শরীয়া আইন, ইসলামী রাষ্ট্র ও জিহাদ (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) – শাইখ ড. আকরাম নাদভী

লিখেছেন লিখেছেন আহমাদ আল সাবা ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:২২:১৬ দুপুর

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম



এটি মূলত শাইখের একটি কোর্সের ছাত্রের করা সার সংক্ষেপন। শরিয়া আইনের প্রকৃতি, এর অবস্থান কোথায় এবং ঈমান, ইসলাম ও শরীয়া- এগুলোর মাঝে কোনটির গুরুত্ব কোন জায়গায়। ইসলামী রাষ্ট্র কী? ইসলামী রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তার জায়গা কোনটি? ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা উপলব্ধিতে আমাদের ভুল কোথায়?। ইসলামী রাষ্ট্র কী কাউকে ভালো মানুষ বানাতে পারে? ইসলামী আন্দোলনে রাষ্ট্র ইসলাম ও সামগ্রিক ইসলাম – এতদুভয়ের মাঝে ভুলগত বিষয়টা কখন প্রবেশ করেছে। জিহাদ কি? শর্ত কী কী? ইত্যাদি। মৌল একটা প্রশ্ন হলো অধুনা রাজনৈতিক ইসলাম আসার পরে ইসলামকে রাষ্ট্রের বিরোধী হিসেবে দেখানো হয়েছে…পূর্ববর্তী সৎ আলেমদের ভূমিকা কি ছিল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, ইসলামকে রাষ্ট্রের বিরোধী শক্তি না করে কি ইসলামের কাজ করা সম্ভব নয়?

ভালো মত পড়তে এই পিডিএফটি ডাউনলোড করতে পারেন – https://goo.gl/NqKmKs

বা ওয়েবসাইটেও ভালো করে দেওয়া আছে - https://alsabanow.wordpress.com/

পরিচিতি



শাইখ তার বক্তব্য শুরু করেন শহীদ হাসান আল-বান্না, মাওলানা মওদূদী ও শহীদ সাইয়্যেদ কুতুব (রাহিমাহুমুল্লাহ) কে তিনি কতটা গভীর শ্রদ্ধা ও প্রশংসা করেন সেগুলো হাইলাইট করার মধ্য দিয়ে। নাদওয়াতুল ওলামা আন্দোলনের মাধ্যমে মাওলানা মওদূদীর যেসব কাজ আরবীতে অনুদিত হয় এবং এগুলোই সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুল্লাহ) এর ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে। শাইখ আকরাম নাদভী এসব মহৎ চিন্তাবিদদের সম্মান করেন। তিনি এদের অনেক লেখা পড়েছেন, অনেকবার। তিনি ‘মাইলস্টোন’ এর কিছু অংশও মুখস্ত করেছেন। তিনি এদের অনেক লেখা পড়েই আন্দোলিত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। এসব উল্লেখের কারণ হলো পাঠক যেন এটা ধারণা না করেন যে তার সমালোচনা-পর্যালোচনা পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিকোণের অবকাশ রাখে।

মতভিন্নতা সত্ত্বেও আমাদের ঐক্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার উদ্দেশ্য প্রত্যেককেই আপনার অনুসরণ করানো নয় (শাইখ আকরাম নাদভী এই বিষয়টি প্রায়শ তিনার সেমিনার উল্লেখ করে একটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ত্বারোপ করেন যে, যদি কারো উত্তম বক্তব্য বা যুক্তি থাকে তাহলে সে এটা আলোচনা করতে পারে। কিন্তু মানুষের প্রথমে যথাযথহভাবে চিন্তা করা উচিত এবং এরপরে জানার মধ্য দিয়ে একমত হবে অথবা জানার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত পোষণ করবে)।

মওলানা মওদূদী, ইমাম হাসান আল-বান্না এবং সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-রাই সর্ব প্রথম রাজনৈতিক ইসলামকে (Political Islam) ফোকাসে নিয়ে আসেন। তারা উপলব্ধি করত যে ইসলাম হলো একক ও অভিন্ন এবং সার্বিক (Fully Comprehensive) আর এজন্য বিভিন্ন পরিসরে একই ইসলাম প্রয়োগ করা সম্ভব। তারা ব্যক্তিগত পরিসর, পারিবারিক পরিসর, সমাজ ও সরকারকে অভিন্ন হিসেবে দেখতো। এজন্য যখন তারা সবগুলোকে এক করে দেখা শুরু করলো, তারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিসরের ওপর ফোকাস দেওয়া শুরু করলো। কারণ হলো তারা মনে করতো ইসলাম যখন ক্ষমতায় যাবে তখন অন্যান্য সব জায়গায় ইসলাম অনুসরণ করা সহজ হয়ে যাবে। এই আইডিয়াটি মাওলানা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মাধ্যমে সুন্দরভাবে এসেছে তার বই “ইসলামের চারটি মৌলিক পরিভাষা” বইতে। যেখানে তিনি ‘ইলাহ’, ‘রব্ব’, ‘ইবাদাহ’ ও ‘দ্বীনের’ বিস্তারিত ব্যাখা করেন।

ঈমান, ইসলাম ও শরীয়া

প্রাথমিকভাবে ইসলামকে উপলব্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ আপনাকে যথার্থভাবে পরীক্ষা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। তার চূড়ান্ত আদেশ হলো আপনি অবশ্যই তার ইবাদাত করবেন। আল্লাহ আপনাকে ব্যক্তিগত পরিসর দিয়েছেন এবং এখানে আপনি অবশ্যই ঈমান ও ইসলাম বাস্তবায়ন করবেন। আপনার ব্যক্তিগত জীবন যদি ছোট্ট পরিসরে আবদ্ধ থাকে ও সেখানে যদি পূর্ণভাবে ইসলাম ও ঈমান অনুসরণ করেন, তাহলে আপনার ইসলাম পরিপূর্ণ। যখন আপনার পরিসর পরিবার বা সমাজ অথবা রাষ্ট্রে বৃদ্ধি পায়, তখন সেখানে ঈমান ও ইসলাম প্রয়োগ করুন। অন্যান্য ধর্ম ব্যক্তিগত পরিসরের বাহিরে যায় না কিন্তু ইসলাম প্রত্যেকটি Aspect এই প্রয়োগ হয়।



