এক ভয়ংকর যুদ্ধাপরাধীর গল্প।Re-post

লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৬:০৩:২১ সন্ধ্যা

এক গ্রাম্য মোড়লের সাথে আনোয়ার মোল্লা নামের এক ব্যক্তির আদর্শগত মতপার্থক্য হলো।এখন মোড়লের জন্য গ্রামে টিকে থাকাটা প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দেখা দিলো।মোড়ল আনোয়ার মোল্লা নামের লোকটিকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো।

মোড়ল গ্রাম্য আদালতে আনোয়ার মোল্লার বিরুদ্ধে মেয়েঘটিত মামলা করলো।কিন্তু আনোয়ার মোল্লার চরিত্র নিষ্কলুষ হওয়ায় গ্রামবাসী ক্ষেপে গেলো উঠলো।বাধ্য হয়ে গ্রাম্য আদালত মামলা খারিজ করে দিলো।

মোড়ল চিন্তায় পড়ে গেলো।এইসময় এক লোক এসে মোড়লকে বললো-হুজুর,আমার তো দাড়ি-টুপি আছে।আমি আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা ঠুকে দেই।

মোড়ল খুশী হয়ে উঠলো।পরেরদিন আনোয়ার মোল্লাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে গ্রেফতার করা হলো।

সময় এগিয়ে চললো।আনোয়ার মোল্লার বিচার আর হয়না।মোড়ল খুশী,তার বিরুদ্ধে কথা বলার মত ব্যক্তি গ্রামে নাই।

কিন্তু গ্রামবাসী অতিষ্ট হয়ে উঠলো।তারা বার বার আনোয়ার মোল্লার মুক্তির দাবী জানাতে লাগলো।কিন্তু মোড়ল নিশ্চুপ।গ্রামবাসী আন্দোলনের হুমকি দিলো।

মোড়লের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।গ্রামবাসী আন্দোলনে নামলে তাকে গ্রামছাড়া হতে হবে।

মোড়ল তার চেলা-চামুন্ডাদের নিয়ে মিটিংয়ে বসলো।কি করা যায়?কারো মাথায় কোন বুদ্ধি আসেনা।

হঠাৎ রঞ্জিত নামের এক চেলা বললো-হুজুর!দেশে তো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে।আমরাও আনোয়ার মোল্লাকে যুদ্ধাপরাধী প্রমান করে জেলে আটকে রাখতে পারি।

মোড়ল আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।বললো-গুড আইডিয়া।রঞ্জিত এখন থেকে আমার আকামের উপদেষ্টা।

পরেরদিন।

গ্রাম্য আদালত বসলো।গ্রামবাসী আনোয়ার মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুনে হতবাক হয়ে গেলো।

প্রথমেই মোড়লপক্ষের উকিল অভিযোগ পেশ করলো-মাননীয় বিচারক!এই আনোয়ার মোল্লা একজন জগন্য খুনী।একাত্তুরে এই খুনীর হাত থেকে মায়ের পেটের বাচ্চারাও মুক্তি পায়নি।এই খুনীর বিচার চাই।

আসামীপক্ষ যুক্তি পেশ করলো-মাননীয় বিচারক!এই আনোয়ার মোল্লা একাত্তুরে এই গ্রামে ছিলেননা।তখন এই গ্রামে আনোয়ার নামের কোন ব্যক্তি এই গ্রামে ছিলেননা।এই দেখুন প্রমান।

মোড়লপক্ষের উকিলের দিকে তাকিয়ে বিচারক বললেন-আপনার প্রমান পেশ করুন।

মোড়লপক্ষের উকিল বললঃহুজুর!এই যে সাক্ষী বিকাশ কুমার।আনোয়ার মোল্লা একাত্তুরে এর ছোট ভাইকে হত্যা করেছে।বিকাশ,তুমি হুজুরকে ঘটনা খুলে বলো।

সাক্ষীঃ হুজুর!একাত্তুরে আমার বয়স ছিলো দেড় বছর।তখন আমার ছোট ভাই মায়ের পেটে।একদিন আমি উঠোনে খেলা করছিলাম।হঠাৎ এক ব্যক্তি খুব দ্রুত উঠোন দিয়ে হেটে গেলো।হাঁটার আওয়াজ বেশী ছিলো।

আমি লোকটাকে একবার দেখেছিলাম।এই ঘটনার তিন মাস পরে মা আমার ভাইকে প্রসব করলেন।কিন্তু ভাইটি মৃত ছিলো। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম,আমার ভাইটি মরার পিছনে ঐ লোকটির হাঁটার আওয়াজ দায়ী।সেদিন এই আনোয়ার মোল্লাকে দেখে আমার একাত্তুরের ঘটনা মনে পড়ে যায়।

হুজুর!এই আনোয়ার মোল্লাই সেই লোক,যে একাত্তুরে আমার মায়ের পেটে থাকা ভাইটিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।এই কুখ্যাত খুনীর বিচাই চাই হুজুর।

বিচারক টেবিলে তিনবার হাতুড়ি পিটালেন।তারপর বললেন-মোড়লপক্ষের সাক্ষীর অভিযোগে এটাই প্রমাণিত হয় যে,আনোয়ার মোল্লা একাত্তুরে নির্মমভাবে নরহত্যা করেছে।অতএব যথাযথ প্রমানাদির ভিত্তিতে আনোয়ার মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হলো।

বিষয়: বিবিধ

১১১৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

279009
২৮ অক্টোবর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২০
মামুন লিখেছেন : পড়লাম। লুক্কায়িত ভাবটুকুও বুঝলাম। ধন্যবাদ। Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File