দাফনের পর সবাইমিলে সম্মিলীতভাবে দোয়া করা একটি ভ্রান্ত আমল

লিখেছেন লিখেছেন তূর্য রাসেল ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৭:৪৯:৪৯ সন্ধ্যা



বেশ কয়েক মাস পূর্বে আমার এক মামা মারা যায়। আম্মার যেহেতু খালাতো ভাই তাই আম্মা উনার ভাইকে শেষ দেখা দেখতে গেছিলেন। আমি ঢাকায় থাকার কারণে যেতে পারিনি। পরে আম্মার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। আম্মা উনার ভাই অর্থাৎ আমার মামার অনেক গল্প শুনালেন। এক পর্যায়ে বললেন, ভাইয়ের ছোট মেয়েটা ওর বাবার জন্য আমাদেরকে নিয়ে অনেক দোয়া করলো। আমি জিঙ্গেস করলাম কখন? আম্মা বললো, ভাইকে যখন জানাযার জন্য বাসা থেকে নিয়ে গেল তখন থেকে শুরু করে সবার জানাযা শেষে বাসায় ফিরে আসা পর্যন্ত। ব্যাপারটা শুনে আমি আম্মাকে বলতে চাইলাম কাজটা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু বললাম না। এতে হয়তো আম্মা মনে কষ্ট পেতে পারেন। বলতে পারে, এটা একটা আবেগের বিষয়, ভালোবাসার বহিপ্রকাশ।

আসলে আমরা ভালোবাসার বহিপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে বিদআত করে ফেলি। তৈরি করি নতুন নতুন নিয়ম। চিন্তাও করি না মহানবী (সা) এমন কাজ করেছিলেন কিনা। অনেক এলাকায় এ নিয়মটা প্রচলিত আছে। কিছু এলাকায় দাফন শেষে আবার সবাই সম্মিলীতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে। এটা সম্পূর্ণ বিদআত। কারণ মহানবী (সা) এমন কখনো করেননি।

নিজের আমল যদি ভালো না থাকে তবে অন্যের দোয়ায় কখনো কবরের আযাব কমে না। কবরের আযাব থেকে বাঁচতে হলে নিজে আমল করতে হবে। অন্যের দোয়ায় কাজ হবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেন- “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের সন্তানদেরকে সেই আগুন থেকে বাঁচাও। যার ইন্ধন হবে মনুষ ও পাথর”। (সূরা আত-তাহরীম-৬)

একবার রাসূল (সা) ফাতেমা (রা)কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে আমার কন্যা, তোমার যদি কিছু নেওয়ার থাকে তবে এখনই নিয়ে নাও। কারণ আখিরাতে আমি তোমাকে কিছুই দিতে পারবো না”। (মুসলিম)

আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের মৃত্যুর পর তার ছেলে আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল্লাহ্ মহানবী (সা)কে দোয়া করতে বলেছিলেন। তখন রাসূল (সা) বলেছিলেন, “যদি সত্তরবারের অধিক দোয়া করলে আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের জন্য আল্লাহ্ দোয়া কবুল করতেন তবে আমি তাই করতাম”। সূরা মুনাফিকুন এর পাঁচ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “হে নবী, তুমি তাদের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করো আর নাই করো উভয় অবস্থা তাদের জন্য সমান”। এ থেকে বুঝা যায় যার আমল জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত নয় তার জন্য মহানবী (সা) এর দোয়াও কাজে অসবে না।

জানাযার পর গ্রামবাসী সবাইমিলে হাত উঠিয়ে সম্মিলিতভাবে দোয়া করা বিদআত। এটা কখনও রাসূল (সা) করেননি। জানাযার নামযটিই মৃত ব্যাক্তির জন্য শ্রেষ্ঠ দোয়া। এর বাইরে অন্য কোন নিয়ম সম্পূর্ণ বিদআত। মৃত্যুর পর তিনটি আমল শুধু মৃত ব্যাক্তিরা পেয়ে থাকেন-

১. সাদকায়ে জারীয়া

২. এমন জ্ঞান যা মানুষের উপকারে আসে এবং

৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।

আর মৃত্যুর পর আত্মীয় স্বজন এবং তার সন্তানদের চারটি কাজ রয়েছে-

১. মৃতের কোন ঝণ থাকলে তা পরিশোধ করা

২. অসিয়ত থাকলে তা পূরণ করা

৩. তার জন্য দোয়া করা এবং

৪. তার আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধু বান্ধবের সাথে ভালো ব্যাবহার করা।

এগুলো ব্যাতিত আর কোন আমল নাই। এর বাইরে যা করা হবে তা বিদআত এবং ভ্রান্ত আমল।

বিষয়: বিবিধ

২১৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

302359
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বর্নিত ঘটনা টিতে কোন সমস্যা দেখছিনা।
302370
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১০:২১
আবু জান্নাত লিখেছেন : রাসেল ভাই নিচের হাদিসটির কি জবাব হতে পারে একটু জানাবেন প্লিজ।
আপনার দাবির পক্ষের দলীল ও পেশ করবেন আশাকরি।
الدعاء للميت بعد الدفن مشروع ، يفعله الابن وغيره ؛ لحديث عثمان بن عفان رضي الله عنه قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ : ( اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ ) رواه أبو داود (3221) ، وصححه الألباني في أحكام الجنائز ص198 .
فيستحب لكل مسلم حضر الدفن أن يدعو للميت

سئل الشيخ ابن باز رحمه الله : " أرى بعض الناس يقفون عند القبر بعد دفن الميت ويدعون له , فهل هذا جائز ؟ وهل هناك دعاء مشروع يقال بعد الانتهاء من الدفن ؟ وهل هو جماعي كأن يدعو شخص ويؤمن الباقون على دعائه ؟ أم إن كل شخص يدعو وحده ؟ أفتونا جزاكم الله خيرا.
الجواب : قد دلت السنة الثابتة عن الرسول صلى الله عليه وسلم على شرعية الدعاء للميت بعد الدفن , فقد « كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا فرغ من دفن الميت وقف عليه وقال : استغفروا لأخيكم، واسألوا الله له التثبيت فإنه الآن يسأل » ، ولا حرج في أن يدعو واحد، ويؤمن السامعون أو يدعو كل واحد بنفسه للميت، والله ولي التوفيق " انتهى من "فتاوى الشيخ ابن باز" (13/ 204).

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File