বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী

লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ১৯ অক্টোবর, ২০১৮, ০২:১৯:২৩ দুপুর

বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ঃ

আমার আইন বিভাগের ইমেডিয়েট জুনিয়র আখতার হোসেন এবছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার "ডি " ইউনিটের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে এবং পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে গত তিন দিন ধরে আমরণ অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রথম দিকে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তি দেখতে যান নি। অবশ্য পরবর্তীতে অনেকেই গেছেন। বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও অন্যান্য বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। প্রতিবাদের সাথে কেউ কেউ ভিসি প্রক্টরের পদত্যাগও দাবি করেছেন। আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিজে বিছানাগত থাকায় এর কোনটাই করতে পারিনি। প্রিয় জুনিয়রের পাশে থাকার সৌভাগ্য আমার হয় নি। সে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, পসে বাংলাদেশের গর্ব। আজ গান্ধী বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলাদেশে চলে আসতেন এই অহিংস প্রতিবাদে অংশ নিতে!

আখতারের ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের একটি কথা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি আখতারের অনশনকে খারিজ করে দিয়েছেন মোটামোটি এই বলে যে, " ওর ব্যাকগ্রাউন্ড খারাপ, মাদ্রাসায় পড়েছে । ওর অনশনে সমস্যা আছে।" এই জাতীয় কথার মাধ্যমে। বুঝাই যাচ্ছে তিনি আখতার কে রাজাকারের বাচ্চা বা এই টাইপ কিছু বলতে গিয়েও পারেন নি। এর আগে কোটা আন্দোলন বা নিপীড়ন বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও অনুরূপ কথা তিনিসহ ভিসি মহোদয় বলেছেন।

আমি ওদিকে যেতে চাই না। তবে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কে অচ্ছুত বা তারা কোন ধরনের আন্দোলন করলে যে সে আন্দোলনের জাত যাবে সেই বিষয়ে আমার আগ্রহ। এর আগেও অধ্যাপক কামাল গংরা বলেছেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা নাকি ভর্তি পরীক্ষায় বাড়তি সুবিধা পায় কারণ রেজাল্টের ৮০ মার্কে তারা এগিয়ে থাকে কেননা মাদ্রাসার শিক্ষকরা নাকি নাম্বার দেয়ায় শুরু করেন ৯০ থেকে! এর আগে মাদ্রাসায় বাংলা ও ইংলিশে ২০০ মার্কের পড়া না থাকায় জার্নালিজম, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ কিছু ভাল ভাল সাব্জেক্টে তাদের ভর্তি নেয়া হত না যদিও তারা ভর্তি পরীক্ষায় টপ করত মাত্র ১০০ মার্কের বাংলা ও ইংরেজি পড়ে! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বৈষম্য তো আফ্রিকার সাদা কালোর জাতিগত বৈষম্য (Apartheid) থেকেও ভয়াবহ। সেখানে টপ স্থান অধিকার করেও প্রতি ইউনিটে ১০-১২ জনের বেশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সাব্জেক্টই পায় না!! সেদিক দিয়ে তো ঢাবি গত দুই বছর আগেও ভাল ব্যবহারই করত। আর এখন তো বৈষম্য উঠিয়েই দিয়েছে।

যে ছাত্রকে উদ্দেশ্য করে এই মাদ্রাসা ব্যকগ্রাউন্ড এর সমস্যা খুঁজছেন প্রক্টর সে কিন্তু মেধা তালিকায় ১৪ তম স্থান অধিকার করেছিল কোন প্রশ্ন না কিনেই। আর সে ঢাবির সেরা সাব্জেক্ট আইনের ছাত্র যে বিভাগ থেকে গত কয়েকটি ব্যাচ থেকে মাদ্রাসা ব্যকগ্রাউন্ড এর শিক্ষার্থীরাই টপ করেছে ভর্তি পরীক্ষায় এবং অনার্স ও মাস্টার্স দুইটাতেই আর উচ্চশিক্ষা ও কর্মজীবনেও সফলতার উচ্চশিখরে অবস্থান করছেন। আলিম ভাই, Masrur Ansari ভাই থেকে নিয়ে আমাদের বন্ধু Abdur Rahman, Faruk Hossain রা কিন্তু জীবন্ত উদাহরণ।

