নিয়ামত যেন বোঝা না হয়

লিখেছেন লিখেছেন সুমাইয়া হাবীবা ২১ জুন, ২০১৬, ০৪:৩২:৩৯ বিকাল

ঘটনা-১

২০১৩ সালের শেষের দিকে বা ২০১৪ সালের শুরুর দিকের ঘটনা। আমার ঠিক মনে নেই। তবে, হরতাল অবরোধ চলছে। অবস্থা খুব নাজুক। ঢাকার পান্থপথের একটি বিখ্যাত হসপিটালের ঘটনা। প্রখ্যাত একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের চেম্বার। চব্বিশ পচিঁশ বছরের একটি মেয়ে বারবার পি.এ.’র কাছে ধরনা দিচ্ছে। মেয়েটি খোড়াচ্ছে। সবাই ভাবছে মেয়েটি খোঁড়া। প্রাইভেট চেম্বারের রীতি অনুযায়ী মেয়েটিকে পি.এ. মহাশয় ঘোরাচ্ছে। রাত দশটার কিছু পর মেয়েটি ঢুকলো। ঢুকেই সাহস করে বললো আমি নারায়নগঞ্জ থেকে একা এসছি। সাথে আসার মত কেউ নেই। কোন গাড়ী পাইনি। ঢাকা পর্যন্ত প্রায় পুরোটা পথ হেঁটে এসছি রোদের মধ্যে। সেই সন্ধ্যা থেকে বসে আছি। পা ফুলে গেছে! খুব কষ্ট হচ্ছে স্যার! ডাক্তারের মুখ রক্তবর্ণ হয়ে গেলো। পুরো হসপিটাল কাঁপিয়ে পি.এ.কে ডাকলেন। পি.এ. ভেতরে ঢুকলে অমানুষের বাচ্চা দিয়ে কালবৈশাখী শুরু হলো। তোর বোন হলে কি করতি! সরাসরি তুই তে নেমে গেলেন। তখনতো এসে আমার হাত পা ধরতি। দুই দিন পর পর তোর এটা সেটার রিকোয়েস্ট! এমন একটা রিকোয়েস্ট রাখার মনুষত্য আল্লাহ তোরে দেয়নাই! রাত কয়টা বাজে! তোর বোনরে এত রাতে বাইর করতে পারবি! এই মেয়ের কিছু হইলে দায়িত্ব কার! তুই নিবি! ক্ষমতা আছে তোর! আমার চোখের সামনে থেকে দুর হইয়া যা! কালকে থেকে আর আসবিনা খবরদার! তারপর অনেক হাতে পায়ে ধরে মেয়েটির কাছে ক্ষমা চেয়ে চাকরীর বাঁচানোর চেষ্টা চলেছে। পরের খবর জানা নেই।

ঘটনা-২

২০১২ সাল। মিরপুর অরিজিনাল ১০ এর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তারের চেম্বার। সদ্য ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে মানতে শুরু করা একটি মেয়ে তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলো। ডাক্তার টেষ্ট দিলে জিজ্ঞেস করলো কত লাগতে পারে। যুবক ডাক্তার এতক্ষণে ভালোমত তাকালো তাদের দিকে। আপাদমস্ত দেখে নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলো। বাসা কোথায়, কি পড়ে, বাবা কি করে। মেয়েটি খুবই বিরক্ত। মা সরল মনে উত্তর দিচ্ছে। বাবা রিটায়ার্ড। পেনশন দিয়ে চলে ইত্যাদী। মেয়েটি মনে মনে বললো দাঁড়ি টুপি দেখে এই ডাক্তার বাছলাম। আর এখন এই! সাধারণরা ডিস্টার্ব করে, আর এই ইসলামিকরা বোরকাওয়ালী দেখলেই বিয়ের চিন্তায় চলে যায়! হয় নিজের নয় পরিচিত আরেকজনের! ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে মেয়েটিকে বললো রিসেপশনে গিয়ে আর নীচের ফার্মেসীতে গিয়ে অমুককে দেবেন। আমার ক্ষমতায় যা কুলালো ততটুকু ডিসকাউন্ট দিয়েছি। এর বেশি দেয়ার সাধ্য নেই। আল্লাহ সুস্থ করুন। আশা করি আর আসতে হবেনা। আশ্চর্য হয়ে মেয়েটি নীচে গেলে কাউন্টারের লোকটি বললো স্যারের কেমন আত্মীয় আপনারা? মেয়েটি বললো আপনাকে কে বললো আমরা আত্মীয়! লোকটি বললো আপনাদেরকে ফ্যামিলির ডিসকাউন্ট দিয়েছে স্যার। স্যারের ফ্যামিলিকেতো চিনি। আপনাদের চিনলাম না তাই। হতভম্ব মেয়েটির অনুতোপে চোখে পানি চলে এলো।

ঘটনা-৩

২০১৬’র জানুয়ারী মাস। ডেন্টিস্ট এর চেম্বার। মহিলার দাঁতের অবস্থা খুবই খারাপ। স্কেলিং করা হলো। ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখছেন। মহিলা কোনমতে বললো ডাক্তার সাব আমার আরেকটা দাঁত দেখেন না। সেদিন বলসিলেন পরে দেখবেন। ভেতর দিয়া খাইয়া গেছে মনে হয়। চোখা লাগে। জিব কাইটা যায়। ডাক্তার লিখা শেষ করে আরেক রোগীর দিকে মনোযোগ দিলেন। এটেনডেন্ট মহিলাকে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিলেন। আগে এগুলা খান। তারপর আসবেন আবার। তখন দেখবেন। মহিলা বের হয়ে ছেলেকে বললেন। ছেলে আবার নক করলো দরজায়। এটেনডেন্ট উঁকি দিয়েই মহিলার চেহারা দেখে রেগে গেলো। বললাম না পরে আবার আসবেন! সবার সামনেই তুমুল হইচই করে বিদায় করেই ছাড়লেন তাদের।

সিলেটের একটি শুনলাম। তা নিয়ে বিতন্ডাও দেখলাম। ঘটনার পক্ষের লোকদের কান্ডও দেখলাম। এবং ঘটনায় ব্যথিত শ্রেণীর প্রতিবাদও দেখলাম। তাতেই উপরের ঘটনাগুলো মনে পড়লো।

আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান এবং মেধা দিয়েছেন। নিজের লাভের জন্য নয়। মানবের তথা সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণ সাধনের জন্য। বান্দাহকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে দানকারীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। আর সেটার মাধ্যম হলো তার সৃষ্টির সেবা। ডাক্তারীর চেয়ে বড় কোন সেবার মাধ্যম আমার জানা নেই।

আবার যারা নসীহা দেবেন সঠিক পথের দাওয়াহ দেবেন তাদেরও সেবার ব্রত নিয়েই দাওয়াহ দিতে হবে। যালিমকে যুলুম করা থেকে বিরত রাখাই যালিমের প্রতি ইহসান করা। এটা দাওয়াহ দানকারী ব্যক্তির প্রতি আল্লাহর নিয়ামত যে তিনি মনুষত্য হারা নন। হিদায়াতের উপর আছেন। এবং আল্লাহ তাকে দাওয়াহ দানের যোগ্য করেছেন।

পরিশেষে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে। যার যত মেধা যত বুদ্ধি যত জ্ঞান তার হিসাব তত বেশি হবে। জবাবদিহি তত বেশি হবে। কঠিন হবে। দুনিয়ায় ব্যক্তির জন্য যা আল্লাহর নিয়ামত কাল হাশরের মাঠে তা যেন বোঝা না হয়ে যায়।

বিষয়: বিবিধ

১৪২২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372752
২১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৪২
কুয়েত থেকে লিখেছেন : যে বালো কাজ করলো তা সে তার নিজের জন্যই করলো। আর যে মন্দ কাজ করলো তাও সে তার নিজের জন্য করলো আল্লাহ কারো উপর জুলুম করেন না। ধন্যবাদ আপনাকে লেকাটি ভালো লাগলো
২১ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:৪৩
309480
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : ধন্যবাদ
372761
২১ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : আসলে ভালো মানুষদের জন্যই জগত্ টা এত সুন্দর,, হাজার বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়। এ জন্যই সূরা রাহমানে আল্লাহ বলেছেনঃ অতঃপর তোমরা আমার কোন কোন নিয়ামত/অবদান অস্বীকার করবে।
ভালো লাগলো,,, ধন্যবাদ।
372762
২১ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৪২
অনেক পথ বাকি লিখেছেন : ক্রুসেড বিজেতা লিখেছেন : আসলে ভালো মানুষদের জন্যই জগত্ টা এত সুন্দর,, হাজার বছর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে হয়। এ জন্যই সূরা রাহমানে আল্লাহ বলেছেনঃ অতঃপর তোমরা আমার কোন কোন নিয়ামত/অবদান অস্বীকার করবে।
ভালো লাগলো,,, ধন্যবাদ।
372766
২১ জুন ২০১৬ রাত ০৮:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : কেয়ামতের দিন সামর্থের ব্যবহার আর অপব্যবহারের কৈফিয়ত অবশ্যই দিতে হবে। অতএব যে পাত্রে দিচ্ছি তা দামী না অদামী তা নাদেখেই েওয়া উচিৎ। সব পাত্রই সমান। ধন্যবাদ।
372773
২১ জুন ২০১৬ রাত ১০:১৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : যার যত মেধা যত বুদ্ধি যত জ্ঞান তার হিসাব তত বেশি হবে। জবাবদিহি তত বেশি হবে। কঠিন হবে। দুনিয়ায় ব্যক্তির জন্য যা আল্লাহর নিয়ামত কাল হাশরের মাঠে তা যেন বোঝা না হয়ে যায়।

এটাই মূল বিষয়। সরকারী হাসপালই নয় বেসরকারী হাসপাতালের সেবার মানও সুবিধার নয়। টাকার জন্যে কুত্তা পাগল অবস্থা অনেক মানুষের। জাজাকাল্লাহ খায়রান দারুনভাবে লিখেছেন
372779
২১ জুন ২০১৬ রাত ১০:৩৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, লিখাতে চিন্তার খোরাক অনেক। সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।

372782
২১ জুন ২০১৬ রাত ১০:৫২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য।
372783
২১ জুন ২০১৬ রাত ১০:৫২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। ব্লগে এসেছিলাম কিন্তু ভাল লাগছেনা। আপনার লেখা দেখে লগইন করলাম। আপু আপনি অনেক সুন্দর ভাবে ভাবতে পারেন।
372788
২১ জুন ২০১৬ রাত ১১:২৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয়া আপু।

শিক্ষণীয় সুন্দর ভাবনাগুলো শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

১০
372818
২২ জুন ২০১৬ সকাল ০৭:৩৮
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয়া আপু।

শিক্ষণীয় সুন্দর ভাবনাগুলো শেয়ার করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File