স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি - স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি

লিখেছেন লিখেছেন মাসুদ হাসান ০৯ মে, ২০১৩, ০৬:০২:১৪ সকাল

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দুটি শক্তির অস্তিত্ব রাজনীতিবিদ ও সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে সবসময়ই এদেশের মানুষ জেনেছে, একটি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও অপরটি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি।কিসের ভিত্তিতে এই বিভাজন তা কারোরই জানা নেই। কেউ কেউ বলেন একাত্তরের চেতনার ভিত্তিতে। কিন্তু একাত্তরে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল তারা সকলে একক কোন চেতনায় উদবুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল তা কেউ বলতে পারেন না।তখন ধার্মিক-অধার্মিক, পুজিপতি-শ্রমিক, কৃষক-জায়গীরদার সমাজের সকল শ্রেনীর, সকল পেশার মানুষ সে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল।সুতরাং কোন নির্দিষ্ট আদর্শিক চেতনাই উদবুদ্ধ হয়ে মানুষ একাত্তরে যুদ্ধে গিয়েছিল এটা বলার সুযোগ নেই।আমার একজন শ্রদ্ধেয় বড়ভাই একাত্তরের চেতনার সুন্দর একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন।“স্বাধীকার, গনতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি হচ্ছে একাত্তরের চেতনা”।

কিন্তু এদেশের মানুষের মধ্যে এই বিভাজন একাত্তরের চেতনার ভিত্তিতে হয়নি।দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষুধা দারিদ্র, দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, রক্ষীবাহিনীর দৌরাত্ব ইত্যাদির বিরুদ্ধে যখন এম এম জলিল, আ.স.ম আব্দুর রব, মাওলানা ভাষানীরা কথা বলেছেন, রব যখন বলেছে ‘আওয়ামী লীগাররা পাকিস্থানীদের চাইতে অনেক বেশী জঘন্য আর দুর্নীতিবাজ’ তখন আওয়ামী লিগ এদেরকে দুষ্টলোক ও এদের কার্যক্রমকে দেশবিরোধী কার্যকলাপ বলে অভিহিত করেছে।সভাসমাবেশগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গনহারে গ্রেফতার করেছে, অনেককে বিচার বহিরভুতভাবে হত্যা করেছে। আর এ সবই করেছে দেশ বিরোধীদের ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারিদের দমনের নামে। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে উক্ত কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি আন্দোলনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি তার মন্ত্রীসভার একজন মন্ত্রী ছিলেন, এমনকি বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে যে বিশ্বস্ত কয়েকজন তার মন্ত্রীসভার সদস্য হয়েছিলেন তিনি তাদের একজন। ‘৭৫ এর আগে আওয়ামী লীগ কখনো তাকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে পায়নি। কিন্তু আজ তিনি আওয়ামী লীগের কাছে কুচক্রী, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের একজন।তার দেশের প্রতি সকল অবদানগুলোকে তারা নির্বিচারে অস্বীকার করে।উল্লেখ্য যারা ’৭৫ এ মর্মান্তিক ঘটনায় অংশগ্রহন করেছিল তারা সকলেই ’৭১ এর রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আজ তারা সকলেই দেশদ্রোহী।তারা শুধুমাত্র খুনি নয়, একাত্তরের এই সকল বীরেরাও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী।’৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়লে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন মেজর জিয়া।স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যান্ত প্রিয় সেনা অফিসার ছিলেন। ’৭১ এ যিনি মেজর ছিলেন মাত্র চার বছরের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু তাকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল বানিয়েছিলেন।‘৭৫ এর আগে তিনি কখনো দেশবিরোধী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুই তাকে সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান বানিয়েছিলেন।’৭৫ এর সেনাবিদ্রোহের সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ, বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন এ কে খন্দকার। তারা সকলেই মোশতাক সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তারপরও তারা কেউ দেশদ্রোহী নয়, দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী নয়। কারণ তারা সকলেই পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ করেছে। কে এম সফিউল্লাহ নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে হেরেছেন এবং এ কে খন্দকার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী।বরং তৎকালীন সেনাবাহিনীর একজন উপ-প্রধান যিনি পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ করেননি, বিএনপি নামক একটি দল গঠন করেছেন যে দলটি আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ সেই ব্যক্তি তাদের কাছে আজ পাকিস্থানের চর, একজন স্বাধীনতা বিরোধী।’৭১ এর ২৫শে মার্চের পরে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা যখন লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়েছিল তখন টাঙ্গাইলের আব্দুল কাদের সিদ্দীকি নিজে কাদেরিয়া বাহিনী গঠন করে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন। যিনি বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু নিজে যাকে বঙ্গবীর উপাধী দিয়েছিলেন তিনি আজকে আওয়ামী লীগের কাছে হয়ে গেলেন রাজাকার ও রাজাকারের দালাল। মন্ত্রীত্ব পেয়েও যখন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল (উল্লেখ্য বাকশাল মন্ত্রীসভার দশজন মন্ত্রীই পরবর্তীতে মোশতাক মন্ত্রীসভার সদস্য ছিল, খন্দকার মোশতাকের এগারোজন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে আটজন ছিল বাকশাল মন্ত্রীসভার প্রতি্মন্ত্রী) তখন এই একমাত্র বঙ্গবীরই এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন।অথচ আজকে তাকে তার বীর উত্তম খেতাব কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এই আওয়ামী লীগ।তার বঙ্গবীর পদবিও নাকি তারা কেড়ে নিতে পারে।

আওয়ামী লীগের এই মেকি দেশপ্রেমের রাজনীতি সবসময়ই ছিল।যখনই তাদের শাষণে অতিষ্ট হয়ে জনগণ প্রতিবাদ করেছে, এদের দুঃশাষনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনই তারা এই দেশপ্রেমের হুযুগ তুলেছে, প্রতিবাদকারীদের দেশবিরোধী বলেছে।‘৫৭ সালে আওয়ামী লীগ সরওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে। তখন পুর্ব পাকিস্থান আওয়ামী লীগের প্রধান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী পুর্ব পাকিস্থানের স্বায়িত্ব শাষণ দাবী করলে সরওয়ার্দী তা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে ভাষানী দল থেকে বের হয়ে গিয়ে ন্যাপ গঠন করেন। তখন আওয়ামী লীগ ভাষানীকে ভারতের চর বলে অভিহিত করেছে এবং তার গঠিত ন্যাপকে ব্যাঙ্গ করে Nehru Aided Party(NAP)বলেছে।

স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরেও তারা একই রাজনীতি করছে।দেশকে দেশপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক না এই মর্মে বিভাজিত করে সংঘাতের দিকে নিয়ে গেছে, তারা এটিকে ক্ষমতা আরোহনের সোপান হিসেবে ব্যবহার করছে।নিজেরা পুরোদস্তুর দেশপ্রেমিক সেজেছে। আর যারা তাদের অংশ হতে পারে নি তাদের সকলকে বানিয়েছে দেশদ্রোহী।আর তাদের সঙ্গী হয়েছে আদর্শবাদী বামপন্থী মিডিয়াগুলো যারা এদেশে ইসলামীকিকরণে মারত্বক ভীতু।কিন্তু কোন একটি রাজনৈতিক দলের অংশ হতে না পারলে, কিংবা তাদের কোন দাবীর পক্ষে অংশ নিতে না পারলেই কি সে দেশদ্রোহী হয়ে যায়?

যারা বলেন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর গনহত্যায় এ দেশের যে সকল নাগরিক সহযোগিতা করেছিল বঙ্গবন্ধু তাদের বিচার করেননি তারা ইতিহাসের চরম মিথ্যাচার করেন।১৯৭২ সালে ২৪শে জানুয়ারি দালাল আইন পাস করা হয় এদেশীয় দালাল, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার করার জন্য। এই আইনের অধীনে প্রায় লক্ষাধিক গ্রেফতার করা হয় যার মধ্যে থেকে ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।এদের মধ্যে থেকে যথেষ্ট স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে ৩৪,৬২৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকী ২৮৪৮ জনকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।এদের মধ্যে ৭৫২ জন দোষী সাব্যস্ত হয় এবং এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। কারো কারো মৃত্যুদন্ডও হয়েছিল। আর বাকিরা ছাড়া পেয়ে যায়।একাত্তরে গনহত্যায় প্রধান শক্তি ছিল পাকিস্থানী সেনাবাহিনী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৯৩,০০০ হাজার পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর মধ্যে মাত্র ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন।সেই তুলনায় ৩৬,০০০ থেকে ৪০,০০০ হাজার রাজাকারের মধ্যে ৭৫২ জনের সাজা হওয়াটি সংখ্যাধিক্যের দিক দিয়ে অনেক বেশি।এই ৭৫২ জন অপরাধী কিভাবে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল তার কোন তদন্ত আজ পর্যন্ত হয়নি। রাষ্ট্রপতি আবু সায়েম ’৭৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করলেও এই সকল অভিযুক্তরা এই বাতিলের আওতা বহির্ভুত ছিলেন।স্বাধীনতার পরপরই বিচার হওয়া এই সকল আসামীর কোন খোজ বর্তমানের মানবতাবাদী আওয়ামী লীগ করছে না, কারণ তারা কেউই বিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়।তাই তাদের খোজ করার প্রয়োজনও আওয়ামী লীগ বোধ করে না।সুতরাং এদেশের যে সকল নাগরিক একাত্তরে পাকিস্থানীদের দালালী করেছে তাদের বিচার একাত্তরের পরেই হয়ে গেছে।

কিন্তু বর্তমানে যে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চলছে সেটি কিসের জন্য? বেগম জিয়া যখন বলেন বর্তমানের জামায়াত নেতৃবৃন্দ একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেনি, তখনকি তিনি শুধু জামায়াতকে জোটে রাখার তাগিদে বলেন নাকি ইতিহাসের সত্য কথাটি বলেন? আগেই উল্লেখ করেছি একাত্তরের পরে ৭৫২ জনকে মানবতা বিরোধী অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছিল।বর্তমান জামায়াত নেতৃবৃন্দের কেউই এই ৭৫২ জনের মধ্যে ছিল না।এমনকি যে ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল তাদের মধ্যেও এই সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দ ছিল না। এমনকি যে লক্ষাধীক ব্যক্তিকে দালালীর অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যেও তারা কেউ ছিল না। অথচ স্বাধীনতার পরে তারা সকলেই দেশেই ছিল, তাদের মধ্যে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদুল্লাহ হলে থেকে লেখাপড়া করেছেন, কামারুজ্জামান সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে থেকে লেখাপড়া করেছেন, অন্যরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছেন। কিন্তু তখন এদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তারা যদি কোন অপরাধ করতেনই তাহলে দেশের কোন প্রান্তে এদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি কেন? একাত্তরে জামায়াত পাকিস্থানের অখন্ডতা চেয়েছিল সত্য, কিন্তু জামায়াত ছাড়াও তো আরো চারটি ইসলামী সংগঠন অনুরুপ পাকিস্থানের অখন্ডতা চেয়েছিল। এদের মধ্যে মুসলীম লীগ ও নেযামে ইসলাম পার্টির সাংগঠনিক সক্ষমতা জামায়াতের থেকে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু তাদের কোন নেতৃবৃন্দকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করা হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগ ও ইসলামীকিকরনে ভীত বামপন্থী মিডিয়াগুলো এমনভাবে প্রচার করছে যে একাত্তরে সকল মানবতা বিরোধী অপরাধগুলো জামায়াত একাই করেছে।অবস্থাদৃষ্টে আজ মনে হচ্ছে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীও ছিল মুলত জামায়াতের সহযোগী, মুল হত্যাকান্ডগুলো এই জামায়াতই করেছে। মাওলানা নিযামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান একাত্তর সালে ছাত্রসঙ্ঘ করেছে সত্য, কিন্তু ছাত্রসঙ্ঘে শুধুমাত্র এই চারজনই ছিল না।আরো শত শত নেতা কর্মী তখন ছাত্রসঙ্ঘ করেছে। কিন্তু এই চারজন বাদে বাকীরা কেউই আজ মানবতা বিরোধী অপরাধী নয় কেন? বাকীরা কেউ আর জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় নেয় এই জন্যে? আজকে যে বিচার চলছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে নাকি জামায়াত করার অপরাধে বিচার হচ্ছে? আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি আজকে যারা তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে তারা কেউই বলতে পারবে না একাত্তরে ছাত্রঙ্ঘের কেন্দীয় কমিটিতে নিযামী, মুজাহিদ ব্যতিত আর কারা কারা ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে কারা কারা ছিল, শহিদুল্লাহ হল কমিটিতে কাদের মোল্লা ব্যতিত আর কারা কারা ছিল, ঢাকা মহানগরীর কমিটিতে কারা কারা ছিল।এদের কারোরই খোজ নেওয়ার প্রয়োজন তাদের নেয়, কারণ তারা কেউই বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই তারা কেউই যুদ্ধাপরাধী নয়।একাত্তর সালে মধ্যমিক শ্রেনীর ছাত্রছিলেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। আর এই ব্যাক্তিকে আজ বানানো হয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিং-জামালপুর-শেরপুর অঞ্চলের আল বদর বাহিনীর প্রধান। যা কোন সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না।ঐ সময়ের এই অঞ্চলের অন্যসব ছাত্রসঙ্ঘের নেতাদের কোন পরিচয় আজকে তারা দিতে পারবে না।আর মাওলানা সাইদীতো ’৭৯ সালের আগে কোন রাজনৈতিক দলের সাথেই সংস্লিষ্ট ছিলেন না, সুতরাং তার যুদ্ধাপরাধের কোন প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু তাকেও আজ শুধুমাত্র জামায়াতের নেতা হওয়ার অপরাধে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। অথচ ঐ সময়ের পিরোজপুরের কোন জামায়াত নেতৃবৃন্দের নামে কোন অভিযোগ তারা করেনি।এমনকি তাদের কারোর নামই হয়তোবা এই মানবতাবাদীরা বলতে পারবে না।আজকে যাদের যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউই এদের যুদ্ধাপরাধী বলেনি।কেউ একটি প্রমানও দিতে পারবে না যে তাদের কখনো যুদ্ধাপরাধী বলা হয়েছে।আর আজকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার কারনে এদের সকলকে এদেশের বামপন্থী মিডিয়া ও আওয়ামী লীগ নীতি বিবর্জিতভাবে যুদ্ধাপরাধী বানিয়েছে।তারা আজকে কোন যুক্তি শুনতে নারাজ, তারা কোন কিন্তু শুনতে চাই না। তাদের প্রয়োজন এদের ফাঁসি, কারণ এরা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা যাওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছে, আর এ সকলই তারা করবে দেশপ্রেমের অজুহাতে। ’৭১ পরবর্তিতে ত্রিশ হাজার জাসদ মেরেও তারা এর বৈধতা দিয়েছিল এই একই দেশপ্রেমের দোহায় দিয়ে। আর আজ স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরও তারা ঐ একই দেশপ্রেমের দোহায় দিচ্ছে।

কেউ যদি সাম্য ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে থাকে তাহলে তাকে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলা যায় না।আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় কনফেডারেট আর্মির প্রধান ছিলেন জেনারেল রবার্ট লী। ১৮৬৫ সালে তিনি আব্রাহাম লিঙ্কনের ইউনিয়ন আর্মির প্রধান জেনারেল গ্রান্টের কাছে পরাজিত হন এবং আত্বসমর্পন করেন।আর এর মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।কিন্তু আব্রাহাম লিঙ্কনতো তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেননি। এমনকি জেনারেল লীকে গ্রেফতারও করা হয়নি এবং তার যে সকল সম্পত্তি বাযেয়াপ্ত করা হয়েছিল তাও ১৮৬৮ সালে জরিমানাসহ ফেরত দেওয়া হয়।পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জনসন এদের সকলকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেন এবং এরা সকলে দেশ গঠনে অংশগ্রহন করার সুযোগ পায়।সে দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণও করা হয়েছে তার নামে (Washington and Lee University, Lexington, Virginia). নিউ অরলিন্সে তার একটি ৬০ ফুট উচ্চতার মনুমেন্টও আছে এবং সেই স্থানটির নামকরণও করা হয়েছে ‘লী সার্কেল’।আর এ সবই করা হয়েছে দেশের স্বার্থে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে।১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গেলে ভারতে মুসলীম লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি এমনকি দেশভাগের পর কেরালা রাজ্যে নির্বাচনে ভারতীয় কংগ্রেস মুসলীম লিগের সাথে রাজনৈতিক জোট করেছিল। অথচ ভারতবর্ষ বিভাজন প্রশ্নে দুই পক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্থানেও কংগ্রেসকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।উল্লেখ্য ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী যে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্থান জাতীয় পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করেন তিনি মুলত ছিলেন কংগ্রেসের এমপি।যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ‘হিন্দুসভা’ মুসলিম নিধনে উষ্কানী দিয়েছিল পাকিস্থান সরকার সেই সংগঠনও নিষিদ্ধ করেনি।১৯৪৬ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মুসলীম লীগের বিরোধিতা করে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছিলেন। কিন্তু দেশভাগের পর তাকে এরজন্য কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। বরং তিনি নুরুল আমিন সরকারের অধীনে এটর্নী জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং পরে ‘৫৪ এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হলে তিনি পুর্ব পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন জিইয়ে রেখে দেশের কি লাভ হবে? দেশে এই সংঘাতময় অবস্থা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক মুক্তির কোন অংশটি বাস্তবায়িত হবে? একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজ সামর্থানুযায়ী দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহন করবে তার চেয়ে একটি বিভাজিত বাংলাদেশ কিভাবে এদেশের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে?

জেনারেল জিয়া জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই সকল রাজনৈতিক সংগঠনকে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি শুধুমাত্র জামায়াতকেই রাজনীতি করার সুযোগ দেননি, বরং ‘৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে গেলে এই জিয়ায় শেখ হাসিনাকে এদেশে এনে পুনরায় আওয়ামী লীগ চালু করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ তখন জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য জিয়াকে দোষারোপ করে নি আজকে তারা যেমনটি করে থাকে।বরং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছে এবং ‘৮৬ এর নির্বাচনে বিএনপি যখন নির্বাচন বয়কট করেছিল আওয়ামী লীগ তখন জামায়াতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছে।আর এই নির্বাচনে জামায়াত ১০টি সংসদীয় আসনে বিজয়ী হয়।তখন জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ দেখেনি। তত্তাবধায়ক সরকারের দাবীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সাথে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছে, একসাথে সংবাদ সম্মেলন করেছে।যারা জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে রাজাকারদের পুনর্বাশিত করেছে বলে অভিযোগ করেন তাদের জানা উচিত বঙ্গবন্ধুও বহু সক্রিয় হানাদার বাহিনীর দালালকে বড় বড় সরকারী দায়িত্ব দিয়েছিল। এমনকি তার সামরিক সচিব লে. কর্নেল ফিরোজ সালাউদ্দিন ছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী।আর সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন কোর্টে যখন দালালির অভিযোগে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার হচ্ছিল তখন ঐ সকল কোর্টের অনেক হাকিম ছিলেন রাজাকার সর্দার।আর তারা এই জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন কারণ তারা স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে পরিশুদ্ধ হয়েছিলেন।আর যারা পরিশুদ্ধ হতে পারেনি তাদেরই কেবল বিচার হয়েছিল।আর এতে অনেক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাও ফেসে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে।

আজ একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ দেশকে সু-স্পষ্ট দুটি শিবিরে বিভক্ত করে ফেলেছে।মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের প্রহসন মঞ্চস্থ করতে গিয়ে গত তিন সপ্তাহে ১৯ জনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে যা ’৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে কখনো ঘটেনি।এমনকি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারও এরুপ করার সাহস পাইনি।আর এ সবই আওয়ামী লীগ বৈধ করেছে দেশপ্রেমের দোহায় দিয়ে, একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের দোহায় দিয়ে। ইসলামী ব্যাংকে ভাংচুর করে, ইবনেসিনা হাসপাতালে ভাংচুর করে মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনাটি তারা বাস্তবায়ন করেছে তা আমারকাছে বোধগম্য নয়। আর এর দারা দেশের অর্থনৈতিক কোন মুক্তিটি আসবে তাও আমার জানা নেই।অথচ এসবই তারা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দোহায় দিয়ে।

বর্তমান প্রজন্মকে হয়তোবা ক্ষনিকের জন্য ধোকা দেওয়া সম্ভব, কিন্তু এরাও একদিন আওয়ামী লীগের এই মেকি দেশপ্রেমকে চিনতে পারবে। আর সেদিন হয়তো বেশি দেরি নয় যেদিন তাদের এই মেকি দেশপ্রেম দেশদ্রোহী হিসেবে এদেশের মানুষ গণ্য করবে।বর্তমান প্রজন্ম তাদের এই বিভাজনের রাজনীতিতে বড়ই ক্লান্ত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দুটি শক্তির অস্তিত্ব রাজনীতিবিদ ও সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে সবসময়ই এদেশের মানুষ জেনেছে, একটি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও অপরটি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি।কিসের ভিত্তিতে এই বিভাজন তা কারোরই জানা নেই। কেউ কেউ বলেন একাত্তরের চেতনার ভিত্তিতে। কিন্তু একাত্তরে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল তারা সকলে একক কোন চেতনায় উদবুদ্ধ হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল তা কেউ বলতে পারেন না।তখন ধার্মিক-অধার্মিক, পুজিপতি-শ্রমিক, কৃষক-জায়গীরদার সমাজের সকল শ্রেনীর, সকল পেশার মানুষ সে যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল।সুতরাং কোন নির্দিষ্ট আদর্শিক চেতনাই উদবুদ্ধ হয়ে মানুষ একাত্তরে যুদ্ধে গিয়েছিল এটা বলার সুযোগ নেই।আমার একজন শ্রদ্ধেয় বড়ভাই একাত্তরের চেতনার সুন্দর একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন।“স্বাধীকার, গনতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তি হচ্ছে একাত্তরের চেতনা”।

কিন্তু এদেশের মানুষের মধ্যে এই বিভাজন একাত্তরের চেতনার ভিত্তিতে হয়নি।দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষুধা দারিদ্র, দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি, রক্ষীবাহিনীর দৌরাত্ব ইত্যাদির বিরুদ্ধে যখন এম এম জলিল, আ.স.ম আব্দুর রব, মাওলানা ভাষানীরা কথা বলেছেন, রব যখন বলেছে ‘আওয়ামী লীগাররা পাকিস্থানীদের চাইতে অনেক বেশী জঘন্য আর দুর্নীতিবাজ’ তখন আওয়ামী লিগ এদেরকে দুষ্টলোক ও এদের কার্যক্রমকে দেশবিরোধী কার্যকলাপ বলে অভিহিত করেছে।সভাসমাবেশগুলোতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গনহারে গ্রেফতার করেছে, অনেককে বিচার বহিরভুতভাবে হত্যা করেছে। আর এ সবই করেছে দেশ বিরোধীদের ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারিদের দমনের নামে। ১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হলে উক্ত কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি আন্দোলনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি তার মন্ত্রীসভার একজন মন্ত্রী ছিলেন, এমনকি বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করলে যে বিশ্বস্ত কয়েকজন তার মন্ত্রীসভার সদস্য হয়েছিলেন তিনি তাদের একজন। ‘৭৫ এর আগে আওয়ামী লীগ কখনো তাকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে পায়নি। কিন্তু আজ তিনি আওয়ামী লীগের কাছে কুচক্রী, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের একজন।তার দেশের প্রতি সকল অবদানগুলোকে তারা নির্বিচারে অস্বীকার করে।উল্লেখ্য যারা ’৭৫ এ মর্মান্তিক ঘটনায় অংশগ্রহন করেছিল তারা সকলেই ’৭১ এর রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিল। আজ তারা সকলেই দেশদ্রোহী।তারা শুধুমাত্র খুনি নয়, একাত্তরের এই সকল বীরেরাও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী।’৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়লে চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন মেজর জিয়া।স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি জেড ফোর্সের প্রধান ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যান্ত প্রিয় সেনা অফিসার ছিলেন। ’৭১ এ যিনি মেজর ছিলেন মাত্র চার বছরের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু তাকে পদোন্নতি দিয়ে মেজর জেনারেল বানিয়েছিলেন।‘৭৫ এর আগে তিনি কখনো দেশবিরোধী ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুই তাকে সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান বানিয়েছিলেন।’৭৫ এর সেনাবিদ্রোহের সময় সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ, বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন এ কে খন্দকার। তারা সকলেই মোশতাক সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তারপরও তারা কেউ দেশদ্রোহী নয়, দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী নয়। কারণ তারা সকলেই পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ করেছে। কে এম সফিউল্লাহ নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করে হেরেছেন এবং এ কে খন্দকার বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একজন মন্ত্রী।বরং তৎকালীন সেনাবাহিনীর একজন উপ-প্রধান যিনি পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ করেননি, বিএনপি নামক একটি দল গঠন করেছেন যে দলটি আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ সেই ব্যক্তি তাদের কাছে আজ পাকিস্থানের চর, একজন স্বাধীনতা বিরোধী।’৭১ এর ২৫শে মার্চের পরে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা যখন লেজ গুটিয়ে ভারতে পালিয়েছিল তখন টাঙ্গাইলের আব্দুল কাদের সিদ্দীকি নিজে কাদেরিয়া বাহিনী গঠন করে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন। যিনি বীরউত্তম খেতাব পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু নিজে যাকে বঙ্গবীর উপাধী দিয়েছিলেন তিনি আজকে আওয়ামী লীগের কাছে হয়ে গেলেন রাজাকার ও রাজাকারের দালাল। মন্ত্রীত্ব পেয়েও যখন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল (উল্লেখ্য বাকশাল মন্ত্রীসভার দশজন মন্ত্রীই পরবর্তীতে মোশতাক মন্ত্রীসভার সদস্য ছিল, খন্দকার মোশতাকের এগারোজন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে আটজন ছিল বাকশাল মন্ত্রীসভার প্রতি্মন্ত্রী) তখন এই একমাত্র বঙ্গবীরই এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন।অথচ আজকে তাকে তার বীর উত্তম খেতাব কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এই আওয়ামী লীগ।তার বঙ্গবীর পদবিও নাকি তারা কেড়ে নিতে পারে।

আওয়ামী লীগের এই মেকি দেশপ্রেমের রাজনীতি সবসময়ই ছিল।যখনই তাদের শাষণে অতিষ্ট হয়ে জনগণ প্রতিবাদ করেছে, এদের দুঃশাষনের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনই তারা এই দেশপ্রেমের হুযুগ তুলেছে, প্রতিবাদকারীদের দেশবিরোধী বলেছে।‘৫৭ সালে আওয়ামী লীগ সরওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে। তখন পুর্ব পাকিস্থান আওয়ামী লীগের প্রধান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী পুর্ব পাকিস্থানের স্বায়িত্ব শাষণ দাবী করলে সরওয়ার্দী তা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে ভাষানী দল থেকে বের হয়ে গিয়ে ন্যাপ গঠন করেন। তখন আওয়ামী লীগ ভাষানীকে ভারতের চর বলে অভিহিত করেছে এবং তার গঠিত ন্যাপকে ব্যাঙ্গ করে Nehru Aided Party(NAP)বলেছে।

স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরেও তারা একই রাজনীতি করছে।দেশকে দেশপ্রেমিক ও দেশপ্রেমিক না এই মর্মে বিভাজিত করে সংঘাতের দিকে নিয়ে গেছে, তারা এটিকে ক্ষমতা আরোহনের সোপান হিসেবে ব্যবহার করছে।নিজেরা পুরোদস্তুর দেশপ্রেমিক সেজেছে। আর যারা তাদের অংশ হতে পারে নি তাদের সকলকে বানিয়েছে দেশদ্রোহী।আর তাদের সঙ্গী হয়েছে আদর্শবাদী বামপন্থী মিডিয়াগুলো যারা এদেশে ইসলামীকিকরণে মারত্বক ভীতু।কিন্তু কোন একটি রাজনৈতিক দলের অংশ হতে না পারলে, কিংবা তাদের কোন দাবীর পক্ষে অংশ নিতে না পারলেই কি সে দেশদ্রোহী হয়ে যায়?

যারা বলেন স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর গনহত্যায় এ দেশের যে সকল নাগরিক সহযোগিতা করেছিল বঙ্গবন্ধু তাদের বিচার করেননি তারা ইতিহাসের চরম মিথ্যাচার করেন।১৯৭২ সালে ২৪শে জানুয়ারি দালাল আইন পাস করা হয় এদেশীয় দালাল, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার করার জন্য। এই আইনের অধীনে প্রায় লক্ষাধিক গ্রেফতার করা হয় যার মধ্যে থেকে ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়।এদের মধ্যে থেকে যথেষ্ট স্বাক্ষী প্রমানের অভাবে ৩৪,৬২৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকী ২৮৪৮ জনকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়।এদের মধ্যে ৭৫২ জন দোষী সাব্যস্ত হয় এবং এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। কারো কারো মৃত্যুদন্ডও হয়েছিল। আর বাকিরা ছাড়া পেয়ে যায়।একাত্তরে গনহত্যায় প্রধান শক্তি ছিল পাকিস্থানী সেনাবাহিনী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ৯৩,০০০ হাজার পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর মধ্যে মাত্র ১৯৫ জনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিলেন।সেই তুলনায় ৩৬,০০০ থেকে ৪০,০০০ হাজার রাজাকারের মধ্যে ৭৫২ জনের সাজা হওয়াটি সংখ্যাধিক্যের দিক দিয়ে অনেক বেশি।এই ৭৫২ জন অপরাধী কিভাবে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল তার কোন তদন্ত আজ পর্যন্ত হয়নি। রাষ্ট্রপতি আবু সায়েম ’৭৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর দালাল আইন বাতিল করলেও এই সকল অভিযুক্তরা এই বাতিলের আওতা বহির্ভুত ছিলেন।স্বাধীনতার পরপরই বিচার হওয়া এই সকল আসামীর কোন খোজ বর্তমানের মানবতাবাদী আওয়ামী লীগ করছে না, কারণ তারা কেউই বিরোধী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়।তাই তাদের খোজ করার প্রয়োজনও আওয়ামী লীগ বোধ করে না।সুতরাং এদেশের যে সকল নাগরিক একাত্তরে পাকিস্থানীদের দালালী করেছে তাদের বিচার একাত্তরের পরেই হয়ে গেছে।