ঈমান হলো অদৃশ্য, আল্লাহ, নবী-রাসূল ও জান্নাত-জাহান্নামের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এটা বিশ্বাস করা যে আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য ইলাহ নেই। যখনই আপনি ঈমান এনেছেন তখন আপনি একটা চুক্তিতে প্রবেশ করেছেন। এই চুক্তিতে প্রবেশের পূর্বে আপনি চারিপাশে তাকাতে পারেন, আপনার প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু ঈমানের চুক্তি করার পরে আপনাকে অবশ্যই আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। ঈমান আনার পূর্বে আপনি গ্রহনও করতে পারেন আবার বর্জনও করতে পারেন। কিন্তু ঈমান আনার পর আপনার কোন ইখতেয়ার বা ইচ্ছা থাকতে পারে না কেবল পূর্ণ আনুগত্য ব্যতীত।

আপনি আল্লাহ প্রদত্ত্ব পরিসরে আপনার জীবনে ইসলাম প্রয়োগ করুন। এই পরিসর বৃদ্ধি পেতে পারে। আপনার জীবনের পরিসর অনুসারে আল্লাহর আইন বাস্তবয়ান করাকেই শরীয়া বলে। এই শরীয়া আপনার ব্যক্তিগত পরিসর থেকে রাষ্ট্রীয় পরিসরের সকল লেভেলে হতে পারে। শরীয়ার একমাত্র স্থান হলো ঈমান ও ইসলাম আসার পরের ধাপ।

কুরআন কখনই বলেনি শক্তি-বলে আইন প্রয়োগ কর; বরং কুরআন বলে আইন অনুসরণ/আনুগত্য কর (নিজেদের দিকে ইঙ্গিত করছে, অন্যের দিকে নয়)। এই আনুগত্য ইচ্ছাধীন হওয়ায় পুরষ্কার মেলে। এটা বলা অনুচিত যে মুসলিম শাসক জনগনের ওপর আইন প্রয়োগ করেন। বরং বলা উচিত মুসলিম শাসক নিজে আইন অনুসরণ করে বলেই আইন প্রয়োগ করেন। দুনিয়াবী কার্যক্রমে সেক্যুলার আইন ও শরীয়া আইনের উদ্দেশ্য অভিন্ন; শৃঙ্খলা, শান্তি ও সমাজের উন্নতি। শরীয়া অবশ্য এর বাহিরেও প্রশস্ত কেননা মুসলিমরা সকল পরিসরেই ইবাদাহ করে। আর এজন্যই ঈমান ও শরীয়া উভয়ের প্রতি বিশেষ জোড় দিতে হবে।

শরীয়ার আইনঃ

মানুষ > (শরীয়া) আইন+আনুগত্য > ন্যায়বিচার+শৃংখলা > আখিরাতে নাজাত = আল্লাহর সন্তুষ্টি

সেক্যুলার আইনঃ

মানুষ > (সেক্যুলার) আইন+বলপূর্বক প্রয়োগ > ন্যায়বিচার+শৃংখলা > পার্থিব সফলতা = নিজেকে তুষ্ট করা

এদিক থেকে ক্রমধারা হলো প্রথমে আসবে ঈমান, এরপর ইসলাম এবং শেষে শরীয়া। মানুষ এখন ইসলামকে অধিকারভুক্তি হিসেবে নিয়েছে। জরুরী হলো প্রথমে যথাযথভাবে ঈমান অর্জন। এরপর ইসলাম সঠিকভাবে অনুসরণ করা। প্রকৃত ঈমান হলো যখন পার্থিব দুনিয়ার চাইতে জান্নাতের গুরুত্ত্ব বেশি হয়। এই চিন্তার দাবি প্রমাণ হয় কুরআন ও ইবাদাহর প্রতিফলনে।

ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে শাইখ বলেন, যে ইসলামী অর্থনীতির উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন না করে ইসলামকে আমাদের নিজেদের জন্য ব্যবহার করতেছি আমাদের লাভের জন্য।

ইসলামী অর্থনীতি অনেক ধনিক দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে

এভাবে আমরা শরীয়াকে আমাদের নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতেছি (যেমন ইসলামী অর্থনীতি নাম দিয়ে)

অথচ শরীয়ার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা

এভাবে ইসলামী অর্থনীতিকে ব্যবহার করতেছি নিজেদের ধনী বানানোর জন্য (অন্যের কল্যাণের জন্য নয়)

আপনি যখন একবার ঈমান, ইসলাম ও শরীয়া উপলব্ধি করবেন, তখন আপনি কখনই আশা হারাবেন না। আমরা সমাজের অনুসরণ করার জন্য আসিনি, বরং আমাদের সৃষ্টি নেতৃত্য দান ও সমাজের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু আমাদের প্রারম্ভিকতা হয় ভুল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে।

> আল্লাহ আমাদের থেকে ঈমান ও ইসলাম দিয়ে শুরু করতে বলেন কিন্তু আমরা শরীয়া থেকে শুরু করি।

>আমরা শেষ থেকে শুরু করি এবং এটাই প্রকৃত সমস্যা

>আমরা যদি শুরু থেকে আরম্ভ করি ও আত্মউৎসর্গ করি তাহলেই সাফল্য আসবে।

>আপনি যখন একবার শেষ থেকে আরম্ভ করবেন, তখন নিজেকে আর পরিবর্তন করার সুযোগও থাকে না।

>এখন আমাদের সত্যিকারভাবেই শুরু থেকে আরম্ভ করা দরকার।

আপনি যদি আপনার ছোট সন্তানকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা পোষণ করেন, তার জন্য হাসপাতাল তৈরি করেন না এবং তাকে ডাক্টার উপাধিতে ভূষিত করেন। এটা করেন না। আপনি তাকে প্রাথমিক অক্ষর শেখান, এরপর প্রাথমিক শিক্ষা, এরপর মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষা এবং সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা দেন।

শরীয়া


আজকের দিনের একটি বৃহৎ সমস্যা হলো প্রাচ্যবিদ (ওরিয়েন্টালিস্টস) ও মাকাসিদের ধারকরা শরীয়া বুঝেন না। মাকাসিদ আস-শরীয়াকে আজকের দিনে সেক্যুলার আইনের ভেতরে নিয়ে অপব্যবহার করা হচ্ছে। মাকাসিদের ভেতর দিয়ে শরীয়াকে সেক্যুলার বানানো হচ্ছে। মানুষের জানা উচিত যে শরিয়া আইন আল্লাহ প্রদত্ত্ব। শরীয়া আইন ও অন্যান্য সমাজের অনেক আইনের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। তাই তারা শরীয়াকে আরব সমাজের রীতি-নীতি ভেতর দিয়ে ইসলামের মধ্যে এনে এক করে ফেলে। তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে শরীয়া হলো স্বর্গীয়-এটা হিজাজ বা ইয়েমেনী আরবীয়দের প্রথা নয়। এটা আসমানী আইন। বিভিন্ন অভয়বের দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে সাদৃশ্য থাকতে পারে, তাই বলে শরীয়া আইন ও সেক্যুলার আইন এক নয়। উদ্দেশ্য অভিন্ন হতে পারে (যেমন উন্নয়ন) কিন্তু উৎস ভিন্ন।

“বাইল বাতিলের সাথে ঐক্য গ্রহণ করে

কিন্তু হক কখনই বাতিলের মতাদর্শ বা ঐক্য গ্রহণ করে না” (ইকবালের উর্দূ কবিতাংশ)

আল্লাহর ওপর মনোযোগ দিন। আপনার অন্তরে গন্তব্যস্থল যদি সঠিক থাকে, স্লথ গতির হলেও আপনি সেখানে পৌছাবেন। যদি আপনার চলার গতিপথ না থাকে, তবে দ্রুতগামী ট্রেইনে করেও কখনই গন্তব্যে পৌছতে পারবেন না।

শরীয়া হলো আসমানী। মাযহাব হলো শরীয়া উপলব্ধির মানবিক প্রয়াস। এটা মানবিক প্রচেষ্টা যা শরিয়ার একটি অংশ। এটা ইজতিহাদের অংশে রয়েছে।

যদি শরীয়া না থাকে তাহলে কি হবে?

# শরীয়ার কাজ হলো জীবনকে সহজ করা।

# শরীয়া হলো একটি পথ।

# ঈমান ও ইসলাম ছাড়া শরীয়া স্বর্গীয় বা আল্লাহর আইন নয়।

# যেখানে ঈমান ও ইসলাম নেই, সেখানে শরীয়া আপনাকে আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করবেই।

আমাদের বুঝতে হবে যে

> শরীয়া হলো উপায় (mean), আর ঈমান ও ইসলাম হলো উদ্দেশ্য (end)।

> আপনাকে যেই পরিসর দেওয়া হয়েছে সেই পরিসর উদ্দেশ্য নয়, সেগুলো পথ বা উপায়মাত্র। আপনার পরিসর আপনার উদ্দেশ্য নয়, সেগুলো পথ।

> এজন্য উদ্দেশ্য ও উপায়ের মাঝে পার্থক্য উপলব্ধি জরুরী – কারণ এর ভুল বোঝাবুঝি ঈমান, ইসলাম ও শরীয়ার উপলব্ধিতে ভুল প্রয়োগ হয়। যেমন শরীয়াকেই ভুলভাবে উদ্দেশ্য ভাবতে শুরু করেছি আর ভুল উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে চলছি।

> ইসলামী শরীয়া আপনাকে উত্তম মুসলিম বানাবে যেরুপ ব্রিটিশ আইন আপনাকে ব্রিটিশ বানাবে।

> আইন কাউকে ভালো মানুষ বানায় না, এটা কেবল ভালো হতে সহায়তা করতে পারে।

> ইসলাম হলো আপনার ও আপনার রবের সাথে সম্পর্ক।

> আর এজন্য রাষ্ট্র, ব্যাংক ইত্যাদি প্রাইমারি নয়।

রাষ্ট্র ভিত্তিক শরীয়া হলেঃ

# ঈমান ও ইসলাম না থাকলে।

# মুনাফিকি ও ট্রিক বাড়বে।

# সেক্যুলার সমাজে আপনাকে শেখানো হবে কোন আইন ভংগ করা যাবে না; নৈতিকতা ও অন্য কিছুর ব্যাপারে কিছুই বলবে না।

# রাষ্ট্র যদি ঈমান ছাড়া শরীয়া ভিত্তিক হয় তবে একই কাজ করবে ইসলামী রাষ্ট্রও।

# উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ইসলামী ব্যাংকগুলোর কথা। সেখানে কেবল ঈমান ও ইসলাম ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিং চলে, সেকারণে তারা কেবল আইন ভংগ করতে নিষেধ করে।

এভাবেঃ

> আপনি যদি মানুষকে ঈমান ও ইসলাম দিয়ে প্রস্তুত না করেন তবে শরীয়া অকার্যকর।

> যেরুপ আমরা দেখি পাকিস্তানে মসলিসে আমাল দল ব্যর্থ হয়েছিল।

> ঈমান ও ইসলাম ছাড়া ইসলামের বাস্তবায়ন স্বয়ং ইসলাম বহির্ভূত।

> ঈমান ও ইসলামের পূর্বে প্রাথমিক দরকার ইসলাম শিক্ষা দেওয়া।

> আইন পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে পারে না।

> আইন খুবই সামান্য কিছু করতে পারে।

> এর উদাহরণ দেখুন ভারতের ধর্ষণ সমস্যা।

কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো ইসলামকে আমরা বাহ্যিক দৃষ্টিকোণের ভিত্তিতে দেখি। আমরা মনে করি কেউ এসে শরীয়া কায়েম করবে আর সকলেই ভালো মুসলিম হয়ে যাবে! এটা কখনই ইসলামের উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করবে না।

পাকিস্তান সরকার আপনাকে ঈমান ও ইসলাম শিখাতে বাধা দেবে না। সেটাই করুন। কিন্তু আমরা চাই সরকার সেটা করুক!



