প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন প্রথমবারের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন করেন। যা প্রায় সব মহলেই প্রশংসা পায়। আর তাই কুসিক নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল, একইভাবে রংপুর সিটি করপোরেশনেও (রসিক) মোতায়েন করবে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
.
রসিক নির্বাচন উপলক্ষে রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে ইসির উপস্থাপিত কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রে যে হারে ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে একই হারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা যেতে পারে।
কুসিক নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রের জন্য ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের জানান, রসিকে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে জন্য ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের জন্য ২৪ জন করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
কুমিল্লা সিটির আদলে এই সিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যবহার করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, কুমিল্লার আদলে না। তবে রংপুরে একই ধরণের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হচ্ছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির আশঙ্কার কোনো কারণ নেই জানিয়ে সিইসি বলেন, তাদের (বিএনপির) আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। আমরা অবশ্যই অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করবো। নির্বাচনে যথেষ্ঠ সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।
সম্প্রতি রংপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নেতিবাচক প্রভাব সিটি নির্বাচনে পড়বে কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, না, তার কোনো প্রভাব এ নির্বাচনে পড়বে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্কার নির্দেশা হচ্ছে- প্রত্যেক প্রার্থী সমান সুযোগ পাবে। আমাদের লক্ষ্য কোনো দল বা প্রার্থী নয়, ভোটার। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন ও ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য যা যা করার সবই করতে বলেছি। ভোটাররা যেন নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে এবং প্রার্থীরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে সেজন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো ধরনের পরিকল্পনা নেই ইসির। বৈঠকের কার্যপত্রে ওই নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে ও পরে মোট ৪ দিনের জন্য মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র্যা ব, বিজিবি ও পুলিশের টিম রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ১৮ প্লাটুন বিজিবি, র্যা বের ৩৩টি টিম এবং পুলিশের ১১টি টিম মোতায়েন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোর্স হিসেবে ৩৩টি পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের টিম রাখা হবে। সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১০জন অস্ত্রধারীসহ মোট ২২জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১২জন অস্ত্রধারীসহ ২৪জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে।
আরও জানা যায়, বৈঠকে অংশ নেয়া রংপুর অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে। কোনো ধরনের শঙ্কা নেই। ওই বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে জঙ্গি হামলার শঙ্কা নেই, তবুও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা ছক সাজাতে হবে।
তারা আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলের বাসিন্দারা শান্তিপ্রিয় ও সহজ-সরল। তবে কোনো কারণে তারা ক্ষুব্ধ হলে তাদের সামলানো কঠিন- এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে। সম্প্রতি সংখ্যালঘু হামলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন হয়, সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।
সিইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে যা যা করার দরকার তা সবই করবেন।
উল্লেখ্য, রংপুর সিটি করপোরেশনে বর্তমানে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে ৩৩টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১১টি। ভোটকেন্দ্র ১৯৩টি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রংপুরের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২২ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩ ডিসেম্বর। ৪ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে অনুষ্ঠানিক প্রচার। আর ভোট হবে ২১ ডিসেম্বর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন