তরুণ উদ্যোক্তাদের গল্প: এশিয়ার আলোড়ন সৃষ্টিকারী লেখক লয়েড লুনা

লিখেছেন লিখেছেন বাঁকা চিন্তা ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:১০:০৯ সকাল







আলী আহমদ: পৃথিবীর সব মানুষের সোনার চামচ নিয়ে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয় না। কিন্তু স্বীয় স্বপ্ন আর অনবরত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করা মানুষদের আদর্শ হওয়া যায়, তাদের স্বপ্নের মানুষ হওয়া যায়। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো, একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেকে রূপায়িত করা যায়।

ফিলিপাইনের এমনই সাধার্ণ ঘরে জন্মগ্রহণ করা এক অসাধারণ তরুণ লয়েড লুনা স্বীয় স্বপ্ন আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন একজন সফল ইন্টারনেট উদ্যোক্তা, বিজনেস পরামর্শক, বেস্ট সেলার বইয়ের লেখক এবং মটিভেশনাল বক্তা। ইতোমধ্যেই তিনি থাইল্যান্ড, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশের তরুণদের সামনে বৈচিত্রময় ভাবনা বিনিময় করে নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন, অগণিত তরুনদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছেন। ফিলিপাইনের এই তরুণ উদ্যোক্তা লয়েড লুনা বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত বিজনেস কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান “ লয়েড কমউনিকেশন্স’’-এর সিইও এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লয়েড সম্প্রতি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে।

লয়েড লুনার শৈশবের দিনগুলি মোটেও অন্য দশটি সাধারণ শিশুর মতো ছিল না। তার শৈশব ছিল রঙহীন, ভবিষ্যত ছিল অনিশ্চিত, আর অনেক বেশি অন্ধকার। যখন লয়েড লুনার বয়স মাত্র আট বছর, তখন তার বাবাকে ব্রেড বিক্রিতে সাহায্য করতে হত। প্রতিদিন লয়েড বাবার সাথে পাশের গ্রামে গিয়ে ব্রেড বিক্রি করতেন। এজন্য তাকে প্রায় প্রতিদিন ভোর চারটায় বিছানা ছাড়তে হতো। লয়েড সারাদিন কাজ করেও শেষ করতে পারতেন না। ফলে প্রায়শই অর্ধ রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হত তাকে। কিন্তু এসব বেদনার স্মৃতি থাকা সত্ত্বেও লয়েড স্বপ্ন দেখতেন তিনি একজন আলোকিত মানুষ হবেন, আশাহীন মানুষদের আশার আলো হয়ে উঠবেন।

লয়েড লুনা প্রমাণ করেছেন সফল হবার জন্য পারিবারিক ঐতিহ্য, বয়স, এমনকি একাডেমিক শিক্ষাও কোনো বাধা নয়। যদিও আমরা অনেক সময় এর দ্বারা দ্বিধান্বিত হই। শৈশবের কঠিন অভিজ্ঞতাগুলো লয়েডকে তার পরবর্তী জীবনের পরতে পরতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে প্রেরণা জুগিয়েছে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা মোটেও সহজ কাজ ছিল না ফিলিপাইনের এই তরুণের জন্য। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকারের পেশার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। অনেক সময় ভাবতেন উদ্যোক্তা হলে বুঝি স্বাবলম্বী হওয়া যায় না। একটা সময় তো সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলেন করপোরেট পেশায় ক্যারিয়ার গড়বেন। বলাই বাহুল্য, এমন ভাবনা মস্তিষ্কে আসাটা অস্বাভাবিক ছিল না লয়েডের জন্য, যেহুতু তিনি খুব কাছ থেকে দারিদ্রের নিষ্ঠুরতা পরখ করেছিলেন। যাই হোক, তিনি এই সময়টতে উদ্যোক্তার জগতে ছিলেন একেবারে নবীন আর অভিজ্ঞতাহীন ।

