিটি বাসে যাত্রী আসলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কথা বলে যাত্রীপ্রতি২০০ টাকা পর্যন্ত তোলেন বাসের কন্ডাক্টর।
এরপর কন্ডাক্টর যাত্রীদের পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন সিলের জন্য নিজ জিম্মায় নেন। যাত্রীরা স্ব স্ব সিটে বসে থাকেন। কাস্টমসের কথা বলে তোলা যাত্রীপ্রতি ২০০ টাকা মূলত চলে চায় ইমিগ্রেশন পুলিশের পকেটে।
সরজমিনে দেখা গেছে, কন্ডাক্টর একসঙ্গে ৩০-৪০টি পর্যন্ত পাসপোর্ট নিয়ে যায় ইমিগ্রেশনের ভেতরে। সঙ্গে যাত্রীদের দেয়া টাকাও চলে যায় ভেতরে। আর যাত্রীরা অবস্থান নেন প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের বাইরে।
এরপর ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেই বাসের কন্ডাক্টর পাসপোর্টে ইমিগ্রেশনের সিল ও ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স নিয়ে চলে আসেন যাত্রীদের কাছে। স্ব স্ব নাম ডেকে যাত্রীদের হাতে ধরিয়ে দেন ইমিগ্রেশনের সিলকৃত পাসপোর্ট।
এবার ওই যাত্রী ভারতে যান কিংবা কাগজে-কলমে ভারতে অবস্থান দেখিয়ে দেশে থেকে কোনো অপরাধ করুন এটা যেন তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। অথচ এই পুরো প্রক্রিয়াটাই বেআইনি।
আইন অনুযায়ী, ভারতগামী প্রতিটি যাত্রীকে সশরীরে হাজির হয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। পাসপোর্টের ছবির সঙ্গে যাত্রীর ছবি তাৎক্ষণিকভাবে মিলিয়ে দেখাও বাধ্যতামূলক। কারণ একজনের পাসপোর্ট ব্যবহার করে অন্যজন বিশেষ করে কোনো অপরাধী যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে যাত্রীকে নানা রকমের প্রশ্ন করারও নিয়ম রয়েছে।
এছাড়া কোনো যাত্রী ইমিগ্রেশন সিল পেয়ে আর বাইরে বের হতে পারবেন না বলে নিয়ম রয়েছে। কারণ ইমিগ্রেশন সিল পাওয়ার পর যাত্রী যদি ভারতে গমন না করে দেশে অবস্থান করেন এবং হত্যাসহ কোনো ধরনের অপরাধ করেন তাহলে আইন অনুযায়ী তাকে ধরার উপায় নেই।
কারণ ইমিগ্রেশন অনুযায়ী তার দেশেই থাকার কথা নয়। তার পাসপার্ট বলবে, তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তাকে দেশের আইন ধরবে কিভাবে। অথচ এসবের কোনো তোয়াক্বাই করছে বেনাপোলের ইমিগ্রেশন পুলিশ। এসব অনিয়মকে নিয়ম বলেই চালিয়ে দিচ্ছেন তারা।
আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট যাত্রী ছাড়া পাসপোর্টে সিল দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। এছাড়া যাত্রীকে যাচাই-বাছাইয়ের পর নিশ্চিত হয়ে পাসপোর্টে ইমিগ্রেশনের সিল পড়ে গেলে, তিনি পাসপোর্ট নিয়ে আর কোনোভাবেই ইমিগ্রেশন থেকে বের হতে পারবেন না। তাকে ঠিক সেই মুহূর্তে ভারতে গমন করতে হবে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি মো. তরিকুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে এখানে যেসব অনিয়ম আছে, তা দূর করার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে প্রত্যেক যাত্রী স্ব স্ব পাসপোর্ট নিয়ে এসে ইমিগ্রেশন সিল নিতেন। কিন্তু এখন হঠ্যাৎ বাসের কান্ডাক্টররা যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন সিল নিচ্ছেন। এ নিয়ম কোথায় থেকে আসছে তা আমি জানি না। তবে ধীরে ধীরে এসবের পরিবর্তন হবে।
তরিকুল ইসলাম বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের সেবার নিয়মের পরিবর্তন আসবে বেনাপোলে। এখানে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পুলিশ পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন