হেফাজতে ইসলামের নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের সঙ্গে রেডিও তেহরানের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকার।

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ তরফদার ০৮ মে, ২০১৩, ০৭:১৬:৩২ সকাল



৬ মে (রেডিও তেহরান): বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচিতে মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। তবে, নিহতের সংখ্যা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি বরং এ নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এর পাশাপাশি দেশের দু’টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। মূলত এসব ঘটনা-ই একসূত্রে গাঁথা। এ প্রেক্ষাপটে হেফাজতে ইসলামের আগামী কর্মসূচি কি হবে –তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব ইস্যু নিয়ে আমরা কথা বলেছি হেফাজতে ইসলামের নেতা ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানের সঙ্গে।

পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাতকারটি উপস্থাপন করা হলো-

রেডিও তেহরান: জনাব জাফরউল্লাহ খান, আপনারা এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, রোববার মধ্যরাতে শাপলা চত্বরে নিরাপত্তা বাহিনীর বর্বরোচিত অভিযানে তিন হাজারের বেশি নেতা-কর্মী নিহত ও ১০ হাজার লোক আহত হয়েছেন। আপনারা কিসের ওপর ভিত্তি করে হতাহতের এ সংখ্যা দাবি করলেন? সেইসঙ্গে আপনি আমাদেরকে এ বিষয়টিও বলবেন যে, নিহতদের লাশ কোথায় বা আহতদেরকে কোন কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে?

মাওলানা জাফরুল্লাহ খান: দেখুন, তিন হাজার হেফাজতকর্মী নিহত হওয়ার খবরটি জনশ্রুতি। যারা দেখেছেন তারা বলেছেন এ কথা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গণহারে এবং নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে শাপলা চত্বরে। হত্যা করার পর লাশগুলো ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোন কোন জায়গায় মানুষ দেখেছে তিন চার, পাঁচ-ছয় ট্রাকে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোথায় নেয়া হয়েছে সেটা মানুষ দেখেনি আমরাও দেখিনি। তবে নির্বিচারে যে গুলি করা হয়েছে সেটা সবাই দেখেছে আমি নিজেও সেখানে ছিলাম এবং গুলি করতে দেখেছি। আর সেই গুলিতে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে এবং অনেকে নিহত হয়েছে এটা দেখেছি। কিন্তু নিহতের সংখ্যাটা কত এটা আমি বলতে পারব না। তবে, মানুষ বলছে হাজার তিনেক ছাড়িয়ে যাবে।

আর আহতদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইসলামী হাসপাতাল, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের ব্যাপারে এমন ঘটনা ঘটেছে যে হাসপাতালে জায়গা না থাকায় প্রাথমিক চিকিতসা দেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে, বসিয়ে রাখা হয়েছে অথবা বারান্দায় শুইয়ে রাখা হয়েছে।

রেডিও তেহরান: বাংলাদেশের কোনো কোনো গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে- আপনাদের নেতা-কর্মীরা রোববার অবরোধের দিন ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে, এমনকি তারা পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন দিয়েছে। এই অভিযোগকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাওলানা জাফরুল্লাহ খান: সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন দেয়ার অভিযোগটি। হেফাজতের কর্মীরা কোন অবস্থাতে এমনকি মরে গেলেও কুরআন শরীফে আগুন দিতে পারে না। তবে, এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, যারা ইসলাম বিদ্বেষী এবং ইসলাম-বিরোধী তারাই এ কাজ করেছে। যারা গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে তারাই করেছে। যারা গুলি করে মানুষ হত্যা করতে পারে তারা দেশপ্রেমিকও নয় এবং ইসলাম প্রিয়ও নয়। তাদের মধ্যে মানবতার লেশমাত্র নেই।

রেডিও তেহরান: নবীপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের ডাকে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় এসেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে অসংখ্য তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম এখন কী ধরনের কর্মসূচি দেবে? কারণ, আপনার বলেছেন, রক্তের মহাসমূদ্র বইয়ে দেয়া হলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হেফাজত ঘরে ফিরবে না...।

মাওলানা জাফরুল্লাহ খান: দেখুন, আমরা যারা শাপলা চত্বরে সমবেত হয়েছিলাম দাবি আদায়ের জন্য আমরা কেউ সরকারের এমন অমানবিক আচরণ আশা করিনি। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে সরকার আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেবে। কিন্তু, আমাদের দাবি তো মেনে নেয়নি বরং আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে, আমাদের বহু মানুষ শহীদ হয়েছে। আপনারা সবাই দেখেছেন, গোটা জাতি দেখেছে আমরা ছিলাম সম্পূর্ণ নিরস্ত্র এবং হাত খালি ছিল। আমরা ছিলাম অস্ত্রের সামনে অসহায়। তারা ভারি অস্ত্র দিয়ে নিরস্ত্র আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, কাপুরুষ সরকার। সরকার অসহায় মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে, অত্যাচার করে আমাদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণরূপে বানচাল করার চেষ্টা করেছে। তবে, আমরা আশা করি ইনশাআল্লাহুল আজিজ আমাদের আন্দোলন থামবে না। কোনোভাবে আমাদের আন্দোলনকে বানচাল করা যাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর প্রতিশোধ অবশ্যই নেবেন। আমরা আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা করে বলতে পারি এর প্রতিশোধ হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

মাওলানা আহমদ শফি সাহেব আজ একটি কর্মসূচি দিয়েছেন। এ কর্মসূচি হচ্ছে-আগামীকাল দেশব্যাপী দোয়া দিবস। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আমরা দোয়া করব। দোয়া দিবস শেষে আমরা আগামীকাল নতুন কর্মসূচি দিতে পারি।

রেডিও তেহরান: হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করার পর রোববার মধ্যরাতে বাংলাদেশের দু’টি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এর আগে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করে দেয়ার কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সংবাদকর্মী মনে করছেন, হেফাজতের কার্যক্রম কাভার করতে গিয়ে এসব গণমাধ্যমকে সরকারের রোষাণলে পড়তে হয়েছে। আপনার কি মনে হয়?

মাওলানা জাফরুল্লাহ খান: অবশ্যই। আমরাও তাই মনে করি। বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হত্যা করেছে, মিডিয়ার স্বাধীনতা হত্যা করেছে। এই সরকার না ইসলামি সরকার, না জাতীয় সরকার, না গণতান্ত্রিক সরকার- আসলে কোন ধরনের সরকার বলে তাদেরকে আখ্যায়িত করব সেটা আমরা ভেবে পাচ্ছি না।

রেডিও তেহরান: এসব গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দৃশ্যত হেফাজতে ইসলামের খবর প্রকাশ করার মতো বড় কোনো গণমাধ্যম রইল না -এমন কথা অনেকেই বলছেন। অভিযোগ উঠেছে যে, বাকি গণমাধ্যমগুলো স্বনিয়ন্ত্রিতভাবে হোক বা হুমকির মুখে হোক সরকারের বশ্যতা মেনে নিয়েছে। এ অবস্থায় গণমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আপনারা এ আন্দোলনকে কতদূর এগিয়ে নিতে পারবেন বলে আপনার মনে হয়?

মাওলানা জাফরুল্লাহ খান: আমরা পুরোপুরি আশা রাখি গণমাধ্যমের বিষয়টি তো বাহ্যিক অস্ত্র। আমরা মনে করি- আল্লাহর রহমত হচ্ছে আমাদের প্রধান অস্ত্র। ফলে একটা গণমাধ্যম বন্ধ করা হলে আরেকটি গণমাধ্যম চালু হয়ে যাবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। আর আমরাও আল্লাহর ওপর ভরসা করে সেইভাবে এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৮০২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File