বিয়ে ও পারিবারিক জীবনের অনস্বীকার্যতা

লিখেছেন লিখেছেন হারানো সুর ১৯ জুন, ২০১৪, ০৫:৫৭:৪৬ সকাল

মানবজীবনের তিনটি স্তর রয়েছে। শৈশব-কৈশোর ও যৌবন ও বৃদ্ধকাল। জীবনের দুটি স্তরে শৈশব-কৈশোর ও বৃদ্ধকাল এ মানুষ সম্পূর্ণভাবে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয় বাধ্য হয়ে। এ দুটি সময়ে আপন পরিবারের চেয়ে নিরাপদ, আরামদায়ক ও উপকারী পৃথিবীতে আর কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নেই, হতে পারে না। যৌবনে মানুষ কিছুটা আত্মনির্ভরশীল হয়ে থাকে। কিন্তু এ সময় অন্য একটি প্রবণতা তার মধ্যে প্রবল হয়ে দেখা দেয়। এ সময়ে নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ এবং পুরুষের প্রতি নারীর আকর্ষণ তীব্র হয়ে ওঠে। একে অন্যের সহযোগী হয়ে জীবনযাপন করতে চায়। এটি হচ্ছে মানুষের প্রকৃতি নিহিত স্বভাবজাত প্রবণতা। এ প্রবণতার কারণেই মানুষ চিরকাল পরিবার গঠন করতেও পারিবারিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছে এবং পরিবারবিহীন জীবনে মানুষ অনুভব করেছে বিরাট শূন্যতা, জীবনের চরম অসম্পূর্ণতা। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই পারিবারিক জীবনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। পরিবারকে পাশ কাটিয়ে আর যাই হোক, স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় না। উন্নত বিশ্বে পরিবারকে পাশ কাটিয়ে চলার প্রবণতাকে তাই সে সব দেশের বিশেষজ্ঞরা ভয়ঙ্কর বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা স্থায়ী ও সংহত পরিবারের প্রশংসা করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল, চঞ্চল, ভীরু ও সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন। সুখ-আনন্দ কিংবা দুঃখ-বেদনা তাকে তীব্রভাবে প্রভাবান্বিত করে। তার ওপর মানুষের মধ্যে জৈবিক চাহিদার উপাদানও নিহিত রয়েছে। এমতাবস্থায় যদি পুরুষদের নারীদের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়া হতো বা নারীদের পুরুষদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে বলা হতো, তবে এরূপ নির্দেশ পালনে তারা অক্ষম হয়ে পড়ত। তাই তাদের অক্ষমতা ও দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামে নারী-পুরুষকে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পারিবারিক জীবন গঠনের অনুমতিই দেয়া হয়নি বরং নানাভাবে উত্সাহিত করা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষ অপরিহার্যও করে দেয়া হয়েছে। কুরআন মাজিদের যেখানেই পরিবার গঠনের নির্দেশ রয়েছে, সেখানেই পরিবারকে চিরস্থায়ী বন্ধনে আবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন— ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সতী-সাধ্বী মুসলিম নারী এবং আহলে কিতাবদের সতী-সাধ্বী নারীদের যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর, তাদের স্ত্রী হিসেবে সব সময়ের জন্য গ্রহণ করার জন্য, শুধুমাত্র কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুখ-শান্তি, স্থিরতা, তৃপ্তি ও অনাবিল আনন্দ লাভই হচ্ছে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য; মানবমনের ঐকান্তিক কামনা-বাসনা। এক্ষেত্রে সব মানুষই সমান। ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ, বর্ণ-গোত্র, দেশ-কাল, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব নারী-পুরুষই এক ও অভিন্ন। নারী এ শান্তি ও তৃপ্তি লাভ করতে পারে একমাত্র পুরুষের কাছ থেকে এবং পুরুষ তা পেতে পারে কেবলমাত্র নারীর নিকট থেকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যেন তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তিনিই তোমাদের মধ্যে প্রেমপ্রীতি ভালোবাসা ও দয়া অনুগ্রহ সৃষ্টি করেন।’ কুরআন মাজিদে পরিবারকে দুর্গের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং পারিবারিক জীবনযাপনকারী নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়েদের বলা হয়েছে দুর্গপ্রাকারে সুরক্ষিত ব্যক্তিবর্গ। দুর্গ যেমন শত্রুর পক্ষে দুর্ভেদ্য, তার ভিতরে জীবনযাত্রা যেমন নিরাপদ, ভয়-ভাবনাহীন, সব প্রকারের আশঙ্কামুক্ত, তেমনি পরিবারে নারী-পুরুষ ও ছেলেমেয়েরাও আইন ও নৈতিকতাবিরোধী পরিবেশে ও অসত্ অশ্লীল জীবনের হাতছানি বা আক্রমণ থেকে সর্বতোভাবে সুরক্ষিত থাকতে পারে। পারিবারিক জীবনের এই দুর্গপ্রাকার রক্ষা করা ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য সর্বপ্রথম অপরিহার্য কর্তব্য। পরিবার মানুষকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও পরিশীলিত জীবনযাপনে উত্সাহী করে তোলে। সত্যিকারের মানুষ হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করে। অতএব পারিবারিক জীবনযাপনে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পরকালীন শান্তি ও মুক্তিলাভ করব।

বিষয়: বিবিধ

১০৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File