শিয়াদের আসল রূপঃ ইরাক ফেরত ইমাম মাহবুব এর লোমহর্ষক বর্ণনা

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ডাক ০৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:২৮:১৯ সন্ধ্যা



দেশে ফিরেছেন ইরাকে নির্যাতিত সেই ইমাম মাহবুব। সঙ্গে ফিরেছেন নির্যাতিত আরও এক বাংলাদেশী আবদুল মান্নান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝোরে কাঁদেন তারা। তাদের সে নির্যাতনের বর্ণনা শুনে অশ্রু ধরে রাখতে পারেনি বিমান বন্দরে কর্তব্যরত নিরাপত্তাকর্মী ও উপস্থিত লোকজনও। আবদুল মান্নানের ওপর নির্যাতনের নির্মমতা এতটাই বেশি ছিল যে তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছেন না। তিনি বলেন, দেশে ফেরা তো দূরের কথা, বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আল্লাহর বিশেষ রহমত ছাড়া ফেরা সম্ভব হতো না। ফেরার আগ পর্যন্ত তারা সেখানকার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই ক্লিনিক থেকে সরাসরি তাদেরকে বিমান বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কে বা কারা তাদেরকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি তারা। ফেরার আগে কোন বাংলাদেশীর সঙ্গেও তাদের দেখা করতে দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার রাত ৩টা ২৫ মিনিটে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের কিউআর-৬৩৩ নং ফ্লাইটে তারা দেশে ফেরেন। এর আগে গত সোমবার স্থানীয় সময় সাড়ে ৪টার দিকে বিমানটি ইরাকের বাগদাদ বিমান বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। বিমানটি কাতার বিমানবন্দরে পৌঁছে ২৫ ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে। ওই সময় তাদের সঙ্গে থাকা নির্যাতনের শিকার শরিফুল নামে আরও এক বাংলাদেশী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিমান কতর্ৃৃপক্ষ তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। বর্তমান তিনি সেখানেই রয়েছেন। শরিফুলের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার দরগারবন গ্রামের মাহবুব হোসেন ৭ মাস আগে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ইউনিক এজেন্সির মাধ্যমে বাগদাদের নিউ বিসমায়া সিটি প্রজেক্টে কোরিয়ান কোম্পানি হানওয়াহতে কাজ নিয়ে ইরাক যান। সেখানে তিনি ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতেন। একই সঙ্গে জুনিয়র ক্যাম্পে অবস্থানকালে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের নামাজে ইমামতি করতেন। কিন্তু গত ২৬শে জুন মাগরিবের নামাজের পর হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়াই ইরাকি সৈন্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। চোখ বেঁধে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে বেদম পেটাতে থাকে। পরে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে জেলখানার মতো ছোট্ট একটি ঘরে রেখে বাংলাদেশী অনেকের ছবি দেখিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চায় তার কাছে। এক পর্যায়ে শিয়া না সুন্নি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মাহবুব বলেন তিনি মুসলমান। এ সময় শিয়া-সুন্নি যাচাইয়ের জন্য তারা আজান দিতে বলে। ইরাকি সেনাদের আজান শোনানোর সময় সুন্নি বলে তার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে সেনারা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বন্দুকের বাঁট দিয়ে খোঁচায়। দাঁড়ি টেনে তুলে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে পরদিন রাতে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় তাকে ফেরত দিয়ে যায়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে ২৮শে জুন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বিমানবন্দরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার শরীরে বিভিন্ন অংশ থেঁতলে গেছে। এখনও প্রচণ্ড ব্যথা পিঠে ও মাথায়। ওই ঘটনার পর থেকে বাম কানে কম শোনেন তিনি। ইমাম মাহবুবকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর ফেরত দেয়ার দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন হানওয়াহ কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশীরা। পরে ফেরত দিলে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন তারা। কিন্তু ওই দিন তাদের ওপর নির্যাতন চালায় ইরাকি সৈন্যরা। ওই নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গু প্রায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার আবদুল মান্নান। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আল্লাহই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। যে বর্বর নির্যাতন তাদের ওপর হয়েছে তাতে বাঁচার কথা না। ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ইরাক যান তিনি। সেখানে হানওয়াহ কোম্পানির অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। তিনি বলেন, এ ধরনের আর কোন ঘটনা ঘটবে না- ২৮শে জুন কোম্পানির লোকেরা এই বলে আশস্ত করে যাওয়ার ৫ মিনিট পরেই ইরাকি সৈন্যরা আসে। একটি রুমে নিয়ে হকিস্টিক দিয়ে পেটাতে থাকে। লম্বা দাড়ি থাকায় আবদুল মান্নানের ওপর নির্যাতন চলে বেশি। দাড়িগুলো টেনে তুলে থুথু দিয়ে সেগুলো পায়ের নিচেই ফেলে। নির্মম নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। আধা ঘণ্টা পর যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে তখন তার আর নড়াচড়া করার শক্তি ছিল না। এভাবেই কাটে দু’দিন। পরে তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। তার সর্বশরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। স্ক্র্যাচ দিয়ে কোন মতে, দাঁড়াতে পারলেও অন্যের সহযোগিতা ছাড়া তিনি ওঠাবসা করতে পারেন না। অন্যের কাঁধে ভর করেই চলছেন তিনি। হাসপাতালে বাথরুম থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তিনি মাহবুবের কাঁধে ভর দিয়েই সেরেছেন। এয়ারপোর্টের ২নং টার্মিনালের ভেতরে পিলার হেলান দিয়ে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে মান্নান জানান, তার এই অবস্থার কথা এখনও পরিবারের কেউ জানে না। আড়াই বছরের তার একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে কথা হলেও সুস্থ আছেন বলে মাকে জানিয়েছেন। এমনকি তার মা যখন ইরাকের বর্তমান অবস্থার কথা বলেন তখন তিনি মাকে জানান তার এ ধরনের কোন সমস্যা নেই। এমনকি তিনি যে দেশে ফিরেছেন সে কথাও বলেননি পরিবারের কাউকে। শাহজালাল বিমানবন্দরে তিনি অপেক্ষা করছিলেন বন্ধুর জন্য। যিনি তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠাবেন বলে তিনি জানান। ওখানে কি ধরনের চিকিৎসা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, জ্বরের ওষুধ ছাড়া তাদেরকে কিছুই দেয়া হয়নি। কোমরে এক্সরে করানো হয়েছে কিন্তু তাকে রিপোর্ট দেয়া হয়নি। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, একদিনও এজেন্সির লোকজন হাসপাতালে তাদের খোঁজ নিতে যায়নি। একদিন দূতাবাসের লোকজন তাদের খোঁজ নিতে গেলেও কোন ধরনের সহযোগিতা করেননি। চিকিৎসা খরচ কে বহন করেছে জানতে চাইলে মাহবুব ও মান্নান বলেন তারা কোম্পানির কাছে ২ মাসের বেতন পান। সম্ভবত ওই টাকা দিয়েই তাদের চিকিৎসা চলেছে। এছাড়া নির্যাতনের কথা জানে না মাহবুবের পরিবারও। তারা আরও জানান, তারা যে হাসপাতালে ছিলেন সেখানে হানওয়াহ কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় আহত হয়ে আরও ৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ৭ মাস ধরে তারা হাসপাতালেই পড়ে আছেন। এর মধ্যে ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকার তারা মিয়া নামে একজনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাধীন অন্যরা হলেন বগুড়ার রায়হান ও পিন্টু, টাঙ্গাইলের শরিফুল ও আবদুল কাদির। উল্লেখ্য, সামপ্রতি ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইরাকি সৈন্যরা বাঙালি সুন্নি সমপ্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালায়। এর আগে ঈদের আগে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয়ে সরকারি খরচে দেশে ফেরেন ১৫ কর্মী। এছাড়া কোরিয়ান ওই কোম্পানিতে কর্মরত অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। এদের বেশির ভাগ নিজ খরচে দেশে ফেরেন।

-(মানব জবিন)

বিষয়: বিবিধ

১৪৬৪ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252042
০৭ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫২
সাদাচোখে লিখেছেন : আপনি কিভাবে জানেন, নির্যাতকরা শিয়া ছিল? ভদ্রলোক কি কনফার্ম করেছে - যে নির্যাতকদের তিনি শিয়া হিসাবে চিনতে পেরেছেন?

আপনি কি নিশ্চিত, নির্যাতকরা ইসরাইল ও আমেরিকার তৈরী করা আই এস আই এল নয়? আপনি কি নিশ্চিত এ জাতীয় ঘটনা তৈরী করা হচ্ছেনা শিয়া সুন্নীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ লাগানোর অভিপ্রায়ে? আপনি কি চান শিয়া সুন্নী মারামারি করে পরপারে ফাড়ি দিক এবং তারপর যারা বেচে থাকবে তারা ইসরাইল আমেরিকা বৃটেন ইত্যাদি দেশের এ্যাবসুলুট গোলামী করবে? অমন চাইলে আপনি এমন করে ক্যাম্পেইন চালিয়ে যেতে পারেন। আর না চাইলে বিকল্প মিডিয়া হতে সত্যিকার খবর বের করার চেষ্টা করুন, ভাবুন, কোরান হাদীস পড়ুন - যেখানে আজকের সময়ের কথা মোহাম্মদ সঃ আমাদের জন্য বলে গেছেন - যাতে আমরা গাইডেড হতে পারি এবং দুই দুনিয়ায় সাফল্য পাই।

আল্লাহ আমাদেরকে জানার ও বোঝার আরো বেশী বেশী তৌফিক দিন।
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩৩
196223
বেদনা মধুর লিখেছেন : শিয়ারা এরকমই হয়। তারা মুসলমানদেরকে শত্রু মনে করে।
০৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:৪৫
196278
সাজিদ করিম লিখেছেন : সাদাচোখে ভাই, আইএসআইএল কি বাগদাদেও পৌঁছে গেছে, গিয়ে তারা শিয়াদের কিছু বলা বাদ দিয়ে সুন্নী ইমামদের মারে? বাহ, নতুন তথ্য জানা গেলো।
252091
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩২
বেদনা মধুর লিখেছেন : শিয়ারা এরকমই হয়। তারা মুসলমানদেরকে শত্রু মনে করে।
252102
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২৩

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 9368

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> আমি মেঘ হবো লিখেছেন : ও মাই গড ! এরা কি মানুষ না জানোয়ার।
252141
০৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:৫৬
আফরা লিখেছেন : মানুষ এত খারাপ হয় কি করে !!
০৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৫৭
196301
কাহাফ লিখেছেন : হয় ভাই, মানবতা হারিয়ে গেছে আজ..........।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File