লয়েড লুনার ব্যবসায়িক জ্ঞানের পাশাপাশি লেখালেখির হাতটাও ছিল বেশ পরিপক্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার অল্পদিন পরেই লয়েড তার নিজ দেশ ফিলিপাইনের একটি জাতীয় পত্রিকায় তার ক্যাম্পাস নিয়ে লেখালেখির দায়িত্ব পেলেন। দায়িত্বটি বেশ সুচারুভাবে পালন করেন। সাংবাদিক হিসেবে তার দায়িত্ব সুনিপুণভাবে সম্পাদন করার জন্য “ আউটস্টান্টিং ক্যাম্পাস জার্নালিস্ট”পুরস্কার পান। লয়েড তার বিশ্ববিদ্যালয়ে “স্টুডেন্ট পেপার” নামক একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। এই সংগঠনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করেন লয়েড। শেষ পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি “বেস্ট স্টুডেন্ট অর্জানাইজেশন’’ খেতাব অর্জন করে।

লয়েড তার বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতার আলোকে “অ্যানি জব ওয়েটিং ফর ইউ?” নামক একটি অসাধারণ গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। গ্রন্থটি খুব অল্প সময়ে পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে সাংবাদিক, ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে গ্রন্থটির প্রশংসা করেন। লয়েডের এ গ্রন্থটি শুধুমাত্র পাঠকের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনই সাধন করেনি, উপরন্তু লয়েডের জীবনকেও বদলে দেয়। কারন তিনি জানতেন সফল হবার পথ কত কঠিন। আর তিনি তার বইয়ের মাধ্যমে কঠিন যাত্রার সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন। ফলে পাঠক বইটির মাধ্যমে এক অনুপম নির্দেশনা লাভ করে যার দ্বারা তাদের নিজস্ব যাত্রা পথকে অনেক মসৃন করতে সক্ষম হয়েছেন।

কিন্তু লয়েডের বইটি প্রকাশ করার সময় প্রকাশকদের কাছ থেকে কোনো আন্তরিক সাড়া পাননি শুধু তাই নয়; বরং অনেক প্রকাশকের কাছে রীতমতো উপহাসের পাত্রও হয়েছিলেন। প্রকাশকদের এসব আচরনে তিনি মোটেও বিচলিত হননি। স্বপ্ন আর প্রত্যাশিত পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য লয়েড বেছে নিয়েছিলেন এক অভিনব নিজস্ব পন্থা। প্রথমেই ওয়েব ডিজাইন শিখলেন। অতঃপর একটি ওয়েব সাইট তৈরি করলেন অনলাইনে বই বিক্রি করার জন্য। অনলাইনে বই বিক্রি করে কিছু অর্থও আয় করলেন। এবার এই অর্থ দিয়ে মাত্র ১০টি বই প্রকাশ করলেন এবং বইগুলো কয়েকটি বড় বড় লাইব্রেরিতে দিলেন। এদিকে অনলাইনে বইয়ের অর্ডারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে লাগল। অবশেষে লয়েডের বইটি বেস্ট সেলার বইয়ের খ্যাতি লাভ করল।

লয়েড শৈশবে যেসব স্বপ্ন বুনেছিলেন, তার সেই স্বপ্ন পূর্ণ হল। লয়েড আলোর দ্যুতি জ্বালিয়েই চলেছেন প্রতিনিয়ত। যার শৈশবের গল্প ছিল ফিলিপাইনের একটি পল্লীতে গিয়ে বাবার সাথে ব্রেড বিক্রি করা; সেই ছেলেটি আজ বেস্ট সেলার বইয়ের লেখক, বিজনেস পরামর্শক, সফল ইন্টারনেট উদ্যোক্তা এবং একজন মটিভেশনাল স্পিকার। তবে একথা সত্য যে, লয়েডের এসব অর্জন এমনি এমনি অর্জিত হয় নি; তার এই সফলতার পেছনে কত যে সাধনা ও প্রচেষ্টা ছিল তা উপলব্ধি করা বেশ কঠিন। কিন্তু হয়তো বা ফিলিপাইনের এই অনন্য তরুণ হয়তো কঠিনকেই ভালোবেসে ফেলেছেন। চলুন আমরাও কঠিনকে ভালোবেসে কঠোর পরিশ্রম করে সফলতার স্বাদ আস্বাদন করি।

Click this link

ক্যাম্পাস নিউজ ২৪/ এ এ/ জেড এম

বিষয়: Contest_mother

৩০০৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

287652
২৪ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩৮
জোনাকি লিখেছেন : বাহ!খুব ভাল্লাগ্লো। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File