দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে কথিত প্রাইভেট হাসপাতাল আর ক্লিনিক। এসব হাসপাতাল আর ক্লিনিকে রোগীদের কাছ থেকে যেমন বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে, তেমনি অপচিকিৎসার শিকার হয়ে প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে রোগী। এনিয়ে প্রায়শই হামলা-ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনাও ঘটে। হবিগঞ্জ শহরের চাঁদের হাসি হাসপাতালে এ ধরনের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে এখন মৃত্যুপথে রয়েছেন এক গৃহবধূ। মল্লিকা দাস (৩৮) নামে ওই গৃহবধূর সিজার করানো সময় পেটে তোয়ালে রেখে সেলাই করে দেন চিকিৎসকরা।
.
জানা গেছে, সিজারের পর থেকে কোনো মতেই সুস্থ হচ্ছিলেন মল্লিকা দাস। যতই দিন যাচ্ছিল তার অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শুক্রবার রাতে প্রায় তিন মাস পর ফের অপারেশন করে তার পেট থেকে বের করা হয় তোয়ালেটি। তবে ওই গৃহবধূর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গৃহবধূ মল্লিকা আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও গ্রামের সঞ্জিব সরকারের স্ত্রী। তারা বর্তমানে শহরের শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা।
মল্লিকা দাসের স্বামী সঞ্জিব সরকার জানান, গত ২৩ আগস্ট সিজার করানোর জন্য তার স্ত্রীকে শহরের চাঁদের হাসি হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি করানো হয়।
ওই দিনই চাঁদের হাসি হাসপাতালের চিকিৎসক এস কে ঘোষকে দিয়ে তার স্ত্রীর সিজার করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সিজারের কয়েকদিন পর থেকেই পেটে ব্যথা অনুভব করতে থাকে সে। দিন যত গড়ায়, ব্যথা তত বাড়তে থাকে।
মল্লিকার স্বামী বলেন, প্রচণ্ড ব্যথা অুনভব করায় বেশ কয়েকদিন পর আবারও চাঁদের হাসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এসময় ডাক্তার মল্লিকাকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষায় তার পেটের ভেতরে কিছু রয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
পরে আবারো অভিজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শুক্রবার রাতে ডা. আবুল কালামের তত্ত্বাবধানে ফের শহরের সিনেমা হল এলাকার হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে মল্লিকার অপারেশন করানো হয়। অপারেশনের এক পর্যায়ে মল্লিকার পেটের ভেতর থেকে একটি তোয়ালে বের করে আনা হয়।
পেটের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া আস্ত একটি তোয়ালে দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। বিষয়টি জানার পর রোগীর কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে ডা. আবুল কালাম বলেন, ওই গৃহবধূর পেটে কাপড় থাকার ফলে ইনফেকশন হয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক এস কে ঘোষ বলেন, ‘এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। তবে ভুলবশত হয়ে থাকতে পারে।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ চাঁদের হাসি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিষয়টি নজরে আনলে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. সুচিন্ত চৌধুরী জানান, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন