"একমাত্র দুআ ও ইস্তিগফার হলো মুমিনের সকল দুঃখ কষ্টের হাতিয়ার"

লিখেছেন লিখেছেন মারইয়াম উম্মে মাবরুরা ১৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৫০:৫১ বিকাল

’ দুআ অর্থ ডাকা, আল্লাহকে ডাকা।‘ইস্তিগফার’অর্থ মাফ চাওয়া। আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। আর‘ইনাবত ইলাল্লাহ’অর্থ আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। দুআ, ইস্তিগফার ও ইনাবাত ইলাল্লাহ মুমিনের পাথেয়, ঈমানদারের সম্বল, সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তা মুমিনের অবলম্বন। মুমিন যখন সুখী তখনও আল্লাহকে ভোলে না, যখন দুঃখী তখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। সুখ ও শান্তি আল্লাহর তরফ থেকে আসে। মুক্তি ও বিপদ মোচনও তাঁর আদেশে হয়। তারই ফায়সালায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। অতএব দুআ সর্বাবস্থার আমল।দ্বিতীয়ত আল্লাহ-ভোলা মানুষের চিন্তায় সুখ-শান্তি, অশান্তির পরিধি খুবই সীমিত। শুধু পার্থিব জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরেই তা সীমাবদ্ধ। পক্ষান্তরে প্রজ্ঞাবান মুমিনের কাছে এসব বিষয়ের পরিধি অনেক বিস্তৃত। মুমিনের কাছে যেমন শান্তির উপকরণই শান্তি নয় তেমনি শুধু পার্থিব শান্তি তার একমাত্র কাম্য নয়। মুমিনের কাছে শান্তি হচ্ছে, যা আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষের অন্তরে দান করেন আর যা আখিরাতে তাঁর ওফাদার বান্দাদের দান করবেন। এ শান্তির আছে অনেক স্তর। মুমিন প্রত্যাশী সর্বোচ্চ শান্তির। তেমনি মুমিনের কাছে অশান্তির অনুষঙ্গ ও উপকরণগুলোই অশান্তি নয় এবং পার্থিব দুঃখ-কষ্টই বড় দুঃখ-কষ্ট নয়। আখিরাতের কষ্টই বড় কষ্ট, আখিরাতের ব্যর্থতাই চরম ব্যর্থতা। একারণে‘শান্তি’প্রিয় মুমিনের দুআ ও প্রার্থনা জীবনব্যাপী। সুখে-দুঃখে, শান্তি-অশান্তি সর্বাবস্থায়। তাছাড়া এ তো এক সহজ সত্য যে, সুখের সময় যে আল্লাহকে স্মরণ করে দুঃখের সময় আল্লাহ তাকে ভোলেন না। এজন্য, দুআ শুধু সংকট-কালের আমল নয়। সর্বাবস্থার আমল। সর্বোপরি দুআ হচ্ছে ইবাদত। আর আব্দের (বান্দার) জন্য‘ইবাদত’সব সময়ের কাজ। তেমনি ইস্তিগফার সবসময়ের আমল। শান্তির সময় মানুষের কর্তব্য‘শোকর’আর অশান্তির সময়‘সবর’। এ দুই শত্রু এত ব্যাপক অর্থের ধারক যে, মুমিনের সকল কর্তব্যই এ দুই শিরোনামে এসে যায়। বস্তত সবর-শোকরের জীবনই হচ্ছে ঈমানী জীবন। আর উভয় ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অপরাধ-অবহেলা সীমাহীন। তাই ইস্তিগফার আমাদের রক্ষাকবচ, যা থেকে বেনিয়ায হওয়ার কোনো উপায় আমাদের নেই। আর ইস্তিগফার শুধু‘গুনাহ’র কারণেই হয় না। আইনের বিচারে যা গুনাহ নয় এমন অনেক কিছুতেও ইস্তিগফার আছে। এ ক্ষেত্রগুলো নির্ণিত হয় ব্যক্তির শান-মান ও আল্লাহর সঙ্গে তার নৈকট্যের পরিমান হিসাবে। সর্বোপরি ইস্তিগফার একটি বরকতপূর্ণ ইবাদত। কারণ তা দুআ। একারণে‘নিষ্পাপ’নবী-রাসূলগণের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ ইস্তিগফার। শেষ নবী ও শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে (কমপক্ষে) আশিবার ইস্তিগফার করি।’

সুতরাং কে সে ব্যক্তি যার ইস্তিগফারের প্রয়োজন নেই? ইস্তিগফার আল্লাহর ইবাদত, নবীর সুন্নাহ। ইস্তিগফার মুক্তি ও নাজাতের উপায়, রহমত ও বরকতের অসীলা। ইস্তিগফার থেকে যে বিমুখ হয় সে তো নিজের মুক্তি ও সফলতা থেকেই বিমুখ হয়। তাই ইস্তিগফার সবসময়ের আমল। আর সমস্যায়-সংকটে তা হচ্ছে পরিত্রাণ লাভের শক্তিশালী উপায়। আল্লাহর নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের সংকট-কালের ঐ দুআকে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের অংশ বানিয়ে দিয়েছেন, (তরজমা) আর (আলোচনা করুন,) মীনগ্রস্তের ঘটনা, যখন তিনি ক্রদ্ধ হয়ে (নিজ কওম হতে) চলে গেলেন, আর তিনি ধারণা করেছিলেন যে, আমি তাকে পাকড়াও করব না, অবশেষে তিনি অন্ধকার পুঞ্জের মধ্যে ডেকে ডেকে বললেন, (আল্লাহ!) আপনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; আপনি পবিত্র, নিঃসন্দেহে আমি একজন অপরাধী (সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন এবং বিপদমুক্ত করুন)। অতপর আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে উদ্বিগ্নতা থেকে মুক্তি দিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদের মুক্তি দিয়ে থাকি। (সূরাতুল আম্বিয়া ২১ : ৮৭-৮৮)

এই যে ঈমান ও তাওহীদ,এই যে তাওবা ও ইনাবত এ-ই তো মুমিনের শান। সকল প্রতিকূলতায় সবারআগে মুমিন নিজেকেই অপরাধী মনে করে। আর সকল কিছু থেকে বিমুখ হয়ে আল্লাহর কাছেই সমর্পিত হয়। চারপাশের সকল ঘটনা ও‘কারণ’যেহেতু আল্লাহর আদেশেই সৃষ্টি তাই মুমিন পার্থিব কার্যকারণের অনুসন্ধান ও পর্যালোচনার আগে আপন প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তাই সমস্যায়-সংকটে এ কুরআনী দুআ যেমন মুমিনের ওযিফা তেমনি তা এক গভীর শিক্ষা ও নির্দেশনার ধারক। ঈমান, তাওহীদ ও ইনাবত ইলাল্লাহর এ শিক্ষা মুমিনের সারা জীবনের পাথেয়।

যে জাতির কাছে দুআর মতো অবলম্বন আছে সে জাতির হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই; বরং হতাশ হওয়া তার জন্য অপরাধ। দুআ এমন এক আলো যা কখনো নির্বাপিত হয় না। পৃথিবীতে মানুষ যেসব উপায়কে বলে‘আশার আলো’তা সব নিভে গেলেও দুআর আলো প্রজ্বলিত থাকে। এ চিরন্তন আলোক শিখা কখনো নির্বাপিত হয় না। সুতরাং শত অন্ধকারেও, শত নিরাশার মাঝেও মুমিন হতাশ হয় না।

বান্দা যখন আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পিত হয় এবং একমাত্র আল্লাহকেই রক্ষাকারী ও মুক্তিদাতা মনে করে তখন মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ সেভাবেই মুক্তির পথ উন্মোচন করেন যেভাবে তাঁর বান্দা ও রাসূল ইউনুস আলাইহিস সালামের জন্য উন্মোচন করেছেন। (তরজমা) আর এভাবেই আমি মুমিনদের মুক্তি দান করি) হচ্ছে সেই শাশ্বত, চিরন্তন ও অমোঘ ঘোষণা, যা কিয়ামত পর্যন্ত সকল সংকটগ্রস্ত মুমিনের প্রকৃত আশার আলো।

আল্লাহ তাআলা আমাদের এ সত্য-উপলদ্ধির তাওফীক দান করুন। আমীন।

(সংগৃহিত মাসিক আল কাউসার)

বিষয়: বিবিধ

১৪৭১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

208284
১৫ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৬
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : আমার জন্য ও দোয়া করবেন।
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৬
156950
মারইয়াম উম্মে মাবরুরা লিখেছেন : ফী আমানিল্লাহ।আপনিও দোআ করবেন আমাদের সবার জন্য।আমরা সবাই সবার জন্য দোআ করব ইনশাআল্লাহ
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৪
156957
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ।
208313
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
আজব মানুষ লিখেছেন : এগুলান পর্ড়েলে কি বউ পাওয়া যাবে? Clown
১৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:১০
157389
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : নানা কি আরেকটা বিয়ে করতে চায়?
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৩
163198
আজব মানুষ লিখেছেন : মঞ্চাইলে কি কর্তাম;Winking
208340
১৫ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৬
ইমরান ভাই লিখেছেন : "একমাত্র দুআ ও ইস্তিগফার হলো মুমিনের
সকল দুঃখ কষ্টের হাতিয়ার"
208482
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৪৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
208500
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:১৪
পবিত্র লিখেছেন : ভালো লাগলো খুব। Good Luck Good Luck
221627
১৫ মে ২০১৪ রাত ১২:১৮
সত্যের সুবাতাস লিখেছেন : অনেক ভাল লেখা,খুব ভাল লাগল।আমার জন্য দোওয়া চাই,আশা করি দোওয়া করবেন। অনেক ধন্যবাদ লেখাটা শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File