গ্রামীণ গা ঘষনি

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০১ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:৩১:৫৬ দুপুর

----গ্রামীণ গা ঘষনি---



গ্রাম আমাদের শিকড়। এই শিকড়ে হতে আমরা যারা শহরে এসেছি তারা আজ অনেক দূরে। সবার মাঝে এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একবার কেও শহরে এলে সে আর গ্রাম অভিমুখে ফিরতে চায় না।

ক্লাস নাইনে না টেনের বাংলা ২য় তে একটা রচনা ছিল – চলো গ্রামে ফিরে যাই। সেই রচনায় গ্রাম গুলির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শহুরে মানুষদের গ্রামে ফিরে যাবার আকুতি ছিল। সেই রচনা কালের পরিক্রমায় আর পড়ানো হয় না।

তা যাউক—আজ সেই গ্রামের মানুষদের ব্যবহার করা এমন একটি জিনিশ নিয়ে আবার আমি হাজির।

গ্রামের মানুষদের জীবনযাত্রা খুব স্বাভাবিক। যদিও শহরায়নের হাওয়া গ্রামেও মানুষদের গায়েও লেগেছে। তাদের জীবনযাত্রায় এসেছে কিছু পরিবর্তন। তবুও কিছু বিষয়ে সেই আদ্যিকালেই রয়ে গেছে গ্রামের মানুষ।

যেমন—পুকুরে গোসল। গ্রামের কি পুরুষ কি মহিলা কি বৃদ্ধ কি শিশু সকলেই গোসল করে পুকুরে। তবে সব পুকুরে আবার গোসল করা যায়না। এই জন্য গ্রামের সবচেয়ে বড় আর কিলকিলা( ঝকঝকে) পানি আছে সেই পুকুরে দলবেঁধে গোসল করে সবাই। আবার সেই পুকুরের পানি ভাত রাধার কাজেও ব্যবহার করার চলও আছে কোথাও।

তবে গোসল করার নির্দিষ্ট কিছু টাইম আছে। মহিলাদের দুপুর ১২টার আগেই গোসল সারতে হবে। তা না হলে দুপুর ৪ টার পর। সেই সময় ঐ দিকে কোন পুরুষ ঘেষতে পারবে না। তেমনি দুপুর ১২টার পর মহিলারা ঐদিকে যেতে পারবেনা।

আর ঘাটের পাশে থাকে--মহিলাদের জন্য চটের ঘের দেওয়া মিনি চেঞ্জরুম।

আমাদের গাওগ্রামে এই পদ্ধতিতেই গোসল এর চল সেই আদিকাল হতে। তবে ধনিরা নিজেদের বাড়ির সঙ্গে কুড়ি( ছোট পুকুর) খুড়ে তাদের বৌ-বেটিদের গোসল করার ব্যবস্থা করে থাকে।

এই গোসল সারার একটা উপলক্ষ হল শরীরে থাকা ময়লা দূর করা। আর এই জন্য ইউনিলিভারের লাইফবয় সাবান গ্রামের মানুষের নিকট আজও প্রিয়। আর সেই সাবান দিয়ে গা ডলে ময়লা তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় তরুই/ঝিঙ্গা এর ছোবড়া/জালিকা।

আর আজ গ্রামের মানুষের ব্যবহার করা ঝিঙ্গা/তরুই এর জালিকা/ছোবড়া নিয়েই আজকের লিখা।

----গা ঘষনি----



>>ঝিঙ্গা/তরুই এর জালিকা/ছোবড়াঃ

এই ছোবড়া/জালিকা অনেকেই নিজেদের শরীর পরিষ্কার করতে ব্যবহার করেন এই (শহরে)আধুনিক জুগেও। যারা করেননি তারা আজি একখানি সংগ্রহ করে বাথরুমে রেখে দিন। আর গোসল এর আগে সাবান মেখে উত্তম রুপে জালিকাটি দিয়ে গা ডলা দিন। বাপ বাপ করে শরীরে থাকা ময়লা পালিয়ে যাবে।

>>তৈরির প্রক্রিয়াঃ

এই বস্তুটি সাধারণত গ্রামের গৃহিণীরাই তৈরি করে থাকেন। এ জন্য তারা নিজন গাছের বড় দেখে তরই/ঝিঙ্গা বাছায় করে তাকে উত্তমরূপে পাকতে দেন। সেটি পেকে তার চামড়া কালো হয়ে গেলে তখন সেটিকে তারা গাছ হতে পাড়েন ।এর পর তারা সেটিকে পানিতে ডুবিয়ে রাখেন এক বেলা( পাট জাগ দেবার মত)। এর পর সেটিকে পানি হতে তুললে তার গায়ে লেগে থাকা চামড়া(আবরন)এবার তুলে ফেলেন। আর ভিতরের জালিকার সঙ্গে থাকা বীজ সংগ্রহ করে শুকিয়ে রেখেদেন পরের বছরের রোপণের জন্য। বীজ ও চামড়া তুলে সুন্দর একটি জালিকা/ছোবড়া গা ঘোষা/ ঘষনি হিসেবে পাওয়া যায়।

>>ব্যবহার বিধিঃ প্রথমদিকে এটি খুব খশখশে থাকে তাই সাবধানে পানিতে ভিজিয়ে ব্যবহার করিতে হয়। আর ব্যবহারের পর তা শুকনা স্থানে রাখুন।

>>কি ভাবে ব্যবহার করিবেনঃ এই জন্য প্রথমে নিজ শরীরে উত্তম রুপে সাবান মাখিয়ে নিন। তারপর জালিকা কে পানিতে ভিজিয়ে তাতে সাবান মাখিয়ে নিন। এবার হাত দিয়ে শরীরের উপর ঘষতে থাকুন০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ প্রয়োজন মত।

>>উপকারঃ

এটি প্রাকৃতিক এবং এতে ব্যক্টেরিয়া বা ছত্রাক জমতে পারেনা। যা প্লাস্টিকের ঘষনিতে জন্মাতে পারে। আর প্লাস্টিকের সাইড ইফেক্ট তো আছেই। তাই প্রকৃতিরর এই ঘষনি আজি সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৩২২ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

312221
০১ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:৩২
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০১ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৮
253278
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
312269
০১ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:৩৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : পৃথিবীর সব কিছুই আপড়েট হচ্ছে, ওল্ড মডেলকে সবাই বিদায় জানাচ্ছে, কিন্তু আপনি পুরানের আহবান জানালেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনার গুড আইডিয়ার জন্য।
০৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২০
253831
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আসলে আমরা দিন দিন গ্রামের কথা ভুলে যাচ্ছি।
312276
০১ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৮:৫৯
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনাকে গ্রামীন জিনিষের কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ৷ ঝিঙ্গার চাইতে ধুন্দুলেই এটা ভাল হয়৷ টরোন্টর চাইনীজ স্টোরে আজও মেলে৷
০৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২১
253832
গোলাম মাওলা লিখেছেন : তা হলে কিনে ফেলুন
312299
০১ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা শহরে হলেও আগে সেখানেই ঝিঙ্গা গাছ ছিল। সেটা থেকে আমার দাদি প্রতিবছরই এরকম কয়েকটা বানাতেন আমরা ছাড়াও অনেক আত্মিয় এটা ব্যবহার করত।
০৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২২
253833
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আমি আজও ব্যবহার করি। ছবিটা আমার গা ঘষনির
312334
০২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০১:২৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন :
আমার আম্মা আমায় এই ঝিঙ্গা/তরুই এর জালিকা/ছোবড়া দিয়ে অনেক গা ঘষিয়ে দিতেন ।
Good Luck Good Luck
০৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২৩
253834
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আমি আজও ব্যবহার করি। ছবিটা আমার গা ঘষনির
312605
০৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:৪৫
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : লেখক কিন্তু লেখকই!!!! ছোট্ট একটি জিনিস দিয়ে বড় লেখা উপহার দিলেন! যারা এই লেখাটি পাড়ননি তারা এই ভিন্ন স্বাদের লেখাটি মিস করেছেন!!

ধন্যবাদ এমন লেখা আগামীতে আরো উপহার দিবেন এটাই প্রত্যাশা। ধন্যবাদ।
০৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২৪
253837
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ। আমি আমার এই সিরিজটি চালু রাখব ইনশাআল্লাহ্‌
০৪ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:১৯
253855
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : চলুক! সাথে আছি থাকব! Crying
312685
০৩ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১১
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!
প্রায় একযুগ পর ইহার চেহারা দেখলুম!!! Good Luck
০৪ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০২:২৪
253838
গোলাম মাওলা লিখেছেন : আমি প্রত্যহ দেখি আমি আজও ব্যবহার করি। ছবিটা আমার গা ঘষনির
313905
০৯ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৩
egypt12 লিখেছেন : মনে পড়ে গেল Thumbs Up
১৪ মে ২০১৫ রাত ১২:১২
260961
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File