স্মৃতির দহন (গল্প পর্ব এক)

লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ২৯ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৫৫:০৫ রাত

নিঝুম রাত কোথাও কারো সারা শব্দ নেই ।

মধ্যাকাশে চাঁদ স্নিগ্ধ হাসি হেসে অন্ধকার পৃথিবীকে আলোয় আলোয় ভরিয়ে দিচ্ছে । নূরান ও আব্দাল্লাহ নিঃশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। এমনি একটি সূযোগে নাদিরা সন্তানদের কে রুমে রেখে ছাদে গিয়ে একটি চেয়ারে বসলো । সামনে কয়েকটি ফুলের টব তাতে হাসনাহেনা রজনীগন্ধা গোলাপ ফুটেছে। ফুলের সূবাসে সমগ্র ছাদটি যেনো সূবাসিত হয়ে উঠেছে। অন্যরাতের মত আরএকটি রাতও শেষ হবার পথে।

দানা দানা কস্টমেশা বিবর্ণ প্রতিটি মুহুর্ত । কিছুতেই যেনো সময় গুলো কাটতে চায়না । প্রতি দিন সকাল দুপুর তার পর বিকেল গড়িয়ে সন্ধা আসে বড় ধীরগতিতে । বুকের গভিরে জমে আছে পাহারসম বিসন্নতা ,উদাস চোখে নাদিরা আকাশের ঐ রূপালী চাদঁটার দিকে তাকায় । মনের যত আকুলতা এক এক করে বলতে চায় তাকে ,আবার ভাবে ’ তার এতসব দুঃখবেদনার কাহানী শোনে যদি ঐ চাঁদ আকাশের নীলিমায় মূখ লুকায় ? তাহলে যে এই আলো ঝলমলে রাতটিতে আধাঁর নেমে আসবে যেমনি করে একটা অশুভ কালো অন্ধকার এসে নাদিরার জীবনটা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে । একসময় তার এই বিশাল বাড়িতে ছিল আনন্দোঘন পরিবেশ ;খুশীর বন্যা বইতো প্রতিদিন প্রতিটিক্ষণ তার এই ছুট্রপরিবারে । স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে জীবনের টুকরো টুকরো সুখময় ঘটনাবহুল দিনগুলির কথা । বারটি বছর কেটেগেছে তবুও নাদিরার কাছে মনে হয় সে দিনের কথা । সেই কলেজে যাওয়া প্রতিদিন সেই গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল ছেলেটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা ” চোখে চোখ তারপর কথা । ভাল লাগা থেকে হয়ে গেল ভালবাসা ।

উসামা সত্যি একজন উদারমনা সৎচরিত্রের অনন্য বৈশিষ্টের সূপুরুষ ছিল। গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা প্রশস্ত ছাতি বাহুদয় অত্যান্ত সরল ;নিতম্ব উরু পেশিবহুল ঘারগর্দান ইশৎ লম্বা ধরনের। নাদিরা তার বিশ্ময়মূর্ত সুন্দর্য্যে মূগ্ধহয়ে ভাল বেসেছিল উসামাকে । উসামা নিজেও নাদিরার প্রেমের জালে আটকে গিয়েছিল। নাদিরার মত নীল নয়না সোনালী চুলআর মূখবয়ব অত্যান্ত চিত্তাকর্ষক এমন একজন ধনীর দুলালীর প্রেম নিবেদন কিছুতেই প্রত্যাক্ষান করতে পারেনী উসামা । হঠাৎ করেই একদিন মূখো মূখী হতে হলো উসামাকে শহরের সূনাম ধন্য শিল্পপতি আসিফ চৌধুরীর সম্মুখে । নাদিরা ছিল চাপা স্বভাবের ,মূখফোটে বাপকে কিছু বলার সৎ সাহস ছিলনা তার মোটেই । বাবা আসিফ চৌধুরী মেয়ের উৎফল্লতা আর চঞ্চলতা দেখে কিছুটা আচকরতে পেরেছেন যে; তার মধ্যে কেমন যেন একটা পরিবর্তন এসেছে । মেয়েকে কাছে পেয়ে স্নেহের সূরে বললেন ”

- মা”রে ! আমি কিন্তু তোর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি ,বলতো মা ব্যাপার কি ?

-না কিছু না বাবা ! আমি তো আগের মতই আছি ! লজ্জায় একে বারে লাল হয়ে গেছে নাদিরা ।

-বাবার চোখে কি ফাঁকি দেওয়া যায় মা? তোর মা মারা যাবার পর মায়ের আদর বাবার স্নেহ সবইতো আমি দিয়েছি !

শোন কাছে আয় ” তোর মত বয়স আমিও তো পার করে এসেছি ! বাবা হেসে বললেন । এবার নাদিরার একটু লজ্জা ভাঙ্গলো ।

-বাবা তুমি রাগ করবেনা তো ? চৌধুরী অভয় দিয়ে বললো ,আমি কি কখনো তোর কোন ব্যাপারে রাগ করেছি ? তুই এখন বড় হয়েছিস,দেশের সব চেয়ে বড় বিদ্যাপিঠে পা দিয়েছিস, আমার বিস্বাস তুই যা করবি বুঝে শোনেই করবি। তবে আমার দাবি হলো লেখা পড়া কিন্তু তোকে শেষ করতেই হবে।

নাদিরা বাবার বুকের সাথে একদম মাথা চেপে একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে”

-আমি তোমার বুকে মাথা রেখে বলছি বাবা, এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিন্ত থেকো।

-তা ছেলেটি নিশ্চয়ই বড় বিজনেছ ম্যান। এক সময় বাসায় নিয়ে আসনা পরিচয়টা করে নেওয়া যাবে। নাদিরা নিরব !

-কিরে কিছু বলছিস না যে ? আমি কোন ভুল কথা বলে ফেল্লাম না তো?

Ñবাবা!সে ছেলেটি খুবগরিব, চাষাবাদ করে সংসার চলে,আবার থেমে গেল নাদিরা।

-বল আর কী?

টিউসানী করে লেখা পড়ার খরচ চালাচ্ছে, জানো বাবা ? ওর কষ্ট দেখে আমার খুব মায়া হয়। নাদিরার চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্র“ মুক্তা দানার মত ঝরে পড়লো।

চোখের অশ্র“ মুছে দিয়ে আসিফচৌধুরী স্নেবাৎসল্য স্বরে বললেন”

-পাগলী মেয়ে অদের কিছু নেই তাতে কি হয়েছে, আমার যা কিছু রয়েছে এসবইতো তোদের। ঠিক আগামী কাল ক্লাশ শেষে অকে বাসায় নিয়ে আসবি সাথে করে ’বলেই পিঠে মৃধু আঘাত করে তিনি তার রুমে চলে গেলেন। নাদিরা পরদিন উসামাকে নিয়ে বাসায় এল ঠিক কিন্তু এমনএকটা পরিস্থিতির অবতারনা হবে তা কখনো সে কল্পনা করেনি ।

সে ভেবেছিল বাবার সবকথা মেনে নিয়ে অনাগত সুন্দর ভবিস্যত গড়তে উসামা অবশ্যই আগ্রহী হবে ।

উসামা চৌধুরীর সাথে প্রথমবার মূখোমূখী হলেও তার মধ্যে কোন ভয়ভীতী বা কোনরকম ইতস্ততার ভাব ছিলোনা , কৌশল বিনিময় এবং প্রাথমিক কথা গুলো স্বশ্রদ্ধেই শেষ হয়েছিল । যখনি চৌধুরী তার লেখাপড়ার খরচ এবং সুন্দর ভবিশ্যত গড়ার লক্ষ্যে আর্থিক সহযোগিতা করতে চাইলেন তখনি উসামা তার তিব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললো ”

আমি আপনার নেক নিয়তের প্রশংসা করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি ! আমি নিজের প্রচেষ্টায় জীবন গড়তে চাই ,বাস্তবতার মূখোমূখী হয়ে লড়াইকরেই প্রতিষ্ঠিত হবো । নাদিরা পাশেবসে কথাপোকথন শুনছিল আর আঙ্গুল কামড়াচ্ছিলো ।

-সাবাস বৎস সাবাস ! বুকের সাথে আলিঙ্গন করলেন চৌধুরী । এমনি একজন আত্মপ্রত্যয়ী আর আত্মমর্যাদাশীল ছেলেই আমি খূজছিলাম বেটা !

-নাদিরা খাদিজা বেগমের হাত থেকে চায়ের ট্রে রেখে দিয়ে তাকে চলে যেতে ইশরা করলো ”নিজহাতে চা তৈরীকরে এক কাপ উসামাকে আর এক কাপ বাবাকে দিতেই চায়ের কাপে মূখ দিতে দিতে নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত কাজের প্রয়োজনে আজকের ম্ত উঠতে চাইলে চৌধুরী তাতে সম্মতি দিলেন । নাদিরা তাকে একটুএগিয়ে দিতে গেট পর্যন্ত যেতেই

-আর যেতে হবেনা তুমি পরিশ্রান্ত ! রুমে গিয়ে ফ্রেশহয়ে বিশ্রাম করগে যাও !

-আমি পরিশ্রান্ত আর তুমি বুঝি পরিশ্রান্ত নও ? উসামা ! আজ বিকেলটা না হয় থেকে যাও প্লিজ ! এখন আর কিষের ভাবনা ? রাজ্য জয় তো করেই ফেলেছ ।

-শুধু রাজ্য জয় করেই খান্ত হবো ভেবেছ ? আমার এই ছুট্র রাজ্যটিকে একটা সামরাজ্যে পরিনত করতে হবে যে” এর রসদ যুগাতে হবেনা ? øিগ্ধ হাসিহেসে’ আসি তাহলে আল্লাহ হাপেজ ! উসামার চোখেমূখে সে দিন যে মিষ্টি øিগ্ধ হাসি দেখেছিলো ’ নাদিরা এখনো তা ভুলতে পারেনি ।আকাশের পূর্ণিমার চাঁদ তখনো তার সাথে জেগে রয়েছে ’ এমনি কত মধু চন্দ্রিমা রাতি উসামার সাথে গল্পকরে কাটিয়েছে ” অথচ উসামা আজ যোযন যোযন দুরে । ইচেছকরলেও তার সামনে যাওয়া যাবেনা ’ ধরা যাবেনা ছুঁয়া যাবেনা । নিয়তি যেন তাদের মাঝখানে সূউচ্চ একটি প্রাচীর দাড়করিয়ে দিয়েছে। যে প্রচীর ডিঙ্গানোর কারো সাধ্যেনেই । এজন্য দায়ী নাদিরা নিজেই ;তানা হলে প্রাচুর্য্য আর মিথ্যে আভিজাত্তের অহংকারে পৃথিবীর সবচেয়ে আপন যে মানুষটি’ তাকে কি কেও কখনো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ?

যে মানুষ টি তার আত্মমর্যাদায় নিজেই সূমহান মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত কেন তাকে তার মর্যাদার সূউচ্চ পর্বতসৃঙ্গ থেকে নামানোর মিথ্যে অপচেষ্টা করছিলো নাদিরা ! যার মাশূল দিতে হচ্ছে বিগত বারটি বছর ধরে । যে ভুল সে করেছে আজীবন অনুসূচনার আগুনে দগ্ধহতে থাকবে আর সে আগুন যেনো হৃদয়কে স্পর্শ করেছে । এই সুন্দর পৃথিবীর আলো বাতাস রুপরস গন্ধ আর অশেষ নিয়ামত থেকে বনিঞ্চত হয়ে খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় দেহত্যাগ করেছেন বাবা আসিফচৌধুরী । উসামার খুব ইচ্ছে ছিলো নিজের পরিশ্রম দিয়ে গড়া ছায়া ঢাকা পাখীর কোলাহলে মূখোরিত গ্রামেই বাস করবে নাদিরা কে নিয়ে । কিন্তু রগাক্রান্ত শশুরের শাররীক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এই মহানুভব ব্যক্তিকে ছেড়ে যেতে পারেনি উসামা ! চৌধুরী সাহেব নিজেও নাদিরার চাইতে বেশি ভাল বাসতেন উসামাকে” শেষ সময়ে মেয়ের অসাভাবিক আচরন তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে । বাকশক্তি হারিয়ে মেয়ে ও মেয়ে জামইয়ের দামপত্ত জীবন অসুখী দেখে নিরবে অশ্র“ ফেলেছেন ! এজন্য কিছুটা দায়ী সে নিজেও কারন তার কোম্পনীর গুরুত্ব পূর্ণ পদটি মেয়ে নাদিরাকে দিয়েছিল আর একারনেই তার অহমিকার প্রাসাদ গগনচুম্বিহয়ে উঠেছিল । ঐ দিন উসামা যে জ্বালাময়ী কথা গুলি বলে নাদিরাকে তালাক দিয়ে চলেগিয়েছিল সেদিন চৌধুরীও তার রাগ খুব প্রকাশ করতে নাপেরে এপথিবীর জঞ্জাল এড়িয়ে চীর বিদায় নিয়েছিলেন । নাদিরার চোখে সেই করুন দৃশ্য আজ আবার পুনরায় এযনো দৃশ্যায়িত হচ্ছে ’মনে হচ্ছে উসামা তার পিতার পায়ের কাছে বসে বলছে ”বাবা ! আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই । আমি ওকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম বাবা ! কিন্তু সে আমাকে নিয়ে সূখীহতে পারলোনা । আমাকে পুতুলের মত নাচাতে চাইলে কিহবে ? আমি রক্তমাংসে গড়া মানুষ পুতুল নই । যতদিন বেচে থাকবো আত্ম মর্যাদার সাথে বাচবো আল্লাহর দাসত্ব ছেড়েতো স্ত্রীর দাসে পরিনত হতে পারিনা ? আপনার কথা মনে থাকবে ’আল্লাহ আপনাকে সুস্থ্য করে তুলুন এই দোয়া করি । আপনি অনেক সময় বলতেন দুনিয়াটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র তবুও আমি এখান থেকে ভীরু কাপুরুষের মত পলায়ন করছি কারন আমি আমার ভালবাসাকে রক্তাক্ত করতে চাইনা ” আপনি ওর সাথে ওর মনপুত কাওকে বিয়ে দিবেন যিনি ওর কালচারের সাথে নিজেকে মানিয় নিতে পারবেন। যাবার বেলায় একটা কষ্ট নিয়ে যাচ্ছি আপনার মেয়ে সন্তান দুটোকে রেখে দিলো ! ওরা বাবার পরিচয় ছাড়াই বড় হবে এটা বাবা হিসেবে সত্যি আজীবন আমাকে পিড়া দিবে । একটা অনুরুধ ওরা বড় হয়ে যদি কোন দিন আমার কথা জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবেন তোদের বাবা মারা গেছেন ! এতেই আপনার মেয়র কল্যাণ । আপনাদের কল্যাণ কামনাই আমার জন্য প্রেরনা যুগাবে ভবিশ্যত পথ চলার ।

বিষয়: বিবিধ

১৯৪৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347636
২৯ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:৪০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

মনে হলো গল্পের বই পড়ছি, সাহিত্যের মান অতি উঁচু যা অনেক ভালোলাগা দিলো!

দেখি পরের পর্ব কই নিয়ে যায়!

শুকরিয়া।
347702
২৯ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১১
এসো স্বপ্নবুনি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।সত্যি এমনি ভাবে উত্সাহিত্যকরতে বন্ধুরা অনেকেই কৃপণতা করে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File