নয়া সড়ক( উপন্যাস)

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:২১:৩২ সকাল

বইঃ নয়া সড়ক( উপন্যাস)

লেখকঃ খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন

প্রকাশকঃ পাকিস্তান পাব্লিকেশন ,১৯৮- কাকরাইল, ঢাকা-২

প্রকাশঃ ১৯৬৭

হা লেখকের নাম দেখে যার কথা ভাবছেন ইনি তিনিই। সবার শৈশবের প্রিয় ছড়া ঐ দেখা যায় তালগাছা এর লেখক। কিছু পুরানো বই এর সাথে কাগজের দোকানে পেয়ে গেলাম নয়া সড়ক উপন্যাস টি । আর লোভ সামলানো কঠিন হল তার সম্পর্কে কিছু না লিখে থাকা। ঐ দেখা যায় তালগাছ আমরা শিশু বয়সে সব্বাই পড়ি, কিন্তু এর লেখক সম্পর্কে কিছু জানিনা। কে ই --খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন—তাই বেশ কিছুদিন থেকে তার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিলাম। গ্রাম পাঠাগার এর সংগঠক বাবু ভাই শুধু জানিয়েছিলেন তার জন্ম স্থান মানিকগঞ্জ। আর তার চাচার শশুর বাড়ি কবির এলাকায়।তিনি তার চাচাকে বলে কবি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেবার বেবস্থা করবেন। আর তার কাছেই কবির লিখিত একটি বই সম্পর্কে শুনি আর তা হল--- কবি নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ । এর পর মানিকগঞ্জ এর কিছু সাহিত্য সংগঠক এর সাথে আমার কথা হয়। তারা আমাকে কিছু ইনফরমেশান দিতে চান। তাদের কাছে জানতে পারি তার মেয়ে পুরান ঢাকায় একটা পত্রিকা চালান।

খুব আশ্চর্জ হয় যার কবিতা আমাদের বাংলাদেশের ১০০% শিশু তাদের শৈশবে পড়ে, আবৃত্ত করে সেই লেখক সম্পর্কে আমরা কেন কিছু জানি না। সেই আগ্রহ কিছুটা স্থিমিত হয়েছিল, কিন্তু মনের কোনে ছিল একটু বাতি।

আসুন জেনে নিই এই প্রিয় কবির কিছু প্রিয় বিষয় সম্পর্কে।

>>খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন(১৯০১-১৯৮১)

জন্ম চারিগ্রাম, মানিকগঞ্জ, ৩০শে অক্টোবর ১৯০১ । সাহিত্যিক। স্থানীয় পাঠশালায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাঠকালে মাতার ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠকালে পিতার পরলোকগমন। চরম দারিদ্যে নিপতিত হয়ে ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় গমন ও বই বাধাইয়ের কাজ গ্রহণ। কলকাতায় একটি নাইট স্কুলে কিছুকাল অধ্যয়ন। অতঃপর কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদান ও সাহিত্যসাধনায় আত্মনিয়োগ।

১৯২৩-এ সাপ্তাহিক মুসলিম জগৎ' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নিযুক্ত। এ পত্রিকায় বিদ্রোহ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। হুগলী জেলে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে একই কামরায় বাস । এ সময়ে উভয়ের মধ্যে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব স্থাপিত। পাকিস্তান সৃষ্টির (১৪ আগষ্ট, ১৯৪৭) পর কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় আগমন । ঢাকার বাংলাবাজারে পুস্তক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলহামরা লাইব্রেরি’ প্রতিষ্ঠা (১৯৪৮)। পাকিস্তানের অস্তিত্ব ও এর আদর্শের প্রতি অত্যুৎসাহী মনোভাব প্রকাশ। পূর্ববঙ্গ সরকার কর্তৃক গঠিত ভাষা কমিটির (১৯৪৯) সদস্য হিসেবে তৎকর্তৃক বাংলা ভাষার অনৈসলামিক অনুষঙ্গ দূর করার সুপারিশ। রবীন্দ্র সাহিত্য পাকিস্তানের তাহযিব-তমদ্দুনের পরিপন্থী—এ বক্তব্য উপস্থাপন করে ১৯৬১তে পূর্ব বাংলায় রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনের বিরোধিতা করে বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান । ১৯৬৭তে পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্র-সঙ্গীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে তার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন।

>> সাহিত্যঃ

কবি নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্যকর্মের উপর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘যুগস্রষ্টা নজরুল’ (১৯৫৭) রচনা করে খ্যাতি অর্জন।

প্রকাশিত গ্রন্থাবলি :

শিশুতোষ গ্রন্থ-মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬),

আমাদের নবী (১৯৪১),

খোলাফায়ে রাশেদিন (১৯৫১),

সোনার পাকিস্তান (১৯৫৩),

বাবা আদম (১৯৫৭),

আরব্য রজনী (১৯৫৭),

স্বপন দেখি (১৯৫৯),

শাপলা শালুক (১৯৬২),

>>কাব্য :

পালের নাও (১৯৫৬),

আর্তনাদ (১৯৫৮),

হে মানুষ (১৯৫৮);

>>উপন্যাস :

অনাথিনী (১৯২৬),

নয়া সড়ক (১৯৬৭);

>>গল্পগ্রন্থ :

ঝুমকোলত (১৯৫৬)।

শিশু-সাহিত্য রচনায় কৃতিত্ব প্রদর্শন। তার প্রত্যেকটি রচনা ভাবে ও ভাষায় সমৃদ্ধ। সরল ও প্রাণস্পশী ভাষায় তার শিশুতোষ গ্রন্থের কাহিনিগুলো বর্ণিত। হে মানুষ’ তার শ্রেষ্ঠ কবিতাগ্রন্থ। এতে মানুষের জয়গান সাবলীল পদ্যে বাণীমণ্ডিত।

>>পুরস্কার

যুগ-স্রষ্টা নজরুল গ্রন্থের জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০), শিশুসাহিত্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০) ও একুশের পদক (১৯৭৮) লাভ। মৃত্যু, ঢাকায় ১৬.২.১৯৮১ ৷

--- সূত্রঃ খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন জীবনী ও সাহিত্য—ইসলামি ফাউন্ডেশান

>>নয়া সড়কঃ

১৯৬৭ সালে ১১ অক্টোবর ‘নয়া সড়ক' উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। তখন কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের বয়স ৬৬ বছর। বলা যায় যে, প্রায় পরিণত বয়সেরই ফসল হলো এই উপন্যাস। ‘নয়া সড়ক' সম্পর্কে তিনিও স্বীকার করেছেন যে, “--- এর আগের উপন্যাস 'অনাথিনী’। উহা সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। 'অনাথিনী'র ভাষা আর নয়া সড়ক'-এর ভাষায় বিরাট পার্থক্য। অনাথিনী’ প্রথম জীবনের অপিরপক্ক চিন্তা ও মনের প্রকাশ । ‘নয়া সড়ক প্রকাশের সময় দেশের বদল হয়েছে, মনের বদল হয়েছে, ভাষায় ধরেছে আধুনিকতার রং। চিন্তার প্রসারতারও বৃদ্ধি পেয়েছে

অর্থাৎ ১৩৩৩ সনে প্রথম উপন্যাস ‘অনাথিনী’ প্রকাশ পায়। এরপর তিনি দীর্ঘ সময় অন্য কোন উপন্যাস রচনায় হাত দেন নি; যদিও এ সময় তিনি সাহিত্যের অন্য শাখায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। কিন্তু উপন্যাসের রসদ সংগ্রহ দীর্ঘসময় ধরে যে সংগৃহীত হচ্ছিল তা কষ্টকল্পনা নয় বিন্দুমাত্রও। প্রথম উপন্যাসের প্রায় ৪১ বছর পর মঈনুদ্দীনের দ্বিতীয়, এবং সম্ভবত সর্বশেষ উপন্যাস ‘নয়া সড়ক প্রকাশ। মজার ব্যাপার হলো, তার প্রায় ২০ বছর পর, অর্থাৎ কবির চার কুড়ি-পাচ জন্মবার্ষিকীতে ‘নয়া সড়ক প্রসঙ্গে আমার বিবেচনা প্রকাশ করছি। আজকাল বাজারে কবির সকল সাহিত্যকর্মের মতই নয়া সড়ক উপন্যাসখানিও দুষ্প্রাপ্য। এই দুপ্রাপ্যতার কারণ নিশ্চিতই সর্বজন বোধগম্য ।

যদিও ‘নয়া সড়ক'-এর প্রকাশ ষাটের দশকে, তবু মনে হয় এ উপন্যাসের রচনাকাল পঞ্চাশের দশকেই সমাপ্ত হয়েছে।

অন্তত এর পটভূমি তা-ই প্রমাণ বহন করে। আর. এ সময়টিতেই কবি মঈনুদ্দীন একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষের আস্বাদলাভে ধন্য। তিনি তখন আলহামরা লাইব্রেরীর কর্ণধার। অনেক গ্রন্থের প্রণেতা। ছেলেমেয়ে, নাতনাতনী নিয়ে ভরভরতি সংসারের সুখীমানুষ, কবি তাই দেশের অন্য দশটি মানুষের এমনকি আপামর জনতার সুখচিন্তায় বিভোর । তাই, তিনি ‘নয়া সড়ক উপন্যাসের পটপরিকল্পনা যেভাবে বাস্তবায়িত করার এক মহান মানবীয় তাগিদ অনুভব করতে থাকেন বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, কেবল নিজের সুখে মশগুল থাকার মানুষ সমাজে কোনকালেই অভাব হয় নি, তবু চির নজরুলসখা খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন সুখ ও শান্তি দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য সমানভাবেই কামনা করতে থাকেন।

নিয়া সড়ক'-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র যথা প্রাণবন্ত পুরুষ হলেন নাজমুল ৷ ডঃ নাজমুল এবং শামীম সারা উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সদা উজ্জল। তারাই এ উপন্যাসের মূল পাত্র-পাত্রী। তাদের মুখ দিয়ে, কর্ম দিয়ে, চিন্তা দিয়ে, পরিকল্পনা দিয়ে কবি মঈনুদ্দীন তার

জাতির জীবনের পূর্ণাঙ্গ সুখ-শান্তি ও বিস্তর কর্মক্ষেত্র, সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছেন। একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের সচেতন নাগরিক কাজকর্ম নেই বলে চুপচাপ বসে থাকলে চলে না। নিজেকেই খুঁজে নিতে হয় কাজ এবং অন্যের জন্যও তৈরি করা চাই অফুরন্ত কর্মক্ষেত্র। বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মক্ষেত্র চালু করা এবং এর প্রতিটি কর্মচারীকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করে যথাযথ পরিকল্পনা করাই তো বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলে জাতি অসংখ্য বেকার সমস্যা থেকে একটুখানি হলেও রেহাই পেতে পারে। সেই সংগে যদি দেশের প্রচুর সম্পদ, যা অন্যের চোখে ফেলনা, রদ্দিমাল, সেসব দিয়ে একটি বিরাট পরিকল্পনাসহ কারখানা চালু করা যায় এবং খুব সুস্থ ও ধীরস্থিরভাবে লোকজন নিয়োগ করে তাদেরকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করে কাজ আদায় করা হয় তাহলে নিশ্চিতই সুফল পাওয়া যাবে। এমন ভাবনা কি নয়া সড়ক'-এর ডাঃ নাজমুল ভেবেছেন? নাকি তার স্রষ্টা কবি মঈনুদ্দীন ভেবেছেন? নিশ্চিতই স্রষ্টার সৃষ্টি যদি কল্যাণকামী হয়, যদি উদ্দেশ্য সৎ ও মহৎ হয় তাহলে কবির কল্পনা কি বাস্তবের মানুষ বাস্তবায়ন করবে না কোনদিন? হ্যা, তা সত্যিই একদিন সম্ভব হবে। এ উজ্জল উদাহরণ হল ‘নয়া সড়ক সষ্টা তার মানসচরিত্র ডঃ নাজমুলকে দিয়ে ছেড়া কাগজ ইত্যাদি রদ্দিমালের কারখানা খুলেছেন। সেই সংগে আরো আরো বিভাগ জড়িত হয়েছে। যার প্রমাণ আজকের দিনের সোনালী পেপার মিল’-এর উৎপাদন। তবে কবির অন্য বিভাগগুলো এবং পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হয় নি। হয়ত নিকট ভবিষ্যতে তা-ও হয়ে যাবে। এই উপন্যাসে শামীমা এবং নাজমুলের সাক্ষাৎ পরিচয় এক নাটকীয় পরিবেশে । সেভাবেই উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র উজ্জলতা পেয়েছে। এখানে আছে শাহেদা, যে নাকি হঠাৎ করে ধনেজনে স্বয়ম্ভর হতে চেয়েছিল। তাই, ডঃ নাজমুলকে শাহেদা ভেবেছিল এমন লোকের সাথে গাঠছড়া বাধতে পারলে হয়ত তার জীবন সুখে স্বাচ্ছন্দ্যেই কেটে যাবে। তাই সে নাজমুলকে জয় করতে চেয়েছিল তার অমূল্য সম্পদের বিনিময়েও । কিন্তু সবাই সমান নয়। সমান নয় যাহেদুল করিমুলও। তারা শাহেদার কোপানলে পড়ে কেবল হাবুডুবুই খায় নি, বিনিময়ে তারা তাকে ব্যবহার করে অনেক আর্থিক সুবিধাও হাতিয়েছে। শেষ পর্যন্ত শাহেদারই এক চাচা শাহেদার পরিচয় পেয়ে লজ্জা ঢাকতে গিয়ে যাহেদুল-করিমুল

