পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা

লিখেছেন লিখেছেন ব১কলম ১৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:১২:৫৭ রাত

পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা

বাংলা বর্ষের ইতিহাস

ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করত। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হত। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে "বঙ্গাব্দ" বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়

আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে বাংলা চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রূপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকানদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা একটা ধর্মের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রকাশ

চৈত্র সংক্রান্তির মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ‘মঙ্গলপ্রদীপ, মঙ্গলাচরণ, মঙ্গল কাব্য প্রতিটি অনুষ্ঠানিকতা পুরোপুরি হিন্দুদের বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটা মুসলমান বা বাঙালি সংস্কৃতি নয়। এগুলো মুসলমানদের জন্য হারাম। হিন্দুদের মতে, শ্রী কৃষ্ণের জন্ম হয়েছে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে। তাই হিন্দুরা অশুভ তাড়াতে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনে তথা জন্মাষ্টমীতে প্রতি বছর সারা দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। অন্য দিকে মঙ্গলকাব্য হলো হিন্দুদের দেবদেবীর গুণকীর্তন। তাই প্রতিটি মঙ্গলকাব্যে একেকজন দেবতার গুণকীর্তন করা হয়েছে। এরা লৌকিক দেবতার সাথে পৌরাণিক দেবতার সংমিশ্রণে সৃষ্ট বাঙালি হিন্দুদের নিজস্ব দেবতা। তাই মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করা মুসলমানদের জন্য হারাম।

আজকে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যে সনের উৎপত্তি ও উৎকর্ষতা লাভ করেছে মুসলমানদের হাতে সেই সন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ পালন করা হয় বিজাতীয় সংস্কৃতির আদলে, যা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণকে নিজস্ব ঐতিহ্যবোধ বিশ্বাস ও তাহজিব-তমদ্দুন তথা শেকড় থেকে বিছিন্ন করার গভীর ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বাংলা নববর্ষের দিন একশ্রেণীর মানুষের মাঝে ‘পান্তা-ইলিশ’ খাওয়ার ধুম পড়ে যায় এবং নিজেরা যে বাঙালি তা জানান দেয়। এ যেন সেই গানের মতো “একদিন বাঙালি ছিলামরে”। এভাবে বিশেষ একদিন পান্তা খাওয়া গরিব মানুষের সাথে তিরস্কার নয় কি? এ যেন বাবা-মাকে এক বছর ভুলে থেকে বছরে একদিন বাবা-মা দিবস পালন করার মতো।

আফসোস লাগে, সেই সব তরুণ-তরুণীদের জন্য যারা ইতিহাস না জানার কারণে এভাবে একটি বিজাতীয় সংস্কৃতির লালন ও উৎকর্ষতায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছে। আমরা বেশ কয়েক বছর থেকে লক্ষ্য করছি, নববর্ষের দিন আনন্দ-মিছিলের নামে কিছু তরুণ-তরুণী যে বেলেল্লাপনা প্রদর্শন শুরু করছে তা ধর্মপ্রাণ জনগণকে বিব্রত করছে। চারুকলা থেকে বিভিন্ন জীব-জন্তুর বিশাল বিশাল মূর্তি ও মুখোশ পরে এবং পূজার স্টাইলে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে রাস্তা প্রদক্ষিণ করা হয়। বাংলা নববর্ষ বরণ করার সাথে এসব বিষয়ের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই, বরং এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতির অংশ। আজকাল প্রায় দেখা যায়, একটি বিশেষ শ্রেণীর লোকেরা ‘মঙ্গল-প্রদীপ’ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। এসব কোন কিছুই আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তার প্রতিফলন নয়, এগুলো একটি বিশেষ ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ মাত্র। এ প্রসঙ্গে জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান বলেছেন, “আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মেরুদণ্ডহীন পরজীবী ও ধর্মচেতনাশূন্য এবং ইতিহাস বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ কিছু মূর্খ লোক এ দেশের কোন কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মঙ্গল প্রদীপের অয়োজন করে থাকে এবং কাঁসার ঘণ্টা বাজিয়ে থাকে। আমি সুস্পষ্ট ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে জানাতে চাই যে, মঙ্গল প্রদীপ ও কাঁসার ঘণ্টা সম্পূর্ণরূপে পৌত্তলিক এবং সাম্প্রদায়িক। তা ছাড়া এগুলো কোনক্রমেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবনধারার সম্পর্কে যুক্ত নয়।”

বিষয়: বিবিধ

১২৭১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382696
১৫ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১১:২১
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশী মুসলমানদের চোখে পর্দা লেগে আছে । তাই তারা নিশ্চিত শিরকীয় কাজ চিনতে পারছে না।
383828
২১ আগস্ট ২০১৭ সকাল ০৬:০৪
ব১কলম লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File