আমরা বলে থাকি আমাদের হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতি। কিন্তু ইতিহাস বর্ণনার সময় কেন যেন ৫২, ৬৯,৭১ এর আগে যেতে পারিনা। বড়জোর ৪৭ পর্যন্ত যাই। এই হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতিকে বুঝতে হলে বুঝতে হবে হাজার বছরের উপমহাদেশের ইতিহাসকে আর তার নির্মাতাদের। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত উপমহাদেশে মুসলিমরা ক্ষমতায় আসার পরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে সময়ের মাদ্রাসা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পেলেও মসজিদ মক্তব ই ছিল মাদ্রাসার স্থলাভিষিক্ত আর হিন্দুরা টোল, বৌদ্ধরা বিহারে পড়ত। মুঘল ও অন্যান্য মুসলিম সুলতানদের আমলে মাদ্রাসা শিক্ষায় বা যেটা নিয়ে অনেকের এলার্জি আছে সেই ইসলামী আইন কানুন ও তত্ত্বজ্ঞানে ব্যুৎপত্তি থাকলেই রাজকার্য ও চাকরি বাকরিতে সুযোগ সুবিধা পেতেন। এরপর ভারতীয় উপমহাদেশে আসল লুটেরা, রক্তচোষা বণিক ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। মুসলিমদের শিক্ষার জন্য ওয়াকফকৃত ও শিক্ষার ব্যয় বহনের হাজার হাজার একর লাখেরাজ জমি বাজেয়াপ্ত করে শিক্ষাকে মুসলিমদের জন্য দুর্লভ করে দিল লুটেরা ক্লাইভের দল। এরপর শিক্ষা ও চাকরি বাকরির ভাষা( অফিসিয়াল ভাষা) ফার্সির পরিবর্তে ইংরেজি করে শেষ সর্বনাশ করে ছাড়লো। এসময় জিহাদী যজবা ও ধর্মকে আকড়ে থাকার আশায় মাওলানা মৌলভীরা কওমি ধারার মাদ্রাসার ( জনগণের সাহায্য সহযোগিতায় চালিত) পত্তন করেন। শুরু থেকেই ইংরেজকে ভারত থেকে তাড়ানোর আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই মাওলানাদের শিষ্যরাই। শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ দেহলভীর দিল্লির মাদ্রাসা থেকে আলোকপ্রাপ্তরাই সিপাহী বিপ্লবের কলকাঠি নেড়েছেন। মাওলানা খয়রাবাদীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কথা কি আমরা জানি? যতটুকু জানি ক্ষুদিরামদের কথা? জানার চেষ্টা করে আমরা দেখি নি। আফসোস! শাহ ওয়ালিউল্লাহর পুত্র শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভির প্রত্যক্ষ শিক্ষাদানে সমৃদ্ধ ব্রিটিশ বিরোধী জিহাদ তথা ওয়াহাবী আন্দোলনের বীর সেনাপতি শহীদ সৈয়দ আহমদ ব্রেলভি, শাহ ইসমাঈল এর আন্দোলনের খবর কি রাখি? তাঁরা কেউ বিলাতি শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন না। ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা হাজি শরীয়তুল্লাহ, তাঁর পুত্র দুদু মিয়া কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। সায়েদ নিসার আলী তিতুমির অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন না। নারকেল বাড়িয়ায় কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হলেন? ব্রিটিশরা তাঁকে কেন হত্যা করতে উঠে পড়ে লেগেছিল? তিতুমির কে কি মেনে নিতে কষ্ট হয়?

এরা জহরলাল নেহরু, গান্ধীর আগেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। এমনকি জিন্নাহও প্রাথমিক শিক্ষা মাদ্রাসায় নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা শওকত আলী ও মুহম্মদ আলী ভ্রাতৃদ্বয় গান্ধীর সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছিলেন। অখন্ড ভারত এর জন্য কাজ করা আওলাদে রাসুল মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানীরা মাদ্রাসা শিক্ষিত ছিলেন।

সর্বভারতীয় সংগঠন বলে পরিচিত কংগ্রেস। ভারতের স্বাধীনতা কালীন সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ কিন্তু নেহরু- প্যাটেলের দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রতি অনুরাগ সত্ত্বেও অখণ্ড ভারত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নেহরুর মত তিনিও একজন প্রতিভাবান লেখক ছিলেন। শুধু তাফসির বায়ানুল কুরআনই নয় India Wins Freedom সহ আরো অনেক মাস্টারপিস এর জনক তিনি। তিনিও কিন্তু মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।

এছাড়াও সৈয়দ আমির আমির আলি, সৈয়দ আহমদ খান ও ঢাকার নবাবরাও মাদ্রাসা শিক্ষিত ছিলেন অনেকেই। এমনকি হিন্দু জাগরণের প্রতীক রামমোহন রায়ও কিন্তু মাদ্রাসায় পড়েছিলেন।

মুসলিম লীগ ও আওমী মুসলিম লীগের নেতা মাওলানা আকরম খাঁ, আবুল হাশিম, মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী, আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ প্রমুখ মাদ্রাসা ছাত্রই ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্র ও হাফেজ ছিলেন।

সুতরাং উপমহাদেশের বড় বড় অর্জনে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আমরা ১৯৬৬'র ৬ দফার কথা বলি কিন্তু তারও আগে ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানীর সেই বিখ্যাত " পশ্চিম পাকিস্তানিরা যদি পুর্ব পাকিস্তানের উপর তাদের অত্যাচার -বৈষম্য চালাতে থাকে তাহলে অচিরেই পুর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানকে আসসালামু আলাইকুম জানাবে।" এই বক্তব্য কি জানি? জানি কি সেই ফারাক্কা অভিমুখী লং মার্চের কথা? হয়ত জানিনা, হয়ত মানিনা।

এই বাংলাদেশেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সাথে নির্বাচনী জোট বাধেন, হেফাজতে ইসলামকে পাশে বসিয়ে আপ্যায়ন করেন, আরবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তখন তাঁরই অনুগত প্রক্টর কিভাবে মাদ্রাসা ছাত্রদের তাচ্ছিল্য করেন?

পাকিস্তানিরা আমাদের বাহ্যিক অবয়বকে অনুগত করতে চেয়েছিল আর লর্ড মেকলেরা রক্তে বর্ণে ভারতীয় ( বাঙ্গালী) বানিয়ে মানসিক গোলাম বানাতে চেয়েছিল। তারা সফল। ২৬০ বছর পেরিয়েও আমরা ব্রিটিশের মানসিক দাসত্ব আর Divide and Rule পলিসির চক্করেই ঘুরসি।তাই সব উপলক্ষ্যেই পাকিস্তান কে গালি দিলেও ব্রিটিশের বস্তাপচা আইন আর রীতিনীতি ভালমতই পালন করে যাচ্ছি। ছিয়াত্তরের মন্বনন্তরে এক তৃতীয়াংশ বাঙালি হত্যা আর ১৯০ বছরের লুটপাট, শোষণ আর শাসনকে কিছুই মনে হয় না আমাদের।আসলে যতদিন আমাদের ইতিহাস শুধু ৫২, ৬৯ আর ৭১ এ সীমাবদ্ধ থাকবে ততদিন আমরা সংকীর্ণ মানসিকতা ও বিভেদের ময়দানকেই প্রশস্ত করব।

(সংগৃহীত)

বিষয়: বিবিধ

১৫১৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386025
১৯ অক্টোবর ২০১৮ রাত ০৮:১৭
ডব্লিওজামান লিখেছেন : যারা আরবি বিভাগে পড়েন তারা কি মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের? কিন্তু বাস্তবে আরবি বিভাগে পড়তে হলে মাদ্রাসা ছাত্র হলে ভালো হয়। ভিসি স্যার আরবি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। চেয়ারম্যানও ছিলেন। ইসলামের ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। তার এই বিভাগগুলোতে মাদ্রাসা ছাত্ররাও পড়ছেন। মাদ্রাসায় পড়া কি অন্যায়?

মানুষ হওয়ার জন্য স্কুল কলেজ কিংবা মাদ্রাসার দরকার নেই। স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা,মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং এগুলো জীবনের প্রয়োজনে। আবার আমরা কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলেই সবার সকল শিক্ষার সমন্বয়ের মাধ্যমেই আমরা পরিপূর্ণ হচ্ছি। সেজন্যই এগুলো দরকার।।

তাজ উদ্দিন সাহেব মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী ইসলামের ইতিহাসে মাস্টার্স। তারেক মাসুদ মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন।

আমাদের দেশে একটা প্রবনতা আছে কাউকে হেয় করতে হলে বলে ফেলুন আপনি ওমুক তমুক কামুক.........

প্রক্টর স্যার বলে ফেলছেন অনশনকারী ছাত্র আকতার মাদ্রাসার ছাত্র। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন বাদই দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন আইনে লেখা আছে যে মাদ্রাসার ছাত্র ভর্তি হতে বা ন্যায়সঙ্গত কথা বলতে পারবেনা? ব্রিটিশ আমল, পাক কিংবা বাংলাদেশ আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা বলতে গেলেও কতো কঠিন আইন ছিল কিংবা ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে এখনও সেই বিধান আছে বৈকি!

