নাস্তিকদের কিছু গঁৎবাধা বুলি [পর্ব-২]

লিখেছেন লিখেছেন আনোয়ার আলী ১৯ জুন, ২০১৫, ১২:৩৬:২৯ দুপুর

কোরআনের ফরায়েজনীতি নিয়ে প্রথমে প্রশ্ন তুলেছিলেন আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর সত্যের সন্ধান নামক বইয়ে। মাতুব্বরের ভাষায়, ফরায়েজ বিধানের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে, মৃতের ত্যাজ্য সম্পত্তি তার ওয়ারিশগণের মধ্যে নির্ধারিত অংশ মোতাবেক বন্টন করলে কেউ পায় এবং কেউ পায় না। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কোনো মৃত ব্যক্তির মা, বাবা, দুই মেয়ে ও এক স্ত্রী থাকে, তবে মা ছয়ভাগের এক ভাগ, বাবা ছয়ভাগের এক ভাগ , দুই মেয়ে একত্রে তিনভাগের দুই ভাগ এবং স্ত্রী আটভাগের এক ভাগ পাবে। কিন্তু মা বাবা ও কন্যাদের দিলে স্ত্রী কিছুই পায় না। এ ক্ষেত্রে মোট সম্পত্তি ১-এর স্থলে ওয়ারিশগণের অংশের সম্পত্তি বেশী হয় । অর্থাৎ ষোল আনার স্থলে হয় আঠার আনা। আরজ আলী মাতুব্বর সাহেবের মাতুব্বরীর পর হাল আমলের নাস্তিকেরা এটা নিয়ে বেশ গবেষনায় মেতে উঠেছেন এবং কোরআনে ভুল আছে মর্মে নানা নিত্য নতুন যুক্তি দিয়ে ব্লগে ফেসবুকে লিখে বগল দাবাচ্ছেন। এজন্যে তারা একটা কমন প্রশ্ন করছেন আল্লাহ কেমনে ভুল করেন? ফরায়েজে আউল নীতি কেন? আল্লাহর ভুল কেন আলী এবং ওমরকে ঠিক করতে হলো? আল্লাহ তো অংক জানেন না।

উত্তরঃ

কোরআনে ভুল থাকার কোন বিষয় আজ পর্যন্ত কেউ প্রমান করে দেখাতে পারেনি। ইনশাল্লাহ পারবেও না। উত্তরাধিকার বিধান কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন কোরআনের ২নং সুরার (সুরা বাকারা) ২৪০ নং আয়াতে (স্ত্রীর অংশ), কোরআনের ৪নং সুরার (সুরা নিসা) ৭ নং আয়াতে (পিতা-মাতার অংশ)৮ নং আয়াতে (আত্মীয়স্বজন, এতীম মিছকিনের কথা) ১১ নং আয়াতে সন্তানদের অংশ, ১২ নং আয়াতে পূনঃ পিতা মাতার ও স্ত্রীর অংশ, (ঋণ আগে পরিশোধের কথাও), ১৭৬ নং আয়াতে ভাইবোনের অংশ বর্ণনা করা হয়েছে।

ইসলামী ফরায়েজ বা উত্তরাধিকার আইনকে বুঝতে হলে কোরআনের প্রতিটি শব্দ আয়াত মেনে সেই আলোকেই ভাগ-বন্টন করতে হয়। অংক করার সময় যেমন প্রথমে ভাগ, তারপর গুন, তারপর যোগ, সবশেষে বিয়োগ করতে হয়, এখানেও তেমনি। এনীতির আগে পরে হলে হিসাব গড়মিল হবে। অংক মেলাতে পারবেন না কোনভাবেই। তেমনিভাবে ফরায়েজের নীতি মেনে প্রথমে স্ত্রী এবং পিতামাতাকে দেয়ার পর বাকি অংশ পুত্র/কন্যাদের দিলে হিসাব কোনভাবেই গড়মিল হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর হিসাব কোনভাবেই ষোল আনার পরিবর্তে ১৮ আনাও হয় না। এটা হয় জ্ঞানের স্বল্পতার কারনে। সুরা নিসার ১১ নং আয়াতে সন্তানদের সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে। ১২ নং আয়াতে পিতা মাতা ও স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। ১২ নং আয়াতে একথাও বলা হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টনের আগে তার ঋণ পরিশোধ ও তারপরে অছিয়ত থাকলে সেগুলো পুরণ করার। কাজেই কোনটা আগে কোনটা পরে প্রথমে সেটা বুঝতে হবে। কোরআনের বিধান অনুযায়ী প্রথমে মা বাবা ও স্ত্রী/স্বামীর অংশ দিয়ে তারপরে সন্তানদের দিতে হয়। সুরা নিসার ১১ নং আয়াতে পুত্র না থাকলে, কন্যা একজন থাকলে কি পরিমাণ এবং একাধিক থাকলে কি পরিমাণ পাবে তার বর্ণনা রয়েছে। ইসলামী স্কলার ডঃ জাকির নায়েকের মতে ইসলামী ফরায়েজের বিষয়টি খুবই জটিল। একজন স্কলার তার সারাজীবন ফরায়েজের গবেষনায় কাটিয়ে দিতে পারেন।

একথাও সত্য যে, এধরনের সমস্যায় আমাদের উপমহাদেশের হানাফী মাজহাবীরা ‘আউল নীতি’ অনুসরন করেন। এ কারনেই আমাদের দেশে এসব প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। কেননা স্ত্রী আটভাগের এক ভাগ, পিতা মাতার প্রত্যেকে ছয়ভাগের এক ভাগ করে এবং দুই কন্যা একত্রে তিন ভাগের দুই ভাগ পেলে এক্ষেত্রে আউল নীতিতে হর ২৪ হয়, আর লব ২৭, আউল নীতিতে পুরো ক্ষেত্রেই হর ২৭ ধরে হিস্যাংশ বন্টন করা হয়। ইসলামী স্কলারদের এই বন্টন নীতিকেও ভুল বলা যায় না। কেননা তারা প্রত্যেকের প্রাপ্য শেয়ারের কোন পরিবর্তন না করেই তা তুল্যাংশে সমান করে দিয়েছেন মাত্র। কোরআনে বর্ণিত কারো শেয়ারের পরিবর্তন করেননি। তারপরও ইসলামী স্কলারদের এ নীতিকে ইজতেহাদী ভুল বলা যায়। ইজমা কিয়াসে ভুল হলেও আল্লাহ ক্ষমা করবেন। ইজমা কিয়াস ইসলামেরই স্বীকৃত নীতি। কোনকিছু কোরআন থেকে বুঝতে না পারলে স্কলাররা তার ব্যাখ্যা দেন। তাদের ইজতেহাদী ভুল হতেই পারে। সেটাকে পুঁজি করে ‘কোরআনে ভুল খোঁজা’-রা গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছেন। স্কলাররা গবেষনা করে দেখেছেন, কোরআনের প্রতিটি অক্ষর মেনে এগিয়ে গেলে তাতে ভুল বা বৈপরিত্য তো দুরের কথা, এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা কেয়ামত পর্যন্ত গবেষনা করেও শেষ করা যাবে না।

আর কোরআনে যে ভুল নেই, কোরআন এ চ্যালেঞ্জ তো দিয়েই রেখেছে। কোরআনের আলোকে বার বার হিসাব করে দেখাও কোথায় ভুল আছে!

নাস্তিকদের আরেকটি কমন বুলি, সেটা হল পিতার পূর্বে পুত্র মারা গেলে দাদার সম্পত্তি নাতী-নাতনীরা পায় না। কিন্তু সরকার আইন করে পিতা দাদার আগে মারা গেলেও নাতী-নাতনীরা দাদার সম্পত্তি পাওয়া নিশ্চিত করেছেন। আল্লাহর আইনে এরকম অসংগতি কেন? সরকারকে কেন সেটা ঠিক করতে হলো?

উত্তর: দাদার আগে পুত্র মারা গেলে নাতী নাতনীরা সম্পত্তি পায় না এটা হানাফী মাযহাবের একটা সিদ্ধান্ত। তবে হানাফী মাযহাব মতে, খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানই ঐরুপ নাতি-নাতনিকে তাদের দাদা থেকে তাদের পিতা যে সম্পত্তি পেতো সে পরিমাণ সম্পত্তি ক্ষতিপূরণ বাবদ দেবে। বর্তমানে যেহেতু ইসলামী শাসন নেই, খলিফাও নেই, তাই রাষ্ট্রীয় ভাবে অর্থমূল্য না দিয়ে মূল সম্পত্তি দেয়া ধর্মের মুল নীতির বিরুদ্ধে যায় না। এতিমদের হক সম্পর্কে কোরআনে বারবার বলা হয়েছে। এতিমদেরকে দেবার কথাই বলা হয়েছে। এতিমকে বঞ্চিত করার কথা বলা হয়নি। এবার সরকার যদি আইন করে সম্পত্তি দেবার জন্যে বাধ্য করে সেটা কি কোরআনের বিপরীত হয় কি করে? ইসলামের নীতিতে (মালেকী-শাফেয়ী ও শিয়া মাযহাবেও) পিতার পূর্বে পুত্র মারা গেলেও দাদার সম্পত্তি নাতী-নাতনীরা পায়। এখানে আল্লাহর আইনের পরিবর্তন কোথায় হলো?

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৫ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

326713
১৯ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:১৪
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। তবে একটু জটিল। সব মানুষের পক্ষে ভালো করে বু্ঝে নেয়া সম্ভব নয়। এই সুযোগটাই নাস্তিকেরা গ্রহণ করতে চেষ্টা করে।
326714
১৯ জুন ২০১৫ দুপুর ০১:৪৫
নীলাঞ্জনা লিখেছেন : "তেমনিভাবে ফরায়েজের নীতি মেনে প্রথমে স্ত্রী এবং পিতামাতাকে দেয়ার পর বাকি অংশ পুত্র/কন্যাদের দিলে হিসাব কোনভাবেই গড়মিল হওয়ার প্রশ্নই আসে না...."

এখন দেখা যাক মুল আয়াতে কি বলা হয়েছে : "মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত।" (সূরা ৪:১৭৬)

কই? সূরার কোথাও বলা হয় নি- প্রথমে স্ত্রী এবং পিতামাতাকে দেয়ার পর বাদ বাকি অংশ পুত্র/কন্যাদের মাঝে বিলি বন্টনের কথা।

আসলে আপনার আল্লা অংকে দারুন কাঁচা। তিনি খোদ অংকেই জট পাকিয়ে ফেলেছেন, অংক মিলবে কি?? অথচ এ ধরনের অংক ক্লাস ফাইবের ছাত্রও নির্ভুল ভাবে করে মিলিয়ে দিতে পারে।

আপনি এখন এসেছেন ওহির উপর ওহি নাজিল করে ফেল্টু আল্লাকে ৩৩ নম্বর দিয়ে পাশ করার তদবির করতে। হায়রে........





১৯ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৩২
269054
আনোয়ার আলী লিখেছেন : আপনি প্রথমেই সুরা ৪-এ চলে গেলেন কেন? প্রথমে ২ সুরা বাকারা, তারপর ৪-এর ১১, ১২ আয়াতে আসুন।
আমি তো বলেছিই আগপিছ মানতে হবে। একটা সামান্য সরল অংকও ‍কিন্তু নিয়ম মেনে করতে হয়। ভাগের আগে গুন করলে চলবে না।
১৯ জুন ২০১৫ রাত ১০:০৯
269082
নীলাঞ্জনা লিখেছেন : বিলি বন্টনের হিসেব কষে অংক করে দিলেন আল্লা। অথচ তা সংশোধন করতে হয় ওমর, আলীকে!! এ কেমন কথা?
তাহলে কি সূরা ৪:১৭৬ এর কোন মুল্য নেই? এমনি এমনি আল্লা একটি ফালতু হিসেব কষে দিলেন।
326716
১৯ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:০৩
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : অত্যন্ত যুক্তিপুর্ণ ভাবে জটিল বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
326729
১৯ জুন ২০১৫ বিকাল ০৪:০৮
আনিস১৩ লিখেছেন : Useful post.
Thanks for sharing.
326772
১৯ জুন ২০১৫ রাত ১০:২০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : উত্তরাধিকারের সম্পদ বন্টন সবসময় তাৎক্ষনিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যেমন পিতা,মাতার অংশ থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই তারা সেই সময় জিবিত থাকেন না। এই ব্লগ এরই একজন ব্লগার এর লিখায় পড়েছি তার দাদা জিবিত অবস্থায় পিতা ইন্তেকাল করায় তারা সমস্ত সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। অথচ এই বিষয়ে ও প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা ইসলামে আছে। ফারায়েজ এর বিষয়টি সামনে এনে ওরা যে জিনিসটা প্রমান করতে চায় তা হলো ইসলামে নাকি নারিকে উত্তরাধিকারে বঞ্চিত করা হয়েছে!! অথচ যতটুক জানি বৃটিশ আইন এ এখনও পুত্র সন্তান,ভাইয়ের পুত্র সন্তান এমনকি অবৈধ পুত্র সন্তান থাকলে কন্যারা সম্পদ এর প্রধান অধিকার এবং পারিবারিক উপাধি ব্যবহার এর সুযোগ পাননা!!
326784
১৯ জুন ২০১৫ রাত ১১:৪৮
নীলাঞ্জনা লিখেছেন : আল্লা সধারণ যোগ বিয়োগ ভাল পারেন না। এই রকম ভুল আল্লাহ দুনিয়াদারি সৃষ্টির ৬দিন/৮দিনে এর ক্ষেত্রেও তালগোল পাকিয়েছেন। আপনারা কোরানের ভুল নিয়ে যে গোঁজামিল দেয়ার চেষ্টা করেছেন, সেটা দেখে মজা পেলাম। কোরানের সুরা ৪১:৯ থেকে ৪১:১২ পড়েন।–

Quran 41: 9 Is it that ye deny Him who created the earth in Two Days ?

Quran 41: 10 He set on the (earth) Mountains standing firm high above it, and bestowed blessing on the earth, and measured therein all things to give them nourishment in due proportion, in FOUR DAYS?

Quran 41: 12 So He completed them (heavens) as seven firmaments in Two days and ? এইবার যোগ করেন - Two Days + FOUR DAYS + Two days । কত হইল? ৮ দিন। এখন আপনি তালিবালি আরবী শব্দ আমদানী করে জোরাতালি দিয়ে যত ইচ্ছা ৬ আর ৮ মিলান - but fact does not change.

তদ্রুপ, কোরানের ৪ঃ ১১ এবং ৪ঃ১৭৬ আইনে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করতে গিয়ে দেখা গেল টোটাল সম্পত্তির চেয়ে ভাগে পাওয়া সম্পত্তির পরিমান বেশি হয়ে যায়। আল্লা যোগ বিয়োগ করতে গিয়ে আউলা লাগিয়ে দিয়েছেন। এই আউলা দূর করতে ওমররে ‘ফরায়েজে আউল’ বানাতে হয়েছে। কিন্তু কথা হল, আসমানী কিতাবে এত ভুল কেন? মানুষ কেন জোরা তালি মেরে আল্লার ভুলের সংশোধন করবে? আসল কথা হছ্ছে কোরান আল্লহার লেখা তেখা কিছু না। কোরান মানুষেরই লেখা। তাই মানুষকেই আল্লার কোরাণ কাট/ছাট করে মিলাতে হয়।
326793
২০ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৭
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : কুরআন মানুষের লেখা হলে ১৪০০ বছর ধরে অপরিবর্তিত আছে কিভাবে? @ নাস্তিকরা তোমরা মিল্লা একটা লিখে ফেলো?আল্লাহর চ্ালেঞ্জটা গ্রহণ করো? আরো লিখুন..ওরা আগেও ছিলো এখনও আছে.. ধন্যবাদ লেখককে..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File