আমার রসূল (সাঃ) কে অপবাদ দিবেন না। তিনি রসূল (সাঃ) সকল অপবাদ থেকে পবিত্র ।

লিখেছেন লিখেছেন Shopner Manush ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৪৪:১৬ সকাল





ইসলামপূর্ব আরবের সময়কে জাহেলিয়া বলা হয় সেখানকার মানুষদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারনে। তৎকালীন মহা পরাশক্তি রোম তার আওতায় থাকার পরও আরব ভূখন্ডটিকে সর্বদা এড়িয়ে চলত। কারন এরা ছিল গুয়ার,অশিক্ষিত,বর্বর,নির্দয় এবং প্রচন্ড স্বাধীনচেতা,স্বেচ্ছাচারী। তাছাড়া এখানে তেমন সম্পদ ছিলনা,তাই এমন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনপদকে তারা নিয়ন্ত্রন করতে চাইত না। তারা এটাকে নিয়ন্ত্রনের অযোগ্য মনে করত,যদিও এই জনতার খারাপ বৈশিষ্ট্যের বিপরীতে তাদের কিছু ঈর্শনীয় গুণও ছিল। তারা ওয়াদা পালন,আমানতদারী,অতিথীপরায়নতাকে অহংকারের প্রতিক মনে করত।

আমার আজকের উদ্দেশ্য একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা তাই আমি অনেক ঘটনা সম্পর্কে আলোকপাত করব না। তৎকালীন আরব সমাজে তিন ধরনের নারী ছিল-উচ্চ শ্রেণী,স্বাধীন নারী এবং দাসী। উঁচু শ্রেণীর নারীরা বেশ সামাজিক সুবিধা,মর্যাদা লাভ করত। এমনকি কোনো গোত্রের মধ্যে আপোষ মিমাংসা অথবা দাঙ্গা ফ্যাসাদ,যুদ্ধ লাগাতেও তারা সরাসরি ভূমিকা রাখত। সমাজের সকল শ্রেণীর মধ্যে ব্যাভিচার ছিল প্রতিষ্ঠিত। তবে উচ্চ শ্রেণীর অনেক নারী অহংকারবসত ব্যাভিচার থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখত। স্বাধীন নারীরা ছিল ব্যাভিচারে লিপ্ত এবং তারা ছিল ভোগ্য পণ্য। আর দাসীদেরকে শুধু ভোগের পণ্যই মনে করা হতনা, তাদের কোনো নিজস্বতা আছে তা স্বীকৃত ছিলনা। তাদেরকে হত্যা করলে কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন হতনা। এমনকি খেলাচ্ছলে মজা করেও হত্যা করা হয়েছে। অনেকে কন্যা সন্তানকে অমর্যাদার প্রতিক মনে করে তাকে জীবন্ত কবর দিত। সমাজে স্বাভাবিক বিয়ের প্রচলন ছিল তবে পুরুষ ছিল একচেটিয়া ক্ষমতার অধিকারী। তারা তাদের ইচ্ছামত যতটা খুশি বিয়ে করতে ও যেকোনো সময় তালাক দিতে পারত। জঘন্নসব নিয়ম নীতির অনুসরন করত তারা। স্বামী আদর্শ সন্তানের আশায় তার স্ত্রীকে অন্যের কাছে পাঠাত এবং সন্তান সম্ভবা হওয়া পর্যন্ত তাদের মিলিত হতে দিত। এভাবে তারা আদর্শ সন্তান প্রাপ্ত হবে বলে মনে করত। একাধিক পুরুষ একজনকে ভোগ করত,এরপর যখন নারীটি সন্তানের জন্ম দিত,তখন সে যে পুরুষটিকে সন্তানের পিতা বলে দাবী করত ,সেটিই প্রতিষ্ঠিত হত। ধর্ষণ এবং হত্যা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। পতিতাবৃত্তি ছিল সকল কতৃক স্বীকৃত। নারীর সম্পদের কোনো রকম স্বীকৃতি ছিলনা। তারা চলত অন্যের দয়ার ওপর নির্ভর করে। পিতার মৃত্যুর পর সৎ মাতাকে তার সন্তানেরা সম্পদের মত ভাগ করে নিত এবং তার সাথে ব্যাভিচার বা বিয়ে হতে পারত। মাতা,কণ্যাকে একই সাথে বিয়ে করা যেত,দু-বোনকেও একই সাথে বিয়ে করা যেত,মামি,চাচীদেরকেও বিয়ে করা যেত। বিয়ে ও ব্যাভিচারের ক্ষেত্রে কোনো বাছ বিচার করা হতনা। তাদের ইবাদতসমূহের মধ্যেও যৌনতা ছিল। তারা এগুলোকে পবিত্র জ্ঞান করে পালন করত। নারী-পুরুষ উলঙ্গ হয়েও ক্কাবা তাওয়াফ করত। সমাজপতিরা তাদের নিজেদের খেয়াল খুশি মোতাবেক আইন কানুন তৈরী করত। নিম্ন শ্রেণীর ওপর চলত সর্বদা অত্যাচার নির্যাতন। দাস-দাসীদের মানুষ মনে করা হত না। সামান্য অপরাধের শাস্তি হিসেবে প্রভাবশালী লোকেরা কখনও কখনও ঘোড়ার পায়ের সাথে দাস-দাসীদের বেঁধে ঘোড়া ছুটিয়ে দিত এবং এভাবে তাদের করুণ মৃত্যু হত। বেহায়াপনা,সন্ত্রাস,দূর্নীতি,হত্যা,পাশবিকতা,নির্মমতা,যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল সামাজিক বৈশিষ্ট্য। খারাপকে ভাল জেনে পালন করার লোক যেমন ছিল,তেমনি খারাপকে খারাপ জেনে পালন করার লোকও ছিল। একইসাথে ভাল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষও ছিল।