নিকট অতীতে দুই দুইজন মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। তাহলে অনশন করতে মাদ্রাসা ছাত্রদের দোষ কোথায়?

যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে মাদ্রাসা শিক্ষার সনদকে উচ্চ সম্মান দিয়েছেন সেখানে প্রক্টরের মতো দায়িত্ববান ব্যক্তিরা সব গোলমেলে করে দিচ্ছেন।

ভিসি,প্রক্টরের দায়িত্বহীন বক্তব্য এদেশের ভূমি দস্যুদের বক্তব্যের সামিল। ভূমিদস্যুরা বন কেটে শহর বানায় আর বলে আমরা উন্নয়ন করছি, পরিবেশের যে বারোটা বাজলো তার খবর কে নিবে?

মাননীয় ভিসি এবং প্রক্টর স্যারেরা শৈশবে মাদ্রাসা, মক্তবে গিয়েছেন কিনা তার খোজ নেয়া দোষের কিছু দেখি না.....

বি:দ্র: আমি মাদ্রাসায় পড়ি নাই তবে মক্তবে দীন ও ইসলাম পড়ার চেষ্টা করেছি। পরম সৌভাগ্য হয়েছিল ২/৪ পারা কুরআন শরীফ পড়ার। আমি মন্দিরে গিয়েও আনন্দ করেছি। হিন্দুর ঘরে ভাত খেয়েছি। Hasan Zahid
২৩ অক্টোবর ২০১৮ রাত ০৮:২২
318028
হতভাগা লিখেছেন : মন্দিরে গিয়ে আনন্দ করার কি কি উপলক্ষ আছে একজন মুসলমানের ?
386026
১৯ অক্টোবর ২০১৮ রাত ০৮:৩৯
ডব্লিওজামান লিখেছেন : #দেখি_তুই_ক্যামনে_যাস

পুরনো একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। নরকের শাস্তির মেয়াদ শেষে দুই বাংলাদেশি স্বর্গে যাওয়ার অনুমতি পায়। স্বর্গের ফটকে পৌঁছা মাত্রই প্রধান দ্বাররক্ষী তাদের জানান আসন স্বল্পতার কারনে আপাতত একজন স্বর্গে প্রবেশ করতে পারবে। মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সেই একজনকে বাছাই করা হবে। এবং যেহেতু দুইজনই বাংলাদেশি তাই বাংলাদেশ বিষয়ক প্রশ্ন থাকবে তাদের জন্যে। ইতোমধ্যে দ্বাররক্ষী একজনকে মনে মনে বাছাই করে ফেলেন এবং তাকে প্রশ্ন করা হয়, "বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কয়টা সেক্টর ছিলো?" ঝটপট উত্তর আসে, "১১ টা"। এবার অন্য জনের প্রতি প্রশ্ন, "সেক্টর কমান্ডারদের নাম কী?" বেচারা অনেক কষ্টে সবার নাম বলতে পারে। হতাশ হয় দ্বাররক্ষী! এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন, "স্বাধীনতা যুদ্ধে মোট শহিদের সংখ্যা কতো?" প্রথম জন উত্তর দেয়, "৩০ লক্ষ"। পরের জনকে প্রশ্ন, "শহিদদের সবার নাম কী?" কিছু বুঝে উঠার আগেই বেচারা দেখতে পায় তার সঙ্গীটি হাসিমুখে স্বর্গে প্রবেশ করছে!

দৈনিক ইত্তেফাকের নিচের নিউজ লিঙ্কটা আমাকে পাঠায় বন্ধুবর Sohidul Islam Riyad। বিচারক বন্ধুটি অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স শেষ করে বর্তমানে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি গবেষণা রত। দু'টি প্রোগ্রামেই সে ফুল স্কলারশিপ পেয়েছে। একসময় মাদ্রাসায় পড়া এ বন্ধুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে তার প্রথম মাস্টার্স (এলএলএম) শেষ করে বিচার বিভাগে যোগ দেয় ২০০৮ সালে।

এবার দেখা যাক কী আছে নিচের নিউজ লিঙ্কে। বলা হচ্ছে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে ২০০ নম্বরের শর্ত ছিলো। মাদ্রাসা বোর্ড থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ক্ষেত্রে এর পূর্বে সেই শর্ত পূরণ সম্ভব ছিল না। তবে চলতি বছর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সেই শর্ত পূরণ হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঢাবির ‘খ’ ইউনিটভুক্ত কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের চয়েস ফরমে অনেকগুলো বিভাগ আসছে না।"

খবরটিতে আরো বলা হয়, "এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় ২০০ মার্কের ইংরেজি না থাকায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অন্তত ১৩টি বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ছিলো। কিন্তু ২০১৫ সাল হতে মাদ্রাসা বোর্ড শিক্ষার্থীদের জন্য দাখিল ও আলিম (এসএসসি ও এইচএসসি) পরীক্ষায় ১০০-র পরিবর্তে ২০০ নম্বরের ইংরেজি ও বাংলা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে ঢাবির এসব বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে আর কোনো বাধা থাকার কথা নয়।" কিন্তু তারপরও তাদের অনলাইন চয়েস ফরমে অনেকগুলো বিভাগ নেই!

আমার এক বন্ধুর ইংরেজি বিভাগে পড়ার খুব শখ ছিলো। সেসময় ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ১৭ পেলেই একজন শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারতো যদি তার সিরিয়াল তিন/চারশোর মধ্যে থাকতো। আমার বন্ধুটির সিরিয়াল ছিলো ৩০ (ত্রিশ) এর ভেতর এবং ইংরেজিতে পেয়েছিলো ২৫ এর মধ্যে ২১। ডিন অফিস থেকে জানানো হলো, "তুমি মাদ্রাসার ছাত্র, তাই ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে পারবেনা"। সে বলে, "আমিতো যোগ্যতা প্রমাণ করেছি, চাহিদামতো নম্বর পেয়েছি, সিরিয়ালও একেবারে প্রথম দিকে।" পরে জানানো হয় তুমি ১০০ নম্বরের ইংরেজি পড়ে এসেছো তাই তুমি বাদ!

মনের দুঃখে বন্ধুটি আমাদের সাথে আইন বিভাগে ভর্তি হয়। কয়েকটা কোচিং সেন্টারে সে তখন ইংরেজি পড়াতো। অনার্স ও মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে চাকরি নিয়েছে বিচার বিভাগে। বর্তমানে যুগ্ম জেলা জজ। আমাদের ব্যাচে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলো একটা মেয়ে সহ মোট ১৪ জন। এর মধ্যে ৩ জন ছাড়া বাকি সবাই মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস পায়। বিসিএস ও জুডিশিয়ারিতে যোগ দেয় ৯ জন। বাকি ৫ জন আইন পেশা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নিয়োজিত। উল্লেখ্য, আমাদের সাথে 'ফার্স্ট-ক্লাস-ফার্স্ট' হওয়া বন্ধুটিও মাদ্রাসার ছাত্র। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মরত।

২/৩ বছর আগে পত্রিকায় দেখেছি দুই সহোদর ভিন্ন দুই বছরে ঢাবির 'খ' ইউনিটে মেধা তালিকায় 'প্রথম' হয়। শুধুমাত্র মাদ্রাসার ছাত্র বলে প্রথম হয়েও তারা তাদের পছন্দসই বিভাগে ভর্তি হতে পারেনি। ১০০ আর ২০০ নম্বরের ফাঁদে ফেলে তাদের বঞ্চিত করার পর মাদ্রাসা বোর্ড ১০০-র পরিবর্তে ২০০ নম্বরের ইংরেজি ও বাংলা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে। তারপরও স্বর্গের সেই দ্বাররক্ষীর মতো ঢাবি কর্তৃপক্ষের "তরে দিমুনা, দেখি তুই ক্যামনে যাস" নীতি খুবই হাস্যকর ও উদ্বেগজনক!

রাস্ট্র বা সরকারের এহেন বৈষম্যমূলক আচরণ করার এখতিয়ার আছে কি নেই সেই বিতর্কে আপাতত যাচ্ছি না। শুধু বলতে চাই, আপনি যদি কিছু মেধাবী ছাত্রকে বরাবর অগ্রাহ্য করে যান। তাদের একটি বিশেষ শ্রেণিতে আবদ্ধ করে রাখেন। আর "মাদ্রাসা মানেই জঙ্গি তৈরির কারখানা" এ ধারণা মাথায় নিয়ে উঁচু নাকটা আরেকটু কুঞ্চিত করে মাদ্রাসা ছাত্রদের দূরে ঠেলে দেন, তাহলে দেশের সব মাদ্রাসা একসময় "জঙ্গি তৈরির কারখানা" হতে বাধ্য।

খবরের লিঙ্কঃ
http://www.ittefaq.com.bd/education/2017/09/30/129317.htm
Nur Muhammad Azami
386056
২৬ অক্টোবর ২০১৮ রাত ০৪:৫০
386057
২৬ অক্টোবর ২০১৮ রাত ০৪:৫১

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File