২১ ফ্রেবুয়ারিঃ আমাদের জাতিয় সার্কাস দিবস

লিখেছেন লিখেছেন চিলেকোঠার সেপাই ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:০৮:৩৫ রাত



জাতিয় বির বা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর রিতি হিসেবে প্রাচিন ভারত এবং মিশরে ফুল দেওয়ার প্রথা ছিল। এই দুটি সভ্যতায় দেবতাদের পূজার অর্ঘ্য হিসেবে ফুল দিত এবং যে সকল ব্যক্তিগন জাতিয় বির হিসেবে বিবেচিত হত তাদেরকে অনেকটা ছায়া দেবতা হিসেবে ভাবা হত। এবং তাদেরকেও ফুলদিয়ে শ্রদ্ধা জানাতো হত। প্রাচিন এবং মধ্যযুগিয় গ্রিক এবং ভারতিয় সাহিত্যে এর সত্যতা পাওয়া যায়। পরবর্তিতে প্রাচিন রোমে সৌধ্য বানানোর প্রচলন ঘটে। এটা ধিরে ধিরে পুরো ইউরোপে জনপ্রিয়তা পায়। এই সৌধ্য সংস্কৃতিকে চরমতম উৎকর্ষে নিয়ে যায় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মান এবং অস্ট্রো-হাংগেরিয়ানরা। এখন আমাদের দেশে ইংরেজদের দিয়ে যাওয়া সৌধ্য সংস্কৃতিক বহাল তবিয়তে বিরাজ করছে। কত যে সৌধ্য আর ভাস্কর্য আমাদের দেশে আছে, আমার ধারনা স্বয়ং সরকারের কাছেও তার কোন নির্দিষ্ট তথ্য নেই। না এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ, না এই সৌধ্যকে আমারা সংস্কৃতিতে ধারন করতে পেরেছি। তাই আমরা জানিও না এর সম্পর্কে। সম্মানও দেই না। বছরে একদিন মহাসমারোহে ফুল দেই। সেদিনও কেউ কেউ জুতাও খোলে না। পরের দিন থেকে যে কি শুরু হয়...... বর্ণনার বাইরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে শহিদ মিনারে ঐ একদিন বাদে ৩৬৪ দিন কি হয় তা দেখার সৌভাগ্য হয়।

আমার মূল বক্তব্য হল বছরে এই ৪/৫ দিন সারাদেশে কোটি কোটি টাকার ফুল ঐ ব্রিটিশদের রিতি মেনে কনক্রিটের খাম্বার নিচে রাখা শ্রদ্ধার নামে মশকরা। আরও স্পষ্ট করে বললে ফাইজলামি।

কয়েকদিন আগে সময় টিভিতে একটা রিপোর্ট করেছিলো বই মেলায় গিয়ে তারা বিভিন্ন বয়েসি প্রায় ১০-১৫ জনকে জিজ্ঞেস করে ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেবুয়ারি কি হয়েছিলো?

একজনও সঠিক উওর দিতে পারে নাই। কেউ বলে যুদ্ধ হয়েছিল, কেউ বলে আমরা পাকিস্তানিদের সাথে বিজয় অর্জন করেছিলাম, কেউ বলে আমরা ভাষা ছিনিয়ে এনেছিলাম। কেউ বলে ভাই জানি না।

বুঝি না আমাদের দেশিয় সংস্কৃতিতেই জাতিয় বিরদের সম্মান জানানোর চমৎকার পদ্ধতিতে রয়েছে তা বাদ সবাই কেন ঐ বেনিয়া ম্লেচ্ছদের রিতি মানে। দেশিয় সংস্কৃতিতে জাতিয় বিরদের সম্মান জানানোর পদ্ধতি হল তাদের নামে কোন কিছুর নাম করন করা। যেমন কিছুদিন আগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন একটা চমৎকার কাজ করে, ঢাকার মূল রাস্তা গুলো মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের নামে দেয়। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ রয়েছে বিভিন্ন জাতিয় বিরের নামে। এটা অসাধারণ পদ্ধতি এর সাথে খাম্বায় ফুল দেওয়ার তুলনার যোগ্যতাই রাখে না। এভাবে শহিদের নামে বিভিন্ন জায়গার নামদেন। তাদের নাম সবাই জানবে। তাদের চিনবে।

এই প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফুল না দিয়ে যদি সেই টাকা এক করে প্রতিটি ভাষা শহিদদের নামে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া যেত। তাতে ভাষা শহিদের সম্মানও বাড়তো, দেশের সম্মানও বাড়তো।

অথবা যে শহিদ যে ধর্মের অনুসারি সে ধর্ম অনুসারে কোন রিতি মেনে অনুষ্ঠান করলে কাজে লাগতো। তাদের আত্না শান্তি পেত।

শেষে আমাদের ভাষা প্রেমের একটি নমুনা দিয়ে লেখা শেষ করছি-

কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিদের ভাষা নিয়ে একটি জরিপ হয়। সেখানে (শিকদের) পাঞ্জাবি ভাষা পঞ্চম প্রজন্ম পর্যন্ত ভালভাবে জানে। আর বাংলা তৃতিয় প্রজন্মে গিয়েই হারিয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১০৯৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360128
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১২:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই সংস্কৃতি ইংরেজ নয় বরং আমরা যেভাবে পালন করছি সেটা হিন্দুয়ানি।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৮:৫৭
298515
চিলেকোঠার সেপাই লিখেছেন : দুইটার মিশ্রন
360227
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৭:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : ঐ সাক্ষাৎকারে একটি ছোট মেয়ে বলেছিল যে,সালাম বরকত জীবন দিয়েছে তাই আমরা বাংলায় কথা বলতে পারছি৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File