‘বর্ষায় কাইরা নিছে নদী, অহন নিতাছে ড্রেজার। ২টা বাড়ি ১৫ ডিসিমল জায়গা ভাইঙ্গা নিছে রাক্ষসি বালু উডানোর মেশিন। অহন খাইব আমাগ ভিটা বাড়ি। মানুষ নিয়ে গেছিলাম, ওরা চিল্লাইয়া কয়, যারা ড্রেজার ভুগালে আইছে তাগ ছবি তুইলা রাখ, গাজা মদ রাইখা পুলিশে দিমু।’ এমন করেই বলছিলেন মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেরার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের শান্তি বেগম।
গোপালপুর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্ষার শুরুতে ধলেশ্বরী নদী কেড়ে নিছে অনেক জমি। কিন্তু বর্তমানে এ ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর গোপালপুর গ্রামের ১ কিলোমিটর জুড়ে নদীর পশ্চিম ও পূর্ব পাশে ৮টি ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। আর ২টি ড্রেজার বসানো হচ্ছে। এভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করতে থাকলে হুমকির মধ্যে আছে প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ী, ইদগাহ মাঠসহ অনেক স্থাপনা।
গোপালপুর গ্রামের প্রায় শতাধিক মানুষ শঙ্কিত আছেন তাদের আশ্রয়ের ভিটেবাড়ি নিয়ে। তারা জানান, স্থানীয় একটি শক্তিশালী মহল এভাবে বছরের পর পর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।
আর সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসন জানায়, চলতি মৌসুমে ৮-১০ বার ভ্রাম্যামান আদালত বসিয়ে কয়েকটি ড্রেজার পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ড্রেজার জব্দসহ অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে কয়েক লক্ষাধিক টাকা।
গোপালপুর গ্রামের মনুয়ারা বেগম জানান, ‘ড্রেজার বসানোর কারণে আমাদের বাড়ি ভাঙ্গার ভয়ে মেম্বারের নিকট গেছিলাম। মেম্বার বলেছে, তুমার বাড়ি ভাঙ্গব, তুমার ঘরের চাল মাথায় নিয়া থাক।’
একই গ্রামের বাদশা মিয়া জানান, গোপালপুর ধলেশ্বরী পারে যেভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উঠাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে এই পাড়ের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়ি ভাঙ্গার সম্ভাবনা আছে।
গোপালপুর গ্রামের এই ধলেশ্বরী নদীর পারে গোপালপুর গ্রামের মৃত জিন্নত বেপারী পুত্র মো: আতোয়ার হোসেন, মৃত সুলতান বেপারী পুত্র দেলোয়ার হোসেন দুলু, মৃত সর্দনের পুত্র ডা: আলম, হামিদের পুত্র মিষ্টার, মৃত সুলতানের পুত্র মেহের, রাজর গ্রামের মুশা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা করে আসছে।
এ ব্যাপারে ধলেশ্বরী নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলকারী আতোয়ার হোসেন অবৈধভাবে বালু উঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আমি বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে বালু উত্তোলন করছি, তাই কোনো বাড়ির ক্ষতি হচ্ছে না।
আলমগীর হোসেন জানান, ৮টি ড্রেজার দিয়ে বালু উঠাচ্ছে এবং আরও দুটি ড্রেজার দিয়ে বালু উঠালে দুই পারের অসংখ্য বাড়ি, গোপালপুর বাজার, মসজিদ ও ঈদগাহ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
গোপালপুর বাজার থেকে ট্রলারযোগে গিয়ে দেখা যায়, ধলেশ্বরী নদীর এক কিলোমিটার জুড়ে যেন বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ড্রেজার দিয়ে বালু উঠিয়ে তারা নদীর পারে একত্রিত করছে। আবার ড্রেজার থেকে সরাসরি ট্রলার করে নিয়ে যাচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসন গত ২ মাসে ১০টি অভিযান পরিচালনা করে ড্রেজার পুড়িয়ে এবং অর্থদন্ড করলেও কোনোভাবেই থামছে না এ বালু উত্তোলন।
স্থানীয়রা জানান, এ অঞ্চলে ধলেশ্বরী নদীকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা এতোটাই ক্ষমতাশালী যে, ভ্রাম্যমান আদালত বসালে তার পরের দিনই তারা পুনরায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে। তবে ঐ স্থানে যাবার পর সংবাদকর্মীরা কাজ শুরু করার পর দ্রুত ড্রেজার বন্ধ করে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে বরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হারুন অর রশিদ জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিবছরই বসতভিটা ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। এখনও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে আগামী সমন্বয় সভায় লিখিতভাবে জানাব।
সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ ফারজানা সিদ্দিকী জানান, সাটুরিয়ার ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি জানি। এ বছর একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ড্রেজার পুড়িয়েছি, জব্দ করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন