নতুন একটি খামের আশায়…

লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান জনি ২৬ মার্চ, ২০১৩, ১২:৩৪:০১ রাত

মোবাইল, ইন্টারনেট, ই-মেইল এর যুগে এখন আর আগের মত কেউ চিঠি লিখেনা। দিনের পর দিন, সপ্তাহ শেষে মাস কেউ অপেক্ষা করে না একটি চিঠির জন্য। যোগাযোগটা প্রযুক্তি নির্ভর। সেকেন্ডের খবরও পৌঁছে যায়। দু-এক মিনিট কথা বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন। তাই হয়তো মাকে বলা হয় না আবেগ দিয়ে লিখা চিঠির ভাষা গুলো। অনেক বার চেষ্টা করেছি। লিখেছি অনেক চিঠি। মায়ের জন্য, প্রিয় মানুষটির জন্য। কিন্তু তা শুধু ডায়রিতেই পড়ে থাকে। আর পোষ্ট করা হয় না। দিনের সূর্যাস্তের সাথে আমাদের ভালবাসাও ঘুমিয়ে যায়। অলস হওয়া ভালবাসার, মৃত‌্যু দেখতে হয় চোখের সামনে। কারণ কেউ এখন আর চিঠির অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে না। তবুও লিখি। উত্তরের আশায় পথ চেয়ে থাকি। নতুন একটি খামের ভিতর মায়ের ভালবাসা ভরা কথা গুলোর আশায়। মাকে অনুভব করার আকাঙ্খা সর্বদা জাগ্রত হৃদয়ে। হয়তো মা এমনি করে পোষ্ট মাষ্টারের পথ চেয়ে থাকেন কখন আসবে প্রবাসী ছেলের একটি খাম।

ডায়েরীতে এখনো লিখা গুলো পড়ে আছে-

‌‌” মা অনেক কষ্টে কাটছে দিন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। তার উপর মালিক পক্ষের নানান মন্তব্য, দূরব্যবহার। আর ভাল লাগে না। ইচ্ছে হয় এখুনি ফিরে আসি বাংলায়। আর কত কষ্ট সইবো তুমি বল মা!”

” নিয়তির সাথে সন্ধি হয়ে গেছে, তাই হয়তো আমাকে মনে করে তোমার চোখে জল আসে না। এক, দুই করে বছরের পর বছর কেটে যায়। কিন্তু ঘরে ফেরা হয় না। তুমি অভিমান করে আমায় ভুলে যেওনা। কথা দিচ্ছি ফিরবো শীঘ্রই।”

বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করা সৈনিকের জীবন থেকে নেয়া কথা গুলো প্রিয়জনের কাছে পৌঁছানোর সেই সুযোগ দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কথা হয় ‘ মা অনেক ভাল আছি’। কিন্তু এর বাইরের যে জীবন! তা কি করে মাকে বলি? মুখে আর সে ভাষার জন্ম হয় না। যখন লিখতে বসি হয়তো গভীর ভালবাসায় মা আমাকে ঘিরে রাখে।

” মা, মা জননী গো, তোমায় অনেক মনে পড়ে। বাংলার আকাশ-বাতাসে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে হয় খুব বেশি। যখন দেশের কথা মনে পড়ে এক মুহূর্ত্বের জন্যও প্রবাসে আর পড়ে থাকতে ইচ্ছে হয় না। তোমার হাতের রান্না খেতে ইচ্ছে করে, তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করে। কিন্তু নিয়তি শুধু এক একটি দীর্ঘশ্বাস উপহার দিয়ে সন্তুষ্ট করে রাখ। নিয়তির সাথে কি আমি যুদ্ধ করতে পারি! তুমিই বল মা?”

নিজের আবেগ, ভালবাসা সবকিছু নিজের কাছেই পড়ে থাকে। জানি না আজকের এই কথামালা কি মায়ের হাতে পৌঁছবে কিনা? যদি তুমি এই লিখাগুলি দু’চোখ ভরে দেখ, হে মা! মাতৃকা তোমায় এত ভালবাসি, তখন তুমিও কি আমাকে এতটুকু ভালবাসা দেবে, যে ভালবাসার জন্য প্রবাসে আমরা লক্ষ লক্ষ ভাইয়েরা অপেক্ষা করি?

হয়তো কারো চোখে পড়ে না। তবু তাঁর আশা জেগে থাকে। এখনও আশা করে বসে থাকেন মা ও মাতৃভূমি। বিভিন্ন দেশ থেকে তাঁর ঠিকানায় নতুন একটি খামে একটি পোষ্টকার্ড আসবে। এখনও স্বপ্ন দেখে তিনি, তাঁর খোঁজে আসা নতুন একটি পোষ্ট কার্ডের। আর আমি পথ চেয়ে রই অনেক অনেক চিঠির প্রতিক্ষায়। দিন গুণতে থাকি নতুন একটি খামের আশায়।

বিষয়: Contest_mother

১৩৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File