শরীয়া কোনো থিওরি নয়ঃ


# শরীয়াহর বাস্তবায়ন

> বাস্তবায়ন মানে বাস্তবতা ও প্রাসংগিক হওয়া (pragmatic)।

> যেমন যখন সঠিক সময় এসেছিল কেবল তখনই মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

# সালমান রুশদির বিষয়টা দেখুন।

# শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও মানুষের মনের পরিবর্তন হয়নি।

শরীয়া ও ব্যাপ্তি


শায়খ তার বক্তব্য উপলব্ধির জন্য ইসলাম যেসব জায়গায় প্রয়োগ হবে সেগুলোর কয়েকটি পরিসরের পার্থক্য দেখান। এগুলো হলো সামাজিক পরিসর, পারিবারিক পরিসর, সমাজ ও রাষ্ট্র।

ইসলাম প্রয়োগের জায়গা বা পরিসর আল্লাহ প্রদত্ত্ব। এই পরিসর খুঁজতে হয় না, বরং আপনি যে স্থানে আছেন সেই পরিসরে ইসলামের প্রয়োগই উদ্ভোত পরিসর। এই পরিসর আকস্মিক, স্থায়ী নয়। একজন ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন হতে পারে ইসলামী রাষ্ট্র ছাড়াই।



ইসলাম হলো মানুষ এবং তাদের রবের সাথে সম্পর্ক। এটা প্রাথমিকভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক শাসন পদ্ধতি নয়। এসব বিষয় ইসলামে আকস্মিকভাবে উপস্থিত হয়।



খৃষ্টানধর্ম ব্যক্তিগত পরিসরেই সন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু ইসলামে যত পরিসর বৃদ্ধি পায় সেখানেও ইসলামের প্রয়োগ হয়। আমরা বলি না যে সিজারের জন্য যা তা সিজারকে ছেড়ে দাও আর গডের জন্য যা তাকে দাও (অর্থাৎ ধর্ম ও রাষ্ট্রের আলাদাকরণ)। (We do not say leave what for Caesar to Caesar)

আপনি যখন দুটি জিনিসের মাঝে একটিকে পছন্দ করেন, সেটা হয় আপনার বিবেকের ভিত্তিতে আর এই বিবেক গঠিত হয় ঈমান ও ইসলাম দ্বারা। আমরা যদি কেবল আইন অনুসরণ করি তবে সেটা পূর্ণ আনুগত্য হবে না বরং গভীরতা আসে ঈমান ও ইসলাম থেকে।



আইনের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধির মাধ্যমে বুঝতে পারি যে আইন কাউকে ধার্মিক আনুগত্যশীল মুসলিম বানায় না। ঈমান ও ইসলাম ছাড়া কেবল শরীয়া বাস্তবায়ন অনৈসলামিক ও অর্থহীন। আমাদের দরকার শিক্ষা, সংশোধন ও প্রশিক্ষণ। (Education, Tarbiyyah & Training)


মাওলানা মওদূদী ও সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-রা ইসলামকে সার্বিকতার ওপর দৃষ্টি দিয়ে সমগ্র ইসলামকে একক হিসেবে দেখেছেন। ইসলাম অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরে কীভাবে পূর্ণ হতে পারে সে বিষয়টি তারা দেখেনি। এ চিন্তনের ফলে দাওয়ার ফোকাস হয়ে যায় আইন, অথচ ধার্মিকতা আইন দিয়ে তৈরি হয় না।

সৌদি আরবে সালাতের সময়ে দোকানগুলো বন্ধ করতে হয়। এমনও অনেক লোক রয়েছে আজানের সময় তারা দোকান বন্ধ রেখে ভেতরেই অবস্থান করে কিন্তু সালাত আদায় করে না। আইন তাকওয়া বা ধার্মিকতা তৈরি করে না।

আপনি যদি মানুষকে সালাত আদায়ের জন্য জোড়ারোপ করেন তবে অনেকেই হয়তো সালাত আদায় করবে অযুবিহীনভাবে। শাইখ একটি বিশাল মাদ্রাসায় তার গোচরীভূত গল্প উল্লেখ করেন এখানে। তিনি সেই মাদ্রাসায় ফজরের সালাতে গিয়েছিলেন। তিনি পাশে ফিরে লক্ষ্য করলেন যে কেউ মিস হয়ে যাওয়া অবশিষ্টাংশ সালাত আদায়ের জন্য দাড়াচ্ছে না। শাইখ অবাক হচ্ছেন যে যুবক ছাত্ররা প্রথম রাকাত ধরার জন্য সময় করে চলে আসে। পরবর্তীতে একজন সিনিয়র ছাত্র এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন যে মাদ্রাসার নিয়ম হলো কেউ যদি সালাতে দেড়িতে আসে তবে সে সকালের নাস্তা পায় না। সুতরাং দেড়িতে আসা কেউ মিস হয়ে যাওয়া সালাত আদায় করে না আর ধরাও পড়ে না। আর আল্লাহই ভালো জানে এটা তারা পরবর্তীতে আদায় করে কি না করে। আইন কাউকে তাকওয়াশীল বা ধার্মিক বানায় না।

সকল নবী-রাসূলের আল্লাহর দেওয়া পরিপূর্ণ জীবনবিধান ছিল কিন্তু সকলের রাষ্ট্র ছিল না। এমনকি ঈসা (আলাইহিস সালাম) রোমানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করেনি। ধর্ম সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রবেশ করে আকস্মিকভাবে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে নয়। ধর্মের মূল পয়েন্ট হলো ব্যক্তিক।

আজকের মানুষ যখন ইসলামী সমাজের ইচ্ছা পোষণ করে, তারা কেবল শরীয়ার কথা-ই চিন্তা করে। তারা মানুষ ও প্রতিবেশিকে সাহায্য করার কথা চিন্তা করে না।

জন-মানুষের মাঝে ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর বিশাল সংখক অনুসারী ও সমর্থক ছিল। যারা তার বিরোধী ছিল তারা সিরিয়ার শাসককে এই বলে উত্তেজিত করলো যে তিনি আপনাকে উৎখাত করতে চায়। শাসক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে পাঠালেন। ইবনে তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে উত্তর দিলেনঃ

“আপনি কি মনে করেন আমি আপনার রাজত্ব চাই? আল্লাহর কসম, আপনার রাজত্ব ও মঙ্গল রাজত্বে যা আছে তার কানাকড়ি মূল্যও আমার কাছে নেই”।



