নারীর সম্মান মর্যাদা রক্ষার্থে করনীয় (২য়)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ১৯ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৪২:০০ সকাল

১ম অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22189 (প্লিজ ক্লিক এন্ড রীড)

পর্দা একটি ইবাদত, সালাত যেমন ইবাদত । এটি আল্লাহর নির্দেশ । বিষয়টি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী ।

আল্লাহ তাআলা পিতা আদম ও হওয়া আ.-এর প্রতি পর্দার নেয়ামতকে বর্ণনা করে ইরশাদ করেছেন-

তোমার জন্য এ-ই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্তও হবে না এবং নগ্নও হবে না (সূরা ত্বহা আয়াত ১১৮)

পোশাক যে অনেক বড় নেয়ামত তা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

হে আদমের সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ । বস্ত্তত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই উত্তম । এসব আল্লাহর নিদর্শনাবলির অন্যতম । এর উদ্দেশ্য মানুষ যাতে উপদেশ গ্রহণ করে (সূরা আ’রাফ আয়াত ২৬)

পবিত্র কোরআন বলছে- আপন পোষাক পবিত্র করুন এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন (আল মুদ্দাস্‌সির আয়াত ৪, ৫)

তিনি (সাঃ) বলেন তোমরা সাদা কাপড় পড় । কারণ এটা অধিকতর পরিষ্কার এবং অধিক মনোরম । আর তোমারা এই সাদা কাপড় দিয়েই তোমাদের মৃত ব্যক্তিকে কাফন দাও (আহমাদ, তিরমিযী, নাসায়ী, মেশকাত ৩৭৪ পৃঃ)

আমরা কখনোই বলতে পারিনা যে পর্দা কেবলি নারীর বা পূরুষের একার । মহান আল্লাহ বলেন-

অর্থাৎ: "তারা (নারীরা) তোমাদের (পূরুষদের) পোষাক স্বরুপ এবং তোমারা (পূরুষেরা) তাদের (নারীদের) পোষাক স্বরুপ" (বাকারাহ আয়াত ১৮৭)

পোশাকের কিছু মৌলিক নীতিমালাঃ-

এখানে ১-৬ পর্যন্ত নারী পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য এবং ৭ ও ৮ নং কিছুটা ব্যতক্রম ।

১. পোশাক এমন আঁটসাঁট ও ছোট মাপের হতে পারবে না, যা পরলে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে এবং দৈহিক গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে ।

আবু ইয়াযীদ মুযানী রাহ. বলেন, হযরত ওমর রা. মহিলাদেরকে কাবাতী (মিসরে প্রস্ত্ততকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন । লোকেরা বলল, এই কাপড়ে তো ত্বক দেখা যায় না । তিনি বললেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ২৫২৮৮)

২. পোশাক এমন পাতলা ও মিহি হতে পারবে না যাতে শরীর দেখা যায় এবং সতর প্রকাশ পেয়ে যায় ।

হযরত আলকামা ইবনে আবু আলকামা তার মা থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার হাফসা বিনতে আবদুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকটে এল ।তখন তার পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না । উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন (মুয়াত্তা মালেক ২/৯১৩, হাদীস: ৬)

৩. পোশাকের ক্ষেত্রে বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না ।

ইবনে ওমর রাদিআল্লাহ আনহু থেকে আবু দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনগণ বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য।” এরশাদ হচ্ছে,

“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাজিল হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি ? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল”(সুরা হাদীদ আয়াত ১৬)

ইবনে কাসির অত্র আয়াতের তাফসিরে বলেন, “এ জন্য আল্লাহ তাআলা মোমিনদেরকে মৌলিক কিংবা আনুষঙ্গিক যে কোন বিষয়ে তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন ।ইবনে তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন । অর্থাৎ অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব ক্ষেত্রে সমান, কাফেরদের অনুসরণ করা যাবে না”(ইবনে কাসির ৪: ৪৮৪)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ‘উসফুর’ (ছোট ধরনের লাল বর্ণের ফুল গাছ) দ্বারা রাঙানো দুটি কাপড় পরতে দেখে বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে কাফিরদের পোশাক । অতএব তুমি তা পরিধান করো না’ (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২০৭৭; নাসায়ী, হাদীস: ৫৩১৬)

তাছাড়া অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০২৭)

৪. পোশাকের মাধ্যমে অহংকার ও লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ উদ্দেশ্য হওয়া যাবে না ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সুখ্যাতি ও প্রদর্শনীর পোশাক পরবে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ৬২৪৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০২৫)

৫. পুরুষদের জন্য মেয়েলী পোশাক এবং নারীদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা এবং একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা নিষেধ ।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই সব পুরুষের উপর লানত করেছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (তাদের মতো আকৃতি, তাদের পোশাক ও তাদের চাল-চলন গ্রহণ করে); আর সেই সব নারীর উপরও লানত করেছেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৮৮৫)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারিনী নারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪০৯২; বুখারী, ফাতহুল বারি: ১০: ৩৩২; মেশকাত ৩৮৩ পৃঃ)

নবী (সাঃ) বলেন আমার উম্মতের নারীদের জন্য রেশমের পোষাক পরা হালাল । কিন্তু পুরুষের জন্য তা হারাম (তিরমিযী, নাসায়ী, মেশকাত ৩৭৫ পৃঃ)

৬. পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় করা, বিলাসিতা করার জন্য বা শখের বশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক ক্রয় করা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উচ্চমূল্যের পোশাক ক্রয় করা নিষেধ ।

হযরত আমর ইবনে শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা খাও, পান কর, অন্যদের দান কর এবং কাপড় পরিধান কর যে পর্যন্ত অপচয় ও অহংকার করা না হয় (সুনানে নাসায়ী, হাদীস: ২৫৫৯; ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩১০৫)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, যা মনে চায় খাও, যা মনে চায় পরিধান কর যে পর্যন্ত দুটি বিষয় না থাকে: অপচয় ও অহংকার (সহীহ বুখারী ১০/১৫২)

৭. গায়রে মাহরাম ও পর পুরুষের সামনে অলংকার ও পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না, যাতে তারা সেদিকে আকৃষ্ট হয় ।

তারা যেন নিজেদের ভূষণ প্রকাশ না করে ।

ইমাম যাহাবী রাহ. বলেন, যে সব কর্ম নারীর উপর লানত করে তা হল অলংকার ও আকর্ষণীয় পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা । ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার ...(আল কাবায়ের পৃ. ১০২)

নিজ গৃহে অবস্থান কর সাজ-সজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িও না । যেমন প্রাচীন জাহেলী যুগে প্রদর্শন করা হত ।

প্রাচীন জাহেলী যুগে নারীরা নির্লজ্জ সাজ-সজ্জার সাথে নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াত । আজকের নব্য জাহেলিয়াতের অশ্লীলতা এতটাই উগ্র যে, তার সামনে প্রাচীন জাহেলিয়াত ম্লান হয়ে গেছে ।

৮.ব্যাপ্তিঃ-যা পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন ।

রাসুল (সাঃ) বলেন নাভীর নীচে থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত অঙ্গটি পুরুষের গুপ্তাঙ্গ (দারা কুতনী ১ম খন্ড ২৩০ পৃঃ); তবে নামাযের জন্য হাঁটু এবং কাঁধ ঢাকতে হবে (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ৭২ পৃঃ)

নবী (সাঃ) বলেন একজন ঈমানদার ব্যক্তির পরনের কাপড় তার হাঁটু ও পায়ের মাঝ বরাবর থাকবে । ঐ নলার মাঝ খান থেকে পায়ের গিরা পর্যন্ত নামলে আপত্তি নেই । কিন্তু গিরা বা গিটের নীচে নামলে তা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে । এ কথা তিনি (সাঃ) তিনবার বলেন । অতঃপর তিনি বলেন যে ব্যক্তি গর্ব ভরে তার পরনের কাপড় গিরার নিচে ঝুলিয়ে দেয়, মহান আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার দিকে রাহমাতের নযরে তাকাবেন না (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মেশকাত ৩৭৪ পৃঃ)

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কাপড়ের যে অংশ টাখনুর নীচে যাবে তা (টাখনুর নীচের অংশ) জাহান্নামে জ্বলবে (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৭৮৭)

হযরত আবু হুবাইব ইবনে মুগাফফাল গিফারী রা. মুহাম্মাদ কুরাশীকে লুঙ্গি টেনে চলতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন-আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

‘যে অহংকারবশত পায়ের নীচে কাপড় ফেলে চলবে সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবে চলবে’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৫৫৪২)

আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন যে ব্যক্তি টাকনুর নীচে ইযার পরবে সে জাহান্নামে যাবে (বুখারী হাঃ ৫৩৬২)

আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে একদা নবী (সাঃ) বললেন, তিন প্রকার মানুষ আছে, যাদের সঙ্গে আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামতের দিন কোন কথা বলবেন না, তাদের প্রতি রহ্‌মতের দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পাক-সাফ করবেন না । আর তাদের জন্য ভীষণ কষ্টদায়ক আযাব নির্ধারিত রয়েছে । আবু যার (রাযিঃ) এ কথা শুনার সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, তাদের জন্য তো অধঃপতন ও ধ্বংস- হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! তারা কারা ? রাসুল (সাঃ) বললেন-

১) যে ব্যক্তি পরিধেয় বস্ত্র পায়ের গিঁটের নীচে পৌঁছায়,

২) যে ব্যক্তি উপকারের খোঁটা দেয়,

৩) আর যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম দ্বারা নিজের মাল চালু করার চেষ্টা করে (মুসলিম, মেশকাত হাঃ ২৬৭৩)

নারীদের গুপ্তাঙ্গ সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেন, নারীই গুপ্তাঙ্গ (তিরমিযী, মেশকাত ২৬৯ পৃঃ)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না । তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল কীভাবে রাখবে ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে । উম্মে সালামা বললেন, এতে তো তাদের পা অনাবৃত থাকবে । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে রাখবে, এর বেশি নয় (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪১১৭; জামে তিরমিযী ৪/২২৩; সুনানে নাসাঈ ৮/২০৯; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১১/৮২)

(২য় চলবে ৫ম পর্যন্ত)

৩য় অংশ-

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22600 (pls click & read)

বিষয়: Contest_mother

২৫৯৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File