-----------মতিহার: প্রবাহিত রক্তের উত্তাল সমুদ্র------------ -------মোহা: আশরাফুল আলম ইমন-------

লিখেছেন লিখেছেন টোকাই বাবু ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:০৯:৩৫ সকাল

অনেক দিন থেকেই মনে করছি কিছু লিখব কিন্তু সময় করতে পাচ্ছিলাম না, কিন্তু রাবির সেক্রেটারীয়েট ভাইদের চাপ ও অনুপ্রেরনার ফলে লেখার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালালাম। বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর উপর জুলুম নির্যাতনের খন্ড চিত্র তুলে ধরার সামান্য চেস্টা করলাম মাত্র। লেখাটি ৩/৪ অংশে শেষ করব ইনশা-আল্লাহ। আজ তুলে ধরলাম ১ম অংশ......

তোমরা হতাশ হয়ো না, দুঃখ করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মু`মিন হও।” (সূরা আল-ইমরান : ১৩৯)


আয়াতটিতে যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলো ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঈমানের পরীক্ষা এবং সে পরীক্ষাতে দুঃখ ও হতাশ না হয়ে অবিচল থাকা। মূলত ঈমানের ঘোষণা দেয়ার পর একজন বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয় ফলে ভিন্নতা দেখা দেয় তাদের জীবনের আচার-ব্যবহার, কৃষ্টি ও কালচারে। সাধারনত কায়েমী সমাজ ব্যবস্থা মানুষকে মানুষের গোলামে পরিণত করতে চায়। অথচ ঈমানদারগন মানুষকে মানুষের গোলামের পরিবর্তে একমাত্র আল্লাহর দাসত্বের দাওয়াত দেয় ফলে যুগে যুগে তারা কায়েমী স্বার্থবাদীদের পক্ষ থেকে বাধার সন্মুখীন হোন। আর এইভাবে আল্লাহ পাক বান্দাহদেরকে পরীক্ষা করেন কারা ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী ও ধৈর্য্যশীল।

সুদুর অতীত থেকে আমরা দেখতে পাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের স্বাভাবিক ঘটনা। অতীতে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে তাদের উপর ইতিহাসের বর্বরতম অত্যাচার জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছে। হযরত ইব্রাহীমের ওপর নমরুদ, হযরত মুসার ওপর ফেরাউন, হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ওপর আবু জেহেল, মিশরে ইখওয়ান এর উপর ৫০ এর দশকে জামাল আব্দুন-নাসের ও বর্তমানে জেনারেল সিসি এরই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় জামায়াত-শিবির ও ইসলামপন্থীদের ওপর ক্ষমতায় আসার পর থেকে অত্যাচার নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে বর্তমান শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার। সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হল দখল, হত্যা, সন্ত্রাস, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি, রাহাজানিতে অতিষ্ঠ দেশের সাধারন মানুষ। সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই আজ সাধারন মানুষ ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, রিমান্ডের নামে অমানুষিক নির্যাতন এমনকি পুলিশ ও র্যাব দিয়ে পাখির মত গুলি করে শহীদ করা হচ্ছে। যার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত উত্তর বঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার গঠন করার সাথে সাথেই ছাত্রলীগের হিংসাত্মক লোলুপ দৃষ্টির ফলে আজও ‘প্রবাহিত রক্তের উত্তাল সমুদ্র‘ মতিহারের এই সবুজ ক্যাম্পাস।

আওয়ামী ষড়যন্ত্রের শুরু যেভাবেঃ

আওয়ামী ষড়যন্ত্রের দুয়ার উম্মোচিত হয় ২০০৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জয়লাভ করার মাধ্যমে। ৩১ ডিসেম্বর’০৮ তারিখে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা চালায়। সকল ছাত্র হলগুলোতে সেদিন তারা শিবিরের ব্যানার ও দেয়ালিকা ভাংচুর করে। শিবিরের কর্মীরা সেইদিন চরম ধৈর্যের পরিচয় দান করে। ২০০৯ এর ৪ ও ৮ জানুয়ারী রুয়েটে যুবলীগ ক্যাডার রশীদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ হামলা করে আহত করে তৎকালীন রুয়েট সভাপতি তবিবুর ও সেক্রেটারী জাহিদ ভাই সহ ১৫ জন শিবির নেতাকর্র্র্র্মীকে। ১১ মার্চ শিবিরের শহীদ দিবসে শান্তিপূর্ণ শোক র্যালিতে মুন ও আইনের নেতৃত্বে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। কিন্তু শিবির নেতা কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে ছাত্রী হলের দিকে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সেদিন দায়িত্বশীলদের নির্দেশে অনেক সহনশীল আচরণ করে শিবির কর্মীরা। কিন্তু এরই সুযোগ নিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শিবির নিধনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১২ মার্চ গভীর রাত থেকে।

শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী ভাইয়ের শাহাদাত:

১২ মার্চ ০৯ ক্লাশ শেষ করে বিনোদপুর শিবির অফিসে গেলাম। অফিসে প্রবেশ করেই দেখি সাঈদী ভাই ও নোমানী ভাই বসে আছেন। গতকাল ছাত্রলীগের হামলার সময় নোমানী ভাই রাজশাহীতে ছিলেন না। তার কারণ জিজ্ঞেস করতেই নোমানী ভাই তার স্বভাব সুলভ হাস্যোজ্জ্বল মুখে উত্তর দিলেন “শহীদ আইয়ুব ভাইয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম, দোয়া করবেন ভাই আল্লাহ যেন আমাকেও তাদের মত শহীদ করে নেন।“ তখনও ভাবতে পারিনি আর একদিন পরেই আল্লাহ, প্রিয় ভাই নোমানীর এই দোয়া কবুল করে নিবেন। পূর্বের দিনের ঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী পুলিশ ১২ মার্চ দিবাগত রাত থেকেই তাদের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করে। ছাত্রলীগ সভাপতি মুন, প্রক্টর ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে একযোগে শুরু হয় তল্লাশী ও গ্রেফতার অভিযান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ১০টি ছাত্র হলসহ পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর, কাজলা, ডাঁশমারী, বুধপাড়া, মেহেরচন্ডী, ধরমপুর এলাকা ও রাজশাহী মহানগরীতে তল্লাশী ও গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। এতে হল ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রায় শতাধিক নিরীহ ঘুমন্ত শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে। এদিকে শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পরপরই সশস্ত্র ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই হলগুলোতে অবস্থান গ্রহণ করে এবং ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান হতে একত্রিত করা যুবলীগ ও সর্বহারা ক্যাডারদের নিয়ে হলগুলোতে গ্রেফতার এড়ানো শিবির নেতা কর্মীদের একত্রিত করে নির্যাতন করতে থাকে।

এ সময় খবর আসে শের-ই-বাংলা হলে রাবি শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ভাইসহ ১৫ জন ভাইকে ব্যাপক নির্যাতন করছে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহর দ্বীনের অকুতোভয় সৈনিক বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারী শরীফুজ্জামান নোমানী ভাই কয়েকজনকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যায় নির্যাতিত ভাইদের উদ্ধারের জন্য। আল্লাহর পথের অকুতোভয় এই সৈনিকেরা লতিফ হল, এস.এম হল, জোহা হল, মুজিব হলসহ সকল হলে আটকা পড়া শিবির নেতা কর্মীদের উদ্ধার করে এগিয়ে যান শের-ই-বাংলা হলে এবং শের-ই-বাংলা হল হতে আহত নির্যাতিত মজলুম শিবির কর্মীদের উদ্ধার করে সকলকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে দেন নোমানী ভাই। ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের উত্তম বৈশিষ্ট্যের সাক্ষর রেখে সকল কর্মীকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছিয়ে সবশেষে তিনি নিরাপদ স্থানে আসার চেষ্টা করেন।

এদিকে সকল হল হতে বিতাড়িত হয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শহীদ মিনারের সামনে একত্রিত হয় এবং পুলিশের সহযোগিতায় মরণ ছোবল দেয় শের-ই-বাংলা হলে। ফলে তারা সবশেষে থাকা নোমানী ভাই ও মাহবুব ভাইকে তাদের নাগালের মধ্যে পেয়ে যায় এবং এলোপাথারি চাপাতি ও রামদার আঘাত করতে থাকে। ছাত্রলীগের চাপাতির আঘাতে নোমানী ভাইয়ের ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি শরীর হতে আলাদা হয়ে যায় এবং মাথা দ্বিখ-িত হয়ে যায়। গুরুতর আহত নোমানী ভাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে সেখানেই তিনি বেলা প্রায় ১২.৩০ মিনিটে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন।









হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়া যেখানে অপরাধ:

শহীদ শরীফুজ্জামান নোমানী ভাইয়ের হত্যাকা-ের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী মহানগরীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। শিবির নেতা কর্মীরা এখানেও অসীম ধৈর্য্য ও উদারতার পরিচয় দান করে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই জঘন্য হত্যাকা-ের বিচার দাবী করে। তারা ছাত্রলীগের কোন নেতা-কর্মীকে কোন ভাবে আঘাত ও নির্যাতন করেনি। কোন প্রতিশোধমূলক হামলা পরিচালনা করেনি। বরং আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে ফরিয়াদ করেছে ও নিয়মতান্ত্রিকপন্থায় হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে। কিন্তু এখানেও জুলুম নির্যাতনের শিকার হয় নিরীহ শিবিরকর্মীরা। ২৩ মে ২০০৯ নোমানী ভাইয়ের হত্যাকা-ের বিচারের দাবীতে শিবিরের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। এই হামলায় শিবিরের মহানগরীর সভাপতি নূর মোহাম্মদ ম-লসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক শিবির কর্মী। গ্রেপ্তার করা হয় অর্ধশতাধিক এবং মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয় প্রায় সহস্রাধিক নিরীহ নেতা কর্মী ও এলাকাবাসীকে।

--------------------------------(চলবে)-----------------------------------------

২য় অংশের লিঙ্ক

৩য় অংশের লিঙ্কঃ

বিষয়: বিবিধ

২১০১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File