বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তিনি। কিন্তু লেখাপড়া তাঁর একমাত্র কাজ নয়। অপেক্ষায় থাকতেন কখন আসবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষা সময়। পরীক্ষা এলেই প্রশ্ন ফাঁস জালিয়াতি করে অর্থ উপার্জন করতেন। পরীক্ষার শুরু সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সাহায্য করে আসছিলেন। ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে পরীক্ষার্থীদের উত্তর জানিয়ে দেওয়া হতো। এর বিনিময়ে একেকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করতেন। তিন বছর ধরে এভাবে লাখ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর নাম নাভিদ আনজুম ওরফে তনয়। ২৪ বছর বয়সী তনয়কে এ কাজে সহযোগিতা করতেন এনামুল হক ওরফে আকাশ (১৯) নামের এক তরুণ।
তনয় ও এনামুলের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সাত শিক্ষার্থীকে আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এঁরা হলেন তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির, প্রসেনজিৎ দাস, রিফাত হোসাইন ও আজিজুল হাকিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে প্রক্টোরিয়াল টিমের সহায়তায় এঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে সিআইডি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সিআইডি কার্যালয়ে এই সাতজনকে হাজির করা হয়।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগের রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অমর একুশে হল ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়। আদালতে রানা ও মামুনের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ডিজিটাল ডিভাইস সরবরাহ ও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার মূল হোতা হিসেবে তনয়ের নাম আসে। ওই স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে ১ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও থেকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিকে আটক করা হয়। নাফির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় চক্রের আরেক হোতা আনিনকে।
সহযোগীদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে গা ঢাকা দেন তনয়। এ কথা জানিয়ে মিনহাজুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৪ নভেম্বর রংপুরের কামাল কাছনা বাজার এলাকা থেকে তনয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে ডিজিটাল জালিয়াতির তথ্য জানান তনয়। জিজ্ঞাসাবাদে ২০১৫ সাল এবং ২০১৬ সালে টাকার বিনিময়ে ডিজিটাল ডিভাইস এবং পরীক্ষার আগে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে অবৈধ উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে সহায়তা করেছেন। তিনি ও আকাশ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে উত্তর বলে দিতেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন