টিভি সেটের সামনে লোকটি

লিখেছেন লিখেছেন এস আর চৌধুরী ২৬ এপ্রিল, ২০১৩, ০৪:৫১:২৮ বিকাল



২৪ এপ্রিল বুধবার। সাভারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর নেটে দেখা অবদি মাহবুব সাহেবের মনটা বেশ খারাপ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বারবার খবর না দেখে থাকতে পারছিলেন না তিনি। যতই বেলা গড়িয়ে যায় ততই যেন মনটা আরো ভারি হতে খাকে। নিজের অজান্তেই চোখের কোনায় পানি জমে আসছে। বুকের ভিতরটা কেমন যেন শুন্য শুন্য মনে হচ্ছে। এক সময় আর অফিসে থাকতে পারলেন না। নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই তিনি বাসায় চলে আসলেন।

মিসেস মাহবুব তাকে এই সময়ে বাসায় আসতে দেখে তো অবাক! তাছাড়া তার মনটাও যেন খারাপ। মিসেস মাহবুবের বুকের ভিতরটা কেমন চিন্‌ চিন্‌ করে উঠলো। মনে মনে ভাবলেন, কি হলো! উনি তো এত তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন না! আজ তাহলে কি হলো! কিন্তু কেন যেন তা জিজ্ঞেস করতে পারলেন না।

মাহবুব সাহেব কাপড় ছেড়ে চোখে-মুখে একটু পানি দিয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এসে টিভি সেটটি অন করে সোফায় বসলেন। ভারি গলায় বললেন, “মনি শুনছ! সাভারে যে একটি গার্মেন্টস ভবন ধসে গেছে? অনেক গার্মেন্টস-কর্মী ভিতরে আটকা পড়েছে! খুবই খারাপ অবস্থা” । এতক্ষন পরে মিসেস মাহবুব বুঝতে পারলেন বিষয়টি। তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উত্তর দিলেন, “জি হ্যাঁ, দেখেছি। টিভিতে তো বারবার বলতেছে, লাইভও দেখাচ্ছে” ।



সন্ধা পেরিয়ে রাত হলো। উদ্ধার কাজ চলছে। বেড়েই চলেছে হতাহতের সংখ্যা। হায়! কি মর্মান্তিক দৃশ্য। কারো হাত নেই, কারো পা নেই। কারো কারো মাথা যেন থেতলে গেছে দেয়ালের চাপায়, কেউবা মিশে গেছে সিমেন্ট আর ধুলাবালির সাথে। কোন এক মহিলা কর্মীর একটি পা বেড়িয়ে পড়েছে ভাঙ্গা দেয়ালের ফাঁক দিয়ে, দেহটি সম্পূর্ণ ভিতরে। রক্তাক্ত পায়ে নুপুর পড়া। হাজার হাজার ব্যাকুল মানুষ ছুটাছুটি করছে, কিছু করার চেষ্ঠা করছে। উদ্ধার কর্মীরা কেউ বসে নেই ।দেখা গেলো একজন আর্মির লোক, বিভৎস লাশ কাঁধে নিয়ে কোন রকমে কান্না চেঁপে হাটছে। আর একজন কে যেন, আটকে পড়া এক কর্মীর পা টেনে বের করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।







মাহবুব সাহেব আর সহ্য করতে পারলেন না। টিভিটি বন্ধ করে দিয়ে পায়চারি করতে লাগলেন। তার কিছুই ভালো লাগছে না, আবারও টিভিটি ছাড়লেন। সেই একই দৃশ্য। কী করবেন বুঝতে পারছেন না । এবার একটির পর একটি চ্যানেল চেন্জ করতে লাগলেন, সব খানে একই দৃশ্য। ওহ! কি ভয়াবহ দৃশ্য, ভাবতে ভাবতে তিনি ক্লান্ত, বিমর্ষ হয়ে গেলেন। বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেলেন।

হঠাৎ যেন কি হলো ! মাহবুব সাহেব কেমন যেন পাগলের মতো হা হা করে হেসে উঠলেন। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, বিষন্ন মনে হঠাৎ কেমন যেন অস্বাভাবিক হাসি। মিসেস মাহবুব রান্না ঘর থেকে এক রকম দৌড়ে আসলেন। “ কি হলো! তুমি হঠাৎ হাসছো কেন?” কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।

মাহবুব সাহেব অনেকক্ষন চুপ থাকলেন, মাথা নাড়লেন । তারপর বললেন, “শুনছ, উনি কি বললেন ?”

মিসেস মাহবুব ঘার নেড়ে বললেন, “না তো!” ।

উনি বললেন যে, সাভারের ঘটনা নাকি কিছু সংখ্যক লোকের ফাটল ধরা দেয়াল ও স্তম্ভ নাড়া-চাড়া করার কারনেও হতে পারে। এখন তুমিই বলো, আমি কি হাসবো না কাঁদবো?

মাহবুব সাহেব এ কথা বলে আবার কেমন যেন আন্মনা হয়ে গেলেন। দেশটির কথা ভেবে বিষন্ন হয়ে গেলেন। টিভিটি তখনও চলছেই।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File