তথাকথিত সুশীল সমাজ আমাদের যা শেখাতে চায় এবং আমাদের যা শিখা উচিত্

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:১৫:২৩ সকাল

সমাজের কিছু বুদ্ধিজীবিরা, আমাদেরকে 'সুশীল মানসিকতা' শেখানোর নামে ইসলামের বিরুদ্ধে বিষিয়ে তোলেন। ইসলামিক ভাতৃত্ববোধ থেকে, যখনি কিছু মুসলিম ভুল পথে যায়, ঠিক তখনি, উনারা ঝাপিয়ে পরেন ইসলামের উপর। সমাজের রন্ধ্র রন্ধ্র থেকে ঝেটিয়ে 'ইসলাম ভাগাও' আন্দোলনে নামেন। তারা শেখান, ইসলামের অবস্থান আপনের ঘরের নিভৃতে। ধুলা পরা কুরআন বুক সেলফে রেখে দেবার মত। নামাজ পড়ে, তসবিহ ড্রয়ারে রেখে বের হবেন। ইসলাম নিয়ে সমাজে আসলেই বিপদ। উনারা শেখান, ইসলাম পুরানো, ইসলাম অযৌক্তিক, ইসলাম জটিল। দেখিয়ে দেন ইসলাম কিভাবে 'দাঙ্গা ফ্যাসাদ' তৈরী করে। 'অশিক্ষিত মোল্লাদের' হাস্যকর কথাগুলোকে তারা উপস্থাপন করেন ইসলামের কথা হিসাবে। কেউই কিন্তু বলেন না, আসুন খুঁজে দেখি এই কথা কোরআন বা হাদিসে আছে কিনা? কোনো 'যুক্তিভিত্তিক লেখা' প্রকাশ করেন না আমাদের শেখানোর জন্য যে, অমুক গ্রামের হুজুরের তমুক ফতোয়া আসলে ইসলাম ভিত্তিক না। উল্টো কাতারে কাতারে দাড়িয়ে পরেন, আকাশ বাতাস কাপিয়ে তোলেন - "ওই দেখো ইসলামের ফতোয়া। দেখেছো, বলেছিলাম না, ইসলাম বর্বর, ইসলাম অযৌক্তিক, ইসলাম ...". ছোবলের পর ছোবল, বিষের পর বিষ। আইজাক আসিমভের সাইন্স ফিকশন চোথা মারতে মারতে জাফর ইকবাল আমাদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিভা আর পেশাগত সাফল্য সমাজে উদাহরণ স্বরূপ। তার মত লোক যে, যেই কথা গুলো বললাম, তা বোঝেন না, সেটা বিশ্বাসযোগ্য না। অতএব, বোঝাই যাচ্ছে, উনি বুঝে শুনেই এই কাজটা করছেন। দুইয়ের সাথে দুই মেলান - উনি নাস্তিক বলে রটনা আছে, তার ছাত্রদের সাথে কোরআন কে অসন্মান করে 'যুক্তি তর্ক' করেন, তার লেখাতে প্রায়ই ইসলাম বিদ্বেষ প্রকাশ পায়। কি বুঝলেন? এর কাছে 'ইসলাম' শিখবেন? এই ব্যাটাই কিনা কিছুদিন আগে সুনাম রক্ষার্থে কোরআন থেকে উদ্বৃতি দিল। এই বুদ্ধিজীবী সাপগুলোর কর্মকান্ডের একটি দিক হচ্ছে, তারা সমাজকে গয়ে রয়ে 'গরু গাধা' মনে করেন? নাহলে দিনের পর দিন, এই অযৌক্তিক আক্রমন কেন ইসলামের উপর চালিয়ে যাচ্ছে? তারা কি মনে করে, কারো বোঝার মত 'গ্রে ম্যাটার' নেই? আপনার কথা জানি না, তবে এই সাপগুলো যে আমাকে 'গরু গাধা' মনে করে, তারা মনে করে যে আমি তাদের কথার 'ফাঁক' গুলো ধরতে পারব না, এটা আমার রক্ত গরম করে দেয়। প্রতিবার লেখাগুলো পড়ে, রাগে মাথা ঝিম ঝিম করতে থাকে। ওরা সমাজের 'বুদ্ধিজীবী', আর আমরা বোকার দল? কোরআন এ আল্লাহ মুনাফিকদে স্বরূপ ও শাস্তি নিয়ে অনেক গুলো আয়াত দিয়েছেন। তার একটা তুলে ধরছি, সুরা আল বাক্বারাহ, আয়াত ১৩ (সমার্থক অনুবাদ) When it is said to them: "Believe as the others believe" they say: "Shall we believe as the fools believe?" - Nay, of a surety they are the fools, but they do not know. আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদের মতো! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। আরেকটা বিষ হচ্ছে 'ধর্মনিরেপক্ষতা'। প্রথম বিষ দিয়ে আপনাকে শেখানো হয়, 'ইসলাম' একটা সমস্যা। তা, এই সমস্যার সমাধান কি? এইবার নিন, বিষের দ্বিতীয় ডোজ - 'ধর্মনিরেপক্ষতা'। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সন্মান ও সৌহার্দের নিশ্চয়তা দিতে আপনাকে শেখানো হবে, "মানুষ যখন ভাবে নিজের ধর্মটাই একমাত্র সঠিক ধর্ম, তখন বিষয়টা অনেক বিপজ্জনক হতে পারে" কি বুঝলেন? আল্লাহর উপর অটুট বিশ্বাস থাকলে চলবে না, আপনার মনে সংশয় থাকতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে শিব, দূর্গা, কালীমা সত্য হতে পারে। ট্রিনিটি (পিতা, পুত্র, ভগবান, একই) সত্য হতে পারে। আবার গৌতম বুদ্ধের বর্ণিত 'পরম আত্মা' হতে পারে আসলে সৃষ্টিকর্তা। টম ক্রুজ মার্কা সেলেব্রিটিদের ধর্ম 'সায়েন্টোলজি' বাদ দিবেন কেন? হতে পারে 'এলিয়েন' রাই আমাদের সৃষ্টিকর্তা। হয়তবা, ইহুদিরাই সঠিক, মুসা ( আঃ ) পর এখনো শেষ নবী আসেনি। আসল কথা, সংশয় থাকতে হবে, সন্দেহ থাকতে হবে, আল্লাহর পাশাপাশি বিশ্বাস থাকতে হবে দেব, দেবতা, এলিয়েনদের উপর, তাতেই আপনি হবেন 'আদর্শ মুসলিম'। 'ধর্ম নিরপেক্ষ মুসলিম'। আপনাকে জানানোর দরকার নেই যে, ইসলামে সুনির্দিষ্ট বিধান আছে অন্য ধর্ম মতাবলম্বীদের প্রতি একজন মুসলিমের মনোভাব এবং ব্যাবহারবিধি নিয়ে। আপনাকে জানানোর দরকার নেই যে, ইসলামে সুনির্দিষ্ট বিধান আছে, ইসলামিক রাজ্য ব্যবস্থায় অন্য ধর্ম মতাবলম্বীদের অধিকার নিয়ে। ইসলামের ইতিহাসে ভুরি ভুরি উধাহরণ আছে, কিভাবে ইসলামিক সাম্রাজ্য, সংখ্যালঘুদের ন্যায্য পৃষ্ঠপোষণ করেছেন। কিন্তু সেকথা তোলার দরকার নেই। আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে, আপনার ইসলাম ধর্মতে, পানি মেশাতে হবে। ঝাঁঝটা হালকা করতে হবে। বিশ্বাসের, পরতে পরতে, অবিশ্বাস ঢোকাতে হবে। আর এটাই হচ্ছে মহাবিষ - সেক্যুলারিজম। Secularism. পুরো পৃথিবী আজ উঠে পরে লেগেছে মুসলমানদের সেক্যুলারিজম শেখাতে। ওবামা থেকে জাফর ইকবাল, কেউ বাদ নেই, সবাই চান, মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় গোড়ামি ছেড়ে, মধ্যযুগ থেকে নতুন শতাব্দিতে প্রবেশ করুক। আর তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হচ্ছে - সেক্যুলারিজম। আপনাকে ইসলামের নির্ধারিত আন্তঃধর্মীয় সৌহার্দ্য মানলে হবে না, আপনাকে মানতে হবে কাফেরদের নির্ধারিত সৌহার্দ্য। তার জন্য আপনাকে যেটা করতে হবে, সেটা হচ্ছে, আপনার ইসলামের উপর একটু আস্থা ও বিশ্বাস কমাতে হবে। তবেই হবেন আপনি 'মডারেট মুসলিম'। এই কথা পছন্দ না হলে, আপনি 'মৌলবাদী মুসলিম'। বুদ্ধিজীবী সাপগুলো ফনা তুলে বসে আছে ... আপনি আল্লাহর উপর অটুট বিশ্বাস নিয়ে কোরআনকে বিধান মানলেই, সাপের দংশন, মৌলবাদী মুসলিমদের কোনো স্থান নেই সেক্যুলার সমাজে। শেষ টানছি, একটা বহুল প্রচলিত আয়াত দিয়ে। ধর্মনিরেপক্ষতা শেখাতে, মুসলিমদের এই আয়াতটা কথায় কথায় শোনানো হয়। সুরা কাফিরূন, আয়াত ৬ (সমার্থক অনুবাদ): To you be your way, and to me mine নিশ্চই, অর্থ হিসাবে শুনে থাকবেন - "যার যার ধর্ম তার তার কাছে" বা সমার্থক কিছু। বললে কি বিশ্বাস করবেন, যে এটা শুধুমাত্র একটা ভুল অনুবাদ নয়, আসল অর্থটা অনেকটা এটার বিপরীত। প্রথমেই খেয়াল করুন, সুরার নাম 'কাফিরূন'। নিশ্চয় আশা করবেন না, কাফিরদের কথা বলতে গিয়ে কোরআন আপনাকে তাদের 'মতাদর্শের' প্রতি সন্মান দেখাতে বলবে। অবশ্যই তার মানে এই না যে তাদের আক্রমন করে হবে। আসুন, পুরো সুরাটার একটা ভাবানুবাদ পড়ি। আমার লেখা না, নেয়া হয়েছে 'তাফসীর মাআরেফুল কোরআন' এর বাংলা অনুবাদ থেকে। প্রকাশনা হয় 'খাদেমুল-হারমাইন বাদশা ফাহাদ কোরান মুদ্রণ প্রকল্প' থেকে। সুরা কাফিরূন (সমার্থক অনুবাদ) পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু, (১) বলুন, হে কাফেরকুল (২) আমি ইবাদত করিনা তোমরা যার এবাদত কর। (৩) এবং তোমরাও এবাদতকারী নও যার এবাদত আমি করি (৪) এবং আমি এবাদতকারী নই যার এবাদত তোমরা কর। (৫) তোমরা এবাদতকারী নও যার এবাদত আমি করি। (৬) তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য। তাফসির পরে নেবার অনুরোধ রইলো। সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পাবেন। মক্কার কাফেররা যখন পারস্পরিক শান্তির জন্য মুহাম্মদ ( সাঃ ) কে প্রস্তাব দিল তাদের দেব দেবীর স্বীকৃতি দেবার জন্য, যার বিনিময়ে তারা মুহাম্মদ (সাঃ) কে সত্য মেনে নিবে, আর মুহাম্মদ (সাঃ) কিভাবে তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন। "তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য" - কি বুঝলেন? এরপর থেকে কেউ ধর্মনিরেপক্ষতা শেখাতে গেলে তাকে বলবেন, "লাকুম দিনুকুম ওলিয়াদিন". বলবেন, ব্যাটা, "তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য", দূরে গিয়ে মর।

বিষয়: বিবিধ

২১৫৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File