মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেনে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, অর্থ লেনদেনের এই পদ্ধতিতে ‘লুটপাট ও ডাকাতি’ হচ্ছে। নিয়ামক পরিমণ্ডল (রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক) না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশাল মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, “বগুড়ায় আমার এক শিক্ষককে কিছু টাকা পাঠাইতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গুণে গুণে ২ শতাংশ কেটে রেখেছে। তারপর টাকা তুলতে গেলে শিক্ষকের কাছ থেকেও টাকা কেটে নিয়েছে। এই রকম লুটপাট ও ডাকাতি করছে। যেহেতু কোনো নিয়ামক পরিমণ্ডল নেই, তাই কাউকে ধরা যাচ্ছে না।”
ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কাটা হয় বলে জানান তিনি। রেগুলেটরি ফ্রেইম ওয়ার্ক ছাড়া বাজার অর্থনীতি চলছে এবং এতে প্রবৃদ্ধি বাড়লেও তা আশানুরূপ হবে না মন্তব্য করেন তিনি।
“এসময় মোবাইল ফান্ড ট্রান্সফার এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর তীব্র ভাষায় নিন্দা করি, ধিক্কার জানাই বলে মন্তব্য করেন ফরাসউদ্দিন ।”
দেশে ই-কমার্সে কেনাকাটায় কর না থাকার সমালোচনা করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি ফরাসউদ্দিন বলেন, “সেখানে ট্যাক্স বসানোর জন্য পাঁচ বছর ধরে বলছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।”
ব্যক্তি পর্যায়ে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার পড়ে আছে, বাংলাদেশের মুদ্রা অবমূল্যায়ন হতে বাধ্য। যখন অবমূল্যায়ন হবে তখন স্বল্প সুদেও হবে না, অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।”
সুনির্দিষ্ট নিয়ামক না থাকায় আগে বিদেশ থেকে যারা ঋণ এনেছিলেন তাদের ৯০ শতাংশই নানা কৌশলে অর্থ পাচার করেছে বলেও অভিযোগ করেন ফরাসউদ্দিন।
“২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে বাংলাদেশ থেকে ছয় হাজার ৫০০ কোটি ডলার দেশ থেকে পাচার হয়েছে। দেশের ভেতরে বিনিয়োগে কিছু সমস্যা আছে, থাকতেই পারে। তাহলে কী দেশের বাইরে টাকা পাঠিয়ে দেবেন?” শুধু বিচার-আচারের মাধ্যমে দুর্নীত দমন সম্ভব নয় বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় দুই কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও এএফএম আমিনুল ইসলাম, সচিব শামসুল আরেফিন সভায় বক্তব্য দেন।
শীর্ষনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন