আগামী প্রজন্ম রক্ষা করতে ভারতীয় সম্প্রচার বন্ধ করুন।

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ০৪:৫৩:৪১ বিকাল



" target="_blank" >https://t0.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcT7Dh8BuP9TQwpedVh-mZX9MpYP1A-97xvubtFVW_DhkR4AuGjxmIPMFDax">

সে ছোটবেলার স্মৃতিকথা আজও মনে

পড়ে ক্ষণেক্ষণে, জীবনের প্রতিটি

মুহুর্তে ৷ যখন পঞ্চমশ্রেনীর ছাত্র

ছিলাম, টেলিভিশন দেখার খুব শখ ছিল

৷ টেলিভিশন তো তখন ছিল সোনার

হরিণ, যা, দুই-চার-দশ গ্রামেও একটা

টেলিভিশন চেখে পড়তো না ৷ আমরা

থাকতাম আদর্শ কটন মিলে,

শ্রমিকদের দাবির মুখে মিল কর্তৃপক্ষ

একটা সাদা কালো টেলিভিশন শ্রমিক-

কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ দেয়, তা’ ও

১৭ ইঞ্চি ৷ তখন ১৭ আর ২১ ইঞ্চি

কি কেউ বুঝতো? বুঝতো শুধু

টেলিভিশন, ওরে বাবা! মারহাবা মারহাবা

৷ ছেলে-বুড়ো পুরুষ-মহিলা সবাই

সন্ধ্যার পর আর ঘরে থাকতো না,

সবাই থাকতো টেলিভিশন দেখার জন্য

শ্রমিক-কর্মচারীদের ক্লাবের সামনে ৷

বািকাল পাঁচটায় কোরান থেকে

তেলোয়াতের মাধ্যমে শুরু হতো

টেলিভিশনের শুভসূচনা, চলতো রাত

সারে এগারটা পর্যন্ত ৷ সেই

টেলিভিশন চালু ও বন্ধ করার জন্য,

মিল কর্তৃপক্ষ একজন লোকও নিয়োগ

দিয়েছিল, টেলিভিশন রক্ষণাবেক্ষণের

জন্য, যাতে টেলিভিশনের যে

কোনপ্রকার ক্ষতি না হয় ৷

আদর্শ কটন মিলের মোট শ্রমিক

সংখ্যা ছিল ১২০০ শ, সব শ্রমিকরা

মিলের অভ্যন্তরে থাকতো না, থাকতো

নারায়নগঞ্জ জেলার বাহিরের

শ্রমিকরা, যেমন: মতলব, চাঁদপুর,

কুমিল্লা, নোয়াখাী, বরিশাল সহ দেশের

বিভিন্ন জেলার কিছু শ্রমিকরা থাকত

পরিবারবর্গ নিয়ে ৷ শ্রমিক-কর্মচারী

ক্লাবের সামনে ছিল মিলের ফুটবল

খেলার মাঠ, সন্ধ্যার পর, টেলিভিশন

চালক ক্লাবের দরজার সামনে, বড়

একটা টেবিলের ওপর টেলিভিশনটাকে

মাঠের দিকে মুখ করে রেখে দিয়ে চালু

করে দিত ৷ আর মুহুর্তের মধ্যেই পুরো

মাঠখানা কানায়-কানায় ভরে যেত,

তিলধারণের জায়গাটুকু থাকত না,

জায়গা না পেয়ে অনেক ছেলেরা গাছের

ওপর উঠে, গাছের ডালায় বসে-বসে

টেলিভিশনের অনুষ্ঠান উপভোগ করতো

৷ আমরা যারা মিল অভ্যন্তরে

থাকতাম, তাঁরা সবাই আগে থেকে ক্লাব

ঘরের দরজার সামনে বসার জায়গাটুকু

দখলে নিয়ে রাখতো ৷ কেউ পিঁড়ি, কেউ

টেবিল, কেউ ইট বিছিয়ে দখল করে

রাখতো, কেউ কারো জায়গায় বসার

সুযোগ পেত না ৷ প্রতিদিন থাকত

নাটক, আর থাকত একটি করে ইংরাজী

ছবি, থাকত ছায়াছবির গান ৷ প্রতিমাসে

একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি

থাকত, সেইদিন থাকত অন্যরকম

অবস্থা, বিকাল থেকেই চলতো জায়গা

দখলের প্রস্তুতি৷ বৃষ্টির দিনে মিলের

তরফ থেকে থাকত তেরপলের ব্যবস্থা

৷ আমরা মিল কোয়ার্টারের ছেলে-

মেয়েরা থাকতাম সবার আগে,

টেলিভিশনের সামনে ৷ আমাদের

পিছনেই থাকত সকল বড়’রা ৷

সে সময় আমরা দেখতাম নৃত্য

অনুষ্ঠান, উচ্চাঙ্গসংগীত, কমেডি শো,

ইংরাজী ছায়াছবি, নাটক, ইত্যাদি

ইত্যাদি ৷ সেই ইংরাজী ছায়াছবিগুলির

নাম এখনো মনে পড়ে, যা ভুলার মত নয়

৷ প্রতি সোমবার রাত আটটা বাংলা

সংবাদের পর শুরু হত “the wild wild

west” এই ছবিখানা না দেখলে আর

পেটের ভাত হজম হত না ৷ খুবই দেখার

মত ইংরাজী ছায়াছবি, আগেকার সময়

আমরা ছোটরা ইংরাজী ছায়াছবির

নায়ককে বলতাম “বাহাদুর” সেই

বাহাদুরের বাহাদুরি দেখে অনেকেই

“বাহাদুর” বনে যেতাম ৷ দিনের বেলায়

সেই বাহাদুরি অভিনয়ও করতাম সবাই

মিলে-মিশে ৷ প্রতি শুক্রবার দেখতাম

“Hawaii five-o” প্রতি বরিবার

দেখতাম “the invaders” দেখতাম “Six

million dollar man” দেখতাম “Space

1999” আরো অনেক ইংরাজী ছায়াছবি

ছিল, তা এখন আর মনে নেই ৷ তখন

কোন ডিশলাইন ছিল না, কালার

টেলিভিশন তো নাই বললেই চলে ৷ এই

টেলিভিশন দেখা নিয়ে হাঙ্গামাও হত

অনেক সময় পাশের গ্রমের ছেলেদের

সাথে ৷

আর এখন চলছে ডিশলাইনের রাজত্ব,

চ্যানেলের রাজত্ব, নানারকম

ছায়াছবির ছড়াছড়ি ৷ কালার

টেলিভিশনতো রেল লাইনের পাশে থাকা

বস্তিতেও অভাব নেই, চা’দোকানে

হোটেল-রেস্তরাঁয়, বড়-বড় শপিংমলের

দেয়ালে, যাত্রিবাহী বাসে, লঞ্চে, মোট

কথা যেখানে সেখানে সর্বত্র কালার

টেলিভিশন ৷ বর্তমানে একটা

টেলিভিশনে কয়েকশ চ্যানেল থাকে,

তার মধ্যে ভারতীয় চ্যানেলগুলোই বেশি

জনপ্রিয় আমাদের দেশের যুবক-

যুবতীদের কাছে ৷ যেমন: “ষ্টার জলসা”

তার মধ্যে অন্যতম, এই “ষ্টার

জলসার” কারণে আমাদের দেশের বহু

মা-বোনদের চোখের জলে বুক ভাসে

মাঝেমাঝে ৷ আর এই বুক ভাসার কারণ

হলো চ্যানেল “ষ্টার জলসা” ৷ এই

ষ্টার জলসার কারণে প্রতি বছরই

আমাদের দেশে ঈদ, পূজা আর

বড়দিনের পোষাকের জন্য হয় অপমৃত্যু

যা, পত্রিকান্তে প্রকাশ হয় ৷

এছাড়া অাছে বেশির ভাগ সংসারে

ঝগড়াঝাঁটি আর মারামারি, হাতের

“রিমোট” নিয়ে ঘটে এই মারামারি ৷ সেই

মারামারি-হানাহানি আমার নিজ

সংসারেও হয় কোন-কোন সময় ৷

কোন-কোন ঘরসংসারে লেগে যায়

স্বামী-স্ত্রী মারামারি, একপর্যায়ে

টিভিও ভেঙ্গে ফেলা হয় জেদাজেদি

করে ৷ একটা টেলিভিশনের মাত্র একটা

রিমোট থাকে, কিন্তু টিভি দেখার

সদস্য’তো থাকে অনেক, কেউ দেখবে

“ষ্টার জলসা”, কেউ দেখবে “জি

সিনেমা”, কেউ দেখবে খেলা এই নিয়েই

হয় ঝগড়াঝাঁটি ৷ অনেক সময় এই

“ষ্টার জলসা” না দেখতে পেরে, রাগ

করে ঘরের স্ত্রী রান্নাবাড়াও করেনা

দুইতিন দিন৷

এছাড়াও আরো আছে, বিভিন্ন

চ্যানেলের অশ্লীলতার ডিজিটাল মুভি,

যা সপরিবারে একসাথে বসে দেখা যায়

না ৷ আগে সপরিবারে একসাথে

মিলেমিশে টেলিভিশনের সুন্দর সুন্দর

অনুষ্ঠানগুলি উপভোগ করতো,

সিনেমাহলে গিয়ে সপরিবারে সিনেমা

দেখত, এখন তা স্বপ্ন ৷ ( আমার

জীবনের প্রথম ছায়াছবি দেখা ১৯৭২

সালে নোয়াখালীর চৌমুহনীর দর্পণ

সিনেমাহলে, আমি আমার মায়ের কোলে

বসে সেই ছায়াছবি “মানুষের মন”

উপভোগ করি ) ৷ আর আজ ওইসব

ভারতীয় অশ্লীল মুভিগুলি দেখেই

আমাদের সুশৃঙ্খল সমাজের সন্তানেরা

হচ্ছে উশৃঙ্খল, হয়ে যাচ্ছে বখাটে আর

লম্পট ৷ আরো দেখা যায় নানারকম

ডিজিটাল ফাইটিং মুভি, এসব মুভিগুলি

আমাদের দেশের যুবকরা দেখে সময়

সময় হিরো বনে যায় ৷ তাদের মনেও

জাগ্রত হয় হরো হবার, ওইসব মনোভাব

নিয়েই অনেক যুবক নানাসময়ে বহু

অপকর্মও ঘটায় ৷

বর্তমানে ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে

সামাজিকতার কোন বিন্দুবিসর্গ বলতে

নেই ৷ তবু যেন জাদুবিদ্যা দিয়ে

আমাদেরকে বশ’মানিয়ে রেখেছে ওইসব

চ্যানেলগুলো ৷ আর সেই কারণে আজ

আমাদের দেশের চলচ্চিত্র ধ্বংসের

মুখে, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের

দেশের সিনেমাহলগুলো ৷ একটা ভাল

মানের ছবি মুক্তি পেলেও দর্শক নেই

দেখার, দেখবেই বা কেন? প্রতিদিন ২৪

ঘন্টায় প্রতিটি চ্যানেলে ছায়াছবির

অভাব থাকে না, তাহলে সিনেমাহলে

যাওয়ার দরকার কী? সেই কারণেই আজ

সিনেমাহলগুলি হয়ে পড়েছে দর্শক

শূন্যতা ৷ যার কারণে আমাদের দেশের

নায়ক- নায়িকারা নিরুপায় হয়ে পাড়ি

দিচ্ছে বিদেশ, ছেড়ে দিচ্ছ অভিনয়

জগত ৷ আর যারা অাছে তাঁরা বাঁচার

তাগিদে ভারতের সাথে যৌথ ভাবে

করছে ছবির অভিনয় ৷ সিনেমাহল

ভেঙ্গে গড়ে উঠছে বড়-বড় শপিংমল,

মার্কেট, গার্মেন্টস শিল্প ৷

আগেকার সময় আমাদের দেশের একটা

নাটক বিটিভি’তে শুরু হবার পর মানুষ

হুমড়ি খেয়ে পড়তো তা উপভোগ করার

জন্য, এখন আর তা চোখে পড়ে না ৷

গেল কিছুদিন আগে আমাদের দেশের

সরকার জঙ্গি সংলিষ্টতার কারণে

সম্মানিত জাকির নায়েকের পিস টিভির

সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়, সেই সাথে

যদি অন্তত “ষ্টার জলসা” সহ কিছু

চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দিত,

তবে আমাদের সমাজের বহু লোকেরা

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলত ৷ তাই ওইসব

রঙ্গ জলসার নাচুনি দেখে আগেকার

আমলের সাদা-কালো টেলিভিশনের

কথাই শুধু মনে পড়ে যায় ৷

সেই সাথে একটি গানের দুটো কলি মনে

পড়ে যায়,

“পৌষের কাছাকাছি রোদ মাখা সেই

দিন,

ফিরে আর আসবে কি কখনো”

ফিরে আর আসবে কি কখনো“

" target="_blank" >https://mobile.facebook.com/story.php?story_fbid=831925086943116&id=289554767846820&__tn__=%2As"> সংগ্রহিত

বিষয়: বিবিধ

১৪০০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376250
১৪ আগস্ট ২০১৬ রাত ০৮:০৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : টেলিভিশন তো তখন ছিল সোনার হরিণ যা দুই-চার-দশ গ্রামেও একটা। ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

376262
১৪ আগস্ট ২০১৬ রাত ১০:২৭
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : নতুন প্রজন্ম নষ্ট হলে সরকারের কি,ভারতীয় চ্যানেল দেখলেই বরং প্রজন্ম স্মার্ট হবে চালু হবে....,ইসলামী টিভি পিস টিভিই বরংচ দেখলে প্রজন্ম নষ্ট হবে জিহাদ জিহাদ চুলকানি বাড়াবে...সমস্যা বড় সমস্যা ছিলো এই চ্যানেল গুলি তাইতো গুলি মেরে উড়িয়ে দিলাম.... Thumbs Up অনেক ধন্যবাদ Thumbs Up
376284
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৭:৪২
হতভাগা লিখেছেন : ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করে দিলে মহা গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে মশাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File