সমাজ ও শরীয়া


খিলাফাঃ মুসলিমদের খিলাফা ছিল কেবল চারজন খলিফার (রাহিমাহুমুল্লাহ)। এমনকি আলী (রাজিয়াল্লাহু আনহু) এর খিলাফা হিজাজ, ইরাক ও উত্তর মিশরে সীমিত ছিল। এর পরবর্তীতে কেবল রাজা ছিল যদিও তাদেরকে খিলাফা বলা হয়। এসব রাজাদের মাঝে অনেক ধার্মিক ও দুনিয়ামূখী রাজাও ছিল।

অনেক এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে মুসলিমদের কেবল দুনিয়ামূখী সেক্যুলার শাসক ছিল যারা সমাজে ইসলামী নীতি জারি রাখতো। সুতরাং মুসলিমদের তখন ইসলামী সমাজ ছিল কিন্তু ইসলামী শাসক বা রাষ্ট্র ছিলো না।



অনেক সময়েই উলামারা বিদ্রোহ করেছিল কিন্তু সর্বদা ব্যর্থ হয়েছিল। ইসলামী শাসক এই পন্থায় কখনই প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

সমাজ ইসলামী ছিল কারণ প্রত্যেক আলাদা আলাদা ব্যক্তির সংস্কারের ওপর ফোকাস দেওয়া হতো। একারণেই সুফিরা এত জনপ্রিয় ও সফল হয়েছিল।

কুরআন কোনো রাষ্ট্রের মডেল দেয়নি কিন্তু পূর্ণাংগ মডেল দিয়েছে কীভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অনুসরণ করতে হবে।

ভুল প্রচেষ্টাই ইসলামকে রাষ্ট্রের সাথে দ্বন্দে জড়িত করে। আমাদের ভুল প্রচেষ্টাই মুসলিম শাসকদের ইসলামের শত্রুতে পরিণত হয়। আর এভাবে শাসকরা ইসলামকে রাহমাহ হিসেবে না দেখে তাদের প্রতি হুমকি হিসেবে গন্য করে, যা তাদেরকে ইসলামের প্রতি বাঁধা দানের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের পূর্বের সামগ্রিক ইতিহাস থেকে দেখি যে বেশিরভাগ ওলামারাই এই পন্থায় যায়নি আর এজন্যই এতো মাদ্রাসা ও খানকাসমূহ বেড়ে ওঠতে দেখি।



ইসলাম প্রাথমিকভাবে পরিসরের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। সামাজিক পরিসর ও রাষ্ট্রীয় লেভেলের পরিসর আকস্মিক। অধিক পরিসর আসার সাথে সাথে বিশ্বস্ততা ও দায়িত্বের আগমন ঘটে।

> কুরআনের কেন্দ্রীয় বিষয় হলো ব্যক্তিগত লেভেলে, রাষ্ট্র কেবল এখানে সহযোগিতা করতে পারে।

> পরিবারও আকস্মিক।

> পরিবার, প্রতিবেশি এসবই আপনার জন্য পরীক্ষা।

> আপনি বিবাহ করলে আপনার পরিসরও বৃদ্ধি পাবে, এভাবে আপনার পরীক্ষার পরিসরও বৃদ্ধি পাবে।

> আপনি যদি পরীক্ষার এই বিষয়টা বুঝতেন, তবে রাষ্ট্র এর চিন্তা থেকে পালাতেন (পরীক্ষার পরিসর বৃদ্ধির কারণে) আর একারণেই মানুষকে দেখবেন বিবাহ থেকে দূরে থাকে।

# ইসলাম প্রত্যেক আলাদা আলাদা ব্যক্তির জন্য হলেও এখানে তাদের লেভেল অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে, কারণ

> কেউ ধনী আবার কেউ গরীব

> কারো পরিবার আছে, কারো বা তাও নেই

> কারো ক্ষমতা আছে, কার নেই

> কারো কিছুই নেই

এভাবে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত লেভেলের পরিসর অনুযায়ী তার পরীক্ষা ও হিসাবে হবে।



রাষ্ট্র ও শরীয়া


মুসলিম ব্রাদারহুড ও জামাতে ইসলাম এতো বেশি ক্ষমতা চায় যে এমনকি তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথেও সমঝোতা করে।

মাওলানা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ) সর্বদা শিক্ষা দিতেন যে একজন নারী রাষ্ট্রের প্রধান হতে পারে না। কিন্তু পাকিস্তান আইয়ুব খান যখন নির্বাচনে দাড়ালো, জামাতে ইসলামী তাকে এতটা ঘৃণা করতো যে ফাতিমা জিন্নাহকে তার বিরুদ্ধে সমর্থন দিল। মাওলানা মওদূদী (রাহিমাহুল্লাহ) তার তার যুক্তির সমর্থনে চেষ্টা করেছিল এই বলেঃ “আইয়ুব খান একজন পুরুষ; এর বাইরে তার কোনো গুণ নেই। ফাতিমা জিন্নাহর একজন নারী; কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তার কোনো দোষ নেই”। জামাতের ইসলামীর অনেক সদস্য তার এই কথার পর রিজাইন করেছিল যে তার যে সে যদি একজন পুরুষ ও এছাড়া আর কিছুই না থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে দাড়ানোর মতো আমরা কি একজন পুরুষও পাইনি? এই সমঝতা সত্ত্বেও আইয়ুব খান নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল।

অনেক মুসলিম রাজনীতির ওপর এতোটা জোড় দেন যে তারা চিন্তাই করে না ইসলামের সেবা করার জন্য ক্ষমতা অনুসন্ধান করার বাহিরেও অনেক পন্থা আছে।

এমন কেন হয় যে ব্যক্তিগত পরিসরে আমরা অপমানিত হলেও সবর করি কিন্তু সামাজিক লেভেলে আমরা কেবল প্রতিবাদ-ই করি; সবর করি না। মসজিদের ইমামের ওপর যদি কোন মসজিদ কমিটি কর্তৃক অন্যায় আচরণ করা হয়, তবে ইমাম পুরো জামাতকে প্রতিবাদের জন্য উত্তেজিত করবে না। বরং সে সরব ধারণ করবে, অন্যান্য মসজিদ কমিটি বা প্রভাবশালী লোকের সাথে কথা বলবে এবং চিন্তা করবে বাস্তবিক প্রাসঙ্গিকতার সাথে কীভাবে বিষয়টিকে সংশোধন করা যায়। ব্যক্তিগত লেভেলে আমরা সবাই প্র্যাগম্যাটিক (বাস্তবতাবাদী) কিন্তু সামাজিক পরিসরে যেকোনো কর্মই কাজে দেবে বলে যথেষ্ঠ মনে করি।

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য হিজরত করেননি। হিজরত করেছিলেন কারণ তিনি অত্যাচারিত হচ্ছিলেন আর আল্লাহর ইবাদাহ করতে পারছিলেন না। আল্লাহর সুন্নাহ হলো আপনি যখন ধৈর্যশীল হবেন তখন তিনি আপনাকে পুরষ্কৃত করবেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মদিনা রাষ্ট্র দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়েছিল।



আজকের যুগে মানুষ মনে করে যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ধর্ম ও রাষ্ট্রের আলাদাকরণ। কিন্তু এটা সত্য নয়। রাষ্ট্র ও ধর্ম যদি একই থাকতো তবুও সমস্যা বিরাজ করতো। মূল সমস্যা হলো ধর্মকে এর বাস্তবতা থেকে পৃথকীকরণ। আল্লাহকে আপনার হৃদয় শাসন করতে দিন, রাষ্ট্রকে নয়।



জিহাদ


জিহাদ হলো আল্লাহর জন্য সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালানো।

জিহাদ হলো সর্বশেষ পন্থা যেখানে অন্যান্য সকল উপায় ব্যর্থ হয়। জিহাদ এমন পবিত্র বিষয় যা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। এটা এজন্য নয় যে মানুষ আপনার সাথে ভিন্নমত পোষণ করে।

জিহাদ ও সহিংসতার ইসলামীকরণের মাঝে পার্থক্য সনাক্ত করতে হবে। কুরআনের প্রকৃত জিহাদ শর্ত সাপেক্ষে কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায় (আত্মরক্ষামূলক জিহাদে ভিন্নতা আছে):

১। মুজাহিদিনদের চলাফেরার জন্য নিরাপদ স্থান থাকবে।

২। তারা জিহাদস্থ এলাকায় অবশ্যই শাসকের কর্তৃত্ত্বে একজন আমীরের অধীনে সংগঠিত থাকবে।

৩। সম্ভাব্য বিজয়ের জন্য অবশ্যই রিসোর্স/জনবল থাকবে।

৪। জিহাদ হবে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে, যারা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং যেখানে অন্য কোনো বিকল্প নেই।

৫। তারা তাকে/তাদেরকে উৎখাত করবে সর্বনিম্ন জীবন নাশের মাধ্যমে।

জিহাদ দাওয়ার সম্মুখস্থ বাঁধাকে দূর করে কিন্তু আজকে আমরাই বাঁধা হয়েছি।



মংগলরা মুসলিমদের পরাজিত করেছিল কিন্তু ইসলাম তাদেরকে জয় করেছিল।

সাধারণ নোট

বায়াত ছাড়া জাহিলিয়াতের মৃত্যুর হাদীসটি ইসলামী রাষ্ট্র সৃষ্টি করার জন্য আবশ্যকতা প্রমাণ করে না। হাদিসটি জামাত বা একতাবদ্ধতার গুরুত্ব প্রসঙ্গে। জামাত হলো একজন ইমামের অধীনে ঈমানদারদের ঐক্যবদ্ধ থাকা। যখন এটি থাকবে তখন বায়াত বাধ্যতামূলক। জামাত গঠন নিজেই মুসলিমদের জন্য অপরিহার্য বিষয়। মুসলিম উম্মাহর ভাঙ্গন একটি পাপ, অপরাধ। ক্ষমতা ছাড়াই ঐক্য হতে পারে।

ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফার জন্য ইসলাম কোনো স্ট্রাকচারড রাজনৈতিক মডেল দেয় নি বা সুনির্দিষ্ট করেনি।

আগামীর পথ



সবকিছুই সর্বদা অতোটা সাদামাটা (Black & White) নয়। ফিকহের কিতাবে আমাদের দারুল ইসলাম (ইসলামী দেশ) ও দারুল হারব (যুদ্ধ দেশ) সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে। কত সংখক মুসলিম দারুল হরব ত্যাগ করবে, হিজরত করবে এবং অন্য জায়গায় বসতি স্থাপন করবে?

সব সময় তৃতীয় পাক্ষিক কিছু উপলব্ধি থাকে যার জন্য আরো গভীর চিন্তার প্রয়োজন পড়ে। দারুল দাওয়াহ (দাওয়ার দেশ) এটাই। সমস্ত বিশ্বকে দারুল দাওয়াহ হিসেবে নিন। সকল নবী-রাসূল বিশ্বকে দারুল দাওয়াহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। সমগ্র বিশ্বকে আপনার গৃহ হিসেবে দেখুন; কেবল একটি স্থানে সীমাবদ্ধ রাখবেন না।

শাইখ আহমদ সিরহিন্দি, যিনি ভারতের একজন বিখ্যাত মুজাহিদ ছিলেন, তিনি দারুল হরবের এই তৃতীয় পক্ষকে পছন্দ করেছিলেন। সরকারকে পরিবর্তনের দুটি পন্থা আছে। প্রথমটি হলো মুসলিমদেরকে সিংহাসনে নিয়ে আসা যা দ্বন্দকে আবশ্যিক করে তুলে। দ্বিতিয়টি হলো ইসলামকে সিংহাসনে যারা আছে তাদের নিকট নিয়ে যাওয়া। তার সময়ে ভারতের শাসক ছিল মোগল রাজা আকবর, যিনি ইসলামের জন্য কল্যাণকর ছিলো না। তিনি নিজেই নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেন। শাইখ সিরহিন্দি তার প্রভাব খাটিয়ে সশস্ত্র জিহাদের জিহাদের জন্য উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার পরিবর্তে হৃদয়াগ্রী শক্তিশালী চিঠি লিখলেন শাসক আকবর বরাবর এবং তার আশেপাশের প্রভাবশালী লোকদের নিকটে। তিনি নিরন্তর প্রচেষ্টা চালালেন তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য। এমনকি শাসক তার প্রতি ভীত হলো ও তাকে জেলে ঢুকালো।

শাসকের ছেলে তার প্রতি সদয় হলো এবং শাইখকে মুক্তি দিলো। আকবর মারা গেল, সাথে তার প্রবর্তিত নতুন ধর্মও। আকবরের নিজ পরিবার থেকে আওরঙ্গজেবের আগমন হয় যিনি শাইখ সিরহিন্দির পরিবারের ছাত্রে পরিণত হয়। যখন রাজা আওরঙ্গজেব আলমগীর ক্ষমতায় আসেন, ভারত তখন পুরাপুরি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি ভারতে শরীয়া প্রতিষ্ঠার জন্য ফতোয়ায়ে আলমগীরি লেখার কমিশন নিযুক্ত করেন এবং ইসলামের জন্য আরো অনেক মহৎ কাজ করেন। শাইখ সিরহিন্দি বিজয়ী হয়েছিলেন, যদিও তিনি তার জীবিতাবস্থায় কাজের ফল দেখেননি।

আপনি কেবলই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে দ্বীন রক্ষা করতে পারবেন না। হয়তো আপনাকে দাওয়াত দিতে হবে অথবা আপনিই অন্য কিছুর প্রতি দাওয়াহ প্রাপ্ত হবেন।

বুদ্ধিবৃত্তি যখন আবদ্ধ চিন্তায় থেমে থাকে তখন সকল বংশধর কেবল মাদ্রাসাগুলো রক্ষার জন্য সময় ব্যয় করে। ইমাম হাসান আল-বান্না, মাওলানা মওদূদী ও সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ (রাহিমাহুমুল্লাহ)-রা এই অবস্থানের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখান। তারা একটা চিন্তাকে জনপ্রিয় করে তুলেন তা হলো রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তার জন্য সত্যিকার প্রচেষ্টা দরকার। এটা শসস্ত্র জিহাদের জন্য অনেক যুবকদের অনুপ্রাণিত করে এবং যার জন্য শাসকরা ইসলামকে হুমকি হিসেবে দেখা শুরু করলো। আহমদ সিরহিন্দির পদ্ধতি পরিত্যাক্ত হলো।

যুগে যুগে ধর্মভীরু বিশ্বাসীদের বিদ্রোহগুলোকে শাসকরা নির্দয়ভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গুড়ো করে দিয়েছে। হাফেস আসাদ যেরুপ বলেছিলঃ “আমি সিংহাসনকে ভেঙ্গে ফেলতে পারি কিন্তু পরিত্যাগ করবো না”। তার ছেলে বাশার আল-আসাদ ঠিক এই কাজটিই করতেছে। তারা বরং সবকিছু ধংস হতে দেখবে কিন্তু ক্ষমতা ছাড়বে না।

সেক্যুলার সমাজে মুসলিম

শাসকের সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলুন এবং দাওয়াহ চালিয়ে যান। বিরোধ মেটানো মানে ন্যায়বিচার নয়; কখনও কখনও নিজের অধিকার ত্যাগ করে সকলকে একত্রিত রাখা, নতুন করে গড়ে তুলা এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হওয়া (মিশরের প্রেক্ষাপটে বলা)।

অনেক মুসলিম দেশের তুলনায় অনেক সেক্যুলার দেশে স্বাধীনতা অনেক বেশি রয়েছে। সেসব সেক্যুলার দেশে বসবাস করুন, সে দেশকে উন্নত করার জন্য অবদান রাখুন। সব সময় দাবি করবেন না। আপনার নয়, বরং দূর্বলদের দাবি আদায় করুন।

নিজের চাহিদা মতো চলা সেক্যুলার আইনের শাসনের চাইতেও বেশি খারাপ। নিজের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন।



পরিবর্তনের পদ্ধতিঃ


> পূনর্জাগরণবাদী আন্দোলনগুলোর উন্নয়নের জন্য তাদের প্রতি ক্রিটিক্যাল হোন।

> ঈমান থেকে শুরু করুন এরপর ইসলাম, পূর্ণ আনুগত্য ও ইবাদাহ।

> ছোট হাতের i দিয়ে ইসলাম। কারণ বড় হাতের I দিয়ে ইসলাম হলো আইডেন্টিটি। আর ছোট হাতের i দিয়ে ইসলাম হলো পূর্ণ আনুগত্য।

> বিশ্বাসীদের ঐক্য

ঈমানদার-বিশ্বাসী সম্প্রদায় অবশ্যই রবের আনুগত্যে ঐক্যবদ্ধ হবে; গ্রপভিত্তিক ঐক্যবদ্ধতা নয়। যেকেউ এই ঐক্যবদ্ধতার ক্ষতি করবে সে পাপ করলো।

মুসলিমদেরকে ইসলামিস্ট ও সেক্যুলার এই ভাগেও শ্রেণিকরণ করবেন না। ঐক্যবদ্ধ থাকুন আর আহবান করতে থাকুন ইসলামের প্রতি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) এর সাহাবীদের মাঝে ৩০০ মুনাফিক ছিল কিন্তু ঐক্য রক্ষার্থে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। ঐক্যবদ্ধতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ইংরেজিঃ http://imbdblog.com/?p=4166

স্কলার পরিচিতি



শাইখ আকরাম নাদভী একজন ইসলামিক স্কলার। তিনি ভারতের জৈনপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাদওয়াতুল ওলামা (ভারত) থেকে অনার্স পাশ করেন যেখানে তিনি শরীয়া নিয়ে নিজেও পড়াশুনা করেন ও শিক্ষক হিসেবে পড়াতেনও। শাইখ একজন উচূ মাপের মুহাদ্দিস, যার দক্ষতার শীর্ষে রয়েছে ইলমুল রিজাল শাস্ত্র। ৬০০ জন আলেম থেকে তার ইজাজা রয়েছে। তাদের মাঝে শাইখ আবুল হাসান আলী নাদভী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আল গুদ্দাহ, শাইখ ইউসুফ আল-কারযাভী, সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ আলাওয়ী আল-মালিকী, শাইখ মুহাম্মাদ সাইদ রামাদান আল-বুতী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ আল-কাত্তানী এবং শাইখ আল-গুমারী প্রমূখ। বুখারী শরিফেই রয়েছে তার ৫০ টি ইজাজা। শাইখের আরবী ভাষায় ওপর ডক্টরেট ডিগ্রী রয়েছে। তিনি সব মিলিয়ে আরবী ভাষা, ফিকহ, কুরআন ও হাদীসের ওপর ২৫টির মত বই লিখেছেন ও অনুবাদ করেছেন এবং বর্তমানে মুসলিম শরিফের আধুনিক ব্যাখ্যা (শরাহ) লিখায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার ও রাসূলের মধ্যখানে সনদের দিক থেকে ১৭/১৮ জন ব্যক্তি রয়েছে।

২০১০ সালে তিনি ইসলামের ইতিহাসে এই প্রথম বিশ্ব বিখ্যাত বই যা নারী মুহাদ্দিস নিয়ে লিখিত ৪০ খন্ডাকারে বের হবে, সম্পন্ন করেন। নাদওয়াতুল ওলামায় থাকতে তার ব্যক্তিগত জীবনী ‘মাদ্রাসা জীবন’(২০০৭) ইংরেজিতে বের হয়েছে (উর্দূ থেকে)।

ইসলামি চিন্তায় অবদানের জন্য তাকে আল্লামা ইকবাল পুরুষ্কারে ভূষিত করা হয়েছে। ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে একাডেমিয়াতে ইসলামের এক উজ্জ্বল স্কলার এই আলেম। শাইখকে ইতোপূর্বে Oxford Center For Islamic Studies, Oxford এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে ছিলেন।

বর্তমানে তিনি Cambridge Islamic College এর ডিন ও একাডেমিক ডিরেক্টর।

শাইখ হানাফি মাজহাবের হলেও চিন্তাগত দিক থেকে তাকলীদপন্থী নন। তিনি মনে করেন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কিরুপ সম্পর্ক বিদ্যমান সেটাই মূল বিষয়; কাউকে হানাফি, শাফেয়ী বা এভাবে ভাগ করার পক্ষপাতি নন। তিনি মুসলিম পরিচয়কেই বেশি প্রাধান্য দেন।

আকীদাগত ভাগকেও তিনি অতটা গুরুত্ব দেন না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন বিগত সালফে সালেহীনদের যুগে আকীদাগত ভাগ মানেই ইসলামের ভাগ বোঝানো হতো না। সাধারণ মুসলিমরা আকীদাগত পরিচয় না থেকেও ঈমান ও ইসলাম পালন করে গেছেন এবং এ ব্যাপারে কেউ কোনো দ্বন্দেও জাড়ায়নি এবং এটাই উত্তম পথ।

পূর্ণ কোর্সটি যেসব টপিক কাভার করবে সেগুলো সেগুলো হলো-

The portrayal of Shariah Law, Islamic State & Jihad in The Qur’an

The Prophet peace be upon him as the leader of the Muslim society

The early Muslim Khilafat and their role in the society

History of Islamic Empires from the Abbasids to the Ottomans

Analysis of traditional Islamic revival movements

The decline of Muslims and the rise of the West

The effect of colonialism on the Muslim mindset

Analysis of modern Islamic revival movements – Ikhwanul Muslimeen, Tabligh-i-Jamat, Jamat-e-Islami, Hizb at-Tahrir, Salafi based movements, Sufi based movements

Analysis modern day conflicts in Palestine, Egypt, Syria, Kashmir and other places

Clash of civilisations and Islamophobia in the West – A myth or a reality?

Muslims and democracy – Compatible or a contradiction?

Muslim society in a secular state – Is this possible?

Muslim, Islamist and Secular-Muslim – What are they?

What is the role of Muslims in the West?

What is the future for Muslim in the the West?

What is the way forward for the Muslims in the East?

What is the “Comprehensive Plan” for the Muslims?

কোর্স করা যাবে বা এনরুল করে এর রিকর্ডিংস পাওয়া যাবে এখানে

http://courses.meoc.org.uk/p/shariah-law.html





ইসলাম সম্পর্কে আমার লেখা ও অনুদিত আরো কিছু লেখা দেখতে পারেন যদি উপকার হবে মনে করেন -

https://alsabanow.wordpress.com/

----------------------------------------------------------------

কোনো পরামর্শ থাকলেও দিতে পারেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭১৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

353061
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:২৮
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
353074
০৭ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৩৪
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : শায়েখ আহমদ সিরহিন্দী (র.) এর কর্ম পদ্ধতিই আমাদের দেশের সুফীবাদীরা অনুরসণ করছেন বলে দাবী করে থাকেন অর্থাৎ রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে শরীয়ত প্রতিষ্ঠা নয় বরং রাষ্ট্র ক্ষমতাবানদেরকে শরীয়ত প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করা ও নসিহত করা। এ পদ্ধতি কি সকল দেশ ও সমাজে ফলপ্রসু হবে ? এবং এটিই কি একমাত্র দ্বীন কায়েমের সঠিক সহিহ পদ্ধতি ?
১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৩
294020
আহমাদ আল সাবা লিখেছেন : ধরুন শরীয়া কায়েম হলো কিন্তু যাদের ওপর শরীয়া কায়েম করলেন তাদের বেশিরভাগই জান্নাতে যেতে পারলো না, আল্লাহর সাথে তাদের সম্পর্ক নেই- তাহলে এই শরীয়া কায়েমের উদ্দেশ্য কী? শরীয়া হলো আইন কিন্তু ইসলামে আইনের শরীয়ার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি যা জান্নাতের প্রথম পথ। আল্লাহ আপনাকে শরীয়া কায়েমের জন্য ধরবে না, কিন্তু দাওয়াত না দিলে তার হিসেব দিতে হবে।

ইসলাম হলো ধর্ম। ধর্মের কাজ আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক, শরীয়ার কায়েমের সাথে আমাদের সম্পর্ক নয়। শরীয়া আইন কখনই মৌলিক ছিলো না। এটা যদি হতোই তবে মদিনাতেই শরীয়া আইন আসতো, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু জেহেলের ক্ষমতার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতেন না।

যাইহোক, সূরা জুমুআর ২ নং আয়াতটি একটু দেখে নিবেন, আল্লাহ রাসূলদের উদ্দেশ্য কয়টি বলেছেন।

দাওয়াত ছিল আগে, কিন্তু আমরা গণতন্ত্র আর আইনকে আগে নিয়ে এসেছি - এর ফলেই আমরা আল্লাহর ভালোবাসা ও ইবাদাতের দাওয়াতের পরিবর্তে আইন এনেছি আগে। এটাই ভুল।
জাজাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File