এমনই একটি বিভিষিকাময় ও অরাজকতাপূর্ণ পরিস্থিতিতে মক্কায় জন্মগ্রহন করেন মুহাম্মদ(সাঃ) নামক একজন ঐশী-বার্তাবাহক,যাকে গোটা মানব জাতির শিক্ষক হিসেবে গোটা পৃথিবী,মহাবিশ্ব,এর বাইরে বিভিন্ন স্তরে বিন্যস্ত আকাশমন্ডলীসহ সকল সৃষ্টির একচ্ছত্র অধীপতি,সু-মহান ও মহা পরাক্রমশালী স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা প্রেরণ করেছেন। এবং তার(সাঃ) মাধ্যমে মানুষদেরকে পরিচালনার বিধান দিয়েছেন, একইসাথে তাকে মহা পবিত্রতার প্রতিক ও অনুসরনীয় আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বালক মুহাম্মদ(সাঃ) ছিলেন অত্যন্ত উত্তম চরিত্রের অধিকারী। ছোটবেলায়ই তিঁনি তার অনন্ন সাধারণ বৈশিষ্ট্যের কারনে সকলের স্নেহ ও বিশ্বস্ততার পাত্রে পরিনত হন। মক্কাবাসী স্বতস্ফুর্তভাবে তাকে আল-আমিন বা বিশ্বাসী উপাধী প্রদান করে। তার ব্যক্তিত্বের প্রভাবে কৈশরেই তাকে নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন মনে করতে থাকে এবং ছোটখাটো বিচার মিমাংসায় তাকে বিচারক মানা হতে থাকে। তার প্রদি বিশ্বস্ততার মাত্রা এতটাই অতিক্রান্ত হয়েছিল যে, যখন তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়ে মক্কায় একটি নব জাগরন সৃষ্টি করে শাসকের রোষানলে পতিত ,তখন মক্কাবাসীকে ইসলামের মেসেজ দেওয়ার জন্যে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন-যদি আমি বলি এই পাহাড়ের বিপরীত পাশে কিছু সৈন্য তোমাদেরকে আক্রমনের জন্যে অপেক্ষা করছে,তাহলে বিশ্বাস করবে ? জনতা সম্মিলিতভাবে বলে উঠল -অবশ্যই বিশ্বাস করি,তার প্রধান শত্র“ মক্কার শাসক আবু লাহাব বলল-আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি ,কারন তুমি কখনও মিথ্যা বলনা......(এরপর আবু-লাহাব তাকে চরম অপমান করে). রোমের সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে যখন মুহাম্মদ(সাঃ)এর কর্মকান্ডের খরব পৌঁছালো তখন তিনি সেখানে ব্যবসা উপলক্ষে আগত মক্কার প্রধান শাসক আবু সুফিয়ানকে ডেকে আনেন এবং মুহাম্মদ সম্পর্কে তার কাছে জিজ্ঞেস করেন। তখন আবু সুফিয়ান সেখানে উপস্থিত অন্যান্য আরবের উপস্থিতির কারনে অহঙ্কারের স্বার্থে সত্য বলেন। তিনি রসূল(সাঃ)এর সম্পর্কে তার সত্যবাদীতা,দানশীলনা,অমায়িক ব্যবহার,আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা,গরিব মজলুমের পাশে থাকা,মানুষকে সাহায্য করা,বিশ্বস্ততা,কৃত চুক্তির প্রতি সম্মান,আমানতদারিত্বের ব্যাপারে অবগত করেন। একইসাথে তিনি কি কি প্রচার করেন তাও অবগত করেন। তিনি কখনও মিথ্যা বলেননি,কারো সাথে অন্যায় আচরন করেননি,কাওকে অভিশাপ দেননি এমনটা বলেন...... সকল সিরাত ও হাদীস গ্রন্থে এ জাতীয় ঘটনা বিবৃত হয়েছে। সকলে একবাক্যে তাকে বিশ্বাস করত। তার কাছে নিশ্চিন্তে আমানত রাখত। এমনকি হাজরে আসওয়াদ নামক সকল গোত্র,সম্প্রদায়ের নিকট মহা পবিত্র ও সম্মানের পাথর খন্ডটির স্থানান্তরের ব্যাপারে সমগ্র মক্কাবাসী যুবক মুহম্মদের(সাঃ) রায় মেনে নিয়েছিল। মক্কার মুশরিকগণ কর্তৃক ক্কাবাঘর সংষ্কার করার সময় বালক মুহাম্মদ(সাঃ) পাথর বহন করছিলেন,তখন তার কাজের সুবিধার্তে তার চাচা কাপড় খুলে একাজটি করার জন্যে বলেন এবং নিজেই জোরপূর্বক সেটি খুলে ফেললে বালক মুহাম্মদ(সাঃ) অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর তাকে কেউ এজাতীয় কথা বলেনি। আরববাসী পানির চাইতে বেশী মদ্যপান করলেও এবং নবুয়্যতের পরও কিছুকাল পর্যন্ত মদ হালাল থাকলেও তিনি কখনই তার পুরো জীবনের কোনো অংশেই মদ্যপান করেননি। তিনি ছিলেন গভীর প্রজ্ঞাসম্পন্ন,মিতভাষী,অভিজাত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন,পবিত্র,অতি উত্তম চরিত্রবান। নবুয়্যতের পূর্ব ও পরের সকল সময়ে তিনি ছিলেন অতি উত্তম চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

মক্কার সকল বংশ,গোত্র তাকে সম্মান,স্নেহ করত। তারা তাকে তার সমাজসেবামূলক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিল,তাকে নেতৃত্বের যোগ্য ভেবে বিচারের রায়ও মেনে নিত। কিন্তু যখন তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুয়্যত প্রাপ্ত হলেন এবং প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়া পরিচালনা করতে থাকলেন,তখন তার আপনজনেরাই তার শত্র“তা শুরু করল। যখন শাসকগোষ্ঠী তাদের শাসন প্রক্রিয়ার প্রতিদ্বন্বী কিছু দেখতে পেল,তখন তারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে মারাত্মক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করল। নির্দয়ভাবে অনেক অনুসারীকে হত্যা করা হল। এমনকি আল্লাহর রসূল(সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা করা হল। তাকে অকথ্য গালি,অপমান,নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে তিনি তাদের বিরুদ্ধে অভিশাপ পর্যন্ত দেননি বরং তাদের হেদায়েতের জন্যে দোয়া করেছেন। একজন মহিলা তাকে সাহাবাহসহ দাওয়াত করে বিষ মিশ্রিত খাবার খাইয়েছিল কিন্তু তাকেও তিনি ক্ষমা করেছিলেন। তায়েফের লোকেরা তাকে এমনভাবে রক্তাক্ত করেছিল যে রক্তে তার পা জুতার সাথে আটকে গিয়েছিল। ফেরেশতা জিবরাইল আল্লাহর আদেশে আবির্ভূত হয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন আপনি মাত্র একবার বললেই তায়েফ পাহাড় দিয়ে ওই সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা হবে। কিন্তু তিনি জবাবে বললেন-ওরা বুঝেনা কি করেছে। আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুক। তাকে(সাঃ) সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে। তার অনুসারীসহ ৩ বছর একটি গিরিখাতে বন্দী করে রাখা হয়। পর্যাপ্ত খাদ্য পানীয়ের অভাবে এবং রোগ শোক নিয়ে তারা বেঁচে ছিলেন ধুকে ধুকে। অথচ পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের সময় শক্তি থাকা সত্ত্বেও সকলকে তিনি ক্ষমা করেছিলেন।

দৈহিক,মানুষিক,অর্থনৈতিক,আত্মিক,সামাজিক যতভাবে অত্যাচার করা সম্ভব তা করা হয়েছিল। কিন্তু এত অত্যাচারের পরও শাসকের অধিকাংশই বিশ্বাস করত,তিনি(সাঃ) যা বলেন এবং করেন তা সত্য। এবং তার প্রাপ্ত বানী মানুষের তৈরী হতেই পারেনা। তাকে তারা চরম ঘৃণা করত। তাকে পাগল,যাদুকর,কবি বলা হয়েছে কিন্তু যারা তার ইসলাম প্রচার,প্রসার দ্বারা সারাসরি সামাজিক,রাজনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছিল,তারাও এই রসূলের(সাঃ) চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করেনি। এর কারন হল এই যে, তাকে কবি,সাহিত্যিক,পাগল,যাদুকর ইত্যাদী বললে কিছু লোক বিশ্বাস করবে বা সম্ভাবনা আছে(তাদের মতে) কিন্তু তাকে চরিত্রহীন বললে মক্কার মানুষ দূরে থাক, কোনো কুত্তাও বিশ্বাস করবে না। কারন বালক থেকে ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত সকলের চোখে তিনি ছিলেন আদর্শ,উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী। এরপর হঠাৎ এমন আপবাদে কেউ যে বিশ্বাস করবে না,সেটি মক্কার শাসকগণ জানত। অথবা তার অতি উন্নত নৈতিক চরিত্রের কারনে এ ব্যাপারটি তাদের চিন্তাতে আসেনি। এজন্যে আমরা রসূলের(সাঃ) বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার তখন দেখেছি,সেখানে কেউ তার নৈতিক চরিত্র নিয়ে কথা বলেনি। কারন তার নৈতিক চরিত্রের ব্যাপারটি ছিল ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত। এটি ছিল আরবের লোকের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা। তাই এ বিষয়ে অভিযোগ চরম শত্র“রাও করার কথা চিন্তা করেনি। এতে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবার কোনো সম্ভাবনা ছিলনা। তারা তাকে তার ইসলাম প্রচারের কাজে নিষ্ক্রান্ত হওয়ার জন্যে সমঝোতা করতেও রাজি ছিল এবং শর্ত স্বাপেক্ষে নেতৃত্বও মানতে রাজি ছিল,যদিও তিনি সে শর্ত মানেননি।

কিন্তু আমি এখানে উল্লেখ করতে চাচ্ছি, যারা তাকে সবথেকে বেশী চিনত,জানত,বুঝত এবং নবুয়্যতের ৩ বছর পরে প্রকাশ্য ইসলাম প্রচারের পর যারা ছিল তার সরাসরি স্বার্থের বিরোধী এবং যারা তাকে মারাত্মক অপমান-নির্যাতন করেছিল এবং যারা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারা তার চরিত্র নিয়ে এভাবে মন্তব্য করেনি,যেভাবে আজ আমরা বহু বছর পর বহুদূরের কোনো কোনো স্থান থেকে জানতে পারছি।

তার ২৫ বছর বয়সে খাদীজা(৪০) নমক মক্কার এক সম্ভ্রান্ত নারী তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে আকৃষ্ট হয়ে বিয়ের প্রস্তাব করেন। খাদীজা(রাঃ)ছিলেন ২বার তালাকপ্রাপ্তা(কারো কারো মতে তিনবার)এবং বিধবা। তার ছিল একাধিক সন্তান। রসূল(সাঃ) তখন তার চাচার সাথে কথা বলাতে চাচা রাজি হন এবং বিয়ের সম্মতি দিয়ে নিজ উদ্দোগে বিবাহ সম্পন্ন করান। ৩৫ বছর থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি একাকী হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন হতেন। ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়্যতপ্রাপ্ত হন। রসূলের(সাঃ)বয়স যখন ৫০ এর ওপর,তখন তার স্ত্রী বিয়োগ ঘটে। খাদিজা (রাঃ)এর মৃত্যুর(৬৫ বছর বয়সে) আগে রসূল(সাঃ)দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। রসূল(সাঃ)এর দ্বিতীয় বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৫১ বছর। তাঁর বিয়েগুলোর রাজতৈতিক গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের ভালবাসার বন্ধন সুদৃঢ় করতে,ইসলামের প্রসার ঘটাতে,অন্য গোত্রের মানুষকে ইসলামের পথে আনতে,ভবিষ্যতে ইসলামী রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী করার জন্য এবং মুসলিমদের নিরাপত্তার জন্য তাঁর বিয়েগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। আর তিঁনি যা কিছু করেছেন তাতে আল্লাহ তায়ালার সমর্থন ছিল এবং আল্লাহই তাকে দিয়ে সব কিছু করিয়েছেন মানব জাতির কল্যানের জন্য। তিঁনি তাঁর স্ত্রীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং তাঁর স্ত্রীরা তাঁর উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। উম্মুল মোমেনিনগনের পারষ্পরিক সম্পর্কও অত্যন্ত মধুর ও সৌহার্দপূর্ণ ছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছে পরম আকাঙ্খিত ছিল রসুলের(সাঃ) সাথে সুবর্ণ সময় অতিবাহিত করা। অথচ কোনো কোনো স্ত্রী সে সময়টুকুও অন্য স্ত্রীর জন্য ছেড়ে দিতেন। রসূল(সাঃ)উম্মুল মোমেনিনগনের সাধ্যানুযায়ী সহযোগীতা করতেন। তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন,সফরে সঙ্গী বানানো ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিঁনি লটারির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতেন। কখনও কখনও কোন প্রভাবশালী গোত্রপতির মেয়ে এসে রসূল(সাঃ)কে বিয়ের প্রস্তাব করেছে , বিয়ে হয়েছে এবং উক্ত গোত্র ইসলাম গ্রহন করেছে অথবা তারা মুসলিমদের মিত্র গোত্রে পরিনত হয়েছে। কখনও কখনও গোত্র পতিরা তাদের কন্যার সাথে বিয়ে করার প্রস্তাব করেছে এবং এরুপ করলে তারা/তাদের গোত্র ইসলাম গ্রহন করবে,মুসলিমদেরকে সর্বপ্রকার নিরাপত্তা দিবে এমন ওয়াদা করে তারা তা রক্ষা করেছে। তিঁনি যা কিছু করেছেন তা আল্লাহর আদেশেই করেছেন। তবে তিঁনি ১২টি(অথবা ১৩টি) বিয়ে করলেও মুসলিমদের জন্য সর্বোচ্চ চারটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ, শুধুমাত্র তাঁর ক্ষেত্রেই উক্ত সংখ্যক বিয়ের বিশেষ অনুমোদন আল্লাহ তায়ালা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নারীর সাথে কিভাবে আচরন করতে হয় তা তিনি আমাদেরকে ব্যবহারিকভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। কামুকতা সম্পর্কে একটু আলোচনা করে নেইঃ সাধারণত বয়সসীমা ১৬-২৫ পর্যন্ত মানুষ শারিরীকভাবে সবথেকে বেশী কর্মক্ষম থাকে। যৌনতাসহ যেকোনো ধরনের নৈতিক পদস্খলন এসময়ে বেশী ঘটে। ৩০এর পর মানুষের চিন্তা চেতনা,আচরনে স্থিতিশীলতা আসে। এসময়ে আবেগের চাইতে যুক্তি,বুদ্ধিকে সে বেশী প্রাধান্য দেয়। বয়স ৪০ হলে তার মধ্যে স্বাভাবিক ভুল করার প্রবনতা কমে আসে,কারন সে ভারসাম্যপূর্ণ একটি অবস্থায় অবস্থান করে। এসময় পর্যন্ত একটি পুরুষ শারিরীকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকে। এরপর থেকে শারিরীকভাবে সে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায়। ৫০বছর বয়সে এসে একজন মানুষের পক্ষে কামুক হওয়া খুব কষ্টকর ব্যাপার।

একজন মানুষকে কামুক হতে হলে তার মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে,তা হল- অখন্ড অবসর,মানুষিক প্রশান্তি,অর্থনৈতিক সমৃদ্ধী,দৈহিক সক্ষমতা,ধূর্ততা ইত্যাদী। এসকল বৈশিষ্টের যেকোনো একটির অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে কামুক প্রকৃতির হওয়া কষ্টসাধ্য। যদি কোনো মহা কামুকের ফাঁসির রায় ঘোষিত হয় এবং এরপর তাকে একাধিক সুন্দরী নারী উপহার দেওয়া হয় তাহলে তারপক্ষে নারী সম্ভোগ সম্ভবপর নয়। কারো যদি যথেষ্ট অবসর না থাকে,তাহলে তারপক্ষেও একাধিক নারীর কাছে গমন করা কষ্টসাধ্য। কারো অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হলে এবং একাজে তাকে অত্যধিক সময় ব্যয় করতে হলে,অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলে তার পক্ষেও কাজটি কষ্টসাধ্য। আর শারিরীকভাবে কেউ অক্ষম হলে বা দূর্বল হলে তার পক্ষেও কামুক হওয়া যৌক্তিকভাবে সম্ভব নয়। এসকল বৈশিষ্ট্য থাকার পর যদি ধূর্ততা না থাকে বা অসততা,প্রতারনার আশ্রয় না থাকে তাহলে তার পক্ষে কামুক হওয়া সম্ভব নয়। কারন, একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক গড়তে এবং তা টিকিয়ে রাখতে তাকে ধূর্ত হতে হয়। যদি নারী কোনো পুরুষকে কামুক মনে করে তাহলে ভালবাসা থাকা সত্বেও তাকে পরিত্যাগ করার সম্ভাবনা প্রবল। কামুকতাকে পুজি করে কপটতা ব্যতিরেকে একাধিক নারীর সাথে খোলাখুলি সম্পর্ক স্থাপন প্রায় অসম্ভব।

পৃথিবীর সবথেকে বেশী জীবনীগ্রন্থ রচীত হয়েছে রসূল(সাঃ)কে কেন্দ্র করে। সবথেকে বেশী পঠিত কিতাবও তার ওপর ভিত্তি করে। সবথেকে বেশী সংখ্যক ঐতিহাসিক তার ওপর ইতিহাস রচনা করেছেন। সকল ইতিহাস একত্রিত করে আমরা দেখতে পাব যে, তিনি(সাঃ) নবুয়্যত প্রাপ্ত হবার তিন বছর পর থেকে যখন প্রকাশ্যভাবে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন তখন কি জঘন্ন ধরনের অত্যাচারের সম্মুখিত হয়েছেন। তার সঙ্গীদের অনেককে হত্যা করা হয়,কয়েকজন ছাড়া প্রায় সকলের ওপর নিয়মিত চরম নির্যাতন করা হয়,এ বিষয়টি রসূলকে(সাঃ)মানুষিকভাবে চরম ব্যথিত করবে এটাই যুক্তিসঙ্গত। তিনি যখন আপনজন কতৃক শারিরীক ,মানুষিকভাবে নির্যাতিত হন তখন তিনি শারিরীক এবং মানুষিকভাবে জর্জরিত। ইসলাম প্রচারের পর তার দুই কন্যাকে আবু লাহাবের দুই পুত্র তালাক প্রদান করে। তার এক সন্তান সম্ভবা কন্যাকে উটের পিঠ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। পাথরের ওপর পতিত হয়ে তার গর্ভপাত হয়। যখন একমাত্র আশ্রয়দাতা চাচা আবু তালিবও তাকে পৌত্তলিকতায় ফিরে আসতে অনুরোধ করেন,সামাজিক-পারিবারিক প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করেন,তার জন্যে যখন তার আপনজনদেরকে অত্যাচারিত হতে হয়,ভৎসনা শুনতে হয় তখন স্বাভাবিকভাবে তার মানুষিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। এরপর তায়েফে চরমভাবে নির্যাতন ভোগ করতে হয়। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মদীনাতে হিজরত যখন করেন তখন নবগঠিত ইসলামী রাষ্ট্রে ৭৭% অমুসলিম জনতার বসবাস। ইহুদী-খ্রিষ্টানগণ প্রতিনিয়ত শত্র“তায় লিপ্ত। মোনাফিকরা ক্ষতির চেষ্টায় বিভোর। সুযোগ সন্ধানীরা বিপদে ফেলতে উদগ্রীব। মক্কার ১৩ বছর চরম নির্যাতন অপমান ভোগ করার পর মদীনার ১০ বছরেও তাকে স্বস্তীতে থাকতে দেওয়া হয়নি। স্বশরীরে তাকে ২৭ অথবা ২৯টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। ওহুদে তাকে মারাত্মভাবে আহত করা হয়েছে। একইসাথে শাসন পরিচালনা,যুদ্ধ পরিচালনা, ইসলামী দাওয়া,পররাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রনয়ন, কুটনীতি,গোত্রগত বন্ধন রক্ষা,সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা,আপোস-মিমাংসা,বিচার-ফয়সালা,নেতৃত্ব দান,পরামর্শ,প্রশিক্ষন,সংসার সকল বিষয় তাকে গুরুত্বেরসাথে দেখতে হয়েছে। পৃথিবীর সবথেকে যোগ্যতাসম্পন্ন লোকটিও যদি একাজগুলির দশ ভাগের একভাগ পরিচালনা করেন,তাহলেও কি যৌক্তিকভাবে তার পক্ষে কামুক হওয়া সম্ভবপর ???

যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যৌক্তিকভাবে রসূল(সাঃ)কে একজন মানুষ মনে করে তার সমালোচনা করতে চায়,তারা ওপরোক্ত বিষয়াবলী বিবেচনায় রেখেই অপবাদ রচনা করবে বলে আশা করি।

এবার আমরা রসূল(সাঃ)এর সম্মানিত স্ত্রীগনের ব্যাপারে আলোকপাত করব (রসূল(সাঃ)তার জীবনের শেষ ১৩ বছরে অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত কারনে ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে ১১টি মতান্তরে ১২ টি বিবাহ করেন) ঃ

তার স্ত্রীগণ হলেন: ---

১. খাদিজা(তালাকপ্রাপ্তা,বিধবা)

২. সওদা(বিধবা)

৩. আয়েশা(কুমারী)

৪. হাফসা(বিধবা)

৫. জয়নব বিনতে খোজায়মা(বিধবা)

৬. উম্মে সালমা(বিধবা)

৭. জয়নব(পালিত পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী)

৮. জুওয়ায়রিয়া(বিধবা)

৯. রায়হানা(বিধবা,ইহুদী ছিলেন এবং ইসলাম গ্রহন করে বিবাহ করেন-ইনার স্ত্রী হওয়া নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বীমত আছে)

১০. মেরী/মারিয়া কিবতিয়া(বিধবা,খ্রিষ্টান ছিলেন এবং ইসলাম গ্রহন করে বিবাহ করেন। তবে এ বিয়ের ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের ব্যাপারে মতভেদ আছে। মিশরের বাদশাহ মুকাওকিস তাকে রসূলের জন্যে উপহার হিসেবে পাঠান।)

১১. সফিয়া(বিধবা,ইহুদী ছিলেন এবং ইসলাম গ্রহন করে বিবাহ করেন)

