বছরে বছরে বাড়ছে বাড়িভাড়া। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে চলছে ‘শেষহীন’ নৈরাজ্য। মালিকরা নানা অজুহাতে খেয়াল খুশিমতো বাড়িভাড়া বাড়াচ্ছেন। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ভাড়া বাড়ানো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ভাড়াটিয়ারা রয়েছেন মহাবিপাকে।
দেড় কোটি রাজধানীবাসীর সিংহভাগই ভাড়াটিয়া। বছর ঘুরছে আর বাড়ি ভাড়া দিন দিন বাড়ছে। এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তদারকি করার কেউ নেই। রাজধানীবাসীর আয়ের অধিকাংশই যাচ্ছে বাড়ি ভাড়ায়। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকরা যাবে কোথায়।
রাজধানীর মুগদা, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, মিরপুর, গুলশান, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও বছরের শুরুতে বাড়ির মালিকেরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।
ভাড়াটিয়ারা বলেছেন, ইতিমধ্যে তাদের কাছে এলাকাভেদে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন বাড়ির মালিকেরা। যা জানুযারি থেকে কার্যকর হবে। অপরদিকে বাড়ির মালিকরা বলছেন, হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। তাই এর প্রভাব বাসাভাড়ায় পড়েছে।
মুগদা এলাকার বাড়ির মালিক বাবলু মিয়া ব্রেকিংনিউজকে বলেন, দিন দিন নিত্যপণ্যের দাম, গৃহঋণের সুদ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে হোল্ডিং ট্যাক্স। সবকিছুর দাম বাড়লে বাড়িভাড়া বাড়বে না কেন? অন্যায্যভাবে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে না। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখেই বাড়িভাড়া বাড়ানো হচ্ছে।
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় তিন বছর ধরে ভাড়া বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন বেসরকারি চাকরিজীবী শাহীনুর রহমান। জানুয়ারি থেকে ১০০০ টাকা ভাড়া বাড়ানোর নোটিশ পেয়েছেন তিনি।
শাহীনুর ব্রেকিংনিউজকে বলেন, বছর গেলেই বাসার মালিকদের ভাড়া বাড়ানোর প্রবণতা দীর্ঘদিনের। ট্যাক্স, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়লে সবকিছুই চাপিয়ে দেয়া হয় ভাড়াটিয়াদের ওপর। যা বেতন পাই তার অর্ধেকই বাসাভাড়ায় চলে যাচ্ছে। এমন চলতে থাকলে আমাদের মত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকরা যাবে কোথায়।
এ বিষয়ে ভাড়াটিয়া পরিষদ সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্ট বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছিল। এখনো এ আইন সংশোধন করেনি সরকার। আমরা দাবি করছি আইন সংশোধন না করার পর্যন্ত যেন বাড়িভাড়া না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। ফলে বাড়ির মালিকরা নানা অজুহাতে বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছে।
গত ২৭ বছরে ৫০০ শতাংশ বাড়িভাড়া বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীর প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষই ভাড়াটিয়া। মাত্র ৫ শতাংশ বাড়িওয়ালা। অথচ এই সীমিত সংখ্যক মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয় ভাড়াটিয়াদের। রাজধানীবাসীর আয়ের ৬০-৭০ শতাংশই বাড়ি ভাড়ার পেছনে যায়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ব্রেকিংনিউজকে বলেন, বর্তমান বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ব্যবহারিক না, এটি বহুল অংশে অকার্যকর। এই আইনের মাধ্যমে সুবিধা নেয়া ভাড়াটিয়াদের জন্য দুরূহ। এর পরিপেক্ষিতে হাইকোর্টে মামলা হলে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দেয়। এই কমিশনের মাধ্যমে অযৌক্তিক বাড়িভাড়া বন্ধ করতে হবে।
সরকারই অনেক সময় বাড়িভাড়া বাড়ানো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিসেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, গত বছর পানি বিল ৩০ শতাংশ বাড়ানো এবং হোল্ডিং ট্যাক্সের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বাড়ির মালিককে ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। পাশাপাশি অযৌক্তিক বাড়িভাড়া বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন