বিচ্ছুরিত আলো

লিখেছেন লিখেছেন সিমানা ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:০৫:৪৬ রাত



কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় সজীবের। রাত্রি দ্বিপ্রহর পেরিয়ে শেষ প্রহর উঁকি দিতে শুরু করেছে বোধহয়। সময় নিশ্চিত হতে বালিশের নিচে মোবাইল আর চশমা হাতড়ে নেয়। চশমাটা পরে সময় দেখে মোবাইলের স্ক্রিনে। হুম, পৌনে চারটা বাজে…….. আবারো কান্নার শব্দ, কন পাতে জানালায়। এতো করুণ করে শিশুর মতো করে কে কাঁদে? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে সজীব! এবার নিশ্চিত হয় কোন মানব শিশু নয়, বিড়াল ছানার আকুতিভরা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে খুব কাছ থেকে। কি কারণে যেন আপনাতেই ভেতর থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। বেড সাইড থেকে ওয়াটার বটল নিয়ে গ্লাসে না ঢেলে, ঢকঢক আওয়াজ তুলে পানি পান করে, এক লিটার পানি নিমিষেই শেষ করে দেয়, অবশ্য নিয়ম মতো মাঝখানে দুবার নিঃশ্বাস নিয়েছে। অনেক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকে, গত দিনে যা ঘটেছে তাতে চিৎকার করে কাঁদার কথা, কিন্তু সজীব কাঁদছেনা। কি এক অটল বিশ্বাসে সূদৃঢ় অবস্থান থেকে এক চুল নড়বেনা বলে শপথ নিয়েছে। ফজরর আজান ভেসে আসছে বেশ কয়েকটি মসজিদ থেকে। অজু করতে বের হয়ে দেখলো ওর বৃদ্ধ বাবা সফিউদ্দীন সরদার ছেলের সাথে নামাজ পড়বেন বলে জায়নামাজ পেতে বসে আছেন। সজীব বাবার পাশে হাটুগেড়ে বসে,

-বাবা কখন উঠেছ? আমাকে ডাকলেনা যে!

-ডাকিনি গতরাতে তোমাকে খুব পরিশ্রান্ত মনে হয়েছিলো, চোখদুটো লাল হয়ে ছিলো তাই ডাকিনি।

-আমিতো জেগেই ছিলাম….. ঠিক আছে বসো অজু করে আসছি।

নামাজ শেষ করে সফিউদ্দীন সরদার ছেলের মুখের দিকে তাকান,

-তোমার মা এখন কেমন আছে?

-ডাক্তার খুব দ্রুত অপারেশন করতে হবে বলে জানিয়েছে, মা এখন পুরো সেন্সলেস অবস্থায় আছেন! তুমি চিন্তা করোনা বাবা, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্!

-ব্যাবস্থা হলেই ভালো, তোমার অকর্মণ্য, অপদার্থ বাবার এভাবে হাতগুটিয়ে জায়নামাজে বসে দোয়া করা ছাড়া আর কি করণীয় আছে বলো! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অশ্রু লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন সফিউদ্দীন সরদার। বাবার কাঁধে মাথা রাখে সজীব,

-এভাবে বলোনা বাবা! তোমার দোয়ার চেয়ে বড় আর কিছু কী হতে পারে বলো?

ছেলের কথায় অহেতুক শান্তনা খুঁজতে ছেলের মাথায় স্নেহের হাত রাখেন, সজীব এবার নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা, কেঁদে ফেলে। নিজেকে সামলে নেয় কিছুক্ষনের মধ্যেই।

মেজাজটা একটু হালকা করে নিয়ে,

-বাবা চলো আজ আমরা বাবা ছেলে মিলে রান্না করি, তারপর খাবার নিয়ে হাসপাতালে যাব!

-কেন রান্নার ছেলেটা আসবেনা? আর তোমার তো অফিস আছে! থাক আমি বরং পাশার (কাজের ছেলে) সাথেই যাবো। কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে সজীব, কৃত্রিম হাসি মুখ করে,

-আজ একটু রার্ন্না করি, তোমার মেয়েকে চমকে দেবো, সারারাত মায়ের পাশে একরকম জেগেই কাটিয়ে দেয়, ওর ভাইয়া রান্না করেছে শুনলে খুশিই হবে……….

-তোমার অফিস তো অনেক দুরে…. দেরী হয়ে যাবেনা?

– আজ যাবোনা বাবা!

-কেন? পরশুদিন না বললে আজ তোমাকে লোন দেবে, তোমার মায়ের অপারেশানের জন্য। থমকে যায় সজীব, এখন আর কি বলবে সে একটা সত্য ঢাকতে যে হাজারটা মিথ্যা বলতে হয় তবুও সত্য সামনে আসবেই, এটাই সত্যের দৃঢ়তা।

মলিন মুখে বাবা ছেলের রান্না শেষ হয়। খেতে বসে দুজনেই। তখনও সূরযের আলো প্রখর হতে শুরু করেনি, অন্ধকার পরিষ্কার হয়েছে কেবলই। সফিউদ্দীন সরদার ছেলের দিকে তাকান,

-এখন বলো কি হয়েছে? সজীবের প্লেটের খাবার আর আঙ্গুল একে অপরকে জড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মুখে উঠছেনা কোনভাবেই, বাবার দিকে তাকায়না, মাথা নিচু করে,

-চাকুরী ছেড়ে দিয়েছি বাবা! তীব্র একটা শক অনুভব করেন সফিউদ্দীন সরদার, খুব দ্রুত কন্ঠে,

-কেন?

– ঐ কোম্পানিতে অবৈধ ব্যাবসা চলে, অনেক আগেই জেনেছি। ঔষধের সাথে ড্রাগ চালিয়ে দেয়া হয়। আমি চেষ্টা করেছিলাম এসব দুর করতে, কিন্তু ততদিনে শেকড় অবদি পৌছে গেছে এই অন্যায়। যারা সৎ ছিলো তারাও অধিক লাভের আশায় মুখ খুলছেনা। একবার এই চিন্তাটা আমার মাথাতেও এসেছিলো ক্ষতি কি একটু আধটু চুপ থাকলে…………. কিন্তু পরক্ষণেই খুব কম সময় নিয়ে গতকালই সিদ্ধান্ত নিয়েছি……. আমি রিজাইন দিয়ে এসেছি বাবা!

সফিউদ্দীন সরদার ছেলের পিঠ চাপড়ে দেন, আনন্দে কাঁদেন,

-আমি এক গর্বিত পিতা, জানোতো, মৃত্যুর পরেও তোমার মতো ছেলের জন্যই সওয়াবের অংশ পাবো, চিন্তা কি আমার! তোমার মা মরেও শান্তি পাবে জানোতো!

-বাবা! প্রায় চিৎকার দেয় সজীব। এভাবে বলোনা, আললাহ এতো বড় শাস্তি দেবেননা । সজীব ভেতর থেকে একটু হালকা অনুভব করে প্রয়োজনে কিডনী বিক্রি করে মায়ের অপারেশনের টাকা যোগাড় করবে সে। অন্যায় তো অন্যায়ই, সেটা যেমন ধরণেরই হোক। সৎ থাকতে গেলেই তো পরীক্ষা আসবেই, পরীক্ষা ছাড়া কিসের সততা! আর কখনো কখনো নিজের চেষ্টায় কিছু করে না পারলে, একচ্ছত্র মালিকের হাতে ভাগ্যের হাল ছেড়ে দেয়া উচিত। আর তখনই অদেখা সমাধান দৃষ্টির সম্মুখে উঁকি দিতে থাকে! তখনই শুরু হয় নতুনত্বের!

বিষয়: বিবিধ

১১৭৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

357751
২৬ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪০
আফরা লিখেছেন : কঠিন পরিক্ষা !! আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ।

শিক্ষনিয় গল্প পড়ে খুব ভাল লাগল । ধন্যবাদ আপু ।
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৪৬
297222
সিমানা লিখেছেন : Happy Happy
357752
২৬ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৪০
বিবর্ন সন্ধা লিখেছেন :
, মৃত্যুর পরেও তোমার মতো ছেলের জন্যই সওয়াবের অংশ পাবো, চিন্তা কি আমার! তোমার মা মরেও শান্তি পাবে জানোতো!

অনেক অনেক অনেক ভালো লাগলো.. Good Luck


কিন্তু একটা কথা জানার ছিল ,
টাকার জন্য কিডনি
বিক্রি করা কি বৈধ ??

এই বিষয়ে ইসলাম কি বলে ??
০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৪৮
297223
সিমানা লিখেছেন : Happy Happyএকটা কিডনীতেও তো মানুষ বেঁচে থাকে। প্রাণহানী না ঘটলে এ ধরণের উদ্যোগ নেয়া যায়। আর এই গল্পে বাক্যটা কথার কথা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জাজাকুমুল্লাহ্।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File