কিন্তু বর্তমানে যে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার চলছে সেটি কিসের জন্য? বেগম জিয়া যখন বলেন বর্তমানের জামায়াত নেতৃবৃন্দ একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেনি, তখনকি তিনি শুধু জামায়াতকে জোটে রাখার তাগিদে বলেন নাকি ইতিহাসের সত্য কথাটি বলেন? আগেই উল্লেখ করেছি একাত্তরের পরে ৭৫২ জনকে মানবতা বিরোধী অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছিল।বর্তমান জামায়াত নেতৃবৃন্দের কেউই এই ৭৫২ জনের মধ্যে ছিল না।এমনকি যে ৩৭,৪৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল তাদের মধ্যেও এই সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দ ছিল না। এমনকি যে লক্ষাধীক ব্যক্তিকে দালালীর অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যেও তারা কেউ ছিল না। অথচ স্বাধীনতার পরে তারা সকলেই দেশেই ছিল, তাদের মধ্যে কাদের মোল্লা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদুল্লাহ হলে থেকে লেখাপড়া করেছেন, কামারুজ্জামান সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে থেকে লেখাপড়া করেছেন, অন্যরা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছেন। কিন্তু তখন এদের কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তারা যদি কোন অপরাধ করতেনই তাহলে দেশের কোন প্রান্তে এদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি কেন? একাত্তরে জামায়াত পাকিস্থানের অখন্ডতা চেয়েছিল সত্য, কিন্তু জামায়াত ছাড়াও তো আরো চারটি ইসলামী সংগঠন অনুরুপ পাকিস্থানের অখন্ডতা চেয়েছিল। এদের মধ্যে মুসলীম লীগ ও নেযামে ইসলাম পার্টির সাংগঠনিক সক্ষমতা জামায়াতের থেকে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু তাদের কোন নেতৃবৃন্দকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার করা হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগ ও ইসলামীকিকরনে ভীত বামপন্থী মিডিয়াগুলো এমনভাবে প্রচার করছে যে একাত্তরে সকল মানবতা বিরোধী অপরাধগুলো জামায়াত একাই করেছে।অবস্থাদৃষ্টে আজ মনে হচ্ছে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীও ছিল মুলত জামায়াতের সহযোগী, মুল হত্যাকান্ডগুলো এই জামায়াতই করেছে। মাওলানা নিযামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান একাত্তর সালে ছাত্রসঙ্ঘ করেছে সত্য, কিন্তু ছাত্রসঙ্ঘে শুধুমাত্র এই চারজনই ছিল না।আরো শত শত নেতা কর্মী তখন ছাত্রসঙ্ঘ করেছে। কিন্তু এই চারজন বাদে বাকীরা কেউই আজ মানবতা বিরোধী অপরাধী নয় কেন? বাকীরা কেউ আর জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় নেয় এই জন্যে? আজকে যে বিচার চলছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে নাকি জামায়াত করার অপরাধে বিচার হচ্ছে? আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি আজকে যারা তাদের যুদ্ধাপরাধী বলছে তারা কেউই বলতে পারবে না একাত্তরে ছাত্রঙ্ঘের কেন্দীয় কমিটিতে নিযামী, মুজাহিদ ব্যতিত আর কারা কারা ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে কারা কারা ছিল, শহিদুল্লাহ হল কমিটিতে কাদের মোল্লা ব্যতিত আর কারা কারা ছিল, ঢাকা মহানগরীর কমিটিতে কারা কারা ছিল।এদের কারোরই খোজ নেওয়ার প্রয়োজন তাদের নেয়, কারণ তারা কেউই বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই তারা কেউই যুদ্ধাপরাধী নয়।একাত্তর সালে মধ্যমিক শ্রেনীর ছাত্রছিলেন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। আর এই ব্যাক্তিকে আজ বানানো হয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিং-জামালপুর-শেরপুর অঞ্চলের আল বদর বাহিনীর প্রধান। যা কোন সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করতে পারে না।ঐ সময়ের এই অঞ্চলের অন্যসব ছাত্রসঙ্ঘের নেতাদের কোন পরিচয় আজকে তারা দিতে পারবে না।আর মাওলানা সাইদীতো ’৭৯ সালের আগে কোন রাজনৈতিক দলের সাথেই সংস্লিষ্ট ছিলেন না, সুতরাং তার যুদ্ধাপরাধের কোন প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু তাকেও আজ শুধুমাত্র জামায়াতের নেতা হওয়ার অপরাধে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। অথচ ঐ সময়ের পিরোজপুরের কোন জামায়াত নেতৃবৃন্দের নামে কোন অভিযোগ তারা করেনি।এমনকি তাদের কারোর নামই হয়তোবা এই মানবতাবাদীরা বলতে পারবে না।আজকে যাদের যুদ্ধাপরাধী বলা হচ্ছে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার আগ পর্যন্ত কেউই এদের যুদ্ধাপরাধী বলেনি।কেউ একটি প্রমানও দিতে পারবে না যে তাদের কখনো যুদ্ধাপরাধী বলা হয়েছে।আর আজকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার কারনে এদের সকলকে এদেশের বামপন্থী মিডিয়া ও আওয়ামী লীগ নীতি বিবর্জিতভাবে যুদ্ধাপরাধী বানিয়েছে।তারা আজকে কোন যুক্তি শুনতে নারাজ, তারা কোন কিন্তু শুনতে চাই না। তাদের প্রয়োজন এদের ফাঁসি, কারণ এরা আওয়ামী লীগের ক্ষমতা যাওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাড়িয়েছে, আর এ সকলই তারা করবে দেশপ্রেমের অজুহাতে। ’৭১ পরবর্তিতে ত্রিশ হাজার জাসদ মেরেও তারা এর বৈধতা দিয়েছিল এই একই দেশপ্রেমের দোহায় দিয়ে। আর আজ স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরও তারা ঐ একই দেশপ্রেমের দোহায় দিচ্ছে।

কেউ যদি সাম্য ও সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে থাকে তাহলে তাকে আর যাই হোক মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বলা যায় না।আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় কনফেডারেট আর্মির প্রধান ছিলেন জেনারেল রবার্ট লী। ১৮৬৫ সালে তিনি আব্রাহাম লিঙ্কনের ইউনিয়ন আর্মির প্রধান জেনারেল গ্রান্টের কাছে পরাজিত হন এবং আত্বসমর্পন করেন।আর এর মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।কিন্তু আব্রাহাম লিঙ্কনতো তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিশোধ নেননি। এমনকি জেনারেল লীকে গ্রেফতারও করা হয়নি এবং তার যে সকল সম্পত্তি বাযেয়াপ্ত করা হয়েছিল তাও ১৮৬৮ সালে জরিমানাসহ ফেরত দেওয়া হয়।পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জনসন এদের সকলকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেন এবং এরা সকলে দেশ গঠনে অংশগ্রহন করার সুযোগ পায়।সে দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণও করা হয়েছে তার নামে (Washington and Lee University, Lexington, Virginia). নিউ অরলিন্সে তার একটি ৬০ ফুট উচ্চতার মনুমেন্টও আছে এবং সেই স্থানটির নামকরণও করা হয়েছে ‘লী সার্কেল’।আর এ সবই করা হয়েছে দেশের স্বার্থে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে।১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে গেলে ভারতে মুসলীম লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি এমনকি দেশভাগের পর কেরালা রাজ্যে নির্বাচনে ভারতীয় কংগ্রেস মুসলীম লিগের সাথে রাজনৈতিক জোট করেছিল। অথচ ভারতবর্ষ বিভাজন প্রশ্নে দুই পক্ষ দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্থানেও কংগ্রেসকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।উল্লেখ্য ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী যে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্থান জাতীয় পরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী করেন তিনি মুলত ছিলেন কংগ্রেসের এমপি।যে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ‘হিন্দুসভা’ মুসলিম নিধনে উষ্কানী দিয়েছিল পাকিস্থান সরকার সেই সংগঠনও নিষিদ্ধ করেনি।১৯৪৬ সালের নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক মুসলীম লীগের বিরোধিতা করে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়েছিলেন। কিন্তু দেশভাগের পর তাকে এরজন্য কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি। বরং তিনি নুরুল আমিন সরকারের অধীনে এটর্নী জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং পরে ‘৫৪ এর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হলে তিনি পুর্ব পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন জিইয়ে রেখে দেশের কি লাভ হবে? দেশে এই সংঘাতময় অবস্থা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক মুক্তির কোন অংশটি বাস্তবায়িত হবে? একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজ সামর্থানুযায়ী দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহন করবে তার চেয়ে একটি বিভাজিত বাংলাদেশ কিভাবে এদেশের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারে?

জেনারেল জিয়া জাতীয় ঐক্যের স্বার্থেই সকল রাজনৈতিক সংগঠনকে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তিনি শুধুমাত্র জামায়াতকেই রাজনীতি করার সুযোগ দেননি, বরং ‘৭৫ এর ১৫ই আগষ্টের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে গেলে এই জিয়ায় শেখ হাসিনাকে এদেশে এনে পুনরায় আওয়ামী লীগ চালু করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ তখন জামাতকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য জিয়াকে দোষারোপ করে নি আজকে তারা যেমনটি করে থাকে।বরং এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছে এবং ‘৮৬ এর নির্বাচনে বিএনপি যখন নির্বাচন বয়কট করেছিল আওয়ামী লীগ তখন জামায়াতকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছে।আর এই নির্বাচনে জামায়াত ১০টি সংসদীয় আসনে বিজয়ী হয়।তখন জামায়াতকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ দেখেনি। তত্তাবধায়ক সরকারের দাবীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতকে সাথে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছে, একসাথে সংবাদ সম্মেলন করেছে।যারা জেনারেল জিয়ার বিরুদ্ধে রাজাকারদের পুনর্বাশিত করেছে বলে অভিযোগ করেন তাদের জানা উচিত বঙ্গবন্ধুও বহু সক্রিয় হানাদার বাহিনীর দালালকে বড় বড় সরকারী দায়িত্ব দিয়েছিল। এমনকি তার সামরিক সচিব লে. কর্নেল ফিরোজ সালাউদ্দিন ছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধী।আর সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন কোর্টে যখন দালালির অভিযোগে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার হচ্ছিল তখন ঐ সকল কোর্টের অনেক হাকিম ছিলেন রাজাকার সর্দার।আর তারা এই জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন কারণ তারা স্বাধীনতার পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে পরিশুদ্ধ হয়েছিলেন।আর যারা পরিশুদ্ধ হতে পারেনি তাদেরই কেবল বিচার হয়েছিল।আর এতে অনেক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাও ফেসে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে।

আজ একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ দেশকে সু-স্পষ্ট দুটি শিবিরে বিভক্ত করে ফেলেছে।মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের প্রহসন মঞ্চস্থ করতে গিয়ে গত তিন সপ্তাহে ১৯ জনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে যা ’৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে কখনো ঘটেনি।এমনকি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারও এরুপ করার সাহস পাইনি।আর এ সবই আওয়ামী লীগ বৈধ করেছে দেশপ্রেমের দোহায় দিয়ে, একাত্তরের চেতনা বাস্তবায়নের দোহায় দিয়ে। ইসলামী ব্যাংকে ভাংচুর করে, ইবনেসিনা হাসপাতালে ভাংচুর করে মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনাটি তারা বাস্তবায়ন করেছে তা আমারকাছে বোধগম্য নয়। আর এর দারা দেশের অর্থনৈতিক কোন মুক্তিটি আসবে তাও আমার জানা নেই।অথচ এসবই তারা করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের দোহায় দিয়ে।

বর্তমান প্রজন্মকে হয়তোবা ক্ষনিকের জন্য ধোকা দেওয়া সম্ভব, কিন্তু এরাও একদিন আওয়ামী লীগের এই মেকি দেশপ্রেমকে চিনতে পারবে। আর সেদিন হয়তো বেশি দেরি নয় যেদিন তাদের এই মেকি দেশপ্রেম দেশদ্রোহী হিসেবে এদেশের মানুষ গণ্য করবে।বর্তমান প্রজন্ম তাদের এই বিভাজনের রাজনীতিতে বড়ই ক্লান্ত।

বিষয়: রাজনীতি

১৫৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File