সবুজবাগের দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের বটতলা প্রধান সড়কের সঙ্গে একটি ছোট রাস্তার সংযোগ আছে। সে রাস্তায় পয়োনিষ্কাশনের জন্য পাইপ বসাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
এই সুযোগে রাস্তাটি আরেকটু প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন যুবলীগের স্থানীয় নেতারা। কিন্তু এর জন্য তাঁরা দুই পাশের ২০টি বাড়ি ও প্লটের মালিকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে চাচ্ছেন। বাড়ির মালিকদের প্রশ্ন, রাস্তা বড় করার জন্য তাঁরা জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার টাকা দিতে হবে কেন?
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুবলীগের নেতাদের হাতে ইতিমধ্যে ১০ থেকে ১২টি বাড়ি ও প্লটের মালিক টাকাও তুলে দিয়েছেন। কারণ এই নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই।
এলজিইডির কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে রাজি হননি। নিয়মানুযায়ী, পয়োনিষ্কাশন নালা নির্মাণের পর এলজিইডি রাস্তাটি সংস্কার করে দেবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাসখানেক আগে বটতলা প্রধান সড়কে পয়োনিষ্কাশন সংযোগ নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেয় এলজিইডি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পয়োনিষ্কাশন সংযোগটি বটতলা প্রধান সড়ক থেকে ওই ছোট রাস্তা দিয়ে বেগুনবাড়ি খালে যাবে। কিন্তু পয়োনালা নির্মাণের আগেই বেগুনবাড়ি খালের দিকে যাওয়া রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন সরদার। এ জন্য রাস্তার দুই পাশের বাড়ি ও প্লটের মালিকদের প্রত্যেকের কাছে ৫০ হাজার টাকা করে চান তাঁরা। ইতিমধ্যে তাঁরা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা তুলেছেনও।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বটতলা প্রধান সড়কের শহীদবাগ জামে মসজিদ এলাকা থেকে দক্ষিণ দিকে চার ফুট প্রস্থের একটি রাস্তা আছে। আনুমানিক ৬০০ ফুট লম্বা রাস্তাটির দক্ষিণ মাথায় বেগুনবাড়ি খাল। তবে রাস্তার দুই পাশে তেমন বাড়িঘর নেই, প্লটগুলো এখনো নিচুজমি। রাস্তার উত্তর মাথায় ১০ ফুট প্রস্থ রেখে দুই পাশে ডোবায় বড় বড় বাঁশ পুঁতে বেড়া দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু এই কাজের ঠিকাদারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। শ্রমিকেরাও ঠিকাদারের নাম-পরিচয় বলতে চাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্লটের একজন মালিক বললেন, ‘এখানে আমার একটি প্লট আছে। তার সামনের রাস্তা দিয়ে একটি রিকশা চলতে পারে। এখন রাস্তা চওড়া করার নামে দুই পাশে মাটি ফেলা হচ্ছে। শুনছি, এটা ১০ ফুট চওড়া করা হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, জায়গা দেওয়ার পর টাকা দেওয়ার চাপ।’
একাধিক প্লটের মালিক অভিযোগ করেন, এখনো যাঁরা চাঁদা দেননি, তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।
টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন যুবলীগনেতা মাহমুদুল হাসান ও মুসলিম উদ্দিন সরদার। তাঁরা বলেন, এই গলি দিয়ে শুধু পয়োনালা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা জনগণের স্বার্থে রাস্তাটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। গলির দুই পাশের বাসিন্দারা যে যা পারছেন টাকা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করছেন। এখানে আমাদের স্বার্থের কিছু নেই; বরং আমাদের পকেটের টাকাও লাগছে।’ এ কাজের ঠিকাদার কে? জানতে চাইলে মুসলিম উদ্দিন সরদার বলেন, ‘এলজিইডির এক ঠিকাদারের কাছ থেকে আমরাই কাজটি নিয়েছি। আমরাই তদারকি করছি।’ তবে তাঁরা এলজিইডির ওই ঠিকাদারের নাম ও মুঠোফোন নম্বর দিতে রাজি হননি।
এদিকে এই পয়োনালা কোন পথ দিয়ে তা বেগুনবাড়ি খালে যাবে, তাও স্পষ্ট জানা যায়নি। এলজিইডির সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক প্রকৌশলীর কাছে তা জানতে চাইলে তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি।
গত বছরের ৯ জুন নিকারের সভায় দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে ৮টি করে ১৬টি ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী দক্ষিণগাঁওসহ ৮টি ইউনিয়ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় আসে। এর মধ্যে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, নালা, ফুটপাত, সড়কবাতি ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় ৭৩৪ কোটি টাকার কাজ শুরু করেছে ডিএসসিসি। বাকি ইউনিয়নগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে।
সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার পর এখন এলাকাটি ডিএসসিসির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তবে ইউনিয়নগুলোর প্রশাসনিক কাঠামো (চেয়ারম্যান ও মেম্বার) এখনো বহাল রেখেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। যোগাযোগ করা হলে দক্ষিণগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এইচ এস সোহরাওয়ার্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই এলাকায় একটি কাজ বরাদ্দ হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কারা কাজ পেয়েছে বা কীভাবে কাজ হচ্ছে, তা আমাকে জানানো হয়নি। খোঁজ নিতে গেলেও সমস্যা আছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন