রংপুরের আলোচিত কলেজছাত্র আল আমীন নয়ন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নয়নকে নৃশংসভাবে হত্যার পর ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রেললাইনে লাশ ফেলে ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পিবিআই রংপুর জেলার চৌকস অফিসারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ঘটনার তিন বছর পর মামলার দুই আসামি গ্রেফতার, একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন হলো।
.
গ্রেফতারকৃত দুই আসামি হলেন পীরগাছা থানাধীন তাম্বুলপুর গ্রামের মৃত জলিল ফকিরের ছেলে জুয়েল (২৮) এবং একই গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে তুষার (২২)। এর মধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামি জুয়েল শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
পিবিআই রংপুর-এর তদন্ত সূত্রে জানা যায়, পীরগাছা থানার সোনারায় গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল আমিন নয়ন (২২)-এর সাথে তাম্বুলপুর ফকিরপাড়া গ্রামের জলিল ফকিরের মেয়ে রুনির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেনি মেয়ের পরিবার। এ কারণে ঘটনার বেশ কিছু দিন আগে থেকে আসামিরা ভিকটিম নয়নকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। মামলার ঘটনার দিন ০৬/০৪/২০১৪ইং তারিখে ভিকটিম নয়ন গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ছুটিতে বাড়িতে আসে। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রেমিকা রুনি মোবাইলে ভিকটিম নয়নকে তার বাড়িতে আসতে বললে নয়ন তার বন্ধু গ্রেফতারকৃত আসামি তুষারসহ প্রেমিকা রুনির বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর গ্রেফতারকৃত আসামিসহ অন্য আসামিরা তাদের দুজনকে একসাথে দেখতে পেয়ে ভিকটিম নয়নকে আটক করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রুনির বাড়ি থেকে কিছু দূরে নিয়ে যায়।
সেখানে যাওয়া মাত্র এজাহারভুক্ত একজন আসামি ভিকটিম নয়নকে ছোড়া দিয়ে বুকে আঘাত করে। একপর্যায়ে নয়ন হাত দিয়ে ছোড়া ধরার চেষ্টা করলে তার হাত কেটে যায়। এসময় অন্য আসামিরা নয়নকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার হাত এবং পা চেপে ধরলে ওই আসামি নয়নকে গলাকেটে হত্যা করে। পরে তারা নিজেরাই একটি ভ্যান সংগ্রহ করে নয়নকে বস্তায় ভরে অন্নদানগর রেলব্রিজের দক্ষিণ পাশে রেললাইনে নিয়ে যায় এবং ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে লাশটি রেললাইনে ফেলে কাটা নিশ্চিত করে সবাই বাড়ি চলে যায়।
পিবিআই রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছারের নেতৃত্বে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হোসেন আলী ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারভুক্ত আসামি জুয়েলকে গত ২৩ নভেম্বর গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িয়ে অন্য আসামিদের নাম প্রকাশ করে এবং বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ নভেম্বর অপর আসামি তুষারকে গ্রেফতার করা হয়।
পিবিআই রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদল্লাহ কাওছার জানান, মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে ঘটনার সাথে জড়িত অন্য আসামিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন