শুক্রবার সকাল ১১টা। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি থেকে দুই নম্বর গেইট সড়কজুড়ে তীব্র যানজট। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফাঁকা থাকার কথা এ সড়কটির। চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দুই নম্বর গেইটের চশমা হিলের বাসভবনমুখী গাড়ির তীব্র চাপের কারণেই এ যানজট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই স্থানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য নুর আলম।
মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। রাতেই তাঁর মরদেহ নিয়ে আসা হয় তাঁর বাসভবন চশমা হিলে। ভোর থেকেই ওই বাসভন ঘিরে শুরু হয় হাজারো নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্খীদের ভিড়। কান্নায় ভেঙে পড়া মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মীদের মাতম ওই এলাকার আকাশকে করে তুলেছে ভারি।
সকাল আটটার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ ফ্রিজারে রাখা মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এক নজর দেখতে ভিড় জমান চশমা হিলের সামনে সরু রাস্তায়। সকাল ১০ টার দিকে তাকে দেখতে আসেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিন, সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর রফিকুল আলম, ইনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির উপাচার্য প্রভাস চন্দ্র বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
চশমা হিল ঘিরে হাজার মানুষের ভিড় সামলাতে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। প্রিয় নেতা চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেখতে নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের ভিড় চশমা হিলের সরু সড়ক পার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায়। পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, চট্টগ্রামের গণমানুষের অভিভাবক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মরদেহ চশমা হিলের বাসভবনের আনার পর হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়। সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ওই এলাকা ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মেঘনা সেতু এলাকায় যানজটে আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে। ভোর ছয়টা-সাতটার দিকে সড়ক পথে রওনা হওয়া নেতাকর্মীরা দুপুর সাড়ে বারোটায়ও চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারেনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সদস্য অমিত কুমার বসু বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তীব্র যানজটের কারণে ঢাকা থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে দেখতে রওনা হওয়া শত শত শুভাকাঙ্খী এখনো চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারেনি। আমি ভোর ছয়টায় গাড়িতে উঠেছি। সাড়ে বারোটায়ও মেঘনা সেতু এলাকায় আটকা পড়েছি।
এদিকে জুমার নামাজের পর বেলা আড়াইটায় চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকার দারুল ফজল মার্কেট দলীয় কার্যালয়ের সামনে সকলের শ্রদ্ধা নিবেদনের সুবিধার্থে মহিউদ্দিনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ছয় দফা দাবি আন্দোলন, মুক্তিযদ্ধে চট্টগ্রামের বিপ্লবী গাঁথা, চট্টগ্রামের আপমার জনতার অধিকার আদায়ের কণ্ঠটি চিরতরে নিশ্বেঃস হয়ে গেল। এ শোক বীর চট্টলা কাটিয়ে উঠতে পারবেনা। চট্টগ্রামের মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়া নেতার এ শূণ্যতা পূরণ হবে কিনা তা সময়ই বলবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন