একটি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প ও না বলা কিছু কথা।

লিখেছেন লিখেছেন বদর বিন মুগীরা ২৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:৫৪:৪৪ সন্ধ্যা



সকাল ৮.০০ টায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে পৌছলাম।পৌছেই দেখি,বেশীরভাগ ডাক্তার ও স্বেচ্ছাসেবক উপস্হিত।

গত ২২ তারিখে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়।প্রায় ২৫ জন ডাক্তার ও ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রমে পোনে ছয়শত দরিদ্র মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

আমার জীবনের জন্য এটি একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।জীবনে এই লেভেলের জনসাধারনের সাথে মেশার সুযোগ পেয়েছি খুবই কম।এদের জীবনপ্রণালী অনেকটা কল্পনা করার সুযোগ পেয়েছি,কিন্তু বাস্তব জীবনে দেখার সুযোগ পাইনি।

গেটে রোগীদের নাম লেখার দায়িত্বে তিনজন ছিলাম।একজন পুরুষ,আরেকজন মহিলা আর আমি শিশুদের তালিকা করছিলাম।



আমাদের দেশের মানুষ কত বেশী সংকীর্ণতায় ভুগছে,বিশেষ করে মহিলারা,সেটি নাম লিখতে গিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম।পুরুষরা এসেই জিজ্ঞেস করছিলো,আপনারা কি আমাদের নাম লিখবেন?

আর মহিলারা এসে দূরে দাড়িয়ে থাকতো।যখন ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করতাম-আপনি কি নাম লেখাটি এসেছেন? তখন কাছে এসে নাম বলে প্রেসক্রিপশন নিয়ে যেতো।



সাধারণ মানুষের অদম্য কৌতুহল দেখেছি।তাদের মনে কৌতুহল,এত লোকজন এসেছে এরা না জানি কেমন চিকিৎসা দেয়। কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করে-আপনারা কি ঢাকা মেডিকেল থেকে এসেছেন?

-না।আমরা একটি সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এসেছি।



এক মুরব্বী ঔষুধ নিয়ে বাইরে এসে চেঁচামেঁচি শুরু করলেন।বলছেন-সব ঔষুধ দেয়না কেন?সরকার এদেরকে দিছে,আর এরা আমাদেরকে না দিয়ে নিজেরা রেখে দিচ্ছে।

উনাকে জানানো হলো,সরকার এখানে কিছুই দেয় নাই।এখানে যারা এসে চিকিৎসা দিচ্ছে,এরা নিজেদের খরচে এই চিকিৎসা করছে।

কিছু কিছু মহিলার পতিভক্তির নমুনা দেখার সুযোগ হয়েছে।এক মহিলা এসে বলছেন-উনি গার্মেন্টসে গেছেন।উনি রাতের আগে আসবেননা।আমি যদি উনার অসুখের কথা ডাক্তারকে বলি,তাহলে ডাক্তার কি আমাকে ঔষুধ দিবেন?

আরেক বয়স্ক মহিলা এসে বলছেন-উনি আসেন নাই।আমি কি উনার নাম লিস্টি করতে পারবো?

-হ্যা।আপনি করতে পারবেন।কিন্তু চিকিৎসার সময়ে উনাকে নিজে এসে চিকিৎসা নিতে হবে।

-আইচ্ছা।আমি তখন উনাকে ধরে ধরে নিয়ে আসবো।



শিশুরা এটিকে অনেক আনন্দদায়ক বস্তু হিসেবে গ্রহণ করেছে।একেকটা পিচ্চি এসে নিজের নাম নিজে বলতেছে।একজনের নাম আরেকজন বললে ধমক দেয়-তুই কবিনা।আমার নাম আমি কমু।

এক পিচ্চিকে বয়স জিজ্ঞাসা করলাম।বলে-৭ বছর।

বললাম-কোন ক্লাসে পড়ো?

বলে-ইস্কুলে যাইনা,সামনে যামু।

-তাহলে তোমার বয়স ৭ বছর না,৪ বছর বয়স তোমার।

লিস্টি নিয়ে পিচ্চিটা মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলো।

এক চালু পিচ্চি এসে বলছে-দেহেন তো!আমার কানে কি হইছে?

কইলাম-আমি ডাক্তার না।লিস্টি নিয়ে ভিতরে গেলে ডাক্তার তোমার কান দেখবে।

-তাইলে লিস্টি দেন।ভিতরে যাইয়া ডাক্তাররে দেহাই।



কিছু মানুষ কৌতুহলবশত ক্যাম্পিং দেখতে এসেছে।যখন দেখে,ফ্রি চিকিৎসা চলছে।তখন আরেকজনকে ফিসফিস করে বলে-চল!আমরাও ডাক্তার দেখাই।টাকাতো আর লাগবেনা।

কয়েকজন ডাক্তার দেখানোর পরে বলতেছে-আপনারা কি আবার আসবেন? ওদের মনের আকুতি,যেনো ওদের মাঝে মাঝে এরকম ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সকাল ৮.৩০ টা থেকে শুরু করে জুমার নামাজের পূর্ব পর্যন্ত ক্যাম্পিংয়ের কাজ চললো।ঘোষণা বিকাল পর্যন্ত থাকলেও জুমার পূর্বেই সকল রোগী দেখা হয়ে যায়।

জুমার নামাজের পরে দু-একজন এসে বলতেছে-আমরা আগে আসতে পারি নাই।এখন কি ডাক্তার দেখাতে পারবো? -এখন তো সব কিছু গুছিয়ে ফেলা হয়েছে। কিছুটা মনখারাপ করেই ওরা প্রস্হান করে।

বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা খুব বেশী না।তারা তাদের সর্বনিম্ন চাহিদাটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করে।কিন্তু যখন নতুন কিছু দেখে.তখন সেটি পাওয়ার আকাংখা প্রবল।

হয়ত এই একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই না।কিন্তু এই মেডিক্যাল ক্যাম্পটি ঐ অঞ্চলে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছিলো।সকাল থেকে সাধারণ মানুষের ছুটে আসা,প্রায় ছয়শত মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান,তাদের মনের অভিব্যক্তি এই কথাই প্রমান করে। একদিন এইরকম মেডিক্যাল ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছেয়ে যাবে।তখন আর সাধারন মানুষকে সামান্য অসুস্হতার জন্য হাসপাতালে দৌড়াতে হবেনা।তাদের দ্বারপ্রান্তেই চিকিৎসা পৌছে যাবে।

এখনও স্বপ্ন দেখি,এই দেশের,এই জনপদের,এই নির্যাতিত জাতি একদিন মাথা উচু করে দাড়াবে এবং চিৎকার করে বলবে-সুযোগ পেলে আমরাও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হতে পারি।।

বিষয়: বিবিধ

২০২১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

258918
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : একটি চমৎকার উদ্যোগ এর জন্য অভিনন্দন।
আমাদের দেশে এই ধরনের সেবা মুলক কর্মসুচির একান্ত অভাব। স্থায়ি মেডিকেল সেন্টার ও নাই।
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৩৩
202602
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : ধন্যবাদ
258946
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
স্বপন২ লিখেছেন : মহান চমৎকার উদ্যোগ। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা হলে রাষ্ট্র এই দ্বায়িত্ব নিত। পারলে
এ ধরনে ক্যাম্পের ব্যবস্থা করেন।
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:০০
202681
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : এখনও করা যায়।আল্লাহ যোগ্যতা না দেখে কারো হাতে শাসনক্ষমতা ছেড়ে দেননা।
258957
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:১০
লোকমান বিন ইউসুপ লিখেছেন : পোস্টটি স্টিকি করার আবেদন রইল।
258980
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:২৮
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : সুন্দর উদ্যোগ।

ষ্টিকি হওয়া উচিত।
259008
২৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৪৪
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : মহৎকাজ হিসাবে মানবতা ও মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকেও অনেক সময় চিকিৎসা করা জরুরি। দেশে এমন উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। সকল ভাইবোনদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা এবং শুভকামনা যারা মানবতার জন্য মেডিক্যালে পড়ছেন বা ডাক্তার হয়েছেন Good Luck Good Luck Rose

সবাইকে জানানোর জন্য পোস্ট টা স্টিকি হওয়া উচিত। ধন্যবাদ আপনাকে
259014
২৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:২৯
ভাবনার ল্যাম্পপোস্ট লিখেছেন : ভালো লাগলো ভাইজান...
দাওয়াত না পেয়ে মন খারাপ করলাম।
আপনাদের উদ্যোগের চলমানতা বজায় রেখে মঞ্জিলে পৌছান সেই কামনা থাকল।
আল্লাহ্‌ আপনাদের সমস্থ শুভ প্রচেষ্টা কবুল করুন।
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:০৮
202829
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : ভা্‌ইয়া,আমিই দাওয়াতটা অন্য একজনের কাছ থেকে পেয়েছিলাম। Happy
259034
২৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:০৯
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : মন ছুঁয়ে গেল আপনাদের ক্যাম্পের বিবরন পড়ে! আল্লাহ আপনাদের উত্তম বিনিময় দান করুন! আমাদের দেশের মানুষদের আসলেই চাওয়া খুবই সীমিত তারপরেও তারা বন্চিত,হতদরিদ্র!
২৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১০:০৮
202830
বদর বিন মুগীরা লিখেছেন : শুকরিয়া।
259190
২৮ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:০১
হতভাগা লিখেছেন : এ ধরনের ক্যাম্পের চিত্র সব খানে প্রায়ই একই রকম ।

তবে সমস্যা হল, রোগীকে যদিও ফ্রি চিকিতসা দেওয়া হয় , কিম্তু রোগীর ফলো আপ জানা হয় না বলে রোগী ভাল হয়ে গেল না সমস্যা রয়েই গেল/বেড়ে গেল তা বোঝা যায় না । ডাক্তারের মনেও খট খট থেকেই যায় ।

এরা আবার কবে আসবেন বলে জিজ্ঞেস করে ফ্রী তে দেখাতে পেরেছে বলে । না হলে এরকম বলতো না ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File