নবজীবনের পথে...

লিখেছেন লিখেছেন ভিনদেশী ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৪৯:১৬ সন্ধ্যা

ইব্রাহিম খলীল ফিলিপ্‌স। একজন মিশরীয় খৃষ্টান পাদ্রি। আসিয়ূত (মিশরের একটি শহর) শহরের একটি গির্জা প্রধান। পাশাপাশি আসিয়ূত বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক। স্ত্রী, তিন ছেলে-মেয়ে, গির্জা এবং ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে তাঁর সময় ভালই যাচ্ছে। কিন্তু একটি ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ফিরিয়ে দেয়! জীবনে নিয়ে আসে ব্যাপক পরিবর্তন! তাঁর মুখে শুনা যান সে কাহিনী-

‘১৯৫৫ সালের এক পড়ন্ত বিকেলের কথা !? কোন এক রেডিও স্টেশনে ক্বারী সাহেব তিলাওয়াত করছেন-

{قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا (1) يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَنْ نُشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا} [الجن: 1، 2]

” (হে রাসূল!) বলুন- ‘আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর এক কোরআন শ্রবণ করেছি। যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না।” সূরা জ্বীন; আয়াত ১-২।

আয়াত দু’টির বিষয়বস্তু আমাকে ব্যাপর্ক আকর্ষণ করে! আমার মধ্যে জেগে তুলে এক নতুন চিন্তা। সৃষ্ট করে কোরআনের প্রতি এক অধম্য বাসনা! আমি কোরআন নিয়ে বসে পড়লাম! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি চারবার পড়ে পেললাম! এক সময় আমার দৃষ্টি আটকে গেল এ আয়াতের উপর-

{الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ} [الأعراف: 157]

“সেসব লোক, যারা আনুগত্য করে রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, নিষেধ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য সব পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে ‘সে বোঝা নামিয়ে দেন ও বন্দীত্ব দূর করেন’ যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য গ্রহণ করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।” সূরা আ’রাফ; আয়াত ১৫৭।’


এবার তিনি ‘মুক্তচিন্তা’ নিয়ে নিজ ধর্মগ্রন্থ ‘বাইবেল’ -এর শুরু থেকে শেষতক আবার পড়ে দেখলেন। এ কাজের জন্য সর্বোচ্চ একাগ্রতা অর্জনে চাকুরি থেকে ‘পদত্যাগ’ করলেন। নেমে পড়লেন ‘নবআবিষ্কারে’র পেছনে! দীর্ঘ ছয় বছরকাল চলতে থাকে তাঁর গবেষণা! শেষ পর্যন্ত ১৯৬০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর জীবনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি তিনি গ্রহণ করলেন! এবার চাকুরি ত্যাগের সিদ্ধান্ত নয়। হাজারো বছর ধরে পূর্ব-পুরুষদের লালিত ‘খৃষ্টধর্ম’ ত্যাগের সিদ্ধান্ত! তিনি গর্বভরে খুশি মনে ‘শাহাদাতের স্বীকারোক্তি’ দিলেন। এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জীবনধারায় প্রবেশ করলেন। এখন আর তিনি ইব্রাহিম খলিল ফিলিপ্‌স নন। বরং ইব্রাহিম খলিল আহমাদ! এ নামে তিনি শুরু করলেন নবজীবনের পথ চলা! নেমে পড়লেন এক মহৎ কিন্তু কঠিন মেহনতে। ইসলাম নামক যে ‘নবআলোর’ উম্মেষ তাঁর জীবনে ঘটেছে। অন্যদেরও সে পথে আহ্বান করতে শুরু করলেন। একে একে তাঁর তিনি সন্তান ইসলামের ছাঁয়া তলে এসে গেল। ইসহাক এখন উসামা, সামউল এখন জামাল এবং মাজেদা এখন নাজওয়া! তাঁর স্ত্রী? তার কী হলো? তিনি স্বামীর নতুন জীবনধারা (ইসলাম) কে মেনে নিতে পারলেন না। স্বামী ও সন্তানদের ভালবাসা ত্যাগ করে চলে গেলেন। তবে তার এ চলে যাওয়া স্থায়ী হলো না! এক সময় তিনি ফিরে আসলেন এবং ইসলাম কবুল করলেন!

এবার শুরু হলো আলেকজান্ড্রিয়া, মিনিয়া, আসিয়ূত ও আসওয়ানসহ পাশাপাশি শহরগুলোতে ইসলাম এবং খৃষ্টবাদের উপর তাঁর তুলনামূলক আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্ক। ১৯৯০ সালের দিকে সুদানে এক বিতর্ক শেষে তেরজন খৃষ্টান পাদ্রি ইসলাম কবুল করলেন! এভাবে প্রতিনিয়ত তাঁর মাধ্যমে নতুন নতুন মানব সন্তান ইসলাম নামক আলোর সন্ধান পেতে লাগলেন। ‘তাওরান, ইঞ্ছিল ও কোরআনে মুহাম্মদ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিরোনামে তিনি একটি অনবদ্য গ্রন্থও রচনা করেন।

আল্লাহ তা’য়ালা তাঁকে রহম করুন। আমাদেরও তাঁর সঙ্গে জান্নাতে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

182701
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৫
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১০
135099
ভিনদেশী লিখেছেন : পড়ার ও মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ তা'য়ালা যেন আমাদেরও দ্বীনের পথে চলার ও অন্যকে আহ্বান করার তাওফীক দান করেন। আমীন।
182711
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩১
নীল জোছনা লিখেছেন : ‌আল্লাহ তাকে আরো হেদায়েত দান করুক। আমিন।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৫
135101
ভিনদেশী লিখেছেন : তাঁর জন্ম ১৯১৯ সালে। খুব সম্ভব তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে এবং সকল মুসলিম মায়্যিতদের জান্নাত দান করুন। আমীন।
182715
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
সাময়ীক লিখেছেন : al humdulillah
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৬
135102
ভিনদেশী লিখেছেন : আলহামদুল্লিল্লাহ। আল্লাহ তা'য়ালার সকল নিয়ামাতের জন্য। ধন্যবাদ।
182727
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৬
135103
ভিনদেশী লিখেছেন : Good Luck Good Luck
182731
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
অজানা পথিক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৭
135104
ভিনদেশী লিখেছেন : পড়ার ও মন্তব্যের জন্য আপনাকে আল্লাহ তা'য়ালা প্রতিদান দান করুন। আমীন।
182749
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৭
শেখের পোলা লিখেছেন : এ জন্যই নজরুল ইসলাম বলেছেন,"এ কোন মধুর শারাব দিলে আল আরাবী সাকী, নেশায় আমি পাগল হলাম, রঙীন হল আঁখী"৷ এ শারাব যে পান করেছে, তার আর ফেরার উপায় নাই৷ (কোরআনকে শারাবের সাথে তুলনা করায় অনেক হুজুরের আপত্তি কিন্তু শারাব মানে শরবতও হয়৷)
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০৫
135189
ভিনদেশী লিখেছেন : চমৎকার! আল্লাহ তা'য়ালা জাতীয় কবিকে ক্ষমা পূর্বক জান্নাত নসীব করুন। আমীন।
আমার মনে হয় (অবশ্য বড়দের কাছে এর সঠিক উত্তর থাকবে), সাদৃশ্য বুঝানোর জন্য দু'টি বিষয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ মিল থাকা জরুরি নয়। তাই আরবী ভাষায় সাহসী ব্যক্তিকে শিংহের সাথে তুলনা করে বলে- 'অমুক সিংগ'। অথচ সাহসী লোক আর শিংহের মধ্যে শুধু 'সাহসিকতা'য় মিল আছে। তারপরও মানব সাহসিকতা এবং শিংহের সাহসিকতার মধ্য বহু পার্থক্য আছে। আর এটাকে আরবী অলংকার (বালাগাত) -এর ভাষায় তাশবীহ বালীগ বা উৎকৃষ্টতম উপমা বলা হয়।
কোন আলিম যদি এ ব্যাপারে আপত্তি তুলেন। আপত্তির কারণ কী, তা তিনিই বলতে পারবেন।
আমার মনে হয় কবি পবিত্র কোরআনকে শরাব বা (হালাল)পানীয় -এর সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্য শ্রোতার উপর তাঁর অসাধরণ প্রভাবনি শক্তি । আল্লাহ তা'য়ালা ভাল জানেন।
পড়ার ও সুন্দর কবিতাটি উদ্ধৃতির জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
182752
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১৯
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : জাজাকাল্লাহু খাইরান
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০৮
135190
ভিনদেশী লিখেছেন : ওইয়্যাকা আইদান (আপনাকেও)। পড়ার ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
182870
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:২৫
মদীনার আলো লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৫৯
135233
ভিনদেশী লিখেছেন : ধন্যবাদ।
182892
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৪৬
সজল আহমেদ লিখেছেন : যাযাকাল্লাহু খাইরান।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১১:৫৯
135234
ভিনদেশী লিখেছেন : ও-ইয়্যাকা (আপনাকেও)। ধন্যবাদ।
১০
182992
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:১৬
মাটিরলাঠি লিখেছেন :
যাযাকাল্লাহু খাইরান।

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:১৪
135257
ভিনদেশী লিখেছেন : ওইয়্যাকা (আপনাকেও)। ধন্যবাদ পড়ার ও মন্তব্যের জন্য।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File