কোম্পানীতে বিরাট একটা বিজনেস দিয়ে গিয়েছিল যে, অনেকটাই রমযান সাহেবের প্রায়শ্চিত্ত করার সামিল । সুনজরে দেখে না। তাই তারা বন্ধুর বেশে অষ্টপ্রহর লেগে রইল রদ্দিমাল সংস্থা ধ্বংস করার মতলবে। একদিন সুযোগ বুঝে কারখানায় আগুনও লাগিয়ে দিল। এতে আপাতত অনেক ক্ষতি হলেও শামীমা-নাজমুল তাদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধির বলে পুনরায় গড়ে তুললো তাদের স্বপ্লের কর্মক্ষেত্র। একদিন সবই ফাস হল । শেষ পর্যন্ত যাহেদুল-করিমুল জেলে অবস্থান করতে থাকল। এদিকে শাহেদাসহ যাহেদুল-করিমুল স্ত্রীদ্বয়ও গিয়ে হাজির হল শামীমার অফিসে। শামীমার উদারতায় তারা রদ্দিমাল সংস্থায় কাজ পেলো। কিন্তু এ সংস্থাতো কেবল লাভের আশায় অন্য দশটা কোম্পানীর মত গড়ে উঠেনি। এখানে মানুষ তার কৃতকর্মের অতীত গ্রানিময় জীবন ভুলে গিয়ে নতুন করে সুন্দর জীবন শুরু করতে পারে।

তাই প্রথমে শাহেদাদের ভুল বোঝা বা নতুনকে গ্রহণে দ্বিধার কারণেই তাদের খাপ খাওয়াতে বেশ সময় লেগেছিল। ডঃ আলির সংস্পর্শে এসে শাহেদা ফিরে পায় তার সত্যিকারের জীবন । ডঃ আলি সংযমী মানুষ। তিনি পেশায় শিশু-মনোবিজ্ঞানী। তাই তার কাধে দায়িত্ব পড়ছে শিশুদের সামলানো। এখানে, এই কারখানায় যারা কাজ করেন তাদের শিশুকে যথাযথ সেবাযত্ন ও আদর-সোহাগে মানুষ করা হয়। একদিন শামীমার ছেলেকেও এখানের হেফাযতে রাখা হয়। এমনি পরিকল্পনা লেনিনের রুশ বিপ্লবের পর তার বন্ধু আন্তন মাকারেস্কো গড়ে তুলেছিলেন রাশিয়ায়। যা নাকি পাইওনিয়ার হিসেবে পরিচিত। একদিন ভারতগর্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও রাশিয়ার শিশুদের এই ব্যবস্থায় প্রীত হয়েছিলেন। তেমন সুন্দর চিন্তার অধিকারী নাজমুল-শামীম কেবল শহুরে পরিবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি। তারা ছড়িয়ে পড়লো গ্রাম-বাংলায়ও। যে কৃষক দেশের আপামর জনতার খাদ্য জোগাড় করে, তাদের সুস্থ-সুন্দর জীবন এবং সেসব ছেলেমেয়ের জীবনকে সুন্দর করার দায়িত্বও তারা ক্রমে গ্রহণ করে। ফলে দেখা যায় যে, তারা গ্রাম এবং শহর সর্বত্রই এক মহান কর্মযজ্ঞে ব্যাপৃত হয়ে পড়েছেন। সেই সংগে নতুন কর্মক্ষেত্র যেমন এক এক করে সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি প্রতিটি কর্মের প্রতিটি শাখায় নতুন নতুন মানুষ তার কাঙ্খিত কাজ পেয়ে যাচ্ছেন এবং নবোদ্যমে জীবনের পূর্ণ আস্বাদ লাভ করছেন। যেমন তসলিম আহমদ । তিনি কোথায় কি জুলফিকার প্রকাশ করতো তার কোন ভিত্তি ছিল না। অথচ নাজমুল-শামীম তাকে সামান্য অর্থ সাহায্য না দিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ে এখান থেকে নয়া সড়ক প্রকাশের দায়িত্ব দিলেন। প্রথমে ভুল বুঝলেও শেষ পর্যন্ত তসিলম ঠিকই বুঝেছেন এবং কাজেও দক্ষতা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে আর দ্বিধা করেন নি। তাই মাসুদা তসলিমের হাত ধরে এনে বলেন, "এবার এক সঙ্গে চলেন আমার পাশে পাশে ।” শহর থেকে গ্রাম, অন্ধকার গলি থেকে আলোয় ঝলমল সদর রাস্তা, যাকে বলে ভবিষ্যতের নাগরিকরা কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের নয়া সড়ক ধরে একদিন নিশ্চিতই সভ্যতার স্বর্ণদারে পৌছে যাবে তেমন আকাঙ্ক্ষা ঔপন্যাসিকের থাকা কোন অযৌক্তিক নয় । আসলে, কবি-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীরা যে পরিমাণ পড়াশুনা করেন, একজন রাজনীতিবিদ তার ধারেকাছেও যান কিনা সন্দেহ। যদি যেতেন, তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে, নয়া সড়ক-এর পরিকল্পনামাফিক পাকিস্তানীরা তেমন কোন সংগঠন দেশের মানুষের জন্য গড়ে তোলেনি, যা একটি আদর্শ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এ ব্যাপারে একজন ঔপন্যাসিককেই এগিয়ে আসতে হয়েছে, তাতে তার আদর্শ বাস্তবায়িত হয়নি সেদিন কেবল পাকিস্তান বলে; কিন্তু আজো কি তেমন কোন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যাতে নয়া সড়কের অনুরূপ আদর্শ বাস্তবায়ন পন্ধিলতা ঠেলে দিয়ে স্বীয় মনোবাঞ্ছা পূরণ করায় ব্যস্ত । আমরা আশা করি কবি মঈনুদ্দীন একাডেমী’ ‘নয়া সড়কসহ কবির লেখাগুলো প্রকাশ করে কবিকে জাতির কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবেন।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

378036
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অনেক কিছু জানতে পারলাম। হারিয়ে যাওয়া এসব কীর্তিমান সাহিত্যিক ও তাঁদের সাহিত্যকর্ম আড়ালে রয়ে যাচ্ছে আমাদের অবহেলার কারণে।


আফসোস মিডিয়া নাস্তিকদের দখলে যাওয়ায় এখন এরা চটিবাজদের পূজা করে।

378042
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:১৬
গোলাম মাওলা লিখেছেন : হুম
378049
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:২৬
নেহায়েৎ লিখেছেন : সচরাচর কোন লেখা এত মনযোগ দিয়ে পড়া হয় না। আজ সময় পেয়ে পড়লাম। কবির ঐ একটি কবিতা ছাড়া আর কিছু পড়া হয় নি। আজ আগ্রহ জাগল নতুন করে। বর্তমানে সেক্যুলারদের ভীরে ইসলামী ভাবধারার কবিরা বা তাদের লেখা হারিয়ে গেছে।
378051
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ এই সুন্দর শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য। খান মুহাম্মদ মইনুদ্দিন এর "যুগস্রষ্টা নজরুল" বইটি পড়েছি। তার রচনাবলি প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন।
378071
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:৩৮
চেতনাবিলাস লিখেছেন : অনেক সুন্দর এবং অজানা বিষয় জানলাম |ধন্যবাদ |

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File