১২. উম্মে হাবিবা(বিধবা,আবু সুফিয়ানের কন্যা। হাফসায় হিজরতের পর তার স্বামী ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহন করে এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়। উম্মে হাবীবা ইসলামের ওপর অটল থাকেন। তিনি চরম একাকিত্ব অনুভব করলে এবং মানুষিক অশান্তিতে নিপতিত হলে রসূল(সাঃ) বাদশাহ নাজ্জাশীকে চিঠি লিখে তাকে বিয়ে করার আগ্রহের কথা জানান। নাজ্জাশী তখন তাকে মদীনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন)

১৩. মায়মুনা(বিধবা,বৃদ্ধা)

সওদা, জয়নব বিনতে খোজায়মা, উম্মে সালমাঃ তৎকালীন আরবে নারীর মর্যাদা বলে কিছু ছিলনা। তালাকপ্রাপ্তা,বিধবাদের অবস্থা ছিল করুন। তারা ছিল অন্যের করুনার পাত্র। আর বিধবারা ছিল সামাজিক,অর্থনৈতিকভাবে অবাঞ্চিত। তাদেরকে মানুষ বিবাহ করতে চাইত না বরং ভোগ্য পণ্য ভাবত। তাই রসূল(সাঃ)ওপরোক্ত তিনজনকে কুমারী স্ত্রীর মত সম্মান,মর্যাদা দিয়ে বিবাহ করেছিলেন। এটি ছিল আরবদের জন্যে এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত।

উম্মে হাবিবা, বৃদ্ধা মায়মুনা, জুওয়ায়রিয়াঃ উম্মে হাবিবা ছিলেন মক্কার প্রধান নেতা,শাসক আবু সুফিয়ানের কন্যা। মায়মুনা ছিলেন বানি মখযুম গোত্রের প্রধান নেতা ওয়ালিদের কন্যা এবং সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ঠ সেনা নায়ক কালিদ বিন ওয়ালিদের বোন। জুওয়ায়রিয়া ছিলেন বনি মুস্তালিক গোত্রের প্রধান নেতার কন্যা। এ বিবাহগুলোর রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম, তা যে কোনো বোধজ্ঞানসম্পন্ন লোকই বুঝবে। কুরাইশরা ছিল শ্রেষ্ঠ গোত্র আর তার অন্যতম প্রধান নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যাকে বিবাহ করে এ গোত্রের অনেকের মন জয় করা বা মুসলিমদের পক্ষে অনুকূল্য গ্রহন সম্ভব হয়েছিল। মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহন করেন এবং তার স্ত্রী হেন্দা(রসূলের চাচা হামজার হত্যার নির্দেশদাতা এবং তার কলিজা চর্বনকারী) ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীতে রোম এবং পারশ্যের যুদ্ধে এই যুগল বিরত্ব প্রদর্শন করেন। যে হেন্দা ওহুদ যুদ্ধে জ্বালাময়ী কবিতা আবৃত্তি করে পৌত্তলিকদের মনোবল বৃদ্ধি করছিলেন,সেই হেন্দা রোম ও পারশ্যের যুদ্ধে একই কবিতা আবৃত্তি করে মুসলিম সৈন্যের মনোবল বৃদ্ধি করছিলেন এবং তার স্বামী আবু সুফিয়ানের যুদ্ধ কৌশলে সন্তুষ্ট না হয়ে তাবুর খুটি দিয়ে আবু সুফিয়ানের ঘোড়ার মাথায় আঘাত করে ,তাকে চরম তিরষ্কার করে নব উদ্দমে লড়তে বাধ্য করেন এই বীর মহিলা। রসূলের(সাঃ) চরম শত্র“ কুরাইশ নেতা আবু জেহেলের বীর পুত্র ইকরামা ইসলাম গ্রহন করে পরবর্তীতে তার মৃত্যু পূর্ববর্তী সকল জিহাদে মুসলিম কমান্ডার হিসেবে অংশ নিয়ে যে অসাধারন কর্মকান্ড সম্পাদন করেছিলেন,তার পেছনেও রসূলের(সাঃ) এই নির্ভেজাল আত্মীয়তার বন্ধন কাজ করেছিল। মক্কার সাথে মদীনার হুদায়বিয়ার সন্ধীর পর তার শর্ত কুরাইশ কৃত ভঙ্গ করা হলে আবু সুফিয়ান মদীনায় যান সন্ধীচুক্তি নবায়নের জন্যে। এসময় তিনি তার কণ্যা রসূলের(সাঃ)স্ত্রী উম্মে হাবীবার ঘরে প্রবেশ করে বিছানায় বসতে চাইতে তার কন্যা বিছানা গুটিয়ে ফেলেন। তখন পিতা জিজ্ঞেস করেন-তুমি আমাকে এই বিছানার উপযুক্ত মনে করনি,নাকি বিছানাকে আমার উপযুক্ত মনে করনি ? জবাবে উম্মে হাবীবা বলেন এটি পবিত্র রসূলের পবিত্র বিছানা আর আপনি অপবিত্র মুশরিক। এ বিষয়টি আবু সুফিয়ানকে পরবর্তীতে ভাবিয়েছে যে,আমার প্রানপ্রিয় কন্যা কিভাবে বদলে গেল এবং নিশ্চয় এর ভেতর অন্য কোনো মাধুর্য আছে,যা আমি বুঝতে পারছি না।..... অর্থাৎ তার কন্যার সাথে রসূলের(সাঃ) বিবাহ তার মত কুরাইশ নেতাকে ইসলামের প্রতি ইতিবাচক চিন্তার খোরাক যুগিয়েছিল। বনু মখযুম গোত্র ছিল যুদ্ধ সংক্রান্ত নেতৃত্বের প্রধান। সৈন্য প্রশিক্ষন,সৈন্য পরিচালনা,যুদ্ধ কৌশল নির্ধারন,অস্ত্র সংগ্রহ এসকল কাজ ছিল তাদের ওপর ন্যস্ত। ফলে এখানেও আমরা রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। সত্যিই এই বিয়ের পর কোরাইশদের অনেকে তাকে বন্ধু ও আপনজন মনে করত। রসূল(সাঃ) সম্পর্কে তাদের মানুষিকতা পরিবর্তিত হওয়াতে মুসলিমরা এ সম্পর্ক থেকে উপকৃত হয়েছে। পরবর্তীতে এরা ইসলামে বিরাট অবদান রেখেছে। আর জুওয়ারিয়াকে বিয়ের পর পুরো বনি মুস্তালিক গোত্র মুসলিমদের পক্ষে চলে আসে। শত্র“তা ভুলে তারা মুসলিমদের নিরাপত্তা প্রদায়কে পরিনত হয়।

মেরী,বায়হানা,সফিয়াঃ মদীনায় মোট জনগোষ্ঠীর ৭৭% ছিল অমুসলিম। শিশু ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় রসূল(সাঃ) ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদের বিভিন্নভাবে খুশী করেন। তাদেরকে ইসলামের নীতি আদর্শ বুঝান,নাগরিক হিসেবে তারা ইসলামী রাষ্ট্র থেকে কিভাবে উপকৃত হবে তা তাদেরকে বুঝানো হয় এবং তারা উপকৃতও হয়েছিল। তারপরও তারা শত্র“তা করেছিল ,শত্র“কে পোগন সংবাদ প্রদান করেছিল কিন্তু তাদের অন্তর জয় করার জন্যে,সর্ব প্রকার সহযোগীতা করার জন্যে তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপন করেন(অবশ্য ইসলাম গ্রহন করেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন). এতে অনেক ইহুদী,খ্রিষ্টান ইসলাম গ্রহন করেছিল এবং অনেকে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন করেছিল। গোটা মুসলিম উম্মাহর জন্যে এগুলো ছিল খুবই উপকারী,উপযোগী সিদ্ধান্ত। আমি ঘটনা সংক্ষিপ্ত করতে চাচ্ছি তারপরও হচ্ছেনা। সহিহ বুখারী থেকে একটি ঘটনা শেয়ার করছি-....সফিয়া ছিলেন বানু কুয়াজা ও বানু নজীর গোত্রের নেত্রী। যুদ্ধে তার স্বামী নিহত হয়।.... তিনি ইসলাম গ্রহন করেন এবং এরপরপরই রসূল(সাঃ)কে বিয়ের প্রস্তাব করেন এবং রসূল(সাঃ) তা গ্রহন করেন। বিয়ের পর তিনি(সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন তোমার মুখে কিসের দাগ ? জবাবে তিনি বলেন-আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম আকাশের চাঁদ যেন আমার কোলে এসে পড়েছে,সকালে স্বামীর কাছে এর কারন জানতে চাইলে তিনি আমার মুখে প্রচন্ড আঘাত করে বলেন-তুমি মদীনার শাসককে পেতে চাইছ ?.... তার গোত্রের অনেকে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহন করে অথবা মুসলিমদেরকে আপনজন ভাবতে থাকে।

আয়েশা,হাফসাঃ হযরত আয়েশা(রাঃ) ছিলেন তার(সাঃ) একমাত্র কুমারী স্ত্রী। আমরা ইসলামে হযরত আবু বকর(রাঃ)এর অবদানের কথা ভালভাবে অবগত আছি। তিনি ছিলেন রসূলের(সাঃ)বন্ধু,হিজরতের সাথী,সকল নেক কাজে অগ্রগামী,প্রভাবশালী,প্রথম খলিফা। তার সাথে তিনি আরও স্থায়ী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিলেন এবং তার চাইতেও বেশী উদগ্রীব ছিলেন আবু বকর(রাঃ). একারনে তিনিই রসূলের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় নিজের কণ্যাকে বিবাহ দেন। সহিহ বুখারীর হাদীস অনুযায়ী এসময় মা আয়েশার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর, এবং ৯ বছর বয়সে তিনি রসূলের(সাঃ)গৃহে গমন করেন। একজন শিশুর সাথে বিবাহ সম্পন্ন করার একমাত্র কারন ছিল আবু বকরের সাথে সম্পর্ক আরও ওপরের স্তরে উন্নিত করা। কারন এরকম শিশুর সম্পর্কে আলোচ্য অপবাদ সম্পুর্ণ বেমানান। আমরা হযরত ওমর(রাঃ)এর প্রভাবও জানি। তিনিও ছিলেন মক্কার অন্যতম প্রভাবশালী এবং বীরপুরুষ। তার এবং হযরত হামজার ইসলাম গ্রহনের পর ইসলাম প্রকাশ্যে প্রচার শুরু হয়। ইসলামের ইতিহাসে ইনি আছেন সামনের কাতারে। আল্লাহর রসূলের জন্যে যে কোনো ত্যাগে,পরিকল্পনায়,যুদ্ধে,সহযোগীতায় তিনি এগিয়ে। তিনি ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা। ওমর(রাঃ) তার নিজের পারকালীন সম্মান,মর্যাদার কথা ভেবে নিজের কন্যাকে রসূলের সাথে বিবাহ দেন। এমনই সম্পর্ক রক্ষার ধারাবাহিকতায় রসূল(সাঃ) তার চরম আকাঙ্খিত কন্যা ফাতিমাকে(বহু লোক ছিল তার পানি প্রার্থী) নিজের চাচাতো ভাই হযরত আলীর সাথে বিবাহ দেন। আলী(রাঃ) ছিলেন তার প্রান প্রীয় ভাই। প্রায় ৬ বছর বয়স থেকেই রসূল(সাঃ) তাকে লালন পালন করেন। ইসলামের ইতিহাসে ৪র্থ খলিফা আলীর(রাঃ) অবস্থান নতুন করে ব্যাখ্যা করার কোনো প্রয়োজন নেই। এবং একইভাবে ৩য় খলিফা হযরত ওসমানের সাথে নিজের দুই কন্যাকে বিবাহ দেন(একজনের মৃত্যুর পর অন্যজনকে বিবাহ দেওয়া হয়)।

সওদা,জয়নব ঃ পারলৌকিক কল্যান,সম্মানের কথা চিন্তা করে অনেক সাহাবী তাদের কন্যাদেরকে রসূল(সাঃ)এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্খা পোষণ করতেন। অনেক নারী এ ইচ্ছা পোষণ করেছেন তবে কাওকে কাওকে আল্লাহ কুবল করেছেন। তারই ফলশ্র“তিতে হযরত সওদা এবং জয়নব এর বিবাহ। ওয়ালিদের কন্যা মায়মুনাও এরূপ ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। হযরত সওদা স্ত্রী হিসেবে যে সময়টুকু রসুল(সাঃ)এর কাছ থেকে প্রাপ্ত হতেন ,তা বেশীরভাগ সময় হযরত আয়েশাকে দিয়ে দিতেন। তিনি আল্লাহর রসূলের(সাঃ) স্ত্রী এটাতেই বেশী সন্তুষ্ট ছিলেন। হযরত জয়নব ছিলেন রসূল(সাঃ)এর পালিত পুত্র যায়েদের স্ত্রী। তৎকালীন আরবে পালিত পুত্রকে নিজের পুত্রের সমান মনে করা হত। একে অন্যের সাথে মা,পিতা,পুত্র,কন্যা ইত্যাদী সম্পর্ক স্থাপন করে খেয়াল খুশি মত আচরন করত। এবং বিবাহ-শাদী সংক্রান্ত বহু কু-সংষ্কার সৃষ্টি করেছিল। সৎ মা,খালা,চাচীদের সাথে বিবাহ বা ব্যাভিচারে আপত্তি না থাকলেও পাতানো কন্যা,বোনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে তাদের আপত্তি ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ এটি চাননি। পালিত পুত্র যে প্রকৃত পুত্র নয় সেটা প্রমান করতে এবং সামাজিক কু-সংষ্কার ভাংতে আল্লাহ তায়ালা প্রকাশ্য আয়াত নাযিল করে তাকে পালিত পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করার কথা বলেন। “অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল,তখন আমি তাকে তোমার সাথে পরিনয়সূত্রে আবদ্ধ করলাম,যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্রগণ নিজ স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেইসব নারীগণকে বিবাহ করায় মুমিনদের কোনো বিঘœ না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকরী হয়েই থাকে। (সূরা আহযাবঃ ৩৭)

রসূল(সাঃ) সকল ক্ষেত্রে আমাদের জন্যে অনুকরনীয় আদর্শ। আমাদের সকল সমস্যার মৌলিক সমাধানের রাস্তা আল্লাহর আদেশে তিনিই দেখিয়ে দিয়েছেন। বিবাহের ক্ষেত্রেও তাই। তার মাধ্যমেই আমরা সমাজের উচ্চ শ্রেণী,দাসী শ্রেণী,কুমারী,তালাকপ্রাপ্তা,বিধবা,নিঃসন্তান,সন্তানযুক্ত,নও-মুসলিম,অল্প বয়স্কা,প্রবীন সকল ধরনের,মানুসিকতার স্ত্রীদের সাথে কিরূপে আচরণ করতে হবে তা ব্যবহারিকভাবে দেখিয়েছেন। বিষয়টি নিঃসন্দেহে দূরহ কিন্তু মহান স্রষ্টা আল্লাহ তাকে নিয়ন্ত্রণ করাতে তার পক্ষে এটি সম্ভবপর হয়েছিল। আর এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ তাই শর্ত স্বাপেক্ষে অন্যদের জন্যে সর্বোচ্চ চারটি বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি বিশেষ প্রয়োজনের ওপর নির্ভরশীল। “তোমরা যদি ইয়াতিম নারীদের প্রতি অবিচার করাকে ভয় কর, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমার পছন্দ,দুই,তিন অথবা চার পর্যন্ত,আর যদি আশঙ্কা কর যে-সুবিচার করতে পারবে না,তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে বিয়ে কর,এতে তোমাদের ক্ষেত্রে পক্ষ পাতিত্ব না করার সম্ভাবনা অধিক(বিধায় এটি গ্রহন করা উচিৎ) আর নারীদেরকে মাহ্র(বিয়ের সময় নারী কর্তৃক দাবীকৃত অর্থ)প্রদান করবে স্বতস্ফুর্তভাবে, সন্তষ্টচিত্তে।”(আল-কুরআন,৪ঃ৩-৪) শুধু রসূলের(সাঃ)ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা ১৩টি বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন বা আদেশ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন অবস্থা মোকাবেলায়,মুসলিম উম্মার স্বার্থেই তাকে উক্ত সংখ্যক বিবাহ করতে হয়েছিল। যে অভিযোগ করা হয়েছে তা ওপরোক্ত বিষয় বিবেচনায় কোনো মতেই গ্রহনযোগ্য বা যৌক্তিক হতে পারেনা। তিনি যেভাবে তার প্রাত্যহিক জীবনকে সাজিয়েছিলেন সেখানে তার প্রতিটি মুহুর্ত ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছ। এমনকি তিনি তার স্ত্রীগনের সাথে প্রকাশ্যে ও পোগনে কি আচরণ করতেন,তার স্ত্রীগন তার(সাঃ) সাথে কিরূপ আচরন করতেন তা বিশ্ববাসীর কাছে তিনি নিজে এবং তার স্ত্রীগন প্রকাশ করেছেন। রসূলের(সাঃ) স্ত্রীগন একে অপরের সহযোগী ছিলেন।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

270135
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৪৮
বিন হারুন লিখেছেন : جــــزاك الله خــــيــــر
300860
২০ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ১২:৩২
Shopner Manush লিখেছেন : অনেক ধন্যব। Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File