স্মৃতির আঙ্গিনা জুড়ে সেই যে’ সোনাঝরা দিন গুলো ”

লিখেছেন লিখেছেন এসো স্বপ্নবুনি ২৭ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:১৭:১৭ রাত



সাগরের বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে, সূর্য ডুবার মনরোম দৃশ্য সত্যি মুগ্ধকর! গুধূলির লাল রং হৃদয়ে দোলা দেয়। জেদ্দাস্থ লৌহিত সাগর আমরা যেটি আরব সাগর বলে জানি। সেখানে প্রতি বৃহস্পতিবার একাই যেতাম! সেখানে গিয়ে আছরে পরা ঢেউয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে প্রতি দিন! আকাশ আর সাগরের এ মিতালী প্রতি নিয়তই আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি সাগরকে দেখেছি কত বিভঙ্গে। অতলান্ত সমুদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করবার চেষ্টা করেছি। একটা কালো বড় পাথর! তার উপর পাঁ তুলে বসা ক’টি শিশু। সব বয়েসী লোক চারপাশে কোলাহলমূখর! অনেকে আবার মাছ ধরায় ব্যস্ত। কেউ আবার প্রীড বোটে ঘুরছে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে।

মাঝে মধ্যে সাগরের ঢেউ দুষ্টুমির ছলে সহসা এসে শরীর ভিজিয়ে দিয়ে যায়। সাগরের হাত ছানি আর উত্তাল ঢেউ স্মরণ করিয়ে দেয় সেই কৈশরের দূর্দম সময় গুলির কথা। আজ কেন যেন শৈশব কৈশরের সেই ফেলে আসা সোনা ঝরা দিন গুলোর কথা বার বার মনে পড়ছে। ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে স্মৃতিময় সোনালী দিন গুলোতে। কাশ ফুলে ফুলে ভরা নদী চর। সবুজ বুরো ধান নদী পার ঘেসে। পাকা ধানে বাবুই পাখীর ঝাঁকে ঝাঁকে উঠা-নামা।

সেই যে প্রতি দিন দীর্ঘ সাত মাইল পথ পায়ে হেটে স্কুলে যাওয়া - আসা! সেই খেঁয়া পারাপারের বিড়ম্বনার কথা মনে হলেই সবার আগে মনে পরে জীর্ণ শীর্ণ পোশাকের সেই মদন মাঝির ফ্যাকাশে চেহারাটা! কতই না আনন্দের ছিল সেই দিন গুলি” বৃষ্টিমূখর সকাল! কালবৈশাখীর দাপট গ্রীষ্মের কাঠ ফাটা রোদ আর শীতের হিমেল বাতাসে দোলা কলমি-লতা, বসন্তে কুকিলের মন মতানো কুহু-কুহু ডাক আরও কতকি? আজ খুব করে মনে পড়ছে বিলকিস আপার কথা! তিনি প্রায়ই বলতেন” তুমি হাসলে তোমার দাঁতগুলো খুব ভাল লাগে। শিল্পী, রাণী, খুশী, নাসরিন ওদের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ছাত্রজীবনের শেষের দিকে ।

দেবাশিষ, সুকুমার, আলমগীর অদের অতি দুষ্টুমিতে যদিও খুব রেগে যেতাম তবুও হৃদয়ের বাতায়নে অদের মূখুচ্ছবি দেখতে পাই। আজও ভুলতে পারিনা অদের হাস্যজ্জোল মূখ।

১৯৮৭ সন ! এস.এস.সি পরিক্ষার পর পাল্টে যায় আমাদের প্রত্যেকের চলার গতিপথ। সময়ের দ্রুত আবর্তনে আর প্রয়োজনের নির্মম ঝড়ের কষাঘাতে আমরা প্রত্যেকেই ছিটকে পরেছি কর্মস্থল নামের বিভিন্ন গ্রহে। সুদীর্ঘ কুঁড়িটি বছর পার হয়ে গেল কারো সাথে কোন যোগাযোগ নেই। চিঠিপত্র আদান প্রদান ও সম্ভব হয়নি ।

এত ভালবাসা ঘনিষ্ঠিতা ,প্রীতীময় আন্তরিকতা সবই যেন আজ মিছে !

আমার পছন্দের সেই লাজুক মেয়েটি! লিকলিকে লম্বা ছিল শরীরে গঠন সোনালী রঙের কেশ। ফুলের মতই নিস্পাপ ছিল, অল্পভাষী হাসলে গালে একটা ভাজ পরতো যা দেখে খুবই মায়াবী মনে হত। নাসরিন ফুল যেমনি দৃষ্টি কারে, তেমনি নাসরিন নামের সেই মেয়েটিও সকলের দৃষ্টিকাড়া মিষ্টি মেয়ে ছিল। বখাটে ছেলেদের উৎপাত আর অশালীন আচরণে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় তখন।

ওর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল ১৯৯০ ইং। আমি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছি, বিদেশ আসার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। স্বামীসহ রিক্সায় ঢাকার দিকে যাচ্ছে। আমি রিক্সা না পেয়ে হেটেই যাচ্ছিলাম কারণ একটু পথ তার পর নদী পথে নৌকা চড়ে বাড়ি যাব! হঠাৎ দেখি রিক্সা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো ।

-কেমন আছ ?

-ভাল আছি! জবাব দিয়ে ওর দিকে তাকালাম।

বাসন্তী রঙের শাড়ি পড়নে, শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে অন্যান্য সাজ সজ্জায় খুব সুন্দর লাগছিল ওকে। স্বামী ব্যাচারা একটু দুরে অপেক্ষা করছিল, কেন যেন সেদিন তার স্বামীর সাথে আমার পরিচয় না করিয়েই দ্রুত চলে গেল! যতক্ষণ দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল ততক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম হঠাৎ কতগুলি আমগাছ ওদের আর আমার মধ্যে পর্দা হয়ে আজও রয়ে গেল।

(২০০৬ ইং) সাগর পার জেদ্দা ।

বিষয়: বিবিধ

২১৮৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347473
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:৪০
নূর আল আমিন লিখেছেন : বাহ,,, অসাধাৱণ ভ্ৰমন কাহিনী
347483
২৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:১৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : সুন্দর লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
347495
২৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০২:১১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম ।

সাবলীল বর্ণনায় চমৎকার পটভূমির সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।
বাংগালী মেয়েদের চুল কি সোনালী রং হয়? তবে এস,এস,সির পর সবার জীবনের গতিপথ সত্যি মোড় নেয়!
সুন্দর লিখনী! শুকরিয়া!
347603
২৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৯:৫১
এসো স্বপ্নবুনি লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।বাংলাদেশের মানুষ কিন্তৃ গঠনে স্বভাবে নানাভিধ বৈচিত্রের অধিকারী।বিদেশীদের দ্বারা সাশিত হওয়ায় তাদের রঙ এবং শাররী কাঠামোও আমাদের অনেকের মধ্যে লক্ষ্যকরা যায়এর ইতিহাস আমি বলতে